সবুজ কৌটোয় হৃদয়-কড়চা/৬

আমায় তুমি থামিয়ে বন্ধু, কতটা পথ পেরোলে, বলো?

আমায় নাহয় পিছিয়ে দিলে, তুমি কতদূর এগিয়ে গেলে?

তোমার বন্ধু থামলে পরে যাত্রা তোমার এগোয় যখন,

সে যাত্রা দেখো, যাবেই থেমে, গন্তব্য বেশ দূরেই তখন!

পরের পায়ে শেকল বাঁধা,

নিজের পা সচল রাখা,

পরের পথে দিয়ে বাধা,

নিজের পথটা সহজ দেখা—

দুর্বলতা একেই বলে!

অথচ দেখি,

কে চলছে, কে থামছে, মাথায় রেখেই, লেগে না থেকে কার‌ও পিছে—যেমনি কুকুর ছোটে মিছে……

সবল পথে ঠিকই চলে!

পড়লাম। বড়ই উপাদেয় কবিতাণু। এমন-কী, নুডলসের চাইতেও উপাদেয়! লেখার জন্য কবিকে ধন্যবাদ।

তোমার লাইনগুলি পড়ে অনেকদিন পর লিখতে বসলাম। অনেকটা রাগ করেই এতদিন লিখিনি। আর পারলাম না রাগ করে বিচ্ছেদযাপন করতে। কতবার ভাবি, আর বসবো না লিখতে, এইবারই শেষ, অথচ বসে পড়ি, না বসে পারি না বলে। শেষবার লিখেছিলাম রোববার। আর আজকে, শনিবার। অনেক বড় গ্যাপ মনে হচ্ছে এই কদিনের গ্যাপকে। তোমাকে নিয়ে ভাবা, লেখা, এ সবই তো আমার নিভৃত স্বার্থপরতা। নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে ওটা আমার লাগবেই। ওইটুকু স্বার্থপর হতে না পারলে বোধহয় মরেই যাবো। চুপ থেকেছি, হাত গুটিয়ে বসেছিলাম, তাই বলে এই কদিন তোমায় ভালোবাসিনি, এটা কিছুতেই ভেবো না। ভালোবাসা অতো সুবোধ জিনিস নয়। বড় গোলমেলে ভয়ংকর চিজ এই ভালোবাসা। ভালোবাসা একবার শুরু হয়ে গেলেই বিপদ, আর বন্ধ করা যায় না, অসহায়ের মতো আত্মসমর্পণ করে মেনে নেয়া ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না।

প্রিয় মানুষের প্রিয় হয়ে ওঠা খুব একটা সহজ কাজ নয়, অনেক বেশি ভালোবাসা, যত্ন, পরিশ্রম আর সাধনার মধ্য দিয়েই প্রিয় মানুষের প্রিয় হওয়া যায়। যখন অন্য কেউ সেই প্রিয় মানুষটার প্রিয় হতে শুরু করে, ঠিক তখনই নিজেকে তার কাছে অপ্রিয় করে তুলে দূরে সরে পড়াটাও সহজ কোনও কাজ নয়। যতটা মায়ায় কারও প্রিয় হওয়া যায় ঠিক ততটা ঘৃণা তার মনে সৃষ্টি করে অপ্রিয় হওয়াটাও রীতিমতো দুঃসাধ্য। তুমি যখনই বোকার মতো জিজ্ঞেস কর, কী হয়েছে আমার? তোমার জন্য কষ্ট হয় এটা ভেবে যে, আমার যে কী হয়েছে, তা তোমাকে বোঝানো আমার পক্ষে সম্ভব নয়। আমার খারাপ থাকার একশো কারণ থাকতে পারে, তুমি বোঝো সবই, তবু চুপচাপ ঘাপটি মেরে থাক। আমার কষ্ট হলে আমি কী করব? আমি একটা ফালতু মার্কা মেয়ে, বুঝলা? তোমারে শুধু আজাইরা পেইন দিই। সরি, লুতুপুতু কলিজাপিস জানপাখি। ঘুমাও। গুড নাইট। অ্যাত্তোগুলা ভালোবাসা তোমার জন্য। উমমম্ ঘুমাইলাম।……………অনুভূতির শূন্যতায় যারা আছে, যাদের জন্য রয়েছে কেবলই নির্লিপ্ততা, তাদের দামি অনুভূতিটুকু নীরবেই থাকুক। আর তারা, সত্যিকারভাবে না পারুক, অন্তত বাহ্যিকভাবে হলেও, নিজেদের ক্রমশ দূরে সরিয়ে নিক, ঠিক তত দূরত্বে, যেখানে দূর, দূরের হাতে হাত রেখে চলে যায় বহু-বহুদূরে।

আসলে, ভালোবাসায় বাঁচতে হলে ভালো না বাসতে পারার ক্ষমতাও থাকতে হয়। ভালোবাসতে না পারার ক্ষমতা সত্যিই অনেক বড় ক্ষমতা। একটা অনুরোধ করি। আমাকে কখনও হার্ট সাইন পাঠিয়ো না, এতটা মিথ্যে বাহ্যিকতা মেনে নিতে কষ্ট হয়। আমার প্রার্থনা, জানা মিথ্যেরা, না হয় অদৃশ্যেই থাক মিশে………মিথ্যে চিহ্ন হয়ে ওরা কোনও দৃশ্যরূপ না পাক! তবে তোমার প্রতি আমি অনেক কারণেই কৃতজ্ঞ। যখন আমি আমার জীবনের সবটুকু আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছিলাম, মনে হয়েছিল যেন আমি এই পৃথিবীতে নিতান্ত অপ্রয়োজনীয় একটা জড় বস্তুমাত্র, তখন তোমার কিছু কথা শুনেছিলাম, তারপর তোমাকে ফেসবুকে খুঁজে পেলাম, ফলো করলাম। বিশ্বাস করো, সেদিন থেকে আমি আর বিশ্বাস করি না যে আমাকে দিয়ে কিছু হবে না। তুমি আমার মধ্যে এমন একটা আত্মবিশ্বাস সৃষ্টি করে দিয়েছ যে আমি যেন যুদ্ধের জন্য তৈরি হলাম। যেদিন তুমি বললে, তুমি পারবে, তোমাকে পারতেই হবে, সেই মুহূর্ত থেকে মনে হয়, আমি যা চাই, তা অবশ্যই পাবো, যদি আমি পাওয়ার জন্য উপযুক্ত হই। আর পাওয়ার উপযুক্ত হওয়ার জন্য যতটা পরিশ্রম করতে হয়, আমি তা করতে রাজি। সরি বস, নো শর্টকার্টস্‌। এই কথাটি আমার জীবনে অনেক কিছু পাইয়ে দিয়েছে। আমার এ আত্মবিশ্বাস তোমারই দান। আমার স্বপ্ন দেখার ইচ্ছেটা আবারও পেয়েছি তোমার কাছ থেকে। এই জন্যই তোমাকে আমি আলোর দেবদূত বলি। এখন আমি আর ভাবি না যে আমি পারবো না। মানুষ যত বেশি আমাকে বলে যে আমি পারবো না, আমার আরও তত বেশি করে নিজের মধ্যে জেদ তৈরি হয় যে অন্তত ওদের ধারণা মিথ্যে প্রমাণ করতে হলেও আমাকে পারতেই হবে। তুমি বল, এ পৃথিবীতে সেটা করে দেখানোটাই সবচাইতে আনন্দের, যেটা অন্যরা বলে, তুমি করতে পারবে না। “যদি নিজের শক্তি কত, তা জানতে চাও, তবে নিজেকে এমন এক যুদ্ধে অবতীর্ণ করো, যে যুদ্ধে তোমার বিপক্ষে হাজার জন, যাদের প্রত্যেকেই তোমাকে আঘাত করতে প্রস্তুত, এবং সে যুদ্ধে লড়াই করে জিতে যাও।” এমন রক্তে আগুনধরানো কথা বেশি পড়েছি বলে মনে পড়ে না। আমি মুখ বুজে সব সহ্য করার শক্তিটা তোমার থেকে পেয়েছি। আমি কথা দিয়ে নয়, আমার সফলতা দিয়ে ওদের আঘাত করতে চাই। আমি জানি, লোকের কথা সহ্য করার যন্ত্রণা যে কী! আমার নির্বাক ধ্যান তোমার কাছ থেকেই শেখা। আমি তোমার থেকে অনেক বেশি পেয়েছি, যা অন্য কারও কাছ থেকে পাইনি। তোমার প্রতি আমি অনেক কৃতজ্ঞ। অনেক ভালোবাসি তোমাকে।

আমার কি তোমাকে কাছে পেতে ইচ্ছা করে না? করে, সবসময়ই করে। খুব বেশিই করে। গতকাল রাতে তোমাকে স্বপ্নে দেখেছি। তোমার কাছে এসেছি আমি। আসার পথে কীভাবে যেন ব্যথা পেয়েছি, কপালের একপাশ কেটে গেছে। আর তুমি আমাকে আদর করে মুখ মুছে দিচ্ছ, কপালের কাটা জায়গাটা সাবধানে পরিষ্কার করে দিচ্ছ, আর তখন আমার মাথার চুলের ফাঁকে সিঁথিতে লুকানো সিঁদুরের ছোঁয়া তোমার চোখে পড়ে। দেখে অবশ্য তুমি কিছুটা বিরক্তই হয়েছ। জানো, আমি কিন্তু সত্যিই কখনও-কখনও কপালে সিঁদুর দিই। কাউকে দেখানোর উদ্দেশ্যে নয়, তোমার মঙ্গলকামনা করেই ওটা দিই। তবে এমনভাবে দিই যেন কারও নজরে না আসে। তোমার কাছ থেকে সেদিন ফিরে আসতে খুব কষ্ট হয়েছিল। মাইক্রোটা যখন নাটোরের দিকে যাচ্ছে, আমার চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছিল, ড্রাইভার কয়েকবার মিরর দিয়ে বিস্মিত চোখে দেখেছেন, আমি চোখ মুছছি। “আপা, কিছু হইসে?” উত্তরে আমি কিছুই বলিনি। তোমাকে ছেড়ে থাকা আমার জন্য সবসময়ই কষ্টের। কত মাস ঘুরে গেল। তবু মনে হয়, এইতো সেদিন…………এটা মাথায় রেখেই লিখছি—আর কখনও তোমাকে অন্তত আমাকে নিয়ে একটাও ভুল করতে দেবো না। সত্যিটা হল, নিজের সাথে বোঝাপড়া করাটা জীবনে সবচাইতে জরুরি কাজ। যা ভুল, তা ছেড়ে দেওয়াই হচ্ছে সঠিক আর নতুন কিছুর সূচনা। দেরিতে কেবল দেরিই হয়ে যায়, ওতে লাভ কিছুই হয় না। এটাই সত্য। কিন্তু সময়ের আগে কি কোনও কিছু হয়? ঠিক সময়টা আসার জন্য তো সময় দিতে হবে। ভুল কারও সাথে চলার চেয়ে বরং একা চলাই ভাল। তবে একাকিত্বই যে আবার নতুন ভুলকে টেনে আনে! তার কী হবে, বলো? চলতে পথে তাই কাউকে না কাউকে লাগেই। আচ্ছা, সে যদি তুমিই হও, তবে খুব কি ক্ষতি হবে, বলবে? অন্তত যতদিন সঠিক সময়টা না হচ্ছে, ততদিন আমি তোমায় নিয়েই বাঁচি না! আর একটা কথা, বলোতো, তুমি আমাকে ভালোবাসো তো? নাকি এটা আমারই বোঝার ভুল? কিংবা মনের স্বেচ্ছাচারিতা? তুমি কি কখনওই আমাকে ভালোবাসোনি? আমাকে ভেবে তোমার কি কখনওই শান্তি মেলেনি? সুখ খুঁজে কি পাওনি আমার অস্তিত্বের অনুভবে? যদি না পাও, তবে তা ছিল আমারই বোঝার ভুল। অজস্র প্রমাণ উপস্থাপন করে নিজের শক্তিকে আর তোমার সম্মানকে কোনওভাবেই খাটো করতে চাই না। যা আমাকে ভাল রেখেছিল, ভাল থাকতে শিখিয়েছিল, সেই ভাললাগাটা থাক না অনেক যত্নে, যেখানে সে ছিল অমূল্য হয়ে, তাকে টেনেহিঁচড়ে মাপকাঠিতে এনে তার অবমূল্যায়ন আমি কেনই বা করব, বলো? আমি তো জানি, ওগুলো আমার কাছে কত দামি! সবাই তো আর সবকিছু সমান অনুভবে পায় না। কিন্তু সুরে সুর না মিললে বেশি গভীরে কি আর যাওয়া যায়, বলো? যদি সুর কেটে বারবার বেসুরটাই বেরিয়ে আসে, তবে তো আর কখনও সুর মিলে না। তখন সুখই আর কীসে? অতএব, যা গেছে, তা তো গেছেই। যা ছিল, তা ছিল, এবং এখন তা আর নেই। এটাই সত্যি—সন্দেহাতীতভাবেই। এখন থেকে তুমি যেমন চাইবে, তেমনই হবে। আর আমি কাঁদবোও না, দেখে নিয়ো! শুধু জানতে চাই, ভালোবাসো তো? আমাকে না হোক, আমার ভালোবাসার গভীরতাকে ভালোবাসো তো?

তোমার যা কিছু দেখে আমি তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছিলাম, এখন সেসব কিছুর জন্যই আমি তোমাকে আর সহ্য করতে পারছি না। তোমাকে এত ব্যস্ত হতে হবে কেন? তুমি শুধু আমাকে নিয়েই ব্যস্ত হয়ে থাকবে, ব্যস্‌! ভুলে যাওয়া তো যায়ই, না? ভুলে তো যেতেই পারি, কিন্তু, কেন যাবো? ভুলে যাওয়ার জন্যই কি মনের মধ্যে রেখেছি তোমাকে? অনেক রাগ হয়, জানো? এ আমি কাকে ভালোবাসি, কেন ভালোবাসি, কোন সুখে ভালোবাসি? একটা স্বার্থপর ননসেন্স দাম্ভিক ছেলেকে ভালোবাসি? যে প্রয়োজন ছাড়া সামান্যতম রেসপন্সও করে না? আমি কি এতোটাই ফেলনা? কই, আগে কোনওদিনই ছিলাম নাতো এমন! ফেসবুকে মেসেজ দিলাম, রিপ্লাই তো পরের কথা, উনি মেসেজ সিনই করেন না। কীসের অতো অহংকার? ঢাকায় এসে বান্ধবী নিয়ে বেশ আয়েসে কফি গিলছেন। লাইট অফ করলে উনার আবার সব মেয়েকেই সুন্দর লাগে! ৪ অক্ষরের এত সুন্দর ব্যবহার দিয়ে ৩ অক্ষরে পৌঁছতে উনার আগে কে কবে কোথায় পেরেছেন? উনার চোখে শুধু আমিই সহজলভ্য, অতএব, আমি কিছুই না। ফোনে মেসেজ দিলাম, তাতেও নো রিপ্লাই। অমন ফোন রেখে কী হয়? আছাড় মেরে ভেঙে ফেলি আমি অমন ফোন! আমরা মেয়েরা একবার যাকে নিজের মত করে পাই, তাকে যতটা মনে রাখি, তোমরা ছেলেরা যাকে একবারও পাও না, তাকে ঠিক ততটাই মনে রেখে দাও। অ্যাই ছেলে, আমি খুব ভাল করেই জানি, তুমি কী করছ, কোথায় আছ, সব মানছি। কিন্তু একটা রিপ্লাই দিলে কী হয়? তুমি তো জানোই, মহুয়া কখনওই তোমাকে ডিস্টার্ব করবে না। এমন নিরাপদ নির্ঝঞ্ঝাট নিশ্চিন্ত প্রেমিকা দুটো পাবে না। তবুও তুমি এমন কর? তাহলে ফেসবুকে সেদিন নাম্বার দিয়েছিলে কেন? ঢং করতে? বলা নাই, কওয়া নাই, হুট করে নাম্বার দিলে, আর এখন কল করলে কেটে দাও, মেসেজের রিপ্লাই দাও না। পেয়েছটা কী তুমি? কারও মনখারাপ হতে পারে এতে, এটাও বোঝো না? তোমার তো না বোঝার কথা নয়, আসলে তুমি না বুঝতেই ভালোবাসো। তুমি অনেককিছু, ঠিক আছে, তাই বলে কি আমি কিছুই না? নাকি, নিজেকে বাদে সবাইকেই বেহায়া মনে হয়? হ্যাঁ, বেহায়াই তো! তোমার অবহেলা সহ্য করেই তো দাঁতে দাঁত চেপে পড়ে আছি, বেঁচে আছি। জানি না এর শেষ কোথায়। বিশ্বাস কর, তোমাকে ঘৃণা করতে পারলে বা ভুলতে পারলে আমি নিজেই অনেক খুশি হতাম। কিন্তু সেটা তো হবে না। কারণ, সেটা হচ্ছে না, হলে আরও আগেই হতে পারত। আমি বেহায়া হয়েই বাঁচতে শিখে গেছি কীভাবে যেন! কারণে অকারণে কী যে এক আশংকায় জীবনটা কাটছে, সেটা যদি জানতে! আমি কোনও কূলকিনারাই পাই না কোনওকিছুরই। আমি এর থেকে মুক্তি চাই। প্রত্যেক মুহূর্তেই তোমাকে মনে পড়তে হবে? আর কোনও কামকাজ নাই আমার? কখনও-কখনও এমন হয়, ভেতর থেকে কোনও আকুলতা আসছে না, কোনও আবেগ আসছে না, কিন্তু চোখে স্পষ্ট তুমিই আছ! তুমি’র প্রলেপ এই পোড়াচোখ থেকে সরেই না। কেন? তুমি আমার চোখে কী কর? তোমার বাড়িঘর নাই? আমার অসহায় চোখজোড়া কেন তোমার থাকবার জায়গা হবে? তুমি নিজে তো তোমার মতো ভালই আছ। তবে আমি কেন তোমাকে নিয়ে পড়ে আছি? আমি এরকম অথর্ব অপদার্থ হয়ে বাঁচতে অভ্যস্ত হয়ে যাওয়ার কথা ছিল কি?

আমি এও বুঝতে পারছি যে, আমার সাথে তোমার আর দেখা হবে না। হুট করেই বিয়েটা করে ফেলবে। তবে কেন আমাকে ঈশ্বর তোমার প্রেমবন্ধনে আবদ্ধ করলেন? ওহ! ভুল হলো! তোমার প্রেমবন্ধন নয়, তোমার প্রতি আমার প্রেমবন্ধন। এ বন্ধনই যত নষ্টের গোড়া! ছোট্ট একটা জীবন, সেটাও নাকি যতই কষ্টই হোক, বন্ধনে বেঁধেই কাটাতে হবে! ফাজলামো ছাড়া আর কী? কেন আমি তোমাকে ভালোবাসলাম? কেন তোমাকে ভুলতে পারি না? কেন ভোলা যায় না? কেন বারবার মনে পড়েই? আমি আজ ভুলতে ভুলে গেছি। কেন তুমি আমার মন থেকে, চোখ থেকে সরছই না? একবার রাগ করে তোমাকে ব্লক করে দিয়েছিলাম। রাগটা তোমার উপর নয়, নিজের উপর। তুমি সেকথা জানতে না, জানার কথাও না। আমার অস্তিত্ব কিংবা অনস্তিত্বে তোমার কিছুই এসে যায় না। সার্চ লিস্টের এক নম্বরে তুমি নেই, এটা আমি মানতেই পারি না। নিজেকে বিপর্যস্ত লাগে। আমার নিঃশ্বাস পর্যন্ত বন্ধ হয়ে আসে। এর চাইতে মরে যাওয়া সহজ। জাস্ট কয়েক মিনিট। অস্থির হয়ে উঠলাম, পাগলপাগল লাগছিল, আর পারলাম না। নিজের বিরুদ্ধে শতযুদ্ধ করে তোমাকে আনব্লক করে দিলাম। আমি সেদিন তোমাকে কেমন পাগলের মতো ফোন করছিলাম বারবার আমাকে অ্যাড করে নিতে, তোমার মনে পড়ে? সেইদিন শপথ করেছিলাম, যতই কষ্টই হোক প্রাণ থাকতে এই ভুল আর দ্বিতীয়বার করব না। আমি কেন রোজ মরিয়া হয়ে তোমার ছবি দেখি? তোমার নয়শো চুরানব্বইটা ছবি এখন আমার অ্যালবামে। ফোনের পাসওয়ার্ডও তোমাকে নিয়েই। ফেসবুকে লগইন করি তোমাকে ভেবে বানানো একটা পাসওয়ার্ডে। তোমার নামের অক্ষরগুলির বিন্যাস ছাড়া আমার ল্যাপটপে ঢোকা যায় না। আমার যত পারমুটেশন আর কম্বিনেশন, সবই তোমার নাম দিয়ে। আমার ভাবখানা এমন যেন পৃথিবীতে আর কোনও শব্দ নেই! কোনও মানে হয়? এসব কেন করছি আমি? কেউ তো জানে না, বোঝে না, জানবেও না কোনওদিনই। ভালোবাসা কি দেখানোর বিষয় নাকি? আর ‘কতটা পথ পেরোলে তবে পথিক বলা যায়?’ আর কতটা ভালোবাসলে পরে তোমায় ভোলা যায়? আমি কি ক্লান্ত হব না? এখন বুঝি, একই জিনিস বেশিদিন ভাল লাগে না—এই যুক্তিটা মেয়েদের সাথে যায় না। যারা সত্যিই ভালোবেসে ফেলে, তাদের সাথে তো নয়ই। হ্যাঁ, ছেলেদের সাথে যায়; ‘ভালোবাসা, প্রেম নয়’ এর কামাল, কিংবা ‘মনের মত মন’ এর স্বপ্নাশিস বাদে অন্যদের সাথে। ওরা ব্যতিক্রম। আমি তোমাকে ছাড়া আর কিছুই ভাবতে পারি না, ভুলে গেছি অন্যকিছু ভাবতে। অনেক চেষ্টা করি, তবু মাথায় এক তুমি ছাড়া আর কিছুই আসে না। এই মাথাটা ভেঙে তিন টুকরা হয় না কেন?

ইদানিং আর আগের মতো করে আকাশ দেখা হয় না। শেষ কবে আকাশটাকে দেখেছি, মনেও ছিল না। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ভরা পূর্ণিমা নেমেছিল। স্টুডেন্টের বাসায় পড়াচ্ছি, এমন সময় হঠাৎ কারেন্ট চলে গেল। ইমারজেন্সি ল্যাম্প আনতে ভেতরে গিয়ে ৫-১০ মিনিট স্টুডেন্টের কোনও খবরই নাই। টেবিলটা জানালার ধারে। নকশাকরা গ্রিল দিয়ে বাইরে তাকিয়ে চাঁদটাকে দেখলাম। গাছের ঝিরিঝিরি পাতার মই বেয়ে এক লাফে আকাশে উঠেপড়া শাদা রুপোলী একটা থালা। চট করে কোত্থেকে যেন তুমি এসে মাথায় টোকা মারলে। তোমার মধ্যমা আর বৃদ্ধাঙ্গুলির বৃত্ত ফুঁড়ে উঁচিয়েওঠা তর্জনীর ইশারায় চাঁদটা দেখিয়ে বললে, “দেখো, কীরকম দুধের ফেনার মতো জ্যোৎস্না ঝরছে আকাশের গা থেকে! এই হাওয়ার বাঁশির সুরে ভেসে ভেসে আজকের রাতটা কাটিয়ে দিলে কেমন হয়?” বড় স্পষ্ট করে শুনলাম যেন! অন্তত পাঁচ থেকে সাত মিনিট তোমার মায়াসাগরে ডুবে ছিলাম। সে যে কী এক ইন্দ্রজালের নিবিড় আবেশে জড়িয়ে ছিলাম, তা লিখে বোঝাতে পারবো না। একাএকা মনেমনে বলছিলাম, “আহা ঈশ্বর, ও যদি একটু পাশে থাকত! হাতটা না ধরুক, ওর মাথাটা আমার কোলে রাখতে চাওয়ার দুঃসাহসটুকুও দেখাতাম না, কিংবা ওর কাঁধে মাথা রাখার ইচ্ছেটা—যতই কষ্ট হোক, চেপে রাখতাম; আর কিছু নয়, শুধু একটিবার ওর পাশে বসে এই শুভ্র আলোয় গা ধুতে পারতাম! জীবনের কত চাওয়াই অপূর্ণ থেকে যায়! এমন অসীম সুন্দর নীরবতায় বেশি না, শুধু একটা মিনিটও যদি ওর পাশে থেকে চন্দ্রস্নান করতে পারতাম! এমন যদি হতো, দূরের কোনও নদীর পাড়ে পাশাপাশি বসে জলে পা নাচাতে-নাচাতে মুহূর্তগুলি উড়ে যেত ওই আরও দূরে। ওর শরীরের ঘ্রাণ আমার নাকে এসে ধাক্কা খেয়ে খেয়ে আমাকে পাগল করে দিচ্ছে, চাঁদটা আমাদের দেখে লজ্জায় নিজেকে লুকিয়ে ফেলতে চাইছে যেন, শাদা গাভীর পালের মতো চরেবেড়ানো মেঘ পিছলেপিছলে দুগ্ধফেনিল আলোকচ্ছটা এসে ভিজিয়ে দিচ্ছে আমাদের দুজনকে………” ঈশ্বরকে কথা দিতে পারি, ওই মুহূর্তে ওকে একটুও বিরক্ত করতাম না, ওকে একটুও যন্ত্রণা দিতাম না, শুধু ওর পাশে চুপচাপ বসে থাকতাম আর হয়তো মাঝেমাঝে ওর চন্দ্রমাখা ফর্সা, উজ্জ্বল মুখটা দেখতাম, নাহয় নিজেকে দমিয়ে রেখে ছুঁতামও না, শুধুই মুগ্ধ হয়ে তাকিয়েতাকিয়ে ওর সমস্ত শরীরজুড়ে আলোর নাচন দেখতাম। তখন সত্যিই ওকে মনে হতো স্বর্গ থেকে নেমেআসা কোনও দেবতুল্য সত্তা, যার চোখ অমন ধাঁধানো আলোয় ঝলসে গেছে আর পথ ভুলে সে এই মর্ত্যলোকের এক তুচ্ছ মানুষীর কাছে চলে এসেছে। হোক ভ্রম, হোক পথভ্রান্তি; এসেছে, এটাই তো সত্যি। সে পূজনীয়র পায়ের কাছেই বসে চাঁদটাকে আলতো করে ছুঁয়েছুঁয়ে রাতের নৈঃশব্দ্যের বুক চিরে ক্ষণটা দিব্যি দারুণ কাটিয়ে দিতাম।

যে মানুষ অনেক ভালোবাসা পেয়েপেয়ে বড় হয়, সে সব সহ্য করতে পারলেও ভালোবাসার কমতিটা কখনো সহ্য করতে পারে না! তাই হয়তো আমি এমন অসহিষ্ণু হয়ে যাচ্ছি দিনদিন। তবু ভয় হয়, এমনিতেই তো সে দুর্লভ মানব, তার উপর ঈশ্বরের কাছ থেকে বেশি চাইতে গিয়ে যেটুক পেয়েছি, আবার সেটুকই না হারিয়ে বসে থাকি! তখন আমি কোথায় যাবো? কিন্তু হায়! যে নেইই, সে আবার হারায় কীকরে? ও তো আছে ওর মতোই। ওর চারপাশে এক চক্রব্যূহ, সে ব্যূহ ভেদ করে ওর কাছে যায়, এমন সাধ্য কার? এসব ভাবতেই আমার দুচোখ ঝরল। অমন চাঁদের বন্যায়ও চোখজোড়া শ্রাবণে ভাসল। আকাশের দিকে চেয়েচেয়ে ভাবতে লাগলাম, পৃথিবীর সব দৌলত আর রত্ন যদি এক করে জড়ো করি, তাও বুঝি আমার এ স্বপ্ন পূরণ হবার নয়। আমি যদি মরেও যাই, কার কী এসে যায় ওতে? আমার না-ছোঁওয়া স্বপ্নপূরণের দায় কীসের ওর? এ যে দুর্লভ মুহূর্তটুকু, তা তো হাজার যুগ সাধনা করলেও জীবনে আর আসবে না। এলেই কী? আর, না এলেই বা কী? যে মুহূর্তটি এসে পড়ে থাকে মুখ থুবড়ে মনের এক কোণায়, নিতান্ত অবহেলায়, সে মুহূর্তটি কষ্ট বাড়াতে না আসুক। এসব ভাবছি, আর কিছুক্ষণ পরই ছাত্র চলে এল, নাকি কারেন্ট চলে এল, সেটা আমার মনে নেই। শুধু মনে আছে, আমি ওকে সেদিন আর পড়াতে পারলাম না, ছুটি দিয়ে চলে এলাম। বাসায় ফিরে পাগলের মতো অঝোরে কেঁদেছিলাম। আর ভাবছিলাম, “হায়রে বড় মানুষ! মৃত্যুর আগে এমন করে কাঁদাচ্ছ, মৃত্যুর পরও কি আরও অনেককেই কাঁদাবে? চাই না অমন মান, যশ, খ্যাতি, ভালোবাসা। ও থাকুক ওসবে ডুবে! কী হবে এ মানুষটিকে এমন মমতায় বেঁধে? তার জন্য কেঁদেকেঁদে অন্ধ হবো, অথচ সে জানবেও না, আর জানলেও পাত্তা দেবে না। আমার কান্নায় ওর যে কিছুই এসে যায় না। আমি ওর জায়গায় হলে কখনওই ওই চুড়ায় উঠতে চাইতাম না। যে মহত্ত্ব অন্যকে কাঁদায়, সে মহত্ত্বে কী-ই বা মঙ্গল? ওটা না থাকলেই বা কী এসে যায়? আমি কিছুতেই চাই না, আমার জন্য কেউ কাঁদুক। কীসব বকে যাচ্ছি, না? তুমি তো আর শুনছ না। দরকারও নেই। শুধু ভাল থেকো, ওতেই হবে। একলাএকলা কেঁদেই যাওয়ার যে কী কষ্ট, তা কি কখনও অনুভব করেছ? ভালোবাসা অনুভব করার সৌভাগ্য নিয়ে তুমি জন্মাওনি। আমি জন্মেছি, তাই মরছি। এটা কি জীবন? এটা কী ধরনের অদ্ভুত অনুভূতি? এটাই কি ভালোবাসা? এ কেমন ভালোবাসা, ঈশ্বর? মানুষ কেন আসে পৃথিবীতে? মায়া বাড়াতে? নাকি, কষ্ট? মায়ার কষ্ট বড় কষ্ট! জীবনটা আনন্দে কাটাতে আসে না মানুষ? মানুষই তো মানুষ নিয়ে আসে এ পৃথিবীতে। তবে সে মানুষই কেন মানুষকে এতো কষ্ট দিতে শিখে যায়? কেন সবাই ওটা শিখতে নিতে পারে না? কেন কারও-কারও নিয়তিই কষ্টে বাঁচা, কষ্টে মরা?

এই যে অনবরত তোমাকে লিখে যাচ্ছি, সে লেখা কি কোনওদিনই তোমাকে পড়তে দিতে পারবো না? তোমাকে তো চাইছি না, অন্তত একটিবারও যদি জানতে পারতে যে, এ অভাগিনী তোমাকে ভালোবেসে ফেলে কত কষ্টে আছে! আমি জানি এসব জানলেও তুমি কিছুই করবে না, বরং আরও দূরে সরে যাবে, আমাকে ইচ্ছে করে দূরে সরিয়ে দেবে। হয়তো যা একটু তোমার চেনার মধ্যে ছিলাম, কাছে টানোনি ঠিকই, কিন্তু দূরেও তো ঠেলোনি, সেসবকিছুও আর কখনও হবে না। সিমপ্লি আমাকে ব্লক করে দেবে কিংবা মুখের উপর সরাসরি বলে দেবে যেন আমি আর কোনওদিনই তোমার সাথে কোনও যোগাযোগ না করি। তবু ইচ্ছে হয়, যদি একবারও জানতে, এ পাগলীটা তোমাকে কত ভালোবাসে! কোনও মাপকাঠি নেই ভালোবাসা মাপার। যে দৃষ্টি থাকলে হৃদয় ফুঁড়ে ভেতরটা দেখা যায়, তা তোমাকে দেননি নিষ্ঠুর বিধাতা। দিলে দেখতে পেতে, এই মেয়েটার মাথার মধ্যে, চোখের তারায়, মনের খুশিতে শুধু তুমিই রাতদিন খেলা কর। অনর্গল অবিরত আপনাআপনিই এসে পড় তুমি। একটিবার যদি বুঝতে! নাহয় এটা জেনে ওই দুঃখিনীকে জিতিয়েই দিলে, ও জিতে নাহয় একেবারেই শেষ হয়ে যেত, তাও একটাই সান্ত্বনা থাকত ওর, তুমি ওইটুকু জানলে তো! আমি জানি, তুমি না জানাতে, কিংবা তোমাকে না জানিয়ে আমি যতটা ভাল আছি, হয়তো তুমি কোনওভাবে জেনে গেলে আমার কষ্ট হয়ে যাবে এর অন্তত দ্বিগুণ। কারণ, তোমার কী এসে যায় আমার ভালোবাসায়? তোমাকে অমনি করে অনেকেই ভালোবাসে। আর তাছাড়া তুমি তো আর বার্থডে কেক নও যে পিসপিস করে নিজেকে ভাগ করে বিলিয়ে দিয়ে সবাইকে খুশি রাখবে। তাই, না জানাই থাক সবকিছু, যেমনি চলছে, তেমনিই ভাল। চলুক, যতদিন শেষ না হয়ে যাচ্ছি। তবে হ্যাঁ, যদি কখনও মরে যাই, আর সেটা আগে থেকে একটুও বুঝতে পারি, তখন হয়তো কোনওভাবে তোমার হাতে পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করবো এই ডায়রিটা। তাহলে আর আক্ষেপ থাকবে না। জানিয়ে দিয়ে মড়ার মতো বেঁচে থাকার চাইতে, মরার আগে মুক্ত হওয়া ঢের ভাল। অন্তত স্বস্তি নিয়ে তো মরতে পারব! বেঁচে থাকতে স্বস্তি দিচ্ছ না, মরে যাওয়ার সময় আর কিছু না পার, স্বস্তিটুকু দিয়ো। এই ডায়রিটা গ্রহণ কোরো, আমাকে ভুলে যাওয়ার দায়টুকু নেই তোমার, জানি, তোমার মনেই তো আমি নেই, ভুলবে কীকরে? ভাল থেকো, আশেপাশের সবাইকে ভাল রেখো। আর তোমার জীবনসঙ্গিনীটিকে আগলে রেখো। বড় ভাগ্য নিয়ে সে পৃথিবীতে এসেছে। আমি ওকে ঈর্ষা করি, ভালোবাসি। আমার রামের সীতা সে। আমার বোনটিকে খুউব ভাল রেখো। তোমাকে সত্যিই ভীষণ ভালোবাসি। এমন ভালো আর কেউ বাসতে পারবে না তোমায়। আমি প্রতিদ্বন্দ্বিতায় যাবো না, হেরে গিয়ে আমি যে জিতেই আছি সেই কবে থেকে! (২৬.০৩.২০১৬। ভোর ৫:১০)

মেনে নিতে খুউব কষ্ট হচ্ছে যে তুমি আর কোনওদিনই আমাকে ডাকবে না। অত্যন্ত অপ্রিয় সত্যি এটা। একদম খোলাখুলি খোলামেলা না-বলা কথা এটা। তোমাকে এভাবে হারাব, ভাবিনি। তুমি যে এভাবে অবজ্ঞা করবে, বুঝিনি। হাতের বুড়ো আঙুলটায় প্রচণ্ড ব্যথা, তবু লিখতে বসলাম। এছাড়া আমার যে আর কোনও পথ নেই। আর কী-ই বা করতে পারি আমি? জীবনটা হঠাৎ করে এমন ওলটপালট হয়ে যাবে একদমই ভাবিনি আগে। তুমি আমাকে এভাবে অ্যাভয়েড করবে, কোনও রেসপন্সই করবে না, এটা সত্যিই আগে বুঝিনি। আমাকে নিয়ে তোমার কোনও মাথাব্যথা নেই। তাই আমাকে গোনায়ই ধর না। আমার সাথে আর যোগাযোগ করবে না তুমি, এটা আমি বুঝে গেছি। আর কোনওদিনই তোমার মোবাইল থেকে আমার মোবাইলে ফোন আসবে না। কী করবো আমি? অনর্গল ফোন করে যাবো? অবিরত নক করবো? পাগলের মতো আচরণ করবো ফেসবুকে? নাকি, এসবের কিছুই করি না বলেই আজ আমি তোমার দৃষ্টিসীমানার বাইরে? তুমি নিশ্চয়ই ভাবো, আমি শুধু প্রয়োজনেই তোমার কাছে যাই, সেটা শেষ হলে আমি আর তোমাকে নক করি না, বা বাড়াবাড়ি করি না, তাই তুমিও কর না। কিন্তু তুমি যদি জানতে তোমার জন্য আমি এ কীভাবে বেঁচে আছি, তবে কি এমন করতে পারতে? আমি জানি, আমাকে ভালোবাসার মতো কিছু নেই। আমাকে ভাললাগার একটি কারণও নেই তোমার সামনে। আমাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখারও কিছু নেই। তাই আমি আজ কোথাও নেই। আমি লুকিয়ে আছি অবহেলায়। তাই তুমি আমাকে ভিড়ে ঠেলে দিয়েছ। হাত বাড়ালেও, হাজারহাজার যুগ সাধনা করলেও আমি তোমাকে পাবো না। আমি তোমাকে কখনওই চাইনি। শুধু চেয়েছিলাম, তোমার একটু কাছে থাকতে। সেটাও দিলে না। সেটা আর চাইব না। আমি বিতৃষ্ণাপূর্ণ জীবন কাটাচ্ছি। কোনও কারণ ছাড়াই। কোনও শর্ত ছাড়াই। কিছুই ছিল না আমাদের মধ্যে, এখনও নেই। কিছুই হওয়ার আশায় বসে নেই নিয়তি, সময়, কাল, স্থান।

একটু অন্যদিকে নিয়ে যাই কথাকে। এইমাত্র তোমার পোস্ট এল—দ্য শর্টেস্ট লাভস্টোরি: যাকে দিনের পর দিন একতরফাই ভালোবেসে এসেছি, যার প্রোফাইলে সারাদিনই পড়ে থাকি, যার তুচ্ছতম পোস্টটিও কয়েকবার ব্যবচ্ছেদ করে নানান অর্থ বের করে ফেলি, যাকে নিয়ে লিখে যাই পাতার পর পাতা, সারাক্ষণই যাকে নিয়ে ভাবি; অথচ কোনওদিনই সেসব বলার সাহস হয়নি প্রত্যাখ্যাত হওয়ার ভয়ে, সে একদিন হঠাৎ নক করে ‘ভালোবাসি’ বলে আর কখনওই কোনও যোগাযোগই রাখেনি, কিংবা রাখতে দেয়নি।……..আমি ওতেও রাজি। বলবে ভালোবাসি? মিথ্যে করে হলেও? বলো না গো! আমি এভাবে আর কতদিন বাঁচব? জীবন আমাকে এতো সহজে হারিয়ে দিল? আর তুমি? এমন অপরিচয়ের পরিচয় কেন হয় পৃথিবীতে? একটা ক্ষীণ আশা বুকের মধ্যে সারাদিন উঁকি দিচ্ছিল। মনে হচ্ছে, সেটা কীভাবে যেন টের পেয়ে তুমি আস্তেআস্তে নিভিয়ে দিলে। আর জ্বলবে না। আমি হয়তো মরীচিকাকে সত্যি ভেবে বারবার জ্বালাতে চেষ্টা করেই যাবো, কিন্তু আমি জানি, আশার আলোটা আর জ্বলবে না। একটা মিথ্যা অনুভূতি, মিথ্যা স্বপ্ন, মিথ্যা রঙ, মিথ্যা কল্পনা, মিথ্যা স্পর্শ গায়েচোখে মাখিয়ে আমি জীবনটাকে টেনে বেড়াচ্ছি। না পারছি ফেলতে, না পারছি ভুলতে, না পারছি মুছে দিতে, না পারছি ভুলে থাকতে। আমি তোমাকে কেন এতো ভালোবেসে ফেললাম? এ প্রশ্নটির চাইতে কঠিন আর কী প্রশ্ন থাকতে পারে? কেন মেনে নিতে পারছি না তোমার অবহেলা? তোমার সাড়াহীন অনুভূতি কেন আমার সমস্ত অনুভূতিকে জাগিয়ে দেয়? তুমি কি কাউকে করুণা কর না? কাউকে ভিক্ষা দাও না? আমাকে একটু ভালোবাসা ভিক্ষা দেবে? আমাকে একটু আশ্রয় দেবে? আমাকে একটু সময় দেবে? না না না না না না না ………… ওই না-টুকু শোনাও তো হলো না আমার, তার আগেই হারিয়ে গেলে।

আমি কীকরে বোঝাই তোমাকে আমি কেমনভাবে বেঁচে আছি? আমার কোনও শক্তি নেই, আমি নিরুপায়। আমি নির্বাক হয়ে আছি, নিথর হয়ে গেছি। আমাকে একটু দয়া করা যায় না? কেনই বা করবে? জানি, করবে না। তোমাকে খুউব নিষ্ঠুর, খারাপ আর অহংকারী ভাবতে ইচ্ছে করে। তবুও পারি না। আজ গগনবিদারী হাওয়ায়-হাওয়ায় কষ্টের সুর তুলে আমাকে ধিক্কার দিচ্ছে সারা পৃথিবী। এতো বড় আস্পর্ধা করেছি, দেখিয়েছি, শুনিয়েছি, তাইতো অদৃশ্য বিদ্রূপমশাই আমাকে দেখে খিলখিল করে সারাদিন হেসেছে, কালো মেঘেমেঘে ঘর্ষণ করে, গর্জন করে, বর্ষণ করে আমাকে নিয়ে তামাশা করেছে। আমাকে আমার প্রাপ্য বুঝিয়ে দিয়েছে ওরা। বারবারই বলেছে, “মূর্খ! ও তো তোর নয়, ও কখনওই তোর হবার নয়। তুই বামুন আর ও বিশাল। তুই ক্ষুদ্র আর ও আকাশসমান। তুই ওকে কোথায় রাখবি? তোর অন্তরে? তোর সে জায়গা আছে নাকি? তুই যেটুকু দয়া পেয়েছিস, ওতেই তুষ্ট থাক। তোর নিঃশব্দ ভালোবাসা শুধুই ওকে পাওয়ার লালসা। আজ সব মিথ্যে প্রমাণ হলো। আমরা বলছি, তুই ব্যর্থ ছিলি, ব্যর্থ আছিস, ব্যর্থই থেকে যাবি! হাহাহাহা………..” অতঃপর আবারও মেঘের গর্জন, অট্টহাসি, আমাকে নিয়ে ঠাট্টা, অপমান সমানে চলছিল আকাশে, বাতাসে, সর্বত্র। বিশ্বাস কর, একটিবারের জন্যও আকাশের দিকে তাকানোর সাহসটুকু পর্যন্ত হয়নি সেদিন। ওরা আমাকে এই কথাগুলিই বলে চলছিল প্রচণ্ড বিস্ফারণে কানের কাছে এসে। হাসছিল ওরা। সে হাসির সে কী তীব্রতা! তুমি সেদিন আকাশ আর প্রকৃতির এক অপরূপ সমাহারের ছবি দিয়েছিলে ফেসবুকে, আর অমনিই ওরা ফেসবুকের ভেতর থেকে বেরিয়ে এসে আমাকে সমস্ত শক্তি দিয়ে আক্রমণ করেছিল। কী এক অহমিকায় মেতে উঠে ওরা আমাকে টুকরোটুকরো করে ভেঙে দিচ্ছিল আর বারবার মনে করিয়ে দিচ্ছিল, আমি তোমার কেউই না, কিচ্ছু না। আমি অস্তিত্বহীন, আমি মিথ্যা, আমি অচল, আমি অসাড়। আমি হেরে গেছি, আমি খুব তাড়াতাড়িই হেরে গেছি।

হাসছ এসব শুনে? হাসো, হাসো। তুমি তো ওদের মতোই! নাকি, ওরা তোমার মতো? হবে একটা। আমাকে শাস্তি দাও, কঠিন কঠোর শাস্তি। কেন? কী অন্যায় আমার? একটাই। তোমাকে ভালোবেসেছি। ঠিক আছে, মেনে নিলাম। দাও শাস্তি। আমাকে যে শাস্তি দেবে, আমি তা-ই মাথাপেতে নেবো। আমি জানি, তুমি নির্দ্বিধায় আমাকে বলে দেবে, “আমায় ভুলে যাও। আর বিরক্ত কোরো না।” বোলো। সাথে প্লিজ শিখিয়ে দিয়ো, কী করলে তোমায় ভুলে যাওয়া সম্ভব। তুমি পারবে না, বড় সাহেব! তুমি একদমই পারবে না আমার মন থেকে তোমাকে সরিয়ে ফেলতে। এক্ষেত্রে তুমি অসহায়, আমার কাছে চরমভাবে পরাজিত। আমি জিতে যাই বারবার ওটা ভাবলেই। তবে কি আমি সত্যি সরে যাবো? তোমার জীবন থেকে সরে যাওয়া যায় কীভাবে ওটা নিয়ে একটা ইউজার ম্যানুয়েল থাকলে ভাল হতো। আমি তো বাঁচতেই চেয়েছিলাম। একটা সময় তোমার কথাগুলিই আমার শরীরে অসীম শক্তি এনে দিয়েছিল। একটা সময় বাঁচার নতুন অর্থ খুঁজে পেয়েছিলাম। আর এখন? হ্যাঁ, এমনি করেই বাঁচতেবাঁচতে একদিন সত্যিই ঘুরে দাঁড়াবো। হয়তো তোমায় আর ভালোইবাসব না। “What doesn’t kill you makes you stronger……” রিয়েলি? না, এটা মিথ্যা কথা। সবাই তো আর তুমি না। তোমার মতো সবাই একেবারে ধ্বংসস্তূপের মধ্য থেকে নতুন মানুষ হয়ে জন্ম নিতে পারে না, উঠে দাঁড়াতে পারে না। তোমার মতো করে ভাবতে পারে, তোমার মতো হাসতে পারে, তোমার মতো করে বলতে পারে, তোমার মতো চোখের গভীরতা আছে, তোমার মতো বই পড়তে পারে, তোমার মতো অমায়িক ব্যবহারে মিশতে পারে, তোমার পর্যায়ের রসবোধ কিছুটা হলেও আছে, এমন কাউকে এনে দাও; একদম পাক্কা কথা দিচ্ছি, তোমাকে বিলকুল ভুলে যাবো। সত্যি বলছি! আমি রবীন্দ্রনাথ চাইনি, শরৎচন্দ্র চাইনি, হুমায়ূন চাইনি, শঙ্খ চাইনি, সুনীল চাইনি, সমরেশ চাইনি, শীর্ষেন্দু চাইনি। কুমার শানু, উদিত নারায়ণ, শান, সনু নিগম ওরা কেউ এসে আমায় গান শোনাক, এটাও না। আমি উত্তম কুমার কিংবা সৌমিত্রের মতো অতো নাটকীয়তায় আমাকে ‘ভালোবাসি’ বলবে, সে দুরাশাও করিনি কখনও। এমনকি, আমি তোমাকেও চাইনি। আর কিছু না, আমাকে জাস্ট মৃত্যু এনে দাও। তবেই আমি তোমায় ভুলে যাবো। হ্যাঁ, যাবোই যাবো। যদি মরণ আসে দয়া করে, আমি তাকে পরম ভালোবাসায় আলিঙ্গন করে সব পিছুটান একেবারে সাঙ্গ করে দেবো।

ভালোবাসা যে এতো বিশ্রী জিনিস আগে কখনও মনে হয়নি। আমার এক বন্ধুর কথা ইদানিং খুব মনে পড়ে। বেচারা আমাকে বলেছিল, “মহুয়া, মানুষ যেচে প্রেমে পড়লে সেটা প্রেম হয় না। প্রেমভালবাসা হঠাৎ করেই আসে, এবং তাকে এক মুহূর্তের জন্যও ভোলা যায় না।” আমি ওকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, এটা কীভাবে বুঝব? ও উত্তর দিয়েছিল, “তুই নিজেই বুঝতে পারবি। এটা চাপা পড়ে থাকে না।” আমি তখন বুঝিনি। গত দুবছরেও বুঝিনি, কিন্তু এখন বুঝতে পারছি, হাড়েহাড়ে, হৃদয়েহৃদয়ে। কষ্ট হচ্ছে সে বেচারার জন্য। বেচারা আমাকে ভালোবাসত। আমি ওকে কষ্ট দিয়েছি, ওর অনুভূতি কখনওই বুঝতে চাইনি, পারিনি। এই যেমন, তুমিও আমার অনুভূতি বুঝতে চাচ্ছ না, পারছ না। এটাই বোধহয় ন্যাচারাল জাস্টিস। কিন্তু বিশ্বাস কর, আমি মনেপ্রাণে চাই, তুমি যেন এতোটা কষ্ট কোনওদিনই না পাও। আমি ঈশ্বরকে সবসময়ই বলি, যাতে তুমি সারাজীবনই অনেক সুখে থাক। তুমি যেন ঠিক যা চাও, তা-ই পাও। মাঝেমাঝে নিজের উপর ভীষণ রাগ হয় কেন এমনটা করলাম, এটা ভেবে। কিন্তু আমি আসলেই কিছু করিনি, সবকিছুই হয়ে গেছে। কেন হয়েছে, কীভাবে হয়েছে, কখন হয়েছে, আমি তার কিছুই জানি না। কিচ্ছু না। আমাদের মধ্যে কিছুই যে হবে না, এটা আগেই জানতাম, এবং এখন আরও ভাল করে জানি। সব জেনেশুনেও এতো কষ্ট হয় কেন? কেন এতো জ্বলতে থাকে ভেতরটা? কী করলে নিভবে এই যন্ত্রণা? আমি এই ছন্নছাড়া গতিহীন জীবনটা কোথায় ঠেকাবো? দুইতিন কদম হাঁটার পরই তুমি সামনে এসে হাজির হও। কিন্তু আমি বুঝি সত্যিসত্যি তোমাকে পেয়ে গেলে এতোটা ভালো কখনওই বাসতে পারতাম না। নানা অজুহাত দেখিয়ে, অভিযোগ করে-করে সময়টাকে বিলিয়ে দিতাম ইগোর কাছে। এখনও তো দিচ্ছি। আসলে ইগোর অপর নাম ভয়। আমরা সেটাকে ইগো নামেই চালিয়ে দিই। হারানোর ভয়ে মুখে কিছু বলি না, যদি ভেতরেভেতরে পুড়তে থাকি, তবু মুখে বলি, আমি ইগোইস্টিক। আমিও এর ব্যতিক্রম নই। চট্‌ করে বলে দিতে পারি ‘ভালোবাসি’, কিন্তু তুমি ফিরেও তাকাবে না, জানি। তাই একা-একাই বলি, “কী হবে বলে? কী করবে ও জেনে? কী-ই বা করার আছে তার? কিছুই না। নির্বিকার সে।” আমি পাইনি তোমাকে। না পেয়েই একদম হারিয়ে ফেলেছি তোমাকে। তোমাকে আর কোনওদিনই পাবো না আমি। তোমাকে এই মনটা থেকে সরাতে পারবো না। তুমি আমাকে নিঃসঙ্গ, কাঙাল, নিঃস্ব করে দিয়েছ। আমার কাছ থেকে কিছু না নিয়েও তুমি আমাকে ভিখারি করে দিয়েছ। আমি রিক্ত। আমি আর নেই আমার মধ্যে। তোমার মধ্যে তো আরও নেই। আমি তোমার ভালোবাসার মধ্যে তলিয়ে গেছি। অথচ দেখ, তলানিটুকুও আমাকে জায়গা দিচ্ছে না, এতোটাই অভাগা আমি! (২৯-০৩-১৬। ৪.৪১ এএম)

তোমাকে বিশ্লেষণ করতে যে কত রাত নির্ঘুম কেটেছে, তা কি জানো? কীভাবে জানবে? তুমি তো আর প্রেম কর না আমার সাথে, কিন্তু আমি ভাসছি তোমার ভালোবাসার ভেলায়। ঢেউ উথালপাথাল হাওয়ার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ি মেরেমেরে আমার ভেলাটাকে ডুবিয়ে দিতে চাচ্ছে, কিন্তু বারবার হেরে যাচ্ছে আমার ইচ্ছাশক্তি আর জেদের কাছে। যেদিন ইচ্ছেটুকু কমে যাবে, বা আমি নিজহাতে মেরে ফেলবো, সেদিন দুই সেকেন্ডও লাগবে না আমাকে অথৈ গহীন জলের মধ্যে তলিয়ে ফেলতে। এ জল সমুদ্র নদী বা ঝর্ণার জল নয়, এ জল আমার চোখের জল। তোমার জন্য কাঁদতে-কাঁদতে চোখটা আমার সমুদ্র হয়ে গেছে। কিছুতেই জল ফুরোয় না। সমুদ্রের জল কি শুধুই বাড়ে? কখনও কমে না? আমার দুচোখের জল দিনকে দিন কি বাড়ছেই শুধু? নাকি, আমিই বাড়াচ্ছি? আচ্ছা, চোখ থেকে জল বেরোলেই কি কান্না হয়? যে কান্নায় জল বেরোয় না, সে কান্নাই তো দেখেছি, পোড়ায় বেশি। কান্না গিলতে কেমন যে দম আটকে আসে, জানতে যদি! আমার গাল দুটো সবসময়ই ভারি হয়ে থাকে। বুকটা চুপসে থাকে। নিঃশ্বাসগুলি ধাক্কা খেতেখেতে বের হয়। মুখে বলিরেখা একটুও পড়তে চায় না, টানটান হয়ে থাকে। আর কানের দুপাশটায় কেমন জানি ভোঁভোঁ করে। স্পষ্ট কিছু কি শুনতে পাই না? নাকি, শুনতে চাই না? কোনটা হয় আমার সাথে? কিন্তু চোখের দৃষ্টিতে একজনই ফিক্সড্‌, সে হচ্ছ তুমি। তোমার চেহারা আমার চোখে থাকেই। তোমাকে কষ্ট করে কল্পনাতে আনতে হয় না, তুমি আমার সাথে সবসময় আছোই। এটা কীরকম ব্যাপার? ব্যাপারটার নাম কী? চোখ দিয়ে জল পড়লে তো নাক টানতে হয়, মুখ মুছতে হয়, হাউমাউ করতে হয়, বালিশ ভেজাতে হয়, মুখ দিয়ে আওয়াজ বের না হওয়ার জন্য মুখের ওপর কিছু একটা চেপে ধরতে হয়, এরপর চোখের, নাকের, মুখের জলে ওটাকে আরও ভেজাতে হয়। কিন্তু যখন ওরকম ঝিম মেরে বসে থাকি, তখন আমার আরও কষ্ট হয়, তোমার কথা আরও বেশি করে মনে পড়ে। তোমাকে ভাবি আর কষ্ট বাড়ে। কষ্ট, কষ্ট, আর কষ্ট। এই একটা শব্দ আমার জীবনটাকে একদম শেষ করে দিল। পৃথিবীর সব কষ্ট আমি কী সহজেই পেয়ে যাচ্ছি! ফাজলামোর একটা সীমা আছে। আমি কী করছি এসব? প্রতিদিন অসংখ্য আজেবাজে কথা লিখি, এবং মোটামুটি একই কথা লিখি। কোনও মানে হয়? এতকিছুর পরও কিছুই যেন প্রকাশ করতে পারি না। আমার যে কেমন সময় কাটে, তার জিরো পয়েন্ট সামথিংও আমি লিখতে পারি কিনা সন্দেহ। কষ্ট পাই সারাদিন, আর লিখি আধা ঘণ্টা। এতো কম সময় লিখলে আর কীভাবে বোঝাবো? ব্যথা কমানোর পেইনকিলার আছে। কষ্ট কমানোর পেইনকিলার নেই? থাকলে আমি সারাদিন খেতে পারতাম। সবচাইতে ভাল হতো, কাউকে চট্‌ করে ভুলে যাওয়ার কোনও ওষুধ থাকলে।

তোমাকে চিনতে আমার কষ্ট হয়নি। ভালোবাসা কষ্টের, ঘৃণা……আরও বড় কষ্টের। তুমি তা কখনও বুঝবে না। তোমাকে ভেঙে যা বুঝেছি, যতটুকু জেনেছি, লিখে দিলাম:

সমালোচনা ১:

অন্যের সৃষ্টি অনন্য তুলিতে:

যারা ভালোবেসে তোমাকে নিয়ে লেখে, বা তুমিই লিখিয়ে ছাড়ো, তাদের প্রতি শ্রদ্ধা। কী আর করবে বেচারিরা! প্রকৃতি উওপ্ত হলে তো দুর্যোগ আসবেই, আর এটা তো মন! কিন্তু সেগুলোকেও এত সুন্দর করে এডিট করে দেয়া যায় সেটা আমার জানা ছিল না। কোনও সৃষ্টিকে সুন্দর করে তোলার ক্ষমতা কি শুধু তোমাকেই দেয়া হয়েছে? তাও, এত বেশি!

সমালোচনা ২:

নমস্যের আপনা সৃষ্টি:

তোমার লেখাগুলো পড়ার সময় তোমার ফর্সা হাত দুটো চোখে ভাসে৷ মনে হয়, রংতুলি ওগুলো৷ বর্ণগুলোকে রং বানিয়ে আলোকসজ্জার মতন একেকটা, কাল্পনিক নয়, যেন স্বপ্নময় জলচিত্র আঁকা কোনও সাদা ভাবনাদেয়াল। ওই হাতদুটো কিন্তু আমার!

আচ্ছা, একটা টপিককে ধরে অ্যাত্তো সুন্দর কীকরে ব্যাখ্যা দাও? ছোটবেলার বাংলা বইয়ের গদ্য-পদ্যের প্রশ্নগুলোর কথা মনে পড়ে। অমুক লাইনের ব্যাখ্যা, তাৎপর্য, বিশ্লেষণ……..আরও কত কী………দাও৷ তখন তো গাইডের একঘেয়েমি মার্কা কথাগুলি বানিয়েটানিয়ে লিখে দিয়ে আসতাম। আহা, যদি অন্তত এসএসসি কিংবা এইচএসসি’র একটা বাংলা গাইড তোমাকে দিয়ে জোর করে হলেও লিখিয়ে নিতে পারতাম!

তৈলাক্ত কথা আমি বরাবরই বলতে পারি না। আমি যা ভালোবাসি, তা-ইই শুধু অনুভব আর উপলব্ধি করি। সেখান থেকেই আরও কিছু কথা বলছি। নিচের কথাগুলি তোমার সমালোচনা কি না জানি না, তাই আগেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।

১) প্রথম কথা—এক কথা, শেষ কথা……খুব, খুউব, খুউউব সুন্দর লেখা তোমার—সবগুলোই। কারন? বলছি, শোনো। তোমার কথাতেই বলি, You know very well that you have to write the best ones…….ALWAYS! এই প্রত্যয়টাই সুন্দর করে দেয় তোমার সব লেখা।

২) তোমার লেখায় যাদের নেশা ধরে গেছে, তারা এই নেশা কোনওদিনই ছাড়তে পারবে না। কেন? তুমি যে নেশা ধরানোর জন্যই লিখ!

৩) সবকিছুই বোধহয় একটা ধারাবাহিকতার সাথে এগোয়। একটার পর একটা ক্রমাকারে সব বিষয় আসে। কিন্তু তোমার লেখাগুলোতে একটা বিষয়েরই অনেকগুলি তথ্য ধারাবাহিকভাবে আসে। এবং সর্বোচ্চটুকু লিখে দাও তুমি। আর ওইটুকুর বাইরে আরও থাকতে পারে বলে পাঠকদের মনে আসে না।

৪) সহজ কিছু কথা, যা কারও মাথাতেই আসে না, এমন-কী সে কথার সকল অনুষঙ্গ চোখের সামনে থাকলেও আসে না, তা কেবল তোমার মাথাতেই কিলবিল করে। এবং, অবশ্যই স্বতঃস্ফূর্তভাবে!

৫) তোমার কিছু কথা বুঝতে হলে বারবার পড়তে হয়, তাও প্রায়ই বুঝতে পারি না। আবার কিছু কথা তুমি হয়তো ইচ্ছে করেই কাউকে বুঝতে দাও না। নিজেকে কখনও-কখনও সকল বোধগম্যতার ঊর্ধ্বে নিয়ে যেতে হয়।

৬) তোমার লেখনিতে ওপেন-সিক্রেট টাইপের ব্যাপারগুলি বেশি খেলা করে। ওগুলো পৃথিবীর সবাই পড়ছে, কিন্তু কেউই, কতকটা ইচ্ছে করেই, কিছু বুঝতে পারছে না। চোখ মেলেই পড়ছে ওরা, অথচ নিজেকেই বোঝানোর প্রাণান্তকর চেষ্টা করে যাচ্ছে যে, চোখটা বন্ধ হয়েই আছে। কখন স্বচ্ছ জলকে ঘোলা করে পরিবেশন করতে হবে, সেটা জানাটা মস্ত বড় একটা আর্ট!

৭) মাঝেমাঝে খুব মজা নাও, তাই না? একটা বিষয়ের অর্থ এক, আর সবাই ভাবে আরেক। পাবলিক ভাবছে যে ওরা ঠিকই বুঝতে পারছে, অথচ অর্থ আসলে অন্যরকম। আর, কিছু না বুঝেই সুস্থ কিছু পাগল অসুস্থ হয়ে যায়। লেখায় এই লুকোচুরি-জয়টা খুব মজার, তাই না? এ কেবল তুমিই জানো, আর তুমি না চাইলে অন্য কেউ জানবে না, এবং কিলবিল-করা কনফিউশন পোকারাও পাঠকদের ছাড়বে না। এই যেমন আমাকেই দেখো না, আমিও তোমার লেখা পড়ে কোনটা যে বুঝি না, সেটাই বুঝি না!

৮) তোমার লেখা পড়ে সবাই তোমাকে চট করেই পড়ে ফেলতে চায়। কিন্তু, ওরা বোধহয় জানে না, প্রায়ই, লেখকের লেখায় লেখক লেখা থাকেন না!

৯) লেখাগুলোয় কী যেন থাকে ফড়িঙের মত। চোখের সামনেই, অথচ ধরা যায় না, আবার পেছনপেছন ছোটাও বন্ধ করা যায় না।

১০) প্রাণহীন শব্দগুলোকে কী দিয়ে সাজাও? কেন ওসব মনের মধ্যে দাগ কেটে যায়? চাকুমার্কা লেখা নাকি এসব? কী করে পারো? এমন শব্দ-সমাহার কোত্থেকে আসে? সুন্দর করে চিন্তা কেমনে করে? কেন এত অস্বাভাবিক রকমের ভাললাগা তৈরি হয়ে যায়? কেনই বা সব অর্থ মাথার চুল ছিঁড়লেও ধরা দেয় না? কেন লেখাগুলো পুরনো হয় না? কেন কিছু লেখা ‘just once, never again’? সেগুলি আবারও পড়তে গেলে ভয় লাগে কেন?

কী ভাবছ আমার ব্যাবচ্ছেদ পড়ে? ভূত একটা!

যাও, তোমাকে দশে দশ দিলাম!

বেশি হয়ে গেছে? হাঁপিয়ে উঠেছ? পানি খাও এক বালতি! আরও বলার ছিল, কিন্তু লিখিনি। সবকিছু লিখতে হয় না। কেন আমায় তোমার লেখা নিয়ে লিখতে বললে? বাঁদরকে নাচতে বললা ক্যান? জানো না, বাঁদর থামতে জানে না!