সবুজ কৌটোয় হৃদয়-কড়চা/১

যে সুন্দরকে যায় না ধরা, যে সুন্দর দেয় না ধরা, মন কেন তার পেছনেই ছোটে? ভুলগুলোই কেন বেশী আনন্দের?

Dear God, it’s not fair!

রাতে ঘুম না হওয়াটা কী যে বিরক্তিকর! সবাই এই ব্যাপারটা বুঝবে না। শুধু সে-ই এটা বুঝতে পারবে, যে ঘুমাতে চেষ্টা করে, অথচ ঘুমাতে পারে না। মাঝেমাঝে এতো অস্থির লাগে কেন? জেগেজেগে নানা ধরনের চিন্তায় মাথায় জ্যাম লেগে যায়। চিন্তার জ্যাম। চিন্তা করতেকরতে মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে একসময়। তখন ভীষণ অসহায় লাগে নিজেকে। আচ্ছা, কতটা অসহায় হলে এতোটা কষ্ট হয়? কেউ কি বলে দিতে পারবে? এটা এক অস্বাভাবিক রকমের তীব্র চাপা যন্ত্রণা। এর অনেকগুলি কারণ আছে।

যখন মানুষ ভীষণ কষ্টে থাকে, তখন যদি সে নিজের কষ্টের সাথে পৃথিবীর সকল কষ্টের সাদৃশ্য খুঁজে পায়, তবে নাকি তার কষ্ট খানিকটা কম অনুভূত হয়। এই যেমন, জুতো ছিঁড়ে গেলে কষ্টের বদলে রাগই হয়, কিন্তু তখন যদি কাকতালীয়ভাবে এমন হয়, আশেপাশের কয়েকজনের জুতোও ছেঁড়া, তখন রাগটা কীভাবে জানি কমে যায়। তাই, মাঝেমাঝে নিজেকে এবং নিজের কষ্টগুলিকে তুলনা করি চারপাশটার সাথে, কিছুটা হলেও শান্তি পেতে। তবে তাতে সুফল কিছু হয় না। অন্যের চিন্তার সঙ্গে নিজের চিন্তা কীকরে মিলাব? অন্যের জায়গায় নিজেকে কেমন করে বসাব? যে পরিস্থিতিতে কখনওই পড়িনি, যা কোনওদিনই অনুভব করিনি, তার সাথে নিজের অভিজ্ঞতা কতটুকুই বা মেলানো যায়? আমি পারি না। ভাবতে পারি না, মেলাতে পারি না, বোঝাতে পারি না, বুঝতে পারি না। আর তাই কষ্ট কমেও না। এইজন্য যা যা করা দরকার, তার কিছুই ঠিকমতো করতে পারি না।

অদ্ভুত একটা জীবন। এতো তাড়াতাড়ি এতসব চিন্তা আমাকে গ্রাস করবে, বুঝতে পারিনি। আর কিছুদিন পর হয়তো আমি নিজেকে তৈরি করে নিতাম, কিন্তু এখন আমি ঠিক ওরকম নই, মানে এখন আমাকে গ্রাস করে ফেলাটা সহজ। কীভাবে-কীভাবে যেন মাথাটা ভারি হয়ে ওঠে, কীভাবে-কীভাবে যেন চারপাশটা ভীষণ রকমের গম্ভীর হয়ে যায়। সবকিছু বদলে যেতে থাকে হঠাৎই। তখন আর পারি না। ঠিক এই কারণেই কি ঘুম আসে না, নাকি ঘুম হয় না বলে এতসব কিছু হয়, সেটাও বুঝতে পারি না। কোনও উত্তরই আমার আজ জানা নেই। আমি এখন উত্তরহীনতার অন্ধকার সুড়ঙ্গের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি।

আজও, অন্যদিনের মতোই, সারারাত ঘুম হলো না। অনেক এপাশওপাশ করলাম, তাতে কিছু লাভ হলো না। বরং আরও নানারকমের চিন্তায় আচ্ছন্ন মাথাটা ভারি হয়ে উঠল। ভাবছি, একটাই তো জীবন, আর তাতেও কতকত রকমের সমস্যা! একটা মানুষের কয়েকটা জীবন হলে মানুষটা বাঁচত কীকরে, কে জানে! এইসব থেকে দূরে থাকলে কী ক্ষতি হয়? না, দূরে থাকতে চাইলেও দূরে থাকা যায় না। কারণ, অনেক কাজ বাকি। এই কাজগুলি করতে না পারলে খুব ঝামেলা হয়ে যাবে। খুব পিছিয়ে পড়ব। কিন্তু, যেমন-যেমন প্ল্যান করে রাখি, তেমন-তেমন করে কি সব হয়? হয় না। কিছুই হয় না, তা নয়; আংশিক হয়। আর সে আংশিক দিয়ে কিছুই হয় না। তাই, রাজ্যের চিন্তারা মাথায় কিলবিল করতে থাকে। এবং, করতে থাকবে।

প্রত্যেকটা জিনিসের একটা সীমাবদ্ধতা আছে। আচ্ছা, মনেরও কি আছে? না, আমাদের মনের কোনও সীমাবদ্ধতা নেই। অশান্ত মন যখন যা ইচ্ছা, তা-ই ভাবে। কেন ভাবে, কীভাবে ভাবে, ভাবা আদৌ ঠিক কিনা, ভাবলেও কতটুকু ভাবলে কিছু হবে না, তা জানা হয় না, কিংবা জানা যায় না। মাত্রা ছাড়া অক্ষর হয়? হ্যাঁ, হয় তো! চিন্তা ছাড়া মানুষ হয়? হয় হয়। কারও-কারও মাথায় চিন্তা থাকে না, থাকে ভুল চিন্তা, বাজে চিন্তা আর উদ্ভট চিন্তা। তবে কি ওসব থেকে নিস্তার নেই-ই? আছে, মনকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। কিন্তু নিজের মনের ভেতরে যখন ঝড় ওঠে, তখন কীভাবে সেটা শান্ত করা যায়? বুঝতে হয়, ঝড়টা কীসের! সেটাই বা কতটুকু ঠিকঠাক বোঝা যায়? ঝড় যেমনই হোক না কেন, সেটাকে সামাল দিতেদিতে অনেকিছুই হারিয়ে ফেলি আমরা। কাছের মানুষ, আপন মানুষ, এবং তার মূল্যবান সময়। বড্ড একা লাগে তখন নিজেকে। সেই একাকীত্বটা বড় অদ্ভুত ধরনের। একটা সময়ে একা থাকতে থাকতে মানুষ হাঁপিয়ে ওঠে, সেটা থেকে বেরিয়ে আসতে চায়। সবকিছুকে ওলটপালট করে দিতে ইচ্ছে করে। আবার সেটাও দোষ সমাজের চোখে। একা থাকা দোষ, একা না-থাকাও দোষ। চুপ থাকা দোষ, কথা বলাও দোষ। আচ্ছা, আমরা সবাই ইদানিং এতো এতো দোষের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি কেন?

জীবনটা হঠাৎ-হঠাৎ এতো থমকে দাঁড়ায় কেন? আশেপাশের পরিচিত পৃথিবীটা ক্ষণেক্ষণে বদলে অমন নিষ্ঠুরভাবে বিদ্রূপ করে কেন? যেতে হবে, জানি। যাবোও। কিন্তু কোথায়? দূরে? কতদূরে? কতদূর গেলে পরে দূরে যাওয়া হয়? মাত্রই তো শুরু করলাম পথচলা। এখনই এতো হতাশা কেন? কেন জীবনটা বাজেবাজে লাগে? অতোদূর না ভাবলাম। এই যে লিখে যাচ্ছি, এই হাতের লেখাটাই বা এতো বাজে কেন?

দুস্তর স্বপ্ন আর নির্ঘুম রাত নিয়ে কেটেযাওয়া প্রতিটি মুহূর্ত যেন মনটাকে অজগরের মতো আষ্টেপৃষ্ঠে পেঁচিয়েপেঁচিয়ে দম আটকে দেয়। বড় বেশি বাস্তবতার মাঝে থেকে অবাস্তব চিন্তাভাবনা কীভাবে মাথায় ঘোরে, সেটাই মাথায় আসে না। কেন মাঝেমাঝে এতোটা সরে যাই সহজ পথ থেকে? কেন ইচ্ছে করেই ভাল থাকি না? কেন সবসময়ই অনিশ্চয়তার পথেই অনির্দেশ্য যাত্রা? যেখানে আছি, যা নিয়ে আছি, তা-ই কি যথেষ্ট নয়? কেন এতো রাজ্যজয়ের চিন্তা মাথায় আসে? অন্যের রাজ্য অন্যেরই থাক না! আমার কী এসে যায় যদি সবাইই পুরো পৃথিবীটাকেই মুঠোয় নিয়েও ঘোরে? আমি নাহয় আমার ছোট্ট কুটিরের উঠোনেই নিভৃত সুখেই ঘুমিয়ে থাকব আমার মতো করেই; যুগের পর যুগ। মাথা কেন এতকিছু বোঝাই হয়ে থাকে? এ থেকে নিস্তার নেই নাকি? এর তো কোনও শেষ নেই। তাহলে কি সারাজীবনটাই বারবারই এসবের মুখোমুখি হয়ে কাটিয়ে দিতে হবে? যেটা সত্যি ভাললাগার দরকার নেই, সেটা কেন ভাল লাগতে শুরু করবে? এতোটা বেহায়া বেয়াড়া মন নিয়ে মানুষ বাঁচে কীকরে?

আরে আজব! ভাললাগা মন্দলাগার কি কোনও স্টেশন আছে নাকি? তবে হ্যাঁ, ভাললাগা আর ভালোবাসা, দুটো সম্পূর্ণ ভিন্ন ব্যাপার। তাহলে কেন দুটোর আসাযাওয়ার মধ্যে এতো গণ্ডগোল? ভালোবাসতে ইচ্ছে না করলে, কিংবা ভালোবাসা না গেলে ভাললাগতে হবে কোন সুখে? ভাললাগার সীমানাপ্রাচীর দেখা যায় না কেন? গেলে ভাল হতো। তাহলে সেটা অতিক্রম করতে সাহস পেত না কেউই। অসহ্য! ফাতরামিরও একটা সীমা থাকা উচিত! সেই কোন ছোটবেলায় সুনীল, সমরেশ, শীর্ষেন্দুকে ভালোবাসতে-বাসতে ভুলেখেয়ে বসে আছি! আর তো এখন কোথাকার কী অদ্ভুত আজাইরা সব……………..!! নাহ! নিজেকে এতোটা লেইম করে দেয়া যায় না। আমার হয়েছেটা কী? আশ্চর্য! নাকি, কিছুই হয়নি! এতো ঢংয়ের ভাবই খেলে কেন মাথায়? আমি আসলেই একটা যাচ্ছেতাই! পুরাই!

হৃদয়টাকে, দমানোর চেষ্টা চলছিল, কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর পারা গেল না। পড়ার টেবিলের সামনে দেয়ালের গায়ে কাগজ দিলাম সেঁটে—-আমি তোমার সঙ্গে বেঁধেছি আমার প্রাণ সুরের বাঁধনে………বোল্ড হরফে! অপ্রতিরোধ্য অনুভূতির রাজত্ব শুরু!!

বুকের ভেতরটায় কেমন একটা চিনচিনে ব্যথা হয় যখন তোমার কথা ভাবি। জানি, আমাদের ভবিষ্যতটা অসম্ভব, কিন্তু বর্তমান ব্যথাটা সম্ভব। হচ্ছেই তো, তাই সম্ভব। ব্যথাটা দিনদিন আরও বাড়বে, বেড়েই যাবে, তবুও এই ব্যথার শেষ নেই জেনেও ব্যথাটা বের করে দিতে পারছি না। কেন পারছি না? তা তো জানি না। আচ্ছা, মানুষের মনটা কী দিয়ে তৈরি? মন বলে নাকি কিছুই নেই, যা করার, সবই করে ব্রেইন, তাহলে এতোএতো অনুভূতি আসেই বা কোত্থেকে? বুদ্ধি থেকে? অসহ্য একটা যন্ত্রণা নিয়ে সেটা বয়ে বেড়াতে হয়। এই বয়ে বেড়ানোটাও একটা যন্ত্রণা। কী করা যায় এর থেকে মুক্তি পেতে? সবই তো নিজে ভালথাকার জন্য। তাহলে অন্যের জন্য কী? অন্যের জন্য নিজের মধ্যে যে অনুভূতি, সেটা কি অন্যের, নাকি নিজের? ও আচ্ছা, তুমি তো একজনের নও। তুমি সবার। তবে কেন তোমাকে নিজের করে ভাবতে ভাল লাগছে? নাকি, ওই হতচ্ছাড়া মনই ভাল লাগাচ্ছে? জীবনে যা চাইনি, তা-ই হয় আমার সাথে। আমার কখনওই একজন ভুল মানুষকে নিজের মতো করে ভাবতে কিংবা মনের মধ্যে পুষতে ভাল লাগত না, বা মনটাকে ওরকম কিছু চাওয়াতামও না। কারণ, সে হয়তো অন্য কারও, এমনকি, আমি ছাড়া সবার, কিন্তু আমার তো নয়। যে সবার, তাকে আমি আলাদা করতে পারব না সবার থেকে। তাকে সবাইই চায়, পাশে থাকতে চায়, সঙ্গ পেতে চায়, সঙ্গী হতে চায়। তাকে শুধুই সম্মান করতে পছন্দ করা যায়, পছন্দ করতে অনুভব করা যায়, কিন্তু কখনওই ভালোবাসতে চাওয়া যায় না। আমি সবসময়ই চাইতাম, আমি তাকেই ভালোবাসবো, যে শুধু আমাকেই ভালোবাসবে, আর কাউকে নয়। এবং, আমিও শুধুই তাকেই ভালোবাসবো……..ভালোবেসে যাবো।

কিন্তু এসব কী হচ্ছে আমার সাথে? এ বুড়ো বয়সের অসহ্য ভীমরতি আমার লাইফটা হেল করে দিচ্ছে। ভুলতে পারছি না তোমায়। কেন এমন হল? বিশ্বাস কর, আমি সত্যিই চাইনি তোমায় ভালোবাসতে…………কেন তবে সারাদিনই তোমায় ভাবতে এতো ভাল লাগে? খুব আজেবাজে অভ্যাস রপ্ত করে ফেলেছি তোমায় ভালোবেসে। এরকম আগে কখনওই করিনি আমি। আমি মন থেকেই বিশ্বাস করতাম, আমি খুবই বাস্তববাদী। কিন্তু এখন আমার কী হয়েছে, কেন হয়েছে, আমি তার কিছুই জানি না। শুধু জানি, অনেক কষ্ট হয় আমার। মুখটা গোমড়া হয়ে থাকে সবসময়ই। দীর্ঘশ্বাসে ভরে ওঠে বুকটা। মরুভূমির বালির তপ্ত নিঃশ্বাস কি এর চাইতেও দুর্বিষহ? সত্যিই খুব অস্থির অসহ্য অনুভূতি এটা!!

প্রথমত, তোমার নাম আমার সার্চলিস্টের প্রথমেই আছে, থাকবে। কিন্তু যখন ফলোয়ার ছিলাম বা হয়েছিলাম, তখন এমনটা ছিল না। প্রেমে পড়ার পর থেকেই এমনটা করছি। আমার ফেসবুকে আসা, থাকা, সবকিছুই এখন তুমিকেন্দ্রিক হয়ে গেছে। তোমাকে আমার ফেসবুকের শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি, না, ভুল বললাম, আমার ফেসবুকের শ্রেষ্ঠ প্রাধান্যপ্রাপ্ত ব্যক্তির পুরস্কার দেয়া উচিত। এটা দিনদিন বাড়ছে, জানি, বেড়েই যাবে। বোধহয়, প্রেম জিনিসটা এমনই—দিনদিন দুর্বল থেকে দুর্বলতর করে দেয়।

দ্বিতীয়ত, তোমার ছবি দেখা আমার নেশা হয়ে গেছে। একবার দেখা, দুইবার দেখা, বারবার দেখা। একজন মানুষ যত অসহ্য রকমের সুন্দরই হোক না কেন, একটা ছবি এতবার দেখার কিছুই নেই। তবুও দেখি। তুমি সুন্দর, তবে তুমি সুন্দর বলে তোমার ছবি নিয়ে পড়ে থাকি না, তোমাকে ভালোবাসি বলেই তোমার ছবি নিয়ে পড়ে থাকি। এখন একটা নতুন অভ্যেস হয়েছে। সেটা হল, জুম করে স্ক্রিনশট নেয়া, কিংবা স্ক্রিনশট নিয়ে জুম করে করে দেখা। এতোটা উৎসাহ আমার কোনওকালেই ছিল না। এতো অদ্ভুত হয়ে গেছি আমি? এতো ইমোশনাল কি আমি আগেও ছিলাম? মনে পড়ে নাতো! ভাবতেও অবিশ্বাস্য লাগে। সর্বকালের, সর্বরাজ্যের, সবচাইতে মুডি, রাগি, গোমড়ামুখী মেয়েটা এখন এমন হয়ে গেছে? প্রেমের ক্ষেত্রে এমন উল্টাপাল্টা কাজ করতেই হবে, এমনকিছু নিয়ম আছে নাকি? প্রেম কি তাহলে সবকিছুই করিয়ে নেয়? প্রেমে পড়লে কি ইমোশনটা কোনও ধরনের ব্যাকরণ না মেনেই দৌড়াতে শুরু করে? প্রেমে পড়ে গেলে নির্লজ্জ হতেও খারাপ লাগে না। প্রেমে পড়ে গেলে অসহায়ের মতো আত্মসমর্পণ করতেও আত্মসম্মানবোধে বাধে না। আমি এসব কী করছি? আমি কী করবো, আমাকে বলে দাও না……………আমি তো আমার জন্য কিছুই করতে পারছি না। নিজেকে দমাতে পারছি না কোনওভাবেই। একটা রহস্যময় চক্রে পড়ে গেছি। ওটা ঘুরেই চলেছে, সাথে আমিও। আমাকে এখান থেকে বের কর প্লিজ………..

তৃতীয়ত, গণহারে তোমার সব পোস্টই শেয়ার করি, বেশিরভাগই অবশ্য ‘অনলি মি’ দিয়ে। তোমার যেকোনও পোস্টকেই ভাল লাগিয়ে ফেলার এক ধরনের আশ্চর্য প্রতিভা জন্মে গেছে আমার মধ্যে। আমি তোমার ভাবনাকেই ভালোবাসি। তোমার যেকোনওকিছুকেই শেয়ার করতে ভীষণ ভাল লাগে আমার। তোমার পোস্টগুলির একটা ক্ষমতা আছে, জানো? মনের অজান্তেই তোমার পোস্টগুলি আমার ঠোঁটের কোণে হাসি এনে দেয়। হাসতে না চাইলেও হাসতে হয়। সে হাসিতে ভাললাগা আর ‘ধরা পড়ে গেলাম নাকি কারও চোখে?’ টাইপ সংকোচ, দুটোই মেশানো থাকে। আবার এমন কিছু কিছু পোস্ট আছে, যেগুলি পড়লে চোখ দিয়ে অকারণেই জল পড়তে থাকে টপটপ করে। আর কিছু লেখা পড়ার পর লেখাগুলির ওপর চুপিচুপি চুমু খেতে থাকি। এসব স্বাভাবিক কার্যকলাপের প্রতি কেন আমার অস্বাভাবিক আচরণ, সেটার ব্যাখ্যা একমাত্র ঈশ্বরই দিতে পারবেন। কারণ, একটা সত্যি কথা কী, তুমিই প্রথম মানুষ নও, যার এই অসাধারণ কথাগুলিকে খুবই সাধারণভাবে বলে ফেলতে পারার ক্ষমতা আছে। আরও অনেকেই এটা পারে, এবং তাদের অনেককেই আমি চিনি। কই, ওদের লেখা পড়ার সময় তো আমার এরকম লাগেনি! ওদের কথাগুলিকে ভালোবেসে চুমু খাইনি। যেটা করেছি, সেটা হল, একটা ভাল লেখাকে বারবার পড়েছি মাত্র। আমি সমরেশের অনেক লেখার পাগল। ‘মনের মত মন’ কতবার যে পড়েছি! কই মনে পড়ে নাতো, কখনও চুমু খেয়েছি বলে! আমি মাহমুদুল হকের কালো বরফ’এর পাগল। হুমায়ূনের শঙ্খনীল কারাগার’এর পাগল। কই কখনও চুমু খাইনি তো! শুধু তোমার লেখার কয়েকটি লাইন আমাকে বাধ্য করেছে সেগুলিকে ঠোঁটের কাছে আনতে। এর মানে কী? তবে কি কেউকেউ কারওকারও কাছে অনেক বড় লেখক? নাকি, ভালোবাসার লেখক? আমি এসব ভাবতে-ভাবতেও কিছু খুঁজে পাই না। বল, কী করবো আমি?

চতুর্থত, সময় পেলেই, মন খারাপ হলেই, তোমার ভয়েস শুনি। তুমি কথা বলার সময় আরও সুন্দর হয়ে যাও। অনেক সুন্দর হয়ে যায় তোমার সবকিছুই। খুব শান্তি লাগে তোমাকে শুনতে। একটা কথা বলি। আমার অসম্ভব রকমের প্রিয় দুএকটা গানের পর যদি কোনওকিছু সুর হয়ে বেজে থাকে আমার হৃদয়ে, সেটা হল তোমার কথা। আমি জানি, একদিন তুমি অনেক বড় কেউ হয়ে যাবে। পৃথিবীসুদ্ধ মানুষ মুগ্ধ হয়ে শুনবে তোমার কথা। সেদিন আমি দূর থেকে তোমাকে শুনব, শুধুই ভালোবেসে যাবো, শ্রদ্ধা করে যাবো। সবকিছু পাওয়া হয় না এক জীবনে। তবুও, কিছু আমার কিছু অপূর্ণতাকে, দূর থেকে, ওদের নিজেদের নিয়মে পূর্ণ হতে দেখলে ভাল লাগে। অনেককিছুই লিখে ফেলতে পারি আমার পূর্ণতা আর অপূর্ণতার হিসেব নিয়ে। কিন্তু আর কিছুই লিখতে পারছি না। সব কথা লেখা যায় না, কিছু কথা শুধু মনেমনেই বলতে হয়। ভাগ্যিস, সবকিছু লেখা যায় না। গেলে, আয়নার সামনে চুল আঁচড়াতেও দাঁড়াতে পারতাম না।

কয়েকদিন পর।

তোমাকে নিয়ে লিখি না, কিংবা তোমাকে লিখি না, বহুদিন হয়ে গেল। আজ লিখতে ইচ্ছে করছে। কেমন আছ? নিশ্চয়ই গাড়ি থেকে নামলে এখন? নাকি, নামবে? সকালে, উসকোখুসকো চুলে তোমার শুষ্ক, শুকনো মুখটাও দেখতে ভীষণ ভাল লাগে। একদিন লুকিয়ে দেখেছিলাম। এক পলকের জন্য। ওটাও অনেক আমার কাছে! বেশিক্ষণ দেখতে পারিনি, কারণ দেখতে চাইনি। এতো সহজেই, তোমাকে যেরকম করে চাইতাম কখনও-কখনও, ঠিক সেরকম করেই দেখতে পাবো, সেকথা আমি কল্পনাও করিনি। সত্যিই জীবনে বেঁচে থাকলে অনেককিছুই হয়। যদিও মরতে আমি কখনওই চাইনি, তবুও ওরকম করে ভাবতে ভাল লাগে। ওরকম করে ভাবলে নিজের মধ্যেই কেমন জানি এক ধরনের শক্তি ভর করে। আমি বেঁচে আছি নিজের জন্য নয়, মা-বাবা’র জন্য নয়, পরিবারের জন্য নয়; বেঁচে আছি স্রেফ ঈশ্বরের জন্য। উনার ইচ্ছে, আমাকে বাঁচিয়ে রাখা। সে ইচ্ছে এমনিএমনি নয়। এটা আমি আরও বেশি করে বিশ্বাস করেছি তোমাকে পাওয়ার পর থেকে। রেগে যেয়ো না, প্লিজ! পেয়েছি বলে ভাবতে ভাল লাগে বলেই, ‘পাওয়ার পর থেকে’ এভাবে লিখেছি। আচ্ছা, ঠিক করে লিখলাম, ‘দেখা হওয়ার পর থেকে’। তুমি আমার জন্য ঈশ্বরপ্রদত্ত অমৃত। ঈশ্বরকে অনেক ধন্যবাদ। কিন্তু আরেকটা কথা মেনে না নিলে আত্মপ্রবঞ্চনা করা হয়। তুমি আমার জন্য অমৃত হলেও আমার পাওনা ন্যাচারাল জাস্টিস। কেন এরকম করে বললাম? সেকথা পরে বলছি।

তোমার জন্য বেশিরভাগ সময় মন খারাপ থাকে আমার। আবার ভালও আছি, জানো? একটু অন্যরকমের ভাল। তুমি আমাকে অনেককিছু শিখিয়েছ। এই ভবঘুরে, বাউন্ডুলে মেয়েটাকে আবার পড়াশোনা করতে বাধ্য করেছ। আমার জীবনটা এলোমেলো করে দিয়েছ, আবার গুছিয়েও দিয়েছ। এই অবাধ্য মেয়েটা এই পৃথিবীতে যদি একজনও মানুষের সব কথাই শোনে, সে হচ্ছ তুমি। তোমায় আমি অনেকবেশিই ভালোবাসি। এই ভালোবাসাটা কোত্থেকে আসে, আমি জানি না। শুধু এইটুকু জানি, ভালথাকার জন্য তোমাকে ভালোবেসে যাওয়ার চাইতে ভাল কোনও অপশন এই মুহূর্তে আমার হাতে নেই। জানি, তোমার জন্য এই ভালোবাসা অহরহ। আমি বাসি কি বাসি না, সেটা কেয়ার করার সময়ই হয়তো তোমার নেই। বুঝি সবই, তবুও পারি না তোমায় মন থেকে দূরে রাখতে। মনটা বড় ভয়ংকর জিনিস। একবার বেয়াড়া হতে শুরু করলে বেয়াড়া হতেই থাকে, হতেই থাকে। সারাক্ষণই মনের মধ্যে তোমার ছবি এঁকে রাখি। তোমাকে যে কতরূপে ভাবি, যদি জানতে, তবে তুমি নিজেই লজ্জা পেয়ে যেতে। তোমার স্পর্শ অনুভব করি পরম আদরে। তোমার চাহনি আমাকে মাতাল করে দেয় প্রতিটি মুহূর্তে। তোমার কথা আমাকে আমার মধ্য থেকে বের করে দূরে কোথায় যেন নিয়ে যায়। তোমার সব লেখা, সব কথা মনের ঘরে হানা দিয়ে যায়। হৃদয়ের দরোজায় অতোবার কড়া নাড়লে দরোজা বন্ধ করে বসে থাকে কে, বলো? এ বড় অসহ্য যন্ত্রণা। জানি না কবে এ থেকে মুক্তি পাবো। খুবখুব অবান্তর তুমি। এসে যাও, ঘুরতে থাক, আর চলে যাও না কোথাও। অবশ্য, তোমারই বা কী দোষ? যা দোষ, সবই তো আমার। নিজেকে ধরে রাখতে চাইনি, পারিনি। বাঁধতে তো পারতামই, কিন্তু চাইনি। বোঝাতে পারিনি, বুঝতেও চাইনি।

সারাদিনই তোমাকে ভাবি, জানো? কেন ভাবি? না ভেবে পারি না, অন্যকিছু ভাবতে ভাল লাগে না। আসলে, আমার এখন আর কিছুই ভাল লাগে না। আমার কী কী জানি ভাল লাগত, একসময়। সেসবের কথা আর আমার মনে পড়ে না, তাই সেসব ভেবে ভাল থাকতে পারি না। আমি কি তাহলে তোমাকে ছাড়া আর অন্যকিছু ভাবতে ভুলে গেছি? ইদানিং পাগল মনে হয় নিজেকে। একটু পরপরই তোমার প্রোফাইল যাই। নতুন কিছুর খোঁজে নয়, না গিয়ে থাকতে পারি না, তাই যাই। তোমার প্রোফাইলে গেলে মনে হয়, তুমি সামনেই আছো, এইতো তোমাকেই ছুঁয়ে দেখছি। এই ভাবনা বড় আরাম দেয়, তাই যাই। নতুন কিছু পোস্ট করলেই কয়েকবার করে পড়ে ফেলি, হোক সেটা ছোট লেখা, কিংবা বড়। কম তো আর পাইনি তোমার কাছ থেকে। কখনও-কখনও ইনবক্সে তোমার উত্তর পেয়েছি, তোমার দেখা পেয়েছি, তোমার সান্নিধ্য পেয়েছি, তোমার বন্ধুতালিকায় জায়গা দিয়েছ আমাকে। আরও কতকত কী? ভাবতেও পারবে না তুমি, তুমি কতজনকেই কতকিছু দিয়ে দাও। আমি ভাবি, এতো সৌভাগ্য আমি কী করে পেলাম? তবু দেখ, কী বেহায়া আমি! আরও, আরও চাই আমার। অযাচিত ধন পেতেপেতে মানুষ বেহায়া হয়ে ওঠে। একসময় তা আর না পেলে দাতাকে খুনই করতে ইচ্ছে করে। অথচ, যার কাছ থেকে সে কখনওই কিছু পেলো না, তার প্রতি মনে কোনও রাগ আসে না। আসলেই মানুষ বড্ডো লোভী প্রাণী। তুমি কী করছ, কোথায় আছ, কী খাচ্ছ, কী ভাবছ, শরীর কেমন আছে, এসব জানার জন্য আমার মনটা ব্যাকুল হয়ে থাকে। মাঝেমাঝে এতোটাই অসহায় হয়ে পড়ি, নিজেকে সামলানোটা খুবই কষ্টের মনে হয়। ছটফট লাগে, অস্থির হয়ে উঠি। পারি না থাকতে। তাই তোমাকে নক করে ফেলি। কিন্তু তুমি রিপ্লাই দাও না। আচ্ছা, দেবেই বা কেন? কী-ই বা বলবে আমার পাগলামির উত্তরে? রাজ্যের সব আলতুফালতু প্রশ্নের উত্তর কেনই বা দেবে তুমি? কে আমি তোমার কাছে? আমার প্রশ্নের উত্তর তোমাকে দিতেই হবে কেন? তুমি আমার জন্য কিছুই করতে বাধ্য নও। এটাই পৃথিবীর সবচাইতে অপ্রিয় অসহ্য সত্য। ঠিক বলেছি না?

বিষণ্ণ দুঃখটা শুধু তাকিয়েই থাকে। কিচ্ছু করার থাকে না, বলার থাকে না, সুস্থভাবে ভাবার থাকে না। এই যেমন, এখনও, তাকিয়েই আছে। আচ্ছা, সুখ নাকি ঈশ্বর দেন। তাহলে দুঃখ কে দেন? ঈশ্বরই? নাকি, ঈশ্বরের কোনও এক প্রতিদ্বন্দ্বী? নিজের জন্য প্রার্থনা করি, আমার যেন কষ্ট সহ্য করার ক্ষমতা আরও বেড়ে যায়। দুঃখ বাড়লে তো এর সাথে সমানুপাতিক হারে সহ্যশক্তিও বাড়া উচিত, তাই না?

কী করছ এখন? পড়ছ? নাকি, ভাবছ কিছু একটা? কীভাবে থাক অতো একাএকা? তোমাকে দেখলে মনে হয়, তুমি একা থাকতেই জন্মেছ। আচ্ছা, তুমি কি কাউকে সহ্য করতে পারো না, নাকি কেউ তোমাকে সহ্য করতে পারে না? এই যে আমাকে দেখো, আমি নিজেকে ছাড়া দুনিয়ার আর সবাইকেই সহ্য করতে পারি, তাই আমি একা থাকি! যে নিজেকে সহ্য করতে পারে না, তার পক্ষে কারও সাথে থাকা সম্ভব নয়। এক মিনিট! একটু ভুল হল। আমি একমাত্র তোমার সব অসহ্য কিছুও সহ্য করতে পারি। তোমার জন্য আমার খুব চিন্তা হয়, মায়া হয়। খুব জানতে ইচ্ছে করে, কী খাও রাতে? নাকি, কেউ রান্না করে দেয় না বলে, বাইরে গিয়ে খেয়ে আসার আলসেমি থেকে না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়? আচ্ছা, তুমি রাঁধতে পারো? তুমি রাতের বেলা ঘুমাও কীভাবে? চিত হয়ে? নাকি, উপুড় হয়ে? নাকি, এক পাশ ফিরে? পায়ের নিচে বালিশ রাখো আরেকটা? মাথার নিচে উঁচু বালিশ দাও, নাকি নিচু বালিশ? নাকি দুটো নিচু বালিশ একসাথে ব্যবহার কর? মশারিটা কি নিজেই খাটাও? তোমার সম্পর্কে কতকিছু যে জানতে ইচ্ছে করে আমার! এসব কি কখনওই জানতে পারব না? এসব জানার বুদ্ধি কী? আদৌ কোনও উপায় আছে জানার? জানতেই হবে কেন? না জানলে কী হবে? তোমাকে কি কখনওই আমি আমার অন্তরালে রাখতে পারব না ইচ্ছেমত? এমন কেন তুমি? একটু অন্যরকম, মানে, আমার মনের মতন হলে কী হতো? আরও কতকাল এরকম হয়ে থাকবে? আমি কি প্রতীক্ষা করবো? আরও কতদিন তোমার তপস্যা করলে তুমি ধরা দেবে? তুমি কি শেষ পর্যন্ত এমনই থেকে যাবে? অবশ্য, একদিক দিয়ে তুমি যা করছ, ভালই করছ। প্রেমটেম করলে, অতো কাজ করতে পারতে না। যারা লিখতে পারে না, পড়ে না, গান শোনে না, মুভি দেখে না, লোকের জন্য অতো কাজ করে না, তাদের হাতে প্রেম করার জন্য অফুরান সময়! প্রেম একটা ফালতু জিনিস, আর নিজের মনেমনে প্রেম তো রীতিমতো নিজেকে খুন করে ফেলার মনোরম আয়োজন!

এই মানুষ! কবে বিয়ে করবে? যেদিন বিয়ে করে বউসহ ছবি আপলোড করবে, সেদিন আমি কী করবো? সেদিনের জন্য আমার একটা প্ল্যান থাকা দরকার। সেদিন কি কষ্ট হবে? মানে, খুব কষ্ট? নাকি, অসম্ভব কষ্টে মানুষের আর কোনও কষ্টই হয় না? ঈশ্বরের কাছে একটাই প্রার্থনা, উনি যেন আমাকে সেই অসহ্য কষ্ট সহ্য করার শক্তি দেন। তোমাকে ভেবেভেবে রাতদিন পার হচ্ছে ইদানিং। বারবারই মনে হচ্ছে, তোমাকে যেন হারিয়ে ফেলছি! যা আমার নেইই, সেটা হারানোর ভয়ও যে এতোটা তীব্র হতে পারে, আগে বুঝিনি। কোনওভাবেই তোমাকে মাথা থেকে বাইরে রাখতে পারি না বেশিক্ষণ। আর তোমার ওই অপূর্ব চোখদুটোর কথা ভাবলে তো আরও পারি না। সিরিয়াসলিই বলছি, অমন হরিণের চোখ আর কোনও মানুষের নেই। বিভিন্ন ধরনের আকৃতি ও সামঞ্জস্য হিসেব করে চিত্রকররা অবয়বের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ আঁকে। চোখের কথাই ধরি। কারও পটলচেরা চোখ, কারও মীনাক্ষী, কারও কমলনয়ন, কারও খঞ্জননয়ন, এরকম আরও কী কী জানি আছে। তোমারটা মৃগনয়ন। এবং, মৃগনয়ন আর পটলচেরা চোখের মানুষগুলি বেশি সুন্দর হয়। তোমার ওই মায়ামাখা মৃগনয়ন যে কারওই মনকাড়ার জন্য যথেষ্ট। নেশাধরানো চোখ তোমার। ও চোখে একবার চোখ পড়লেই সর্বনাশ! শুধু তাকিয়ে থাকতেই ইচ্ছে করে। কী বলছি আমি এসব? লজ্জাও নেই আমার! প্রেমে পড়লে এভাবে করে লজ্জা চলে যেতে হয়? ধ্যত! অতো গভীরভাবে তোমার চোখে ডুব দেয়াটা মোটেও ঠিক হয়নি আমার।

আচ্ছা, বলো না, কেমনটা লাগে? তোমাকে জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করে, এই! কেমন আছ? আমার কথা তোমার মনে আসে না কেন? নাকি, ইচ্ছে করেই আন না? একটু আনলে কী হয়? তোমাকে নিয়ে প্রশ্নের শেষ নেই আমার। অথচ, আমার কথা তোমার মনেও আসে না। আমার সমস্তটা জুড়ে কেবলই তোমার অস্তিত্ব, অথচ আমার অস্তিত্ব নিয়ে তোমার দুই পয়সারও মাথাব্যথা নেই। কেন এমন হয়, বলতে পারো? কেন বারবারই এমন লাগামহীন কৌতূহল মাথায় চেপে বসে, আর ছাড়েই না? খুবখুব অসহ্য লাগে এসব! তুমি তো ভালই আছ তোমার মতন করে, তবুও কেন আমার এমন ভিখিরির মতন হয়েই থাকতে হবে? এটা কী ধরনের বাস্তবতা? এমন কোনও নিয়ম করা যায় না, ভাল অনুভব করলে দুজনই একসাথে ভাল অনুভব করবে, আর খারাপ অনুভব করলে দুজন একসাথেই খারাপ অনুভব করবে? তাহলে তো সব ঝামেলা মিটে যেত। আমার নিজেকে খুব খুব খুব ছোট লাগে, নিজের কাছে।

নাহ্‌! অনেক হয়েছে। এনাফ ইজ এনাফ! আর লিখব না কিছুই। ভাবলে মায়া বাড়ে, লিখলে মায়া আরও বেশি বাড়ে। ভুল মানুষের জন্য মায়া বাড়ানো মানুষের সবচাইতে বাজে স্বভাব। মায়া বাড়ানোর কাজগুলি করা বন্ধ করে দিতে হবে আস্তেআস্তে। বন্ধ করে দিলে কী হবে? না-বলা কথাগুলি মনের মধ্যে জমেজমে বরফের মতন শক্ত হয়ে যাবে। মনের মধ্যে বরফ আটকে রেখে বেশিদিন বাঁচা যায় না। সেটাকে গলিয়ে ফেলতে হয়। কীভাবে? চোখের জল ঝরিয়ে। ওটা তো আরও বিপদ! আমি কী করবো? কোন দিকে যাবো? কিছু তো একটা উপায় বলো! তোমার মত ভাল থাকতে চাই না, বিশ্বাস কর, স্রেফ বেঁচে থাকলেও অনেক পাওয়া হয়ে যাবে আমার। বেঁচে কীভাবে থাকতে হয় একসময় জানতাম। সেসব দিনগুলিকে মিস করছি ভীষণ। আমি ফিরে যেতে চাই অতীতের সুন্দর দিনগুলিতে, যখন আমার কারও কথা ভেবে মনখারাপ হতো না। এসব তোমাকে বলছি কেন, জানি না। শুধু জানি, আমি চাই, তুমি ভাল থাক। ভাল থেকো, কেমন?

কেমন আছ? নিশ্চয়ই ভাল। একাএকা কীকরে থাক তুমি? বইয়ের সাথে থাক? জানি, ভালই থাক। কিছু বই, কিছু মুভি, কিছু সুর, অনেকখানি ফেসবুক, একগাদা হতচ্ছাড়া নায়িকা, একদল ভক্ত—সব মিলিয়ে তোমারই তো দিন! ইদানিং তো তোমার মাথায় কোন এক সুন্দরীর নেশা ঢুকেছে, যাকে নিয়ে দিনের পর দিন…………..জানো, আগে রাগ হতো, এখন আর এসবে রাগও হয় না। আমি তোমার সবকিছুতেই নিজেকে মানিয়ে নিয়েছি।

যাকগে! আমার কী? তোমার ব্যক্তিগত ভাবনায়, তোমার নিজস্ব পৃথিবীটাতে আমি অনধিকার প্রবেশ না করি। তুমি কেমন জানি ফ্যাকাসে হয়ে যাচ্ছ। নিজের যত্ন নাও না, না? অতো সুন্দর চোখদুটোয় অমন ক্লান্ত, ঘুমহীন দৃষ্টি মানায়? ইদানিং ঠিকমতো খাও না, ঘুমাও না, নিজের দিকে খেয়াল রাখো না। বয়স তো আর কমছে না, বাড়ছে। নিজেকে ঠিক না রাখলে কীভাবে হবে, বলো? তুমি তো এখন শুধু নিজের জন্য বাঁচতে পারো না। অনেকগুলি স্বপ্ন বুনে দেয়ার জন্য তোমাকে বাঁচতে হবে। তুমি বেঁচে থেকো আরও বহুদিন, বহুমাস, বহুবছর, বহুসময়। আচ্ছা, তুমি প্রেমেটেমে পড়নি তো? প্লিজ পড়ো না, কেমন? যাকে ভালোবাসি, হোক সেটা একতরফাই, সে এখনও কারও প্রেমে পড়েনি ভাবতে বড় আরাম লাগে। আমাকে ভালো না বাসুক, ঠিক আছে। তাই বলে অন্য কাউকে ভালোবাসতেই হবে কেন? না, আমি ওকে কাউকেই ভালোবাসতে দেবো না। হয় আমাকে ভালোবাসবে, নতুবা আমার ভালোবাসা সহ্য করবে। এর বাইরে আর কিছুই না। ভালো নাহয় না-ই বা বাসল, তবু ও আমাকে সহ্য করুক। আমি ওর জীবন থেকে যাবো না, যাবো না, যাবো না…………যাবোই না! হুহ্‌!

কিছুই ভাল লাগে না। বুকের ভেতরে চিনচিনে ব্যথাটা সারাক্ষণই থাকে; ছেড়ে যায় না কখনওই—এতোটাই বিশ্বস্ত! একা থাকতে পারি না বেশিক্ষণ। মাথার ভেতর তুমি, শুধুই তুমিই ভনভন করতে থাক সারাদিন। খুব অসহায় বোধ করি। কতক্ষণ এভাবে চলে, আবার কতক্ষণ অন্য কাজে ব্যস্ত থাকার অভিনয় করি। কিন্তু বেশি সময় ধরে ওই অভিনয়টাও করতে পারি না, তুমি ঠিকই এসে গুঁতোগুঁতি শুরু করে দাও। কেন রে ভাই? তুমি তো তোমার মতোই আছ। আমাকে আমার মতো থাকতে দাও না! তোমাকে মনে পড়লেই মনটা বিষণ্ণ হয়ে যায়। তবুও কেন তোমাকেই মনে পড়তে হবে আমার? পারি না, জানো, একদমই পারি না তোমাকে ভুলে থাকতে। তুমি আমার মনের মধ্যেই থাক সারাদিন সারাক্ষণ। আমি তোমার জন্য স্ট্যাটাস দিই না, তোমার স্ট্যাটাসে কমেন্টও করি না। কোনওকিছুতেই তোমাকে ট্যাগ করি না, তোমাকে ননস্টপ বিরক্ত করে যাই না। তোমাকে ভালোবাসা দেখানোর মতো কিছুই করি না প্রকাশ্যে। এবং, কখনও করতেও চাই না। আমি অন্য সবার মতো তোমাকে কিছু দিতে, দেখাতে, করতে, কিংবা তোমার জন্য মরতে হয়তো পারব না, কিন্তু বিশ্বাস করো, তোমাকে আমি ভুলতে পারছি না, ভুলে থাকতে পারছি না। গত চার থেকে পাঁচ মাস ধরে এমনটা হচ্ছে আমার। কাউকেই কিছু বুঝতে দিই না। সত্যিই কেউ জানে না, আমি ভেতরে-ভেতরে কেমন আছি। কেউ কোনওদিনই বুঝবেও না। বুকের ভেতর একজনের জন্য হাহাকার আমার। ভাগ্যিস হাহাকারের তীব্রতার শব্দ বাইরে বেরিয়ে আসে না। সে শব্দ বেরিয়ে এলে কী যে হত! কী এক অসহ্য যন্ত্রণার মধ্যে আছি, তা তোমাকে বোঝাতে পারব না। তুমি সামনে পড়ে গেলে নির্লিপ্ত থাকার অভিনয়টাও শিখে গেছি আমি, জানো? তুমি আমার অন্তরালের খোঁজ কখনওই পাবে না, কখনওই না!

তোমার ইনবক্সে যাই একটু পরপরই। কখন অ্যাকটিভ ছিলে, কতক্ষণ আগে অ্যাকটিভ ছিলে, এসব সবসময়ই চেক করি। তোমার অ্যাকটিভ থাকার রুটিন আমার চাইতে ভালভাবে আর কেউ বলতে পারবে না। যখনই দেখি, Active Now লেখাটা, তখন কী মনে হয় জানো? মনে হয়, বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করে, এইতো তুমি আমার সাথেই, আমার সামনেই বসে আছ। কিন্তু তোমাকে ধরা যাবে না, ধরা যায় না; ছুঁতে ইচ্ছে করতেই থাকবে, কিন্তু ছোঁয়া যাবে না; বড্ড দুর্লভ তুমি! অবশ্য, তুমি কেনই বা ধরা দেবে? ওরকম করার কোনও কারণই তো নেই তোমার। কারণ, আমি জানি, তোমাকে সারাদিন মাথায় রেখে দেয়ার জন্য আমার কাছে হাজারটা কারণ আছে, কিন্তু আমাকে মনে রাখার, কিংবা একটিবারের জন্যও মনে করার একটাও কারণ নেই তোমার কাছে। একটা বিন্দুতে যতটা জায়গা, তার সহস্রভাগের একভাগ জায়গাও তুমি রাখতে রাজি নও আমার জন্য। তবুও আমি খুশি। তোমার কিছুটা সান্নিধ্য আমি পেয়েছি, তুমি তা আমায় দিয়েছ। ঈশ্বরের প্রসাদ কণামাত্রও মহামূল্যবান।

সারদিন কত উথালপাতাল ঝড় বয়ে যায় মনে। তোমার কথা ভেবেভেবে বালিশ ভিজেটিজে একাকার। কী নিদারুণ কষ্ট, জানো? ভাবতে-ভাবতে আপনাআপনিই চোখ ভিজে যায়। বুক ফেটে কান্না আসে। দম বন্ধ হয়ে আসে প্রায়ই। কীকরে বাঁচি, বলো তো? এখনও কষ্ট হচ্ছে খুউব। যাও না সরে আমার মন থেকে! আর যে পারছি না! কোনও অপরাধ ছাড়াই আমি এমন শাস্তি পাচ্ছি। তুমি প্লিজ চলে যাও না আমার ভেতর থেকে! প্রতিদিন তোমার কথা শুনি। তোমাকে না দেখলে এতো অস্থির লাগে আমার! তোমার কণ্ঠস্বর, তোমার কথাবলার আর্ট, তোমার চাহনি, এসব না দেখে থাকতে পারি না। পৃথিবীর সবচাইতে ভাল মুভিটার চাইতেও তোমার কথাশোনা আমার কাছে ১০০০ গুণ ভাল। পুরনো কথা, রোজ শুনি, তবুও একটুও ক্লান্তি আসে না, নতুন লাগে প্রতিদিনই। তোমার কথা আমার কাছে সবচাইতে সুন্দর গানটার চাইতেও মিষ্টি।

উফফফ!! আর কত? একদিন মরে যাবো, সত্যিই মরে যাবো। যেদিন আর সহ্য করতে পারব না, সেদিন মরে যাবো। আচ্ছা, আমি মরে গেলে তোমার কিছুই এসে যায় না, তাই না? জানি, তুমি তো জানতেও পারবে না। জানলেও একটুখানি কাঁদবে আমার জন্য? কিংবা, আমার সমাধিটা একটু দেখতে যাবে সময় বের করে? একটা হলুদ ফুল দেবে আমার পাশের মাটিতে?—সে ফুল বাসি হলেও চলবে! নাহ্‌, বেশি ড্রামাটিক হয়ে যাচ্ছে! বাদ দিই! তোমাকে আমার মৃত্যুর খোঁজ জানতে হবে না, যাও! অবশ্য, আমি তোমাকে জানতে দেবোও না। আমি মৃত্যুর আগেই তোমার কাছ থেকে আমার মৃত্যুর পরের ক্ষণিকের অস্তিত্ব লুকিয়ে রাখার সব পাকা ব্যবস্থা করে যাবো।

তোমাকে মাথায় নিয়ে আর কতদিন এভাবে করে জীবন কাটাব, জানি না। বিশ্বাস করো, তোমাকে আমি চাই না। কারণ, আমি জানি, আমাকে ভালোবাসার মত ভালোবাসা কিংবা মেয়েদেরকে ভালোবাসার মত মনমানসিকতা ঈশ্বর কোনও এক রহস্যময় কারণে তোমাকে দেননি। তুমি কখনও সত্যিকারের প্রেমে পড়ে দেখেছ, কেমন লাগে? নাকি, এই ভালোবাসার অনুভূতিটাই নেই তোমার মধ্যে? তোমার গল্পের নায়িকাদের যতটা ভালোবাসো, তার কিছু অংশও কাউকে কখনও ভালোবেসেছ? কোনও বই পড়ার সময় গল্পের নায়িকার দুঃখে যতটা কাঁদ, তার অর্ধেকও কখনও কেঁদেছ বাস্তবের কোনও নায়িকার দুঃখে, যে তোমাকে ভালোবাসে? অবশ্য, আমার ধারণা ভুলও হতে পারে। ভুল হলেই কী, আর না হলেই বা কী? তুমি তো তুমিই! তুমি আর বদলাবে না, আমি জানি। তুমি এমনকিছু, যেটাকে দূর থেকেই ভালোবাসা যায়, কাছে গেলেই কষ্ট পেতে হয়। দূরে আছি বলেই এতোটা ভালোবাসতে পারছি, কাছে গেলে কিংবা থাকলে হয়তো এর কিছুমাত্রও পারতাম না। আমি বুঝি এটা। কিন্তু, কী করবো, বলো? মানুষ তো! মানুষ একটা বিশ্রী প্রাণী যে কিনা ভালোবাসা ছাড়া বাঁচতে পারে না। মাঝেমাঝে উন্মাদ হয়ে যাই তোমার সাথে কয়েক সেকেন্ড কথা বলার জন্য। তোমার কণ্ঠস্বরটা আমার কাছে কতটা দামি, সেটা তুমি ভাবতেও পারবে না। তাই, নক করে ফেলি। কিংবা, ফোন। তুমি বেশিরভাগ সময়ই রেসপন্স কর না। অবশ্য, করার কথাও না। সবই বুঝি, তবুও তোমার কাছে বেহায়া হয়ে যাই। খুব ছোট লাগে নিজেকে। এই আমি কোনওদিনই কাউকে বিরক্ত করিনি, তেলাইনি। আর সেই আমি কারও কাছে নিজ থেকে ছোট হয়ে যেতে না পারলে অস্থির হয়ে পড়ি! এ-ই কি আমি? জীবনটা কি এরকমই?

সেদিন সকালে তুমি আমাকে নিজ থেকে ফোন করেছিলে। অবশ্য, আগের রাতে আমিই কল করেছিলাম, তুমি কথা বলনি। আমি রেখে দিয়েছিলাম। এবং আবারও ফোন করবো, পরদিন এই চিন্তাটাও করেছিলাম। করবো, করবো করে কী এক সংকোচে যখন আচ্ছন্ন হয়ে আছি, ঠিক সে মুহূর্তে তুমি নিজেই ফোন করে আমার পৃথিবীটাকে নাড়িয়ে দিয়েছিলে। তারিখটা আমার সারাজীবন মনে থাকবে। এই প্রথম কোনও কারণ ছাড়া, কাজ ছাড়া আমার সাথে টানা ষোল মিনিট ছাব্বিশ সেকেন্ড কথা বলেছিলে। ভীষণ অপ্রত্যাশিত! সত্যিই বিশ্বাস হচ্ছিল না যে তুমি নিজ থেকেও আমাকে ফোন করতে পারো, তাও স্রেফ কুশল বিনিময় করতে। যখন তোমাকে ফোন দিই, কিংবা তোমার ফোনটা ধরি, তোমার কণ্ঠস্বর শুনি, তখন আমার মাথা ঠিকমত কাজ করে না। কী একটা যেন আমাকে এলোমেলো করে দেয়। অনেক চেষ্টা করি স্বাভাবিক থাকার, কিন্তু বুকের ভেতরটা টিপটিপ করে। মনে হয় যেন ভাইভা বোর্ডে সবচাইতে কড়া স্যারটার সামনে বসে আছি। ওইদিন সকালে তুমি বলছিলে, আমি চুপ করে শুনছিলাম। যখন তুমি ফোনটা কাটলে তখন আমার হুঁশ এল। আমি বোধহয় সেই ষোল মিনিট ছাব্বিশ সেকেন্ড পৃথিবীতে ছিলাম না। কী যে একটা আনন্দ আর খুশিতে আমি সারাদিন ছিলাম, সেকথা তোমাকে বোঝাতে পারব না। সেদিন কেউ আমায় অর্থমূল্যে পৃথিবীর সবচাইতে দামি উপহার দিলেও আমার অতোটা ভাল লাগত না। তুমি এমনই এক উপহার আমার জীবনে।