শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিকৌশল (বিসিএস রিটেন, প্রথম আলো)

পঁয়ত্রিশে পঁয়ত্রিশতম! (প্রথম আলো)

……………………………………………

প্রিপারেশন প্রিপারেশন ভাব, প্রিপারেশনের অভাব নিয়েও বুঝে হোক, না-বুঝে হোক, লিখলেই রিটেনে পাস করে ফেলবেন, কিন্তু চাকরিটা নাও হতে পারে। কীভাবে লিখলে ভাল হয়, আর সেজন্য এ ক’দিনে যা যা করতে পারেন :

1) পরীক্ষা নিয়ে টেনশন হওয়াটা একটা সাধারণ ভদ্রতা এবং না-পড়ার অজুহাত। ঐ মুহূর্তে আপনার পছন্দের বিষয়টা পড়ুন।

2) কোচিংয়ে যাওয়া, অপ্রয়োজনে বের হওয়া বাদ দিন। বাসায় পড়ার পেছনে সময় দিন; প্রতিদিন অন্তত ১৪-১৬ ঘণ্টা।

3) ফেসবুকীয় আত্মপ্রেমকে ছুটি দিয়ে দিন।

4) কে কী পড়ল, ভুলেও খবর নেবেন না। যাঁদের প্রস্তুতি আপনার চাইতে ভাল, তাঁদেরকে ক্ষমা করে দিন।

5) সব প্রশ্ন পড়ার সহজাত লোভ সামলান।

6) যাঁরা চাকরি করেন, তাঁরা এ মাসের জন্য হয় চাকরি অথবা ঘুমটুম বাদ দিন।

7) প্রায়ই ফোনটা অফ রাখুন। ল্যাপটপ থেকেও দূরে থাকুন।

8) কিছু একটা পড়ছেন, পড়তে পড়তে ক্লান্ত! ভাল লাগে, এমনকিছু পড়ুন, ক্লান্তি কেটে যাবে। রাতে ঘুম কাটাতে ম্যাথস্, গ্রামার, ট্রান্সলেশন, মেন্টাল অ্যাবিলিটি প্র্যাকটিস করুন।

9) ২টার আগে ঘুমাবেন না, ৬টার পরে উঠবেন না। ৪ ঘণ্টা ঘুম, ব্যস!

10) বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী পড়বেন কম। বাকি ৪টা বেশি বেশি পড়ুন।

11) কোন টপিক একেবারেই না পড়ে গেলে, পরীক্ষায় বানিয়ে লেখাটাও সহজ হবে না। সবকিছু একবার হলেও ‘টাচ করে’ যান।

12) রেফারেন্স বই পড়ার সময় নেই। কয়েকটি ডাইজেস্ট কিনে ফেলুন।

13) অন্যকারোরটা নয়, সাজেশনস্ রেডি করুন নিজে।

14) প্রশ্ন কমন পেতে নয়, অন্তত বানিয়ে লেখার জন্য ধারণা পেতে প্রস্তুতি নিন।

15) প্রশ্নের গুরুত্ব ও নম্বরের ভিত্তিতে সময়বণ্টন আগেই ঠিক করে নিন।

16) ইচ্ছেমত দাগিয়েদাগিয়ে, লিখেলিখে বই পড়ুন। রিভাইজের সময় কাজে লাগবে।

17) ০.৫ মার্কসও ছেড়ে আসা যাবে না। যে করেই হোক, ‘ফুল আনসার’ করে আসতে হবে। গড়ে প্রতি ৩-৫ মিনিটে ১ পৃষ্ঠা অনেক বেশি দ্রুত লেখার চেষ্টা করুন।

18) প্রতি পেইজে অবশ্যই অন্তত একটা প্রাসঙ্গিক চিহ্নিত চিত্র, ম্যাপ, উদ্ধৃতি, ডাটা, টেবিল, চার্ট কিংবা রেফারেন্স দিন।

19) সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন, টীকা, শর্ট নোটস্, সারাংশ, সারমর্ম, ভাবসম্প্রসারণ, অনুবাদ, ব্যাকরণ ইত্যাদি ভালোভাবে পড়ুন৷ নোট করে পড়ার প্রশ্নই ওঠে না!

20) যত কষ্টই হোক, অবশ্যই বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকার সম্পাদকীয়কে নিয়মিত অনুবাদ করুন।

21) বিভিন্ন লেখকের রচনা, পত্রিকার কলাম ও সম্পাদকীয়, ইন্টারনেট, বিভিন্ন সংস্থার অফিসিয়াল ওয়েবসাইট, সংবিধানের সংশ্লিষ্ট ধারা ও ব্যাখ্যা, উইকিপিডিয়া, বাংলাপিডিয়া, ন্যাশনাল ওয়েব পোর্টাল, কিছু আন্তর্জাতিক পত্রিকা, বিভিন্ন রেফারেন্স থেকে নীল কালিতে উদ্ধৃতি দিলে মার্কস বাড়বে৷

22) প্রশ্ন নির্বাচনের ক্ষেত্রে ১৫ মার্কসের ১টা প্রশ্ন উত্তর করার চাইতে ৪+৩+৩+৫=১৫ মার্কসের ৪টা প্রশ্নের উত্তর করা ভাল।

23) বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে লেখেন, এরকম ২৫-৩০ জনের নাম এবং তাঁদের ‘এরিয়া অব ইন্টারেস্ট’ ডায়রিতে লিখে রাখুন। (বানিয়েবানিয়ে) উদ্ধৃতি দেয়ার সময় কাজে লাগবে।

24) যা যা অন্যরা পারে না কিংবা কম পারে, কিন্তু পারা দরকার, তা তা ভাল করে দেখুন।

25) পেপার থেকে বিভিন্ন পর্যালোচনা, নিজস্ব বিশ্লেষণ, সমসাময়িক প্রেক্ষাপটে সেটির প্রাসঙ্গিকতা ইত্যাদির সাহায্যে লিখলে আপনার খাতাটি আলাদা করে পরীক্ষকের চোখে পড়বে।

26) বেশি বেশি পয়েন্ট দিয়ে প্যারা করে করে লিখবেন। প্রথম আর শেষ প্যারাটি সবচাইতে আকর্ষণীয় হওয়া চাই।

27) বিভিন্ন কলামিস্টের দৃষ্টিকোণ থেকে কোনও ইস্যুকে ব্যাখ্যা করে উত্তরের শেষের দিকে আপনার নিজের মত করে নিজের বিশ্লেষণ দিয়ে উপসংহার টানুন। কোন মন্তব্য কিংবা নিজস্ব মতামত থাকলে (এবং না থাকলেও) লিখুন।

28) গ্রন্থ-সমালোচনার জন্য কমপক্ষে ৩০টি সুপরিচিত বাংলা বই সম্পর্কে জেনে নিন।

29) স্পেলিং আর গ্রামাটিক্যাল মিস্টেক না করে একেবারে সহজ ভাষায় লিখলেও ইংরেজিতে বেশি মার্কস আসবে।

30) শর্টকাটে ম্যাথস্ করবেন না, প্রতিটি স্টেপ বিস্তারিতভাবে দেখাবেন।

31) সাধারণ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির জন্য আগের বছরের আর ডাইজেস্টের সাজেশনসের প্রশ্নগুলো ভালভাবে পড়ে ফেলুন।

32) ডাইজেস্টের পাশাপাশি ৩-৪টা আইকিউ টেস্টের বই আর ইন্টারনেটে মানসিক দক্ষতার প্রশ্ন সলভ করুন।

33) পুরো সংবিধান মুখস্থ না করে যেসব ধারা থেকে বেশি প্রশ্ন আসে, সেগুলোর ব্যাখ্যা খুব ভালভাবে বুঝে বুঝে পড়ুন। ধারাগুলো হুবহু উদ্ধৃত করতে হয় না।

34) আন্তর্জাতিক বিষয়াবলীর টপিকগুলো গুগলে সার্চ করে করে পড়তে পারেন। যে ইস্যু কিংবা সমস্যার কথা লিখবেন, সেটিকে বিশ্লেষণ করে নানা দিক বিবেচনায় সেটার সমাধান কী হতে পারে, আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক এবং আপনার নিজের মতামত ইত্যাদি পয়েন্ট আকারে লিখুন।

35) শতভাগ প্রস্তুতি নিয়ে কারোর পক্ষেই লিখিত পরীক্ষা দেয়া সম্ভব নয়। শতভাগ শিখেছি ভেবে তার ষাটভাগ ভুলে গিয়ে বাকী চল্লিশভাগকে ঠিকমতো কাজে লাগানোই আর্ট৷

কঠোর পরিশ্রম করুন; প্রস্তুতি নিতে না পারার পক্ষে অজুহাত দেখিয়ে কোনওই লাভ নেই। আপনি সফল হলে, আপনাকে অজুহাত দেখাতে হবে না; আর আপনি ব্যর্থ হলে, আপনার অজুহাত কেউ শুনবেই না। গুড লাক!!

এ লেখাটি ৭ আগস্ট শুক্রবার প্রথম আলো’র ‘চাকরি-বাকরি’ পাতার প্রধান ফিচার হিসেবে ছাপা হয়েছিল। লেখাটির লিংক নিচে দিচ্ছি :

http://www.prothom-alo.com/life-style/article/595633/%E0%A7%A9%E0%A7%AB%E0%A6%A4%E0%A6%AE%E0%A6%B0-%E0%A6%9C%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%AF-%E0%A7%A9%E0%A7%AB-%E0%A6%AA%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%AE%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%B6