সত্য যা-কিছু

 
ধরো, তুমি কোনও স্তম্ভের উপর দাঁড়িয়ে।
এতদিন তুমি ভেবে এসেছ, স্তম্ভটি মাটির গভীর থেকে উঠেছে।
আজ হঠাৎ করেই জানতে পারলে,
এতদিন তুমি যা জেনেছ, তা সম্পূর্ণই মিথ্যে কিংবা ভুল।


ধরো, আজ হঠাৎ জানতে পারলে,
ওই স্তম্ভটি প্রকৃতপক্ষে শূন্যে ভাসছে, এবং
একটি ঝড়ো-হাওয়ায় সেটি যে-কোনও সময়ই উড়ে যেতে পারে।
তখন, ঠিক ওই মুহূর্তে কি তোমার সেই স্তম্ভের উপর,…
ইচ্ছে হবে…দাঁড়িয়ে থাকতে?
অথবা চাইলেও কি আর আগের সেই সাহস নিয়ে,
অমন একটা শেকড়বিহীন গাছের উপর পারবে…দাঁড়িয়ে থাকতে?


ধরো, ছোট থেকেই তোমার বাবা-মা কিংবা এমন কেউ,
তোমাকে তোমার স্রষ্টার প্রতি কিছু ভ্রান্তধারণা,
জোর করেই মেনে নিতে, নয়তো পালন করতে বাধ্য করেছে।
বড়ো হবার পর, নিজের বিচারশক্তি কিছুটা যখন বিকশিত হলো,
তখন বুঝতে পারলে, তারা এতদিন তোমার সামনে অবধারিতভাবে,
যেগুলো মানতে কিংবা পালন করতে বাধ্য করেছে,
সেগুলোর সব কিছু একইভাবে পালন না করলেও,
তোমার স্রষ্টা তোমার প্রতি অসন্তুষ্ট হবেন না;
অথবা তাঁরা তোমাকে স্রষ্টা সম্পর্কে যা ধারণা দিয়েছেন,
স্রষ্টা আসলে তেমনই নন।


হয়তো তার আগ পর্যন্ত ঘটেযাওয়া কিছু ঘটনায় তুমি বিক্ষিপ্ত,
হয়তো তাঁদের কথা শুনে শুনে একটা সময়,
তোমার স্রষ্টার প্রতিই তোমার ভীষণ তিক্ততা আর বিতৃষ্ণা জন্মেই গেছে কোনও একভাবে,
হয়তো তুমি ভেবেই নিয়েছ, ‘স্রষ্টা যদি এমনই হন,
কেবল নিষ্ঠুরতা, ক্ষমতার প্রদর্শনই যদি স্রষ্টার কাজ হয়,
কেবল জোরপূর্বক ইবাদতের বোঝা চাপিয়ে দেওয়াই যদি স্রষ্টার কাজ,
তবে কেবল বাধ্যতায় যেটুকু করার, সেটুকুই করব।’


আরও ভাবলে, ‘কোনও ভক্তিতে কিংবা শ্রদ্ধায় নয়, কেবলই কর্তব্যে,
এই জীবনটা কাটিয়ে দেবো এভাবেই;
অথবা না-ইবা হলাম আস্তিক, না-ইবা করলাম ইবাদত,
পড়ে রইলাম নাহয় গুমোর চেপে, মানবই না আর কিছু,
স্রষ্টা তো শাস্তি দেবেনই দেবেন,
স্রষ্টা তো কেবল শাস্তি দেবার জন্যেই পাঠিয়েছেন এখানে,
স্রষ্টা আসলে সব সময়ই আমাদের উপর,
ঠিক কতটা শাস্তি যায় বাড়ানো, বুঝি তা-ই ভাবছেন,
আর এসব ভেবে মনে মনে মজা পাচ্ছেন!’
…ধরো, স্রষ্টার প্রতি তোমার সব ধারণাই এমন করে তৈরি হলো,
যা তোমার আশেপাশের সকলে মিলে জোর করেই চাপিয়ে দিলো,
নয়তো এমনই ভাবতে বাধ্য করল;
অথবা যদি ধরো, তোমার যত কাছের মানুষ,
সবাই মিলে বলে বোঝালো, আসলে স্রষ্টা বলে নেই কিছুই,
তুমিও ঠিক যুক্তিতর্কে বুঝেই নিলে,
‘আসলেই তো, স্রষ্টা বলে কিছুই তো নেই!’;
অথবা ধরো, শুধালে নিজেকে কৌতূহলে,
‘স্রষ্টা যদি হবেন একজনই,
ধর্ম কেন এতগুলো তবে?’
…মন যে, প্রশ্ন এমন আসবেই তখন!
তাই বলে কি মেনেই নেবে,
স্রষ্টা বলে নেই কিছুই?


সত্যকে যদি না-ই মানো তুমি,
মৃত্যুকে যদি না-ই মানো তুমি,
তবে কি সত্য যত, মিথ্যে হয়ে যাবেই যাবে?
তবে কি মৃত্যু থেকে পালিয়ে তুমি বেঁচেই যাবে?
না-ই মানো যদি স্রষ্টাকে তুমি,
তবে কি স্রষ্টা নেই হয়ে যাবেন?
---এমন নয় সত্যিই…কোনওভাবেই!


তবে যে প্রশ্ন করো মিছে?
কিছু উত্তরেই যেমন প্রশ্ন থাকে, তেমনি,
কিছু প্রশ্ন নিজেই নিজের উত্তর!
হয়তো আমরা মানি না,
হয়তো আমরা দেখিনি,
হয়তো আমরা জানি না,
নয়তো আমরা ভুগেছি খুব;
সব কিছুর পরও…কিন্তু
সত্য চিরঅম্লান, চিরঅক্ষয়।