সবুজ কৌটোয় হৃদয়-কড়চা/৪

মেয়েরা যাকে একবার ভালোবেসে ফেলে, তার সব রকমের অন্যায় অযৌক্তিক আচরণেরও সহজ স্বাভাবিক ব্যাখ্যা দাঁড় করিয়ে ফেলতে পারে। এই আশ্চর্য প্রতিভা প্রত্যেকটা মেয়ের মধ্যেই লুকানো থাকে, যা প্রেমে পড়লে তীব্রভাবে বেরিয়ে আসে। পুরো পৃথিবীর বিপরীতে গিয়ে হলেও ‘এতোকিছুর পরও, তবুও, ওকে ছাড়া আমি কোনওভাবেই বাঁচতে পারব না’ এই বিশ্বাসের একান্ত ব্যক্তিগত গ্রহণযোগ্যতায় জীবনের শেষদিন পর্যন্ত বসবাস করার স্বপ্ন দেখে। স্কুলকলেজের সকল ডিবেটিং কম্পিটিশনে ফার্স্টহওয়া মেয়েটিও জীবনের যুক্তিগুলির কাছে হেরে যাওয়ার মধ্যে বেঁচে থাকার আনন্দ খুঁজে ফেরে প্রতিনিয়তই। মেয়েদের মাথায় ঘিলু কম, এটা ঠিক না। তবে, একটা মেয়ে প্রেমে পড়ে গেলে, তখন তার মাথায় ঘিলু কমে যায়……….না, ভুল হল, তখন তার মাথায় ঘিলু আর থাকেই না। মেয়েদের প্রিয় খাদ্য বাঁশের স্যুপ।…………. এসব লিখেছ। ভাল, ভাল! কী নিষ্ঠুর তুমি! এবং, তোমার সাথে আজকে কথা বলে, আমিও প্রমাণ করে দিয়েছি যে, আমি তোমার চেয়ে তিনগুণ বেশি নিষ্ঠুর হয়ে যেতে পারি। আর হুট করে ওই দুষ্টুমিটুকু না করলে কি আর ফোন দিতে? জীবনেও দিতে না! কী ছিলে আর কী হয়ে গেছ? এতো চেঞ্জও হয় মানুষ? সারাক্ষণই শুধু কি মাথায় ওসব ঘোরে তোমার? জানি, ওই একটা কারণেই আমার সাথে যোগাযোগ রাখছ। সত্যিটা হল এই, তুমি রাখো না, আমিই রাখছি। যেদিন আমার প্রতি সম্পূর্ণ অনীহা চলে আসবে তোমার, সেদিন আর কোনও যোগাযোগই থাকবে না আমাদের মধ্যে। আমি ওইদিনটির অপেক্ষায় আছি। আমি যে কতকিছুর জন্য অপেক্ষা করতে শিখে গেছি এই কদিনে! ইসস! কত কী চিন্তা আমার! কত হাবিজাবি ভাবনা মাথায় আনতে ভাল লাগে! অথচ এই তুমি ব্যক্তিটি কী করলে আমার সাথে! কথা হলে কী যে সব বল তুমি! তবুও আমি খুশি, যে কারণেই হোক, ১৭ মিনিট কথা তো হয়েছে! একদম আপনজনের মতোই কথা বলেছ তুমি আমার সাথে। হোক অভিনয়, হোক কোনও বিশেষ কারণে, তবুও তো বলেছ! তোমার মাথায় কি একবারের জন্যও আসে, আমাকে যা বল, তা নিতে আমার কী যে কষ্ট হয়! তবুও আমি, তুমি যা শুনতে চাও, তা তা-ই বলে যাই, তোমার মনের মতো করেই কথা বলতে শিখে গেছি আমি। কী করব? তোমার সাথে তাল মিলিয়ে কথা না বললে তো আর তুমি অকারণে আমার এই অসীম যন্ত্রণা সহ্য করবে না। কী? ঠিক তো?

তবে একটা ব্যাপার ভেবে শান্তি লাগছে, এই প্রথম তুমি নিজ থেকে কল দিলে। এটা ঠিক, আমিই ফেসবুকে নক করেছি। তবুও তো তুমি সাড়া দিয়েছ। জানি, আমার জন্য আমাকে ফোন করনি। তোমার ওই ফালতু নায়িকাগুলির খোঁজ নিতেই ফোন করেছ। এতো তেল কেন তোমার? তোমার কথাগুলি প্রাণভরে শুনছিলাম আর হাসতে-হাসতে উত্তর দিচ্ছিলাম। বুকের ভেতর এক দমকা হাওয়া বয়ে যাচ্ছিল। কী মনে হচ্ছিল, জানো? মনে হচ্ছিল, আমি বুঝি অবশ হয়ে যাবো একটু পর। তোমার কথাগুলির উত্তর দিতে গিয়ে মনে হচ্ছিল, কাঁটা চামচ দিয়ে নিজেই নিজের বুকের মাংস কোপাচ্ছি। কখনও রোস্ট রান্না করার আগে টক দইয়ের মধ্যে মুরগিটাকে ভিজিয়ে কীভাবে কাঁটা চামচ দিয়ে ছিদ্র করে, সেটা দেখেছ? পারলে একদিন দেখে নিয়ো। ঠিক ওইভাবে আমি নিজের বুকের মধ্যে কাঁটা চামচ দিয়ে কোপাচ্ছিলাম আর ছিদ্র করছিলাম। ছেলেরা এতোটা নিষ্ঠুর কীকরে হয়? জানি, তুমি আমার মনের কথা জানো না। জানলে অকপটে ওভাবে করে কথাগুলি বলতে না। কিন্তু অনেক কষ্ট পেয়েছি, যখন আমাকে যুক্ত করতে চাইলে সেই খেলায় যেটাতে………. তুমি ঠিকই বল, মেয়েরা যাকে ভালোবাসে, তার সবকিছুকেই ভালোবাসে। তুমি ফোনটা রাখার পর মনকে হাসতে হাসতে সান্ত্বনা দিচ্ছিলাম, “ও যেমনই হোক না কেন, আমি ওকেই ভালোবাসি! হোক না অমন, তাতে কী হয়েছে? ওর কাছে তো সুন্দর একটা মন আছে, জ্ঞান আছে, অসীম প্রজ্ঞা আছে। যার এতোকিছু আছে, সে কোনওভাবেই ঘৃণার পাত্র নয়। ওর ব্যক্তিগত স্বভাব নিয়ে কেন আমার মাথাব্যথা থাকবে? আমি তো ওর কাছে যাওয়ার আগেই ওকে ভালোবেসে ফেলেছি। আর ওকে ভালোবেসেছিলাম বলেই ওর কাছে ছুটে গিয়েছি।” যারা টুপটাপ প্রেমে পড়ে না, তারা একবার কোনওভাবে প্রেমে পড়লে পুরোপুরিই অন্ধ হয়ে যায়। প্রেম পৃথিবীর একমাত্র বৈধ নেশা। অথচ, এর চাইতে ভয়ংকর নেশা আর একটিও নেই। এমন নব্য নেশাগ্রস্তরা একবার যদি কোনওভাবে আঘাত পায়, তবে একেবারেই শেষ হয়ে যায়। কেন কিছু মানুষ ওদেরকে ওদের মতো থাকতে দেয় না? কেন ওদেরকে প্রেমে ফেলতে কেউ-কেউ মরিয়া হয়ে ওঠে? প্রেমে ফেললোই যখন, তখন কেন আবার দূরে ঠেলে দেয় বিনা কারণেই? কেন অযথাই কাছে টানা, যদি দূরই হয় শেষ ঠিকানা? কেন ওদের সবকিছু কেড়ে নিয়ে নির্দয় কিছু মানুষ বিজয়ীর হাসি হেসে যায়? প্রাণহীনের বুকে ছোরা চালিয়ে বীর হয়েছে কে কবে কোথায়? যে হার মেনেই নিয়েছে, তাকে হারিয়ে কীসের আবার জয়োল্লাস? কেন নির্মমতম অত্যাচার সহ্য করতে হয় সবচাইতে কোমল হৃদয়ের মানুষটিকেই, দিনের পর দিন? পৃথিবীর নিষ্ঠুরতম মৃত্যু নাকি আগুনে পুড়ে মরা। ভাবছি, প্রেমে পড়ার চাইতেও নিষ্ঠুর ওই মৃত্যু? আমাকে দেখছ না? আমার মতো মানুষও নাকি এমন পাগলামি করে! তুমি আমাকে কী ভাবো, জানি না। তোমাকে ভালোবাসি বলেই তোমার কাছে ধরা দিয়েছি। নাহলে আমাকে ধরা তোমার সাধ্যের বাইরে। এর একটু দায়ও কি তুমি নেবে না?

বুদ্ধির ঢেঁকি তুমি! আমাকে প্রেমিকা খুঁজে দিতে বল! ভাবলে কীকরে আমি তোমাকে কাউকে খুঁজে দেবো? ইসস! সেই দিন শেষ! হ্যাঁ, ভুলে যাও, ভুলে যাও! তাইতো বেছে-বেছে এমন একজনের ছবি দিলাম, যে দেখতে খুবই পচা, যাকে তোমার পছন্দ হবেই না। আর তুমি যদি পছন্দ করে ফেলতেও, তাও তো ওই মেয়ের ডিটেইলস দিতাম না। কী অদ্ভুত! নিজহাতে নিজের মনের মানুষটাকে আরেকজনের হাতে তুলে দেবো? অতো উদার ভাবলে কীকরে আমাকে? আচ্ছা, বলেই ফেলেছ আরকি! মেনে নিলাম। কিন্তু আমাকে নিয়ে কেন সবার সাথে মেশাতে চাইলে? খুব, খুব কষ্ট পেয়েছি আমি! অন্তত আমাকে না বললেও পারতে। তুমি ওরকম করে চাও, ভাল কথা। তাই বলে আমিও? তুমি তো সবই বোঝো, তবে এটা কেন বুঝলে না? তুমি নিজেই বল, মেয়েরা সব কথা নিতে পারে না। তাহলে ওরকম করে কেন বলো? খুব নিষ্ঠুর তুমি! বিয়ের পর অমন কোরো না। একটা মেয়ে সারাজীবন তোমার সাথে থাকবে, ওকে ফাঁকি দিয়ো না। আমি জানি না, সেও অমন করবে কি না, কিন্তু তোমার তো আর মনের মানুষ কেউ নেই, তাই তুমি ওর সাথে অমন কোরো না। দেখো, তোমার ঘরের লক্ষ্মীটা তোমার মনের মতোই হবে। তাকে ছেড়ে তোমার কোথাও যেতে ইচ্ছে করবে না। হে ঈশ্বরের প্রিয় পাত্র, তোমার জন্য ঈশ্বর সত্যিই কোনও স্বর্গের অপ্সরাকে ঠিক করে রেখেছে, যাকে পেয়ে গেলে তুমি আর আমার সাথে কিংবা অন্য কারও সাথে যোগাযোগ করবে না। আমার কাছে এটাই মনে হয়। আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি, ভীষণ ভালোবাসি। তুমি অনেক সুখী হও। ভাল থাক। আমার কিছুদিন খুব ভাল কাটবে তোমার সাথে অতোক্ষণ কথা হয়েছে বলে। ঈশ্বরকে ধন্যবাদ। তোমাকেও অনেক ধন্যবাদ। এবং, সর্বোপরি ওই ছবিকে ধন্যবাদ। ছবির নায়িকাগুলিকেও ধন্যবাদ। গুগলকে ধন্যবাদ ওই ছবিটার খোঁজ দেয়ার জন্য। কে জানে, ওরা কে! মনে-মনে বকা দিচ্ছ তো আমাকে? দাও, দাও, কিচ্ছু হবে না, তুমিই তো দিচ্ছ, অন্য কেউ তো আর দিচ্ছে না। আমাকে তুমি শুকরিয়া আদায় করতে শিখিয়েছ। তাই, তোমাকেও ধন্যবাদ। অনেক, অনেক ভালোবাসি তোমাকে, অনেক, অনেক আদর করি।

ওহ হো! লিপ ইয়ারের শ্রেষ্ঠ উপহার আমার! তোমার ফোন। কী বিশেষ দিন এটা! আমি এটা নিয়ে আগে সেদিন কিছু লিখলাম না কেন? এই বিশেষ দিনটা আমার জীবনে চার বছর পর আসবে। চার বছর পর তুমি আর আমি কই থাকব? হয়তো আমাদের যোগাযোগই আর থাকবে না। কিন্তু সেদিনের স্মৃতি ভুলে যাওয়া অসম্ভব। শক্ত আর্ট পেপারে লিখে রাখলাম মার্কার দিয়ে: আমি তোমাকে ফোন করেছিলাম রাত ১০:৩৫টায়। তুমি কেটে দিলে। ১০:৫৩টায় তোমাকে অনেক ভয়েভয়ে একটা মিসড কল দিলাম। তুমি ১১:০৬টায় ফোন করলে, আমরা কথা বললাম ১৭ মিনিট ২৩ সেকেন্ড! এটা দেয়ালে সেঁটে রাখবো। তুমি অনেক অনেক অনেক ভাল। তোমায় ভালোবাসি, ভালোবাসি, ভালোবাসি। তোমাকে ভালো না বেসে থাকতে পারব না। তুমি যদি খুব খারাপও হয়ে যাও, তাও আমি তোমাকেই ভালোবাসি, ভালোবাসবো।

আর কত ভালোবাসবো তোমাকে? আস্তেআস্তে অনুভূতিগুলি এতোটাই তীব্র আর গাঢ় হচ্ছে যে, টিকে থাকাটাই মুশকিল। সারারাত ঘুমাইনি, এখনও ঘুম আসছে না। কী করছ? কোথায় আছ? ঢাকায়? নাকি, অন্য কোথাও? যখন কথা বল, তখন এমন ভাব কর যেন এখনই হাজির হয়ে যাবে তুমি, অথচ পরে কোনও খবরই থাকে না তোমার। কোনও কথা দেয়ার সময় কেন বোঝো না যে, তোমার দেয়া কথাগুলিকে আঁকড়ে ধরে কেউ বাঁচতে পারে, দিন গুনতে পারে? আমার যে আর লেখার শক্তিটুকুও নেই। আমি হাঁপিয়ে উঠেছি। অক্টোবর, নভেম্বর, ডিসেম্বর, জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি, আর এখন মার্চ। বুঝতে পারছ কী অবস্থা আমার? এভাবে বাঁচা যায়, বলো? আর কত পাগল করবে আমায়? আমি যে আর পারি না। হয় ভালোবাসো, নয় মেরে ফেলো। আমি নিরুপায়, এর বাইরে আর অন্যকিছু ভাবা সম্ভব নয় আমার পক্ষে। আমি এমনই কাটাচ্ছি রোজ। আমাকে মেরে ফেলো। আমি তো আর পারছি না, সত্যিই পারছি না। সবকিছু ভাববার একটা সীমা আছে। এভাবে সীমাহীনভাবে ভাবতেভাবতে আমি আমার মাঝে আর নেই। হারিয়ে গেছি আমি। তোমার অবহেলা, তাচ্ছিল্য, অনীহার মাঝে নিজেকে বাঁচিয়ে রেখেছি ঠিকই, কিন্তু হারিয়ে ফেলেছি নিজেকে। আমার আমিকে একটু খুঁজে এনে দাও না, প্লিজ! আর কত হারাব তোমার মাঝে? আর কত? তুমি তো দিব্যিই আছ নিজেকে নিয়ে। জানি, বুঝি, ভীষণ রকমের স্বার্থপর তুমি। তবু কেন তোমাকে ভালোবাসতে গেলাম? কেন নিজের কষ্ট নিজেই ডেকে আনলাম? কেন?

আমার দুচোখের ঘুম তুমি। আমার হঠাৎ দেখা অপলক স্বপ্ন তুমি। আমার হৃদয়ের অধিপতি তুমি। আমার অদ্ভুত চাওয়া তুমি। আমার সকল পাগলামি তুমি। আমার সমস্ত কল্পনা তুমি। আমার চোখের প্রতিচ্ছবি তুমি। আমার বন্ধ চোখের আয়না তুমি। আমার স্বপ্নেগড়া ভাস্কর্য তুমি। আমার এক চিলতে হাসি তুমি। আবার আমার বুকের গভীর কষ্ট তুমি। আমার হাজার সুখের হাতড়ানো কারণ তুমি। আমার সারাদিনের ব্যস্ততার এক ফাঁকের বিশ্রাম তুমি। আমার ক্লান্তিহীন ভালোবাসা তুমি। আমার প্রতিদিনের সার্চলিস্ট তুমি। আমার প্রোফাইলের এক মুঠো সুখ তুমি। আমার প্রথম চাওয়া এবং না-বলা ভালোবাসা তুমি। আমার অবিরাম অপলক দৃষ্টির রাজকুমার তুমি। আমার অপ্রাপ্য প্রেম তুমি। আমার একান্ত ঈশ্বরের প্রিয় সৃষ্টি তুমি। আমার জীবনের মূল্যবান রত্ন তুমি। আমার সমস্ত কষ্টের কষ্ট, অতঃপর ভালোবাসা তুমি।

কাঠ পুড়ছে। খড় উবছে। আগুন ফুঁসছে। ফুলকি উড়ছে। ছাই ছড়ছে। শীত কাঁপছে। ধোঁয়াশা ঘিরছে। অঙ্গার শানছে। শরীর ওমছে। তাঁবু পড়ছে। বারবিকিউ সাজছে। সুর ভাসছে। রবীন্দ্রনাথ ফিরছে। লালন সাধছে। মাটি ঠুকছে। আড্ডা চলছে। ক্যামেরা ধরছে। পাহাড় জাগছে। পাতা কাঁদছে। নদী টানছে। হাওয়া গাইছে। রাত মাতছে। নৈঃশব্দ্য বকছে। বছর ফুরোচ্ছে। বছর আসছে। আনন্দ ঝরছে। ভালোবাসা জ্বলছে।………একদিন লিখেছিলে। মনে পড়ে? যাবে আমাকে নিয়ে সেইখানে? চলো না, প্লিজ! আমি আর তুমি, আর ওই রাতটা। আর কেউ না। যাবে? কোনও এক শরতবিকেলে ‘কাঞ্চনজঙ্ঘা’ মুভির ওই পাহাড়ি পথটি ধরে তোমার সাথে গল্প করার, হাঁটার খুউব ইচ্ছে…….তবে হাঁটতেই হবে, এমন নয়— চলো না হাঁটি!

তোমাকে ভোলা তো দূরের কথা, দিনকে দিন এতোটাই ভালোবেসে ফেলছি যে, তোমাকে পাওয়ার জন্য প্রায়ই ব্যাকুল থাকি। কী করি, বলো তো? তোমাকে একদমই বিরক্ত করতে চাই না, অথচ মনকে শান্ত করতেও পারি না। এখন বুঝি, শুভ্র আমাকে কেন ওরকম বিরক্ত করে যেত! আমার কাছে যা বিরক্তি, ওর কাছে তা-ই ছিল নিয়তি, যা থেকে ও কিছুতেই সরে আসতে পারত না। মেয়েরা যে কারণে ছেলেদের বিরক্ত করে, ছেলেরাও কি একই কারণেই বিরক্ত করে? একবার ছেলে হয়ে জন্মাতে হবে, অন্তত ওটা করেও যদি কিছুটা হলেও তোমার মনটা পড়তে পারি আরকি! আমার মন আর বিবেক দুইটি বিপরীত দিকে টানে আমায়, এবং খুব ভালমতোই টানে। বিবেকমশাই বেশিরভাগ সময়ই জিতে যায়, মন বিবেকের কাছে হার মানে, অশান্ত হয়ে ওঠে, আমাকে অশান্ত করে রাখে, আমি আবারও পাগলামি শুরু করে দিই। অ্যাই! তুমি কি শুনতে পাচ্ছ? তুমি কি কোনওদিনই শুনতে পাবে না? কেন যে তোমাকে ফলো করতে গেলাম! কেন যে তোমাকে অন্ধের মতো অনুসরণ করলাম। কাউকে অন্ধের মতো অনুসরণ করলেই বিপদ, আস্তেআস্তে সত্যিই অন্ধ হয়ে যেতে হয়। কেন যে তোমার ভিডিওগুলি দেখতে গিয়েছিলাম? তাও এতোকিছু হতে দিতাম না। কেন তুমি তোমার বইয়ের তাকের ছবিগুলি দিতে গেলে? ওতেই তো আমি শেষ হয়ে গেছি! তোমাকে নাহয় নক করেই ফেলেছিলাম, তাই বলে তুমিও কেন রেসপন্স করতে গেলে? আমিই বা কেন প্রথমদিনের পরও বেহায়ার মতন তোমার সাথে কথা বলতে গেলাম? কেন? পৃথিবীতে এসব কেন’র কোনও জবাব নেই কেন? তোমাকে সারাদিন ভাবতে কেন হবে আমার? কী আজব! আমার কি আরও কোনও কাজ নেই? এখন কি আমি তোমার জন্যই বাঁচি নাকি? আমার মাথায় আছ, থাকো। কিন্তু পুরো বুকের মধ্যে জুড়ে থেকে এতোটা হাহাকার তুলে দিচ্ছ কেন? কীসের তোলপাড়ে দিন কাটে আমার? আচ্ছা, তোমাকে কি ইচ্ছে করে ভালোবাসি আমি? নাকি, জোর করেই? তোমাকে তো পাবো না, তোমার টিকিটাও ছুঁতে পারবো না কোনওদিনও। তাহলে কী হবে তোমায় ভেবেভেবে? তুমি তো ভুলেও আমাকে নিয়ে চিন্তা কর না। আর কথা হলেই তো অন্য কাউকে খুঁজে দিতে বল। আমি ভাবি, তোমাকে আমার ঘৃণা করা উচিত। কিন্তু ওটা সত্যিই অসম্ভব! বেশ! তবে ভালোবাসা থেকে দূরে থাকি? না, ওটা করলে মরেই যাবো! তাহলে, বিষয়টা কী? আমি কেন ভাবি তোমাকে? আমি খুব চেষ্টা করি, উত্তরটা বের করতে, কিন্তু পারি না, জানো? যখন তোমার ছবিগুলি দেখি, তখন আর পারি না। শুধু দেখতেই থাকি, দেখতেই থাকি। মনে হয় যেন, অনন্তকাল তাকিয়ে থাকা যায়। তোমার চাউনিগুলি অমনই, তোমার হাসিটা অমনই, তোমার আর্ট, তোমার স্টাইল, তোমার ফ্যাশন অমনই। তাইতো দেখি আর অবাক হয়ে ভাবতে থাকি, ঈশ্বর কতটা যত্ন নিয়ে তোমার সবকিছু বানিয়েছেন! বড় সময় নিয়ে তৈরি করেছেন তোমায়। তাইতো আমি বিশ্বাস করি, তুমি ঈশ্বরের বড় প্রিয়, কাছের।

হয়তো ভাবছ, যারা অতোটা সুন্দর নয়, বা তোমার মতো নয়, তারা কি ঈশ্বরের অপ্রিয়? তা তো আমি জানি না, ভাবি না, ভাবতে চাইও না। কেন? তবে তোমায় বলি, শোনো। এ পৃথিবীতে আমি জন্মের পর অনেকগুলি মুখ আর ব্যক্তিত্বকে ভালোবসেছি, প্রিয় করে নিয়েছি। শ্রদ্ধা করেছি, আজীবন করে যাবো। এদের মধ্যে কেউকেউ আমার ক্রাশ। হ্যাঁ, রবীন্দ্রনাথও আছেন ওঁদের মধ্যে। তবে এ প্রথম আমার অজান্তেই আমার মন বলে উঠছে একবার, দুবার, বারবার, “তুমি ঈশ্বরের খুব প্রিয়।” তোমাকে বড্ডো বেশি যত্ন করে তৈরি করে ঈশ্বর এ পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। কিছু মানুষকে কাঁদানোর জন্যও তোমাকে পাঠানো হয়েছে। তোমার কোনও দোষ নেই, তোমার অ্যাসাইনমেন্টই তো ওটা! এই দেখ না, রবীন্দ্রনাথকে এতো ভালোবাসি, উনার চিন্তাগুলির যদি প্রাণ থাকত, তবে রোজই প্রণাম করতাম মনেমনে। কই, এ বিশ বছরে তো ভুলেও মনে হয়নি, উনি ঈশ্বরের প্রিয় পাত্র! তাহলে তুমিই বা কেন আমার ওরকম চিন্তার আর বিশ্বাসের মূল কারণ হলে? তোমাকে ভালোবাসি বলেই কি অমন ভাবি, নাকি ভালোবেসে ফেলেছি বলেই এমন চিন্তা মাথায় এল? আমার ভেতরটা প্রশ্নের কারখানা। ভাগ্যিস, তুমি সশরীরে আমার পাশে থাক না! থাকলে, নিশ্চিতভাবেই পাগলটাগল হয়ে যেতে! হাজারহাজার প্রশ্ন, অথচ একটা উত্তর দেয়ারও কেউ নেই। কেন যে এতো উৎসুক আমি! কষ্ট হয়, তবুও জানতে ইচ্ছে করে। আমাকে প্লিজ মেরে ফেলো না……..এতো কষ্ট হয় যে কিছুই ভাবতে পারি না। অথচ দেখো, মনেমনে সব কথা তোমাকেই বলছি। কী বেহায়া দেখো আমি, তুমি কিচ্ছুটি শুনছ না, অথচ আমার বকবকানি শেষই হচ্ছে না। বলেই যাচ্ছি যত্তোসব ফালতু কথা, মানে, লিখেই যাচ্ছি অনর্থকই। কেন লিখছি? কষ্টগুলি বুকফেটে বেরিয়ে যেতে চাচ্ছে, তাই? তোমাকে তো এসবের এক লাইন দূরে থাক, একটা শব্দও তো কোনওদিনও শোনাতে পারবো না। ছোট্ট একটা শব্দ ‘ভালোবাসা’ অথচ এটাকেও নিয়ে কয়েক শতাব্দী ধরে লিখলেও শেষ হবে না লেখা। বিশ্বাস করো, লিখতে ভীষণ কষ্ট হচ্ছে, তবুও শেষ হচ্ছে না লেখা। আরও, আরও লিখতে মন চাইছে। তুমি তো কোনওদিন জানতেও পারবে না, আমি কত রাতের পর রাত নির্ঘুম কাটিয়ে আবার সকালে তোমার জন্য লিখতে বসি। কেন করছি আমি এসব? শুধুই ভালোবাসি বলে? নাকি, এটা আমার একটা বাজে অভ্যেস হয়ে যাচ্ছে দিনদিন? এতো ছোট্ট একটা শব্দ ‘ভালোবাসি’, অথচ এটাই আমি কখনও বলতে পারি না তোমাকে, কোনওদিন পারবও না। তোমার সামনে গেলেই সব আবেগ আর অনুভূতি দলাদলা থুতু দিয়ে গিলে খেয়ে ফেলি। যত্তোসব ফালতু না? কোনও মানে হয়? কেউ যদি দুটো অপশন দিয়ে বলে, হয় ভালোবাসি বল, নয় মর, আমি হাসিমুখে মরতে রাজি হয়ে যাবো। এটাই কি ভালোবাসা? হৃদয়ের কথাগুলিকে বুকের মধ্যে আটকে রাখাই কি তবে শেষকথা? কিন্তু এতো ভালোবাসা আসে কোত্থেকে? ভালোবাসাকে কিছু কুৎসিত অশ্রাব্য গালি দিয়েটিয়ে একেবারের জন্য শান্ত হতে যেতে পারতাম! আমি আমার বুকের মাঝখান থেকে কষ্টের থলেটা বের করে ফেলতে চাই! ওটা বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছি, প্রতিদিনই একটুএকটু করে থলেটা আরও ভারি হচ্ছে, এভাবেই বেঁচে আছি। কিন্তু, কোন সুখে? কীসের আশায়? কী এমন মোহ? ……… আমাকে একটু ছুঁয়ে দাও না, প্লিজ! আমার হাতটা একটু ধরবে? আচ্ছা, একটিবারের জন্য হলেও তোমার হাতটা আলতো করে আমার মাথায় রাখো না! কী হলে আমার কপালটা একটু স্পর্শ করে দেখবে, বলো তো? অনেকবেশি জ্বরে কাতরালে? ঈশ্বর, আমায় অসুস্থ করে দিচ্ছ না কেন? অ্যাই ছেলে! অ্যাই! অ্যাই! অ্যাই! আমার সাথে কথা বলছ না কেন? আমি তোমার সাথে কথা বলবো, বলবো, বলবো! চুপ করে থাকলে একদম ধরে …………. না, কিছু না!

কোনও আগুনজ্বলা সুন্দরী, যে অলরেডি একটা সম্পর্কের জাহাজে চড়ে বেড়াচ্ছে (মানে, relation-ship এ আছে), তার কাছ থেকে নিজের চোখ আর মনকে শান্ত রাখার একমাত্র উপায় হলো, তাকে ব্লক করে দেয়া। হোক নিষ্ঠুরতা, তবুও বাঁচতে তো হবে!………তুমি লিখেছ। যা লিখনি, তা হলো, যে মানুষটি কোনও সম্পর্কে জড়িয়ে নেই, তাকে ভালোবাসাও কেন যন্ত্রণা দেবে? কেন সবসময়ই ভুল মানুষটিই হৃদয়ে ঝড় তুলে সবকিছু এলোমেলো করে দেয়? কেন তার দিকেই অনন্তকাল তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করে, যার দিকে একটু তাকালেও চোখ পুড়ে যায়? কেন তার সাথেই সারাজীবন গল্প করতে ইচ্ছে করে, যার সাথে এক মুহূর্তও কথা বলার চাইতে নিজের বুকে ছুরি চালিয়ে দেয়াও অনেক সহজ? মন কি তবে শুধু ভুল মীমাংসায়ই পৌঁছয়? প্রত্যেক পাপেরই এক ধরনের সুখ আছে। পাপের সুখ এড়ানোর দায় বড় দায়! কিছু কিছু পাপ আছে, যেগুলি করতে না পারার আফসোসেই অনেকসময় কেটে যায় সারাটা জীবন। কেন পুণ্যের চাইতে পাপই টানে বেশি? যা আমার নয়, যা কোনওদিনই আমার হবে না, তার উপরেই নিজের সকল অধিকার জন্মানোর পাপেই কেন পৃথিবীর সমস্ত সুখ? কেন কাছে আসার পাপ দূরে থাকার পুণ্যের চাইতে বেশি অক্সিজেন দেয়? কেন চোখের জলের আলপনার রঙটাই সবচাইতে বেশি গাঢ়, তাই ভুলিয়েভালিয়ে ধাঁধিয়ে সত্যটাকেই আড়াল করে রাখে? কেন কাউকে অন্ধভাবে ভালোবাসতে বাসতে একটাসময় সত্যি সত্যিই অন্ধ হয়ে যেতে হয়? তাও ভুল মানুষটিকেই? কেন? কেন?? কেন???

এই কষ্টের কোনও শেষ নেই, জানি। দিনকে দিন শুধুই বেড়ে যাচ্ছে, আরও বাড়বে। তোমার বিয়ের দিনটিতে কী হবে, ভাবলেও গায়ে কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসে। ওই মুহূর্তের কথা চিন্তা করলেও অবশ হয়ে যায় সবকিছু। আমি এতো অসহায় হয়ে গেছি তোমাকে ভালোবেসে! তুমি কি কখনও কাউকে এমনভাবে অনুভব করেছ? আমি খুব ভাল করেই জানি, তোমাকে পাওয়ার চেয়ে না-পাওয়া ঢের ভাল। কারণ, তুমি তো আর আমার মতো করে আমাকে ভালোবাসতে পারবে না, তাই তোমাকে চাইও না আমি। তোমাকে চাই না, অথচ ভীষণভাবে ভালোবেসে বসে আছি। তোমাকে পাওয়ার ব্যাকুলতার চাইতে তোমাকে হারানোর ভয় অনেক বেশি, যদিও তোমাকে পাইইনি, হারাবো কী! এরকম অর্থহীন কষ্ট পাওয়াই নিয়তি নাকি ভালোবাসার? কী পরিমাণ বিশ্রী পরিস্থিতিতে যে আছি আমি, তুমি কি একটুও বুঝতে পারছ? বুকে পাথর চাপা দিয়ে রাখলেও কি এতো কষ্ট হয়? কেন তোমাকে বুকের ভেতরে এমন তিলতিল করে পুষছি? আমি যে তোমাকে অসম্ভব রকমের ভালোবেসে ফেলেছি। আমি এখন কী করবো? তুমি আমার সাথে অনেক দুর্ব্যবহার করে, হাজারটা কষ্ট দিয়েও আমাকে থামাতে পারবে না। কারণ, আমি তোমাকে না পেয়েই ভালোবাসতে শিখে গেছি। তোমার কাছে যেতে পারার ক্ষমতা নেই, অথচ তোমাকে পাগলের মতো ভালোবাসার অধিকারবোধটুকু কীভাবে যেন জন্মে গেছে প্রবলভাবেই। আমি ভালোবেসেই তোমার কাছে গিয়েছি। নাহলে, যাওয়ার প্রশ্নই উঠত না। তাই, তুমি যতই চেষ্টা কর না কেন, আমাকে কষ্ট দিতে পারবে না। আমি যা কষ্ট পাচ্ছি, সবই আমার নিজের সৃষ্টি। আমাকে ব্যথা দেয়ার ক্ষমতাই তোমার নেই! তোমাকে ভুলে যাওয়ার জন্য, হয় আমাকে তুমি নিজেই শেষ করে দাও, নতুবা আমাকে এমনভাবে অপমান করে কষ্ট দাও যাতে আমি নিজেই নিজেকে তোমার সামনে শেষ করে দিতে পারি। চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করছে, “আমি এই ছেলেটাকেই ভালোবাসি!”

এক। যাকে এখন আর ভালোইবাসি না, সে কার সাথে প্রেম করছে, কেন সে টেনশনে ঘুম হয় না? যাকে আমি নিজেই ব্লক করে দিলাম, কেন ফেইক আইডি থেকে তার প্রোফাইলে কোনও কারণ ছাড়াই ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থেকে সুখ অনুভব করি? কেন তাকে হাই দেয়ার ভাইবারীয় আমন্ত্রণে মন উতলা হয়ে ওঠে, আর তার নামের দিকে তাকিয়েই থাকি অপলক? যাকে আর সহ্যই করতে পারি না, কেন তার পাশে অন্যকাউকেই সহ্য করতে পারি না? দুই। মেয়েরা ভুল মানুষের কাছে পটে যাওয়ার অসীম ক্ষমতা নিয়ে জন্মায়। ওকে জাস্ট গুডগার্ল বললাম, আর ও ওতেই পটেটটে একেবারে ছারখার!…….দুরকমের কথা। প্রথমজন কে? পরেরজন? কাকে কিংবা কাদেরকে নিয়ে লিখ এসব? নাকি, এমনিই লিখ? রাগ হয়, জানো? হয় কী, তোমার লেখা পড়ে, কথা শুনে তোমার জন্য মেয়েরা পটেপটে টুপটাপ পড়তে থাকে! মাঝেমধ্যে ভুলেভালে ছেলেরাও দুএকটা পড়ে যায়। আর তুমি উপরে বসে মুচকিমুচকি হাস আর লেখালেখি কর। এই পটে যাওয়া মানুষগুলো মনে হয় তিন প্রকার। ১। এরা পটতে অভ্যস্ত না বলে হাবুডুবু খেতেখেতে ডুবেই যায়। পটার জ্বালা বড় কঠিন জ্বালা। বেচারা-বেচারিরা সইতে পারে না। ২। এরা ঝাঁপাঝাঁপি করতে থাকে পাত্তা পাওয়ার জন্য। তারপর একসময় ক্লান্ত হয়ে পড়ে। তখন অন্য কেউ এসে পাত্তা দিয়ে তুলে নিয়ে যায়। যাওয়ার সময় তোমাকে ‘হুহ্’ বলে ভেংচি কেটে যায়। ৩। আর তিন নম্বর হল, এরা হাবুও খায় না ডুবুও খায় না। চুপচাপ অনন্তকাল ধরে তোমার দিকে চেয়ে থাকবে। এদের চাওয়াপাওয়া কিছুই নেই। মনের ঝড় মনেই সামলে নিবে। আমি কোন শ্রেণীতে পড়ি? যেখানেই পড়ি না কেন, আমার অসম্ভব কষ্ট হচ্ছে। একটু শোনো না, প্লিজ। কোনও এক অদৃশ্য শক্তির মাধ্যমে হলেও একটিবার শোনো। ভালোবাসতে বলছি না, জাস্ট একটু শোনো। পৃথিবীতে অলৌকিক, অবাস্তব, মায়াবী, কালোজাদু, অপশক্তি ইত্যাদি কতকিছুই তো রয়েছে, সেগুলির মাধ্যমেও যদি আমার এ আকুলতা তোমার কাছে পৌঁছত! কী যে অস্থির লাগছে, আমি তা তোমাকে বলে বোঝাতে পারবো না। আমি কেন মরি না? তুমিই তো বল, প্রতিদিন অবচেতন মনেও আমরা যা যা বলি, তার শতকরা ১০ ভাগ ঈশ্বরের কাছে পৌঁছে যায়। আমার ওই ইচ্ছেটা কেন পূর্ণ হচ্ছে না? আমি মরতে চাই, মরতে চাই আমি। মরে যেতে চাই আমি। আমি আর বাঁচতে চাই না। তোমার জন্য মরতে চাই আমি। তোমার বিয়ে ঠিক হয়ে যাওয়ার আগেই আমি মরে যেতে চাই। আমি আর বাঁচতে চাই না। আমি আত্মহত্যাও করতে চাই না। তবে এরকম চলতে থাকলে কোনদিন না কোনদিন নার্ভাস ব্রেকডাউন হবে আর আমি সুইসাইড অ্যাটেম্পট নিয়ে ফেলবো। কিচ্ছু করার করার নেই আমার! তোমার বিয়ের খবর সত্যিই আমি শুনতে পারবো না। ওর চাইতে মরে যাওয়া কম কষ্টের। আমাকে মেরে ফেলো না, প্লিজ! ফেলবে না? দেখো, আমি একদিন নিজেই মরে যাবো। আচ্ছা, এই যে আমাকে এতো কষ্ট দিচ্ছ দিনের পর দিন, কান্না গিলে বাঁচতে যে কতটা কষ্ট হয়, সে খোঁজ রেখেছ কখনও?

একটা শ্বাসরুদ্ধকর লেখা লিখে আরামে বসে আছ? পাক্কা দেড় ঘণ্টা ধরে নিঃশ্বাস নিতে পারছি না। অনেকবেশি কষ্ট হচ্ছে। ইচ্ছে করছে, এক দৌড়ে বাসায় চলে যাই, তাও তো পারছি না। স্টুডেন্টের সামনে বসে লিখছি। খুব অস্থির লাগছে। ভেতরটা দাউদাউ করে জ্বলছে। আমি একদমই নিঃশ্বাস নিতে পারছি না। সত্যিই পারছি না। কীভাবে বোঝাই আমার মনের অবস্থাটা? সত্যিই আমি এভাবেই দিন কাটাচ্ছি। তোমার কালকের লেখাটা পড়ার পর থেকে আমার হুঁশ নেই আর। কীভাবে লিখে ফেল ওসব? নাকি, লিখতেলিখতে আশপাশটা ভুল মেরে বসে থাক বেমালুম? তোমার লেখাটা পড়ে আমি নিজেকে শুধু নগ্ন নয়, যদি এর চাইতে স্পষ্ট করে নিজেকে আয়নার সামনে মেলে ধরা যায়, সে অবস্থায় চলে গেছি। মনে হচ্ছে, এ প্রথম তোমার কোনও লেখা আমাকে বিশ্রীভাবে বলাৎকার করল। আমি উঠে দাঁড়াতে পারছি না। আমার শরীরে একটুও শক্তি নেই। একটা ছুরি সামনে থাকলে বুকের মধ্যে ঢুকিয়ে দিতাম। বুকের মাঝখানের মাংসটুকু কেটে টুকরোটুকরো করে ফেলতে ইচ্ছে করছে। এতোটা বড় একটা ধাক্কা খাবো, বুঝতে পারিনি। কাউকে কষ্ট দিতে চাও? নিষ্ঠুরতম প্রতিশোধ নিতে চাও? একেবারে শেষ করে দিতে চাও? আর কিছু না, ওকে জাস্ট প্রেমে ফেলে দাও। এর চেয়ে আর কি কোনও বড় কষ্ট হয়? আমি পুরোপুরি শক্তিহীন হয়ে বসে আছি। আমার মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গেছে। আমি স্বাভাবিক হবো কীকরে? এর চাইতে মরে গেলে কত শান্তি পেতাম। একটা আস্ত অমানুষ তুমি! মানুষ হলে তো আর অমন করে লিখতে না। কী আশ্চর্য! আমি এভাবে বাঁচব কীভাবে? আমি কোনওভাবেই স্বাভাবিক হতে পারছি না। কোনওকিছু শক্ত করে আঁকড়ে ধরে নিঃশ্বাস নিতে পারতাম! কিন্তু কিছুই নেই। ঠিক এই মুহূর্তে তোমার শার্টের কলারটা শক্ত করে চেপে ধরতে পারতাম! হায় ভগবান! এটা কেমনতর যন্ত্রণা? পৃথিবীতে বসেই এ কোন নরকযন্ত্রণা পাচ্ছি আমি? আমি যদি কোনওভাবে আত্মহত্যা করতে পারতাম! যদি কোনও পিছুটান না থাকত, তবে সত্যিসত্যিই মরে যেতাম। বাবা আর বড়দি না থাকলে সত্যি মরতাম। ওদের জন্য আমাকে বাঁচতে হবে, কিছু কারণে। তোমাকে পাবো না বলে নয়, তোমাকে ভালোবাসি বলে মরতে চাই এখন। যেটা আমাকে একদমই মানায় না, যা আমার সাথে যায়ই না, যেটা আমি জানিই আমার নয়, সবকিছু জেনেশুনে বোঝার পরও আমি দিনের পর দিন অভ্যস্ত হয়ে যাচ্ছি ওসবের মধ্যে। এটা একটা শাস্তি। ভালোবেসে ফেললে এটা পেতেই হয়। আর এ শাস্তি থেকে মুক্তি পাওয়ার একমাত্র উপায়ই হল, মৃত্যু। অথচ দেখ, আমি মরতেও পারছি না। এটা এক নতুন ধরনের শাস্তি। সবচাইতে সহজ পথটি যখন নিজেকে একেবারেই শেষ করে দেয়া, সেটাতে যেতে না পারাটা অনেক বড় একটা শাস্তি। বেঁচে থেকেও মৃত্যুযন্ত্রণা ভোগ করার ব্যাপারটি উপন্যাসের পাতা থেকে আমার জীবনে টুক করে এসে গেছে, আমাকে ফাঁকিটাকি মেরে। তিলতিল করে শেষ হচ্ছি আমি। আমি আর পারছি না, সত্যিই পারছি না।

সুপ্রভাত। সাড়ে ৬টা বাজে। এখনও ঘুমাচ্ছ, না? খুব সুন্দর করে ঘুমাও তুমি। কল্পনায় প্রায়ই দেখি, তুমি আমার পাশে ঘুমিয়ে আছ। ক্লান্ত, পরিশ্রান্ত, অবসাদগ্রস্ত দুচোখ জুড়ে ঘুম। আমি তাকিয়ে থাকি অপলকভাবে, অনেকবার চুমু খাই, তোমার ঠোঁট দুটো আলতোভাবে কামড়ে দিই। তোমার নাকের কাছে গিয়ে তোমার নিঃশ্বাসটুকু নিজের শরীরে ঢুকাই। পুরো শরীর জেগে ওঠে যেন! আর বারবারই ভাবি, যদি এরকম করেই পেয়ে যেতাম তোমাকে! আরও বেশিবেশি করে চুমু খেতে থাকি। তুমি ঘুমিয়ে থাক, একটুও টের পাও না। ভাবি, কতবারই তো ঢাকায় আস, একটিবারের জন্যও মনে পড়ে না আমার কথা। খুব কষ্ট হয়, জানো? গতবার যখন ফোনে বললে, উত্তরার দিকে আছ, তখন বারবারই মনে আসছিল, কত কাছে মানুষটা, অথচ একটিবার আমার সাথে দেখা করতে চায়ও না। পর মুহূর্তেই মনে হয়, কেন চাইবে সে? ওকে কি ওই চাওয়াটায় মানায়? আমার মনে হচ্ছিল, আমাদের দূরত্ব কমে গেছে। ঢাকা টু রাজশাহী নয়, গুলশান টু উত্তরা। আমার কী পরিমাণ কাছে এসে গেছে সে মানুষটি! ছোঁয়া যাবে না, কিন্তু ছোঁয়ার দূরত্বে আছে তো! এও বা কম কীসে? ইসস! একটু চোখের দেখাও যদি দেখতে পারতাম! মুখে বলিনি কিছুই, আমি বলতে পারি না, এটাই আমার সীমাবদ্ধতা। আমি ওতে অখুশি নই, ওটাই আমার স্টাইল। মানুষটা তো জানেই, আমি কী চাই। সে কেন নিজ থেকে একটু বলে না? ভাবি, মানুষটা বড় নিষ্ঠুর! তোমার কথায় সুনীলের ‘ভালোবাসা, প্রেম নয়’ পড়েছিলাম। বড় মনের মতো বই! পড়ার সময় শেষের দিকে এসে গায়ের প্রত্যেকটা লোম দাঁড়িয়ে যায়, আর আমার দিকেই অবিশ্বাসের চোখে তাকিয়ে থাকে। প্রেম কী আসলে? আর ভালোবাসাই বা কী? কোনও মানুষকে ঘিরে প্রতিদিনের জীবনচর্যা কি প্রেম? আর প্রতিদিনই সেই মানুষটাকেই অনুভব করে যাওয়াই ভালোবাসা? তোমার শেখানো Boiling Frog থিওরিটা কি অ্যাপ্লাই করবো? হবে আমাকে দিয়ে? কষ্ট পেয়েই যাচ্ছি, সহ্য করেই যাচ্ছি। হুদাই! তোমার দেয়া কষ্টের তাপমাত্রা সহ্য করে চলেছি আমি। প্রতিদিনই একটুএকটু করে বাড়িয়ে দিচ্ছ সে তাপমাত্রা। আর আমিও আমার সহ্যক্ষমতা বাড়িয়ে যাচ্ছি ওটার সাথে মিল রেখে।

আচ্ছা, কী যা তা বলছি, তাই না? তুমি তো কোনওদিন কাছেই এলে না, কষ্ট দেয়ার সুযোগই বা কই পেলে? আমি আমার ভালোবাসার কষ্টের তাপমাত্রা সহ্য করার কথা বলছি। আমার একান্ত, ব্যক্তিগত ভালোবাসাটা তোমার নির্দয় গনগনে উনুনে জ্বাল হচ্ছে। আরও ঘন গাঢ় ভালোবাসার আঘাত অপেক্ষা করছে আমার জন্য। এসব আমি কী যাচ্ছেতাই বকছি? কতকত অনুভূতিকে ডায়রিতে লুকিয়ে রাখছি। এতোসব আলতুফালতু কথা দিয়ে আমি কী করবো? যা হবে না, তা তো হবেই না। এই মুহূর্তে আর কষ্ট হচ্ছে না আমার। শুধুই তোমাকে মনে পড়ছে। তোমাকে রোজ দেখি, রোজ শুনি, রোজই তোমার লেখার প্রতীক্ষায় থাকি। তোমার ভাবনাদেয়াল আমার রোজকার ঠিকানা। দেখি, তুমি কত আগে মেসেঞ্জারে অ্যাক্টিভ ছিলে। পাছে ভুলেও যদি আমার ইনবক্সে কিছু এসে যায় তোমার আইডি থেকে, সে নিরর্থক অপেক্ষায় থাকি। অথচ, একটিবারের জন্যও তোমাকে নক করি না, ঘ্যানরঘ্যান করি না, বিরক্তও করি না কোনওকিছু নিয়েই। কিন্তু এভাবে করে নিজেকে বেশিদিন ধরে রাখতে পারি না। কোনও একদিন হুদাই নক করে বসি। হাই, হ্যালো এসব অর্থহীন নক। কাল বইয়ের জন্য নক দিলাম, সত্যিই আমার ওই ইনফোটা দরকার ছিল, তুমি পাত্তাই দিলে না। উল্টো দুবাক্যেই বিরক্ত হয়ে গেলে। খুব অসহায় লাগছিল নিজেকে। ভাবছিলাম, আমিও বিরক্ত করতে শিখে গেছি? তেলানো শিখে গেছি? যে আমার উপস্থিতি পছন্দই করে না, তাকেও জোর করে পছন্দ করানোর চেষ্টা করে যাচ্ছি? আর কতটা বেহায়া হলে পরে ভালোবাসার যথার্থ প্রতিদান পাওয়া যায়? বেহায়া হলে কি আসলেই কোনও কাজ হয়? সেই মানুষটার কি মায়া জন্মে কোনও এক জাদুবলে? নাকি, বিরক্তি থেকে স্রেফ ঘৃণা জন্মে? ভালোবাসাহীনতা সহ্য করা যায়, কিন্তু ঘৃণা? ভাবতেও পারি না আমি! তাই ভয় পাই, কোনওদিন যদি রেগেটেগে আমাকে ব্লক করে দাও! আমি তো পাগলই হয়ে যাবো সেদিন!

আচ্ছা, আমার এ ভালোবাসাটা কি একদিন শুকিয়ে মরে যাবে? নাকি, আরও বেড়ে যাবে দিনদিন? ইংল্যান্ডের এক পার্কে ৫০ বছর বয়েসি এক ভদ্রলোক এক তরুণকে কোনও এক বিকেলে বললেন, “আমার এটা ভাবতেই ভাল লাগে যে আমি গত ৩০ বছর ধরে একই মেয়েকে ভালোবেসে আসছি!” সেই তরুণ যখন এটা শুনে উৎফুল্ল হয়ে উঠল, আর সে যখন ভদ্রলোককে ‘গ্রেট! ওয়াও! মারভেলাস! কনগ্রাটস্! হোয়াট অ্যা লাভ!’ এসব বলেবলে অভিনন্দিত করছিল, তখন ওকে শান্তভাবে থামিয়ে দিয়ে ভদ্রলোক মাথানিচু করে আফসোসের সুরে বলেছিলেন, “আমি নিজেকে ধন্য মনে করতাম, যদি একটিবারের জন্যও আমি ওকে এ কথাটি জানাতে পারতাম!”………… আমি ভাবছি, আমিও ওই আঙ্কেলের মতোই জীবনটা কাটিয়ে দেবো, মানে, আমাকে কাটিয়ে দিতে হবে। আমি জানি, আমি পারব, যতদিন বেঁচে থাকব, ততদিন ধরে তোমাকে ভালোবেসে যেতে। যদি না পারি? কিন্তু, তোমায় ভালোবেসে যেতে পারবো না কখনও, তাও আবার হয় নাকি? অবশ্য, জীবনটা আমাকে কোথায় যে নিয়ে ছেড়ে দেবে, তাই তো জানি না!

আচ্ছা, তোমার চাইতে ভালমানুষও হয়? হয় তো! আমার সামনে আমার বাবাই তো আছে। ভেবো না, প্রত্যেকটা মেয়ের চোখে তার বাবাই রিয়েল হিরো, আমার চোখেও তা-ই বলেই ওটা বললাম। বাবা সত্যিই অনেক ভালমানুষ। তোমার বাবার মতন একেবারে। খুব সহজ সাদামাটা একজন মানুষ। সুন্দর চিন্তা করেন, সুন্দরভাবে বাঁচেন। কিছুকিছু মানুষকে দেখলেই মন থেকে এক ধরনের মায়া জন্মে। তেমনই এক মানুষ আমার বাবা। আমি আমার ছোটকাকুকেও দেখেছি ওরকম, এরপর দেখলাম, মানে, তোমার লেখা থেকে বুঝলাম, তোমার বাবাও এমনই ভালমানুষ। ও আচ্ছা, আরেকজন আছেন। উনি আমার সবচাইতে প্রিয় বান্ধবীর বাবা। আঙ্কেল এতোটাই ভাল, বাবাকে না জানিয়ে বেচারি প্রেমে পড়তেও ভয় পায়, অপরাধবোধে ভোগে। হিহিহি…… অমন বন্ধুর মতন বাবা আমি আর দেখিনি। তুমিও তো একদিন বাবা হবে। যদি একটা ফুটফুটে মেয়ের বাবা হও, ওই মেয়েটাকে খুব আগলে রেখে রেখে বড় করবে তো, না? আচ্ছা, একটু ভাবো তো, তোমার মেয়েটাও যদি বড় হয়ে কাউকে ভালোবেসে রোজরোজ কাঁদে, আর তুমি সেটা কোনওভাবে জানতে পার, তখন তুমি কী করবে? দিনের পর দিন নিজের মেয়ের কান্না সহ্য করাটা পৃথিবীর সবচাইতে কঠিন কাজগুলির একটি। কোনও বাবাই তা পারে না। তুমিও কোনওভাবেই নির্বিকার থাকতে পারবে না। কী করবে তুমি? ওই ছেলের সাথে কথা বলবে? যদি তোমার আদরের পুতুলটা তোমাকে তার ভালোবাসার মানুষটার সাথে কথা বলতে না দেয়, তখন? চোখের সামনে মেয়ে কেঁদেই চলেছে, অথচ সে কান্না থামাতেও দিচ্ছে না বাবাকে—পৃথিবীতে এর চাইতে বড় অসহায়ত্ব আর হয় না। অবশ্য, তুমি কোনও চিন্তা কোরো না। তোমার পুতুলটা ওর বুকচাপা কষ্টের কথা তোমাকে ঘুণাক্ষরেও জানতে দেবে না। এই যেমন, আমিও দিইনি। তুমি ওর হাসিমুখ দেখে বুঝতেই পারবে না যে ওর ভেতরটা কতটা কষ্টে ভরে আছে। কিছুকিছু ছেলে জন্মায়ই মেয়েদের কষ্ট দিতে, যেমন তুমি। তোমাদের মতো ছেলেরা হাজারহাজার বছর ধরে মেয়েদের কষ্ট দিয়ে যাচ্ছে, ঠিক তেমনি তোমাদের ছোট্ট পরীকেও কষ্ট দেয়ার জন্য রাজপুত্র জন্মে যাবে পৃথিবীর কোনও না কোনও প্রান্তে। রাজপুত্র পরীকে খুঁজে বের করবে, আর প্রেমে ফেলে কষ্ট দেবে। সত্যিকারের প্রেমে পড়া এবং ওরকম সত্যিকারের প্রেমে ফেলা, দুটোই খুব কঠিন কাজ। তোমাদের মতো মানুষ দ্বিতীয়টির প্রতিভা নিয়ে জন্মায়, তোমাদের মেয়েরা প্রথমটির প্রতিভা নিয়ে জন্মাবে। এটা ঐশ্বরিক চেইন বিক্রিয়ার ভাল একটা উদাহরণ। সৃষ্টির শুরু থেকে এ বিক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। এবং চলতেই থাকবে অবিরাম যুগযুগ ধরে। মাঝখান থেকে কষ্টগুলো জমাট হয়ে বাঁধা পড়বে ওই নরোম বুকের মাংসের দলার মধ্যে। আর সেগুলো দুমড়েমুচড়ে, জ্বলেজ্বালিয়ে চোখের জল হয়ে ঝরবে। চোখের জল ভুল মানুষের জন্যই সবচাইতে বেশি ঝরে। জীবনে যে মানুষটি যত বেশি ভুল, তার জন্য তত বেশি জল ঝরে। ঠিক মানুষকে আমরা সহজে জীবনে আসতে দিই না, তাই আমরা ধরেই নিই, চোখের জল ঝরিয়ে বাঁচার নামই বুঝি জীবন!

মেয়েরা কষ্ট লুকিয়ে রাখতে পারার অসীম ক্ষমতা রাখে। যে যত অভিমানী, সে তত নিখুঁতভাবে কষ্ট লুকিয়ে রাখতে পারে। ভয় পাচ্ছ? ভাবছ, তোমার পরম আদরের মেয়েটির কষ্টের খোঁজ কোনও দিনই না জেনে পিতৃত্বযাপন করে যেতে হবে তোমাকে? আচ্ছা, একটা ছোট্ট বুদ্ধি শিখিয়ে দিই তোমায়। তোমার ছোট্ট পুতুলটা যেদিন থেকে পরী হওয়া শুরু করবে, যেদিন থেকে ও সারা রাজ্যময় রূপের ছটা ছড়িয়ে প্রকৃতিকে উন্মত্ত করে দিতে শুরু করবে, সেদিন থেকে রোজ সকালে ওর ঘুম ভাঙার আগেই ওর কাছে গিয়ে ওর নরোম তুলতুলে মুখটা তুলে ওর সবচেয়ে স্বস্তির জায়গাটা একটু চেক কোরো; মানে, ওর বালিশটার কথা বলছি। একটু বুঝতে চেষ্টা করো যে, তোমার আদরের পরীটা সারারাত কেঁদেকেঁদে বালিশ ভিজিয়ে ওই ভিজেযাওয়া বালিশেই ঘুমিয়ে পড়েছে কি না। এটা একটু দেখো, প্লিজ! ওরকম দেখলে তোমার মেয়েটার কষ্টগুলো একটু সরিয়ে বা সারিয়ে দেয়ার চেষ্টা কোরো। যারা তোমার জন্য মন থেকেই কাঁদে, তাদের কথা তুমি কোনোদিনই জানতে পারবে না ঠিকই, কিন্তু তোমার টুনটুনি পাখিটাকে অমন কষ্টের মধ্য দিয়ে যেতে দিয়ো না। ভাবছি, ওকে দেখার জন্য হলেও মনে হয় বেঁচে থাকতে পারবো। তোমার মেয়ে! ইসস! কী সুন্দরই না হবে, তাই না? তোমার একটা মেয়ে হলেই বোধহয় ভাল হবে। মেয়েরা বড় মায়াবী হয়। একটা মেয়ে মানুষ করে দেখোই না কেমন লাগে! নিজের মেয়েকে ভালোবেসে মানুষ করাটা বড় ট্র্যাজেডি! অন্যের জীবনের সম্পদকে নিজের সবটুকু দিয়ে তিলেতিলে গড়ে তুলতে হয়। প্রত্যেকটি মেয়ের বাবাই এমন অলংকারের নিপুণ কারিগর, যে অলংকার প্রথম অর্ধেক পিতৃত্ব-জীবন—নিজের, এবং দ্বিতীয় অর্ধেক পিতৃত্ব-জীবন—পরের গৌরব হয়ে শোভা পায়।