সবুজ কৌটোয় হৃদয়-কড়চা/৭

এ পৃথিবীর মায়া, জীবনের মায়া, ‘মায়া’র মায়া—-

সবই তো জানি, জীবনেরই ছায়া!

এ সবকিছুই ছেড়ে একদিন চলে যেতে হয় অচিনপুরে,

রিক্ত হাতে নিঃস্ব বেশে,

না-ফেরার এক অদ্ভুত দেশে।

গড়ে নেবো তাই সন্তানদের এমনই করে,

আমাদের ছাড়াই যেন ওরা ঠিক বাঁচতে পারে।

আভিজাত্যে, আদিখ্যেতায় হৃদয়বৃত্তি হারিয়েই যায়,

ওরা বাঁচতে শিখুক যুদ্ধে লড়ে!

হীরেবাঁধানো নৌকো চড়ে শখের বৈঠা হাতে ধরে,

অবান্তর সব উচ্ছ্বাস কেবল নয়………

এবার ওরা সাঁতার শিখে বৈঠা ছাড়াই,

ক্ষুব্ধ সাগর সেচতে শিখুক!

জীবনটা হোক কঠিন দৃঢ়,

আসুক সত্য, আসুক ভাল।

কত মধুর লাগে পড়তে! এই যে মশাই! লিখছ তো বেশ! তুমিই বলো, তোমায় ভুলে কেমনে থাকি? কাউকে ভুলে যাওয়ার ওষুধ বাজারে আসে না কেন? ওই জিনিস বাজারে আসলে বিজ্ঞানী আর চিকিৎসকরা সাপ্লাই দিয়েই কুলাতে পারতেন না! আসলেই এমন একটা ওষুধ দরকার, যেটা খেলে আমি তোমাকে ভুলে থাকতে পারবো। শুধু আমারই না, সবারই দরকার। এমন-কী, তোমারও। এই যে দেখি, এখনও শতাব্দীকে ভুলতে পারো না! অদ্ভুত এই ছেলে প্রজাতি! এ প্রজাতি পৃথিবীর সবচাইতে বড় বিরক্তিকর অদ্ভুত প্রজাতি। তোমরা পুরুষরা যখন পছন্দের মানুষটি পাশে থাকে, তখন অবহেলা করতে-করতে ওর জীবনটা বিষিয়ে দাও, আর যখন ও ছেড়ে চলে যায়, তখন ওকে মিস করতে-করতে নিজেরাই মিশে যাও মাটিতে! আচ্ছা, আমাকে একটিবার শতাব্দীকে দেখাবে? জানো, আমার এত শখ ওকে দেখার! যে-ই প্রথমদিন ফোন ধরেই কিছুক্ষণ পর ওর কত কথা বললে, যখন আমাদের দেখা হল, তখনও বললে; প্রায়ই দেখি, কী অবলীলায় অকপটে নির্দ্বিধায় ওকে আজও স্মরণ কর, দেখে খুউব হিংসে হয়! কেন যে ও তোমাকে ছেড়ে চলে গেল? জানি, ওর প্রতি তোমার অবহেলার কমতি ছিল না, তবুও…………আহা! ঈশ্বর যদি আমায় একটা শতাব্দীরূপ জন্ম দিত! কিন্তু, সবাইকে তো আর সব রূপ মানায়ও না। কোন সে মানসী এ শতাব্দী? যদি এক ঝলকও ওকে দেখতে পেতাম!

আচ্ছা, তুমি মেয়েদের কীকরে এত চেন? উপন্যাস, বই, মুভি, গল্প-এর হাত ধরে? নাকি প্রেম করে? নাকি চ্যাটিং করে? তুমি না ব্রহ্মচারী টাইপের ছিলে ছাত্রজীবনে? তাহলে কীভাবে এমন বোঝ? মেয়েরা তো নিজেরাই জানে না, ওরা যে এমন! তুমি মশাই ওসব কীভাবে জানলে, বুঝলে, শিখলে? তুমি কি সর্বজ্ঞানী হয়ে গেছ নাকি? এতটা ঐশ্বরিক ক্ষমতা তো কারও মধ্যে আর দেখিনি। তবে কি সত্যিই তুমি কোনও মহাপুরুষ? তুমি অবশ্য আপাতত অনেক মেয়েরই স্বপ্নপুরুষ, প্রেমপুরুষ, প্রিয়পুরুষ—যা-ই বলি না কেন! এভাবে লিখো না, প্লিজ! বুকটা ভেঙে যায়, আর কেমন জানি লাগে! শরীরের সব ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায় এক মুহূর্তেই! আর পাগল কোরো না সবাইকে। বোঝোই তো, মুখ ফুটে কিছু বলতে পারি না, শোনাতে পারি না, বোঝাতে পারি না। তুমি যে শুনতেই চাও না, কী করবো আমি? সবার মতন তো আর হতে পারি না। আমি যে একটা অকর্মার ঢেঁকি, বোঝোনি তা আগে? কিন্তু বিশ্বাস করো, আমি সত্যিই ভীষণ অনুগত। তোমার চরণতলে স্থান দিলেই মহাখুশি! কোনওদিনই চোখ তুলে চাইব না যদি তুমি অনুমতি না দাও! আমি হয়তো ওই জায়গাটিরও যোগ্য নই, জানি। তোমাকে কোথায় যে রাখি, বলো তো? আর কোথায় তোমায় রাখলে আর হাতড়ে-হাতড়ে বাঁচতে হবে না? কী করলে এই গুমোট জীবনটা থেকে মুক্তি মিলবে? জীবনের মানেটা কি কেবলই সফল হওয়ার লক্ষ্য? আগে সফলতা, এরপর আফসোস ছাড়া বাঁচা? নাকি, আগে আফসোস ছাড়া বাঁচা, এরপর সফলতা? তোমাকে নিয়ে তাহলে কি আমার আফসোসই কাজ করে? না, না, কখনওই না! একদমই না, একটুও না! তোমাকে আমি আমার আফসোস বানাতে চাই না। তুমি আমার সুখ, আমার কষ্টের সুখ তুমিই। তোমাকে ভালোবেসে-বেসেও অনেক শান্তিতে আছি। কারণ, তোমাকে ভালোবাসা বন্ধ করা অসম্ভব। না-ই বা পেলাম, ক্ষতি কী? ভালোবাসতে তো ভাল লাগে। কাছে নাই, পাশে নাই, ধারেকাছেও নাই, তবু এত কাছে, এতই কাছে যে অন্ধ হয়ে গেলেও দেখতে পাবো! কোনও সমস্যা নাই। চোখ খোলা রেখেও দেখতে পাই, আবার চোখ বন্ধ করলেও দেখতে পাই, আর প্রায়ই তো স্বপ্নে দেখি। তুমি আমার অন্তর। অন্তরের আরেক নাম তুমি। অথচ, তুমি একটুও জানো না, কিছু বোঝও না, আমাকে পছন্দও কর না। আমাকে তুমি ওই কাতারেই ফেল না। এটাকে কী বলে? নিষিদ্ধ ভালোবাসা? ধ্যত্ কী বলছি এসব আবোলতাবোল? ভালোবাসা আবার নিষিদ্ধ হয় নাকি? প্রেম নিষিদ্ধ হলেও হতে পারে, কিন্তু ভালোবাসা? সে তো এক পবিত্র অনুভূতি!

ইদানিং কী হয়েছে, জানো? তোমাকে দেখলেই বুকটা মোচড় দিয়ে ওঠে! গ্যাস্ট্রিকের ব্যথার মত। নাকি, এটা আমার হার্টের সমস্যা? আমার এক আঙ্কেলের বুকে খুব ব্যথা হত। ডাক্তাররা শুধু বলতেন, ওটা গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা। গ্যাস্ট্রিকের হাই পাওয়ার ট্যাবলেট খেয়েখেয়ে উনি ব্যথা কমাতেন। এমনি করে দুই বছর ঘুরতে না ঘুরতেই উনি হার্ট অ্যাটাক করে মারা গেলেন। পরে জানা গেল, উনার আসলে হার্টের সমস্যা ছিল অনেক আগে থেকেই। ডাক্তাররা আগে ধরতে পারেননি। উনার বুকে ব্যথা উঠত গ্যাস্ট্রিকের সমস্যার কারণে নয়, হার্টের সমস্যার কারণে। আমারও আবার ওরকম কিছু হলটল নাকি? তোমার চোখ আর হাসিটা দেখলে এতই অসহায় লাগে যে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারি না। আবার তোমাকে না দেখেও থাকতে পারি না। এমন হলে তো আমি মারাই যাবো! আমরা যে ঘরে মৃত ব্যক্তির ছবি টাঙাই, কেন টাঙাই? উনাকে নিঃসন্দেহে অনেকবেশি ভালোবাসি বলেই তো, না? তার স্মৃতি ধরে রাখার জন্যই তার ছবি টাঙাই, তাকে ফুলের মালা দিই। কিন্তু তাকে আমরা রোজই মনোযোগ দিয়ে দেখতে পারি না, কিংবা ইচ্ছে করেই দেখি না কষ্ট বেড়ে যায় বলে, বা তার অনুপস্থিতি প্রচণ্ডভাবে অনুভব করি বলে। তাই ছবির ফ্রেমটা দেয়ালেই ঝোলানো থাকে, আর ক্রমেই স্মৃতি মন থেকে আবছা হয়ে যায়। তোমাকে দেখলে কষ্ট হয়, খুউব বেশিই কষ্ট হয়। অনেকঅনেক চুমু খাই তোমার ছবিগুলোতে। তোমার ছবি জুম করে বড় করে পাগলের মত চুমু দিই তোমার গালে, ঠোঁটে, কপালে, চোখে। আমি সত্যিই মরিয়া হয়ে যাই তখন! এ কারণেই তোমার ছবি কম সময় দেখি। বেশি সময় দেখতে ইচ্ছে করে, কিন্তু বেশি সময় দেখলে নেশা ধরে যায় যে! সত্যিটা হচ্ছে এ-ই, আমি এই নেশা নিয়ে বাঁচতে চাই। কিন্তু অমন হলে যে মরেই যাবো আমি! তোমাকে দেখার নেশার সময়টা যদি কমিয়ে দিই কষ্ট হয় বলে, তবে আমি নিশ্চিতভাবেই পাগল হয়ে যাবো। আমি তোমায় না দেখে থাকতে পারি না ঠিকই, কিন্তু কম সময় দেখে থাকতে পারার অভ্যেসটা আরও ভয়ংকর! আমি ওটা হতে দিতে চাই না। কোনও উপায়ই নেই এই কষ্টগুলি নিরাময়ের। কত অসহায় আমি! আমার মতন একটা মেয়েও যে কাউকে ভালোবেসে এরকম অসহায় হয়ে যাবে? তোমার পোস্টের নায়িকাগুলি সত্যি কি না জানি না, নাকি কল্পনা, তাও জানি না, তবে আমি ওদের চাইতেও দুঃখী, অসহায়, নিঃস্ব। ওরা তো পেয়ে হারিয়েছে, প্রতারিত হয়েছে, আর আমি? কাউকে যে দোষারোপ করবো, কারও ঘাড়ে যে দোষ চাপাব, সেই স্বস্তিটুকুও নেই আমার। পেয়ে হারিয়ে ফেলা আর না পাওয়ার দুঃখ কি এক? না, কখনওই এক না। বেইমানরা একসময় মন থেকে হারিয়ে যায়, কারণ আমরাই ওদের দূরে ছুঁড়ে ফেলে দিই। কিন্তু অপ্রাপ্য, বিরল যা, কিংবা যা কখনওই ছিল না, অথচ তা-ই যদি পুরো জীবনে ছড়িয়ে যায়, তাহলে আমি কীকরে বাঁচব, বলতে পারো? তোমাকে আর কী লিখে ফেললে আমি একটু স্বস্তি পাবো? আর কতটা ভালোবাসলে আমি ক্লান্ত হবো, আমায় বলে দাও না!………দোহাই তোমার! (৩০-০৩-২০১৬। ৫:০১ এএম)

অ্যাই লেখক, তোমার কোনও লেখাতেই কোনও মেয়েকে প্রতারণা করতে দেখলাম না। কেন? জনসমাজে শুধুই পুরুষদের আসল রূপটিই ফুটিয়ে তোল। এতে করে তোমার জীবনে নারী আনুকূল্য বৃদ্ধি পায় বটে, কিন্তু পুরুষরা ঠিকই প্রতারক মেয়েদের চিনে নেয়। মেয়েদের আকৃষ্ট করার জন্যই পুরুষদের এমন প্রতারক চিত্র আঁক? মেয়েরা তো তোমার লেখা পড়ে আর ভাবে, আহা, এমন ছেলেও হয়! কী দারুণ চিন্তাভাবনা আর বোধবুদ্ধি! এতটাই ভাল মনমানসিকতার অধিকারী এই পুরুষটি! আহা, সে কোন ভাগ্যবতীর পুরুষ? পুরুষ হয়েও পুরুষ প্রজাতির আসল রূপটা তুলে ধরে এই মানুষটি! তুমি হচ্ছ প্রেমিকা-প্রজাতির প্রিয় ক্রাশ। (আচ্ছা, প্রেমিকা-প্রজাতির কোনও বৈজ্ঞানিক নাম নেই কেন?) অথচ দেখো, লেখকরা কিন্তু পুরুষ প্রজাতির বাইরে কেউ নন। উনারা যা লিখেন, তা নিজেরাই মানেন না। আর সবাই কিনা তাদের একেবারে অন্ধভাবে অনুকরণ করে! কেউকেউ তো আবার লেখকদের পীরও মানে! আবার পীরকে কষ্টও দেয়া যাবে না। পীরকে কষ্ট দিলে মুরিদদের, আই মিন, পাঠকদের সমস্যা। কথা তো এটা না, ভাই! কথা হচ্ছে, একেকজনের লেখার ধরন একেকরকমের, এবং একই লেখক একই চিন্তা মাথায় ধারণ করেও অনেক ধরনের লেখা লিখে ফেলতে পারেন। কারণ, একটা বিষয়কে কেন্দ্র করে যখন চিন্তার সূত্রপাত হয়, তখন অনেকগুলি ঘটনার জন্ম হয়। আর তা থেকেই লেখার জন্ম। আর সেখান থেকেই লেখক হয়, আরও হয় পাঠকের জন্ম। যে লেখা কেউ কখনওই পড়েনি, সে লেখার স্রষ্টা কি তবে লেখক নন? এটা নিয়ে অবশ্য ভাবা যেতেই পারে! দর্শনে একটা মজার প্রশ্ন আছে। বনে একটা গাছ ভেঙে পড়ল। সেটা কেউই জানল না। তবে এর মানে কি ঘটনাটি ঘটেনি? যদি বলি ঘটেছে, তবে এর অর্থ হল, আমি জেনেছি যে, গাছটা ভেঙে পড়েছে। যদি আমি সেটা না জানতাম, তবে সে ঘটনার কথাটাই বা কীভাবে আমার মাথায় আসত? তার মানে কি যা আমাদের অগোচরে থেকে যায়, তা আসলে অস্তিত্বহীন? এ মহাবিশ্বে এলিয়েনরাও কোথাও না কোথাও থাকতেই পারে কিন্তু! কোনওকিছুই উড়িয়ে দেয়া যাবে না। যে কথায় ছিলাম! কেউ অনেক ভাল কিছু লিখল, অথচ সে লেখা কেউই পড়ল না, এর মানে কি সে লেখার কোনও অস্তিত্বই নেই? এবং একইসাথে লেখকেরও কোনও অস্তিত্ব নেই? এই যে আমি তোমায় অদ্ভুত রকমের বেশি ভালোবাসি, আর তুমি তা জানোই না, সেটা কি আমার ভালোবাসা কিংবা আমাকে ঠুনকো অসাড় করে দেয়?

কিন্তু কথা সেটাও না। এইটুকু মোটামুটি ভূমিকা ছিল। আসল ব্যাপারটা অন্য জায়গায়। এই যে, একই চিন্তা নিয়ে অনেক লেখা বা গল্প—যা-ই হোক না কেন, সেটা তো মাথা থেকেই আসে। ঐ একই স্টাইলই মোটামুটি যার যারটা, সে তা-ই ফলো করেই লিখতে থাকে; তার মানে, সে তার স্টাইলটা ধরে রাখে। তো, এটাও কি অভ্যস্ততা না? এটা মেইন্টেইন করেই সবাই লেখা কন্টিনিউ করে, যা বুঝলাম। তাহলে এই অভ্যস্ততাটা বাস্তবে রূপ নেয় না কেন? শুধু পাঠকদের জন্য লেখা বলে? লেখক যা ভাবেন, আর তাঁর পাঠকদের যা ভাবাতে চান, এই দুই কি তবে ভিন্ন ভাবনা? যদি একই স্টাইল ধরে বা একই বিষয়কে কেন্দ্র করে হাজার-হাজার লেখা বের করা যায়, তবে সেটা একটা লেখকের নীতিমালা বা রুলস-এর মধ্যে পড়ে। কিন্তু বাস্তবে সেটা জানার কী আছে? “আমি লেখক, আমার চিন্তাভাবনা পাঠকদের খুশি করার কাজেই ব্যয় হয়, তার মানে এ-ই নয় যে আমি আমার ব্যক্তিগত জীবন দিয়েও ওটা প্রমাণ করব! সবাই যে আমাকে পীর মানে, এটা সবার সমস্যা। আমার কী তাতে?” ওকে ফাইন। কিন্তু এটা কি হিপোক্রিসির মধ্যে পড়ে না? আমি সব জানি, লিখি, বুঝি ও পাঠকদের খুশি করি। কারণ লেখকরা জানে, পাঠকরা কী চায়। অথচ ওই একই লেখক লেখালেখির বাইরে অন্য পুরুষ, অন্য জগতের পুরুষ, মানে, বাস্তবে সে সবার মতই। অথচ মাথাভর্তি সুন্দরসুন্দর চিন্তা নিয়ে অন্যের মাথা নষ্ট করে দেয়ার মত লেখা লিখেলিখে সবার ঘুম হারাম করে দেয়। বাস্তবে তারা ঠেইঙ্গা। এই যে অন্যের জন্য সুন্দর চিন্তা মিশিয়ে সুন্দর কিছু উপস্থাপন করে, নিজেরাই তা মানে না। এটা কি প্রতারণা না? আমি যা ভাবি তা-ই লিখি, কিন্তু আমি বাস্তবে তার উল্টো। আমি যেন এক আয়না। বাস্তবে এক, প্রতিবিম্ব আরেক, মানে উল্টো। এক পাশ মসৃণ, আরেক পাশ প্রলেপযুক্ত, তা সামনে থেকে দেখে বোঝাই যাবে না। লেখকরাও একটা প্রলেপ বা আবরণ নিয়েই ঘোরেন। সুন্দর চিন্তার মানুষ কিন্তু ওদের মধ্যে কমবেশি সবাই, অথচ সেগুলো কেউই প্রয়োগ করেন না। হয়তো এমনও হতে পারে, উনারা লেখেন আনন্দের জন্য—নিজের, পাঠকের। সেখানে সত্যদ্রষ্টার ভূমিকায় লেখককে দেখলেও ব্যক্তিকে অন্য রূপেও দেখা যেতেই পারে। হয়তো ব্যক্তিগত সত্তাটা যেমন উনার, ওটাকে ওটার মতই থাকতে না দিলে উনি আর লিখতেই পারবেন না। এতে ক্ষতি তো পাঠকেরই। স্রষ্টাকে ভাঙতে গেলে সৃষ্টিই ভেঙে চুরমার হয়ে যাবে! আর লেখকরা নিশ্চয়ই আমাদের চাইতে ভিন্ন প্রজাতির প্রাণী। মানে, ওরা কেমন, তা আমরা জানিই না। ওরা যে কোন ম্যাজিকের মাধ্যমে লেখেন, আমরা তাও জানি না। এমনও তো হতে পারে, উনি ব্যক্তিগত জীবনে যেমন, উনাকে তেমন থাকতে না দিলে উনার সে ম্যাজিকটাই হারিয়ে যাবে, অর্থাৎ, উনি আর লিখতেই পারবেন না। এটা কি খুন নয়? কেন আমরা পাঠকরা লেখকদের আমাদের মনের মত করে চাই? যদি উনাদের লেখা আমাদের মনের মতই হয়ে থাকে, তবে তো ওইটুকু নিয়েই সন্তুষ্ট থাকা উচিত। যার সৃষ্টি আমার সুখ আর ব্যথার সঙ্গী, তাকেও কেন আহত করতে হবে? এটা কি একইসাথে অকৃতজ্ঞতা আর কৃতঘ্নতা নয়?

এই প্রথম বোধহয় বিরোধপূর্ণ কিছু লিখলাম, না? তবে কি আমার অবচেতনের রাজ্যে বিদ্রোহ শুরু হয়ে গেল নাকি? সংগ্রাম করে, রাগ করে, জিদ করে, জোর করে মন থেকে বের করবই তোমাকে। এমন কিছু কি হতে চলেছে নাকি? অনেকটা ক্ষোভ নিয়েই ডায়রির তিন পেইজ ভরলাম, আবার বেশি বাড়তে দিলাম না, কেননা ওতে আমারই ক্ষতি। তুমি যেমনই হও না কেন, তোমাকে ছাড়া আমার চলবে না। তুমি আমার বেঁচেথাকার অবলম্বন, মরে যাওয়ার উছিলা। তোমাকে নিয়ে এমন বিষেদাগার করা তাই স্ববিরোধীতা ছাড়া আর কিছু নয়। কেন এসব কথা মনে এলো, জানি না। ঠিক বা ভুল বলেছি কি না, তাও জানি না। তবে তোমাকে ভীষণ বকতে মন চায়। বারবারই মনে হয়, এসব লিখেলিখে মেয়েদের চোখে পূজনীয় হচ্ছ কেন? আবার এও মনে হয় মাঝেমাঝে, ও না বললে তো এতটা বুঝতামও না। মেয়েরা কি নিজেদের নিজ থেকে বোঝে নাকি কখনও? আসলেই পৃথিবীতে সব কিছুর ব্যাখ্যা দাঁড় করানো যায় না। তোমাকে নিয়েও যাবে না, কারণ ওই যে তুমি বলেছ না, মেয়েরা যাকে ভালোবাসে তার কোনও খারাপ দিক বা খারাপ কোনও কিছুই চোখে আনে না, বা আনতে চায় না। ইচ্ছে করেই আসামিকে জামিন দিয়ে দেয় বারবার, নিজেকে খুশি রাখতে। আমিই বা অন্য ব্যাকরণে ঘুরি কোন বুদ্ধিতে?

ক্ষমা করে দিয়ো। সত্যিই অবাক হচ্ছি নিজেই! আমি এমন করে বলতে পারলাম তোমাকে! তোমাকে না আমি ভালোবাসি? তোমার জন্যই বই পড়ার অভ্যাসটা আবার খুঁজে এনেছি, তোমার জন্যই বই কিনেকিনে ঘর ভরেছি। তোমার জন্যই তো ঈশ্বরকে সময় করে ধন্যবাদ দিতে ভুলি না। তোমার জন্যই কথা শুনিয়ে না দিয়ে সহ্য করা শিখে গেছি। তোমার জন্যই কষ্ট সহ্য করা শিখেছি। তোমাকে কিছুই জানতে দিই না, অথচ কষ্ট ঠিকই পাই। এমন আরও কত কী আছে! আর সেই আমিই কিনা তোমাকে কটাক্ষ করে তর্কস্বরে কথা বলছি? কষে একটা চড় মারো তো আমার গালে! আমাকে সাড়া না দিয়ে ভালই করেছো। দিলে কারণে-অকারণে প্রশ্ন জুড়ে, প্রশ্ন ছুঁড়ে তর্ক করতাম হুদাই!

অ্যাই শোনো না, দিনশেষে তোমাকেই ভালোবাসি। ডায়রিটা তো শেষ হয়ে যাচ্ছে। আর কত লিখব? আচ্ছা যাও, যত দিন একা থাকবো ততদিন লিখেই যাবো। গত দু’মাসে আঠারোটা চিঠি লিখেছি। কাণ্ড দেখো দেখ আমার! তুমি যা-ই কর না কেন, আর যা-ই লিখ না কেন, তোমাকে ভালোবাসি, তোমাকেই ভালোবাসি, ভালোবাসি, ভালোবাসব। (৩১-০৩-২০১৬। ৩:১০ এএম)

[তারিখ লিখে রাখতে ভাল লাগে। আবার কখনও-কখনও ভাল লাগেও না। ভাল লাগলে লিখে রাখব, না লাগলে লিখব না।]

কাল থেকে কারণে-অকারণে কতবার যে কেঁদেছি, জলগুলো জমিয়ে রাখলে ছোটখাটো একটা পুকুর হয়ে যেত! আশ্চর্য মানুষ তুমি! হঠাৎ-হঠাৎ এমন কিছু কর যে, ইচ্ছে করে, ওইটুকুর আশায় জীবন কাটাই। কাল নিজ থেকে কলব্যাক করলে, যখন ফোনটা করেছিলাম, তার আগে ব্যালেন্স চেক করে দেখি ১০ টাকা আছে, ভেবেছিলাম, রিচার্জ করে ফোন দেব। কিন্তু আমি তো মহা অলস। ব্যাগে কার্ড থাকলেও রিচার্জ করতে আলসেমি লাগে। তোমার মত কিছুকিছু ব্যাপারে বড্ড উদাসীন আমি। আমাদের মধ্যে সবচেয়ে বড় মিল হচ্ছে, আমরা দুজনই যোগাযোগ রক্ষা করতে পারি না। তুমি তো হিরো, তাই তোমার এত সাড়া দেয়ার সময় নেই, আর আমি জিরো হয়েও এত অল্প সংখ্যক পরিচিত মানুষকেই রেসপন্স করি না। সবাই ভাবে, মেয়েটার অনেক ভাব, কিন্তু সত্যিটা হচ্ছে, আমার কলটল করার কথা মাথায়ই থাকে না। মোট কথা, আমার ভাল লাগে না বা ইচ্ছা জাগে না। আচ্ছা, কল করতে ইচ্ছা না করলে আমি কী করবো? তোমার বেলাতেও তা-ই হয়, বোধহয়। ধ্যাত্‌! কী বলতে চেয়েছিলাম, আর কী বলছি! তো, যা বলছিলাম। আমি রিচার্জ করব মনে করেও করিনি। কারণটা হচ্ছে, মিনিট প্রতি টাকার হিসেবে ১০ টাকার চেয়ে দশ মিনিট ঢের বেশি। যে মানুষটা আমাকে কখনও মনে করে না, কিংবা মনেই রাখে না, সে আবার ১০ মিনিট কথা বলবে! ফোন ধরবে কি না সেটাই তো সন্দেহ! আর ঈশ্বরের কৃপায় তাঁর দেয়া ২৪ ঘণ্টাই তো তিনি ওয়েটিং-য়েই থাকেন! তবুও এই বেআক্কেলের জীবনে মীরাক্কেল, মিরাকেল বলে যা কিছু ঘটে যার জন্য, এবং যিনি ঘটিয়ে দেন, দুজনকেই অজস্র, অসংখ্য ধন্যবাদ। একজন তুমি আর দ্বিতীয়জন আমার ঈশ্বর।

নিজ থেকে ফোন করে ১১ মিনিট কথা বললে! কী অদ্ভুত সারপ্রাইজ! আর আমি দশ টাকা দিয়ে দশশশশশ্‌ মিনিটও আশা করতে ভয় পাচ্ছিলাম, আর উনি কিনা আমাকে ১১ মিনিট উপহার দিলেন! এসব কি ঈশ্বরের কৃপা ছাড়া আর কিছু? জানি, এসব তোমার কাছে চাইল্ডিশ মনে হবে। কিন্তু তুমিই তো শিখিয়েছ জীবনের সব কিছু যুক্তি ও ব্যাখ্যাতে চলে না, কিছু অনুভূতি ও ভালোবাসাকে সঙ্গী করে সকল যুক্তিকে বুড়োআঙ্গুল দেখিয়ে দিব্যি বাঁচা যায়। তাইতো আমি বেঁচে আছি। কিন্তু কাল থেকে এখনও পর্যন্ত যেন অন্যভাবে বাঁচা শুরু করেছি আমি! এক অসম্ভব, অনিশ্চিত, অবাস্তব দ্বিধাদ্বন্দ্ব নিয়ে এখনও সময় কাটাচ্ছি। এটাকে কি সুখ বলব নাকি যন্ত্রণা বলব, বুঝে উঠতে পারছি না। তুমি নাকি সবই বোঝ। তাহলে তো ওইটুকু বোঝার ক্ষমতা তোমার নিশ্চয়ই আছে! কী বুঝলে, বলো দেখি! আমি কেন তোমার কাছে এলাম, এটা কি তুমি বোঝ?………… এইমাত্র যা লিখে খুব করে কেটে দিলাম একই লেখা ডায়রিটা উল্টো করে ধরে উল্টো দিক থেকে লিখে, যাতে আর কোনওভাবেই তা পড়া না যায়, সেখানে কী ছিল, জানো? নিজের ভেতরের সকল অনিচ্ছার বিরুদ্ধে অনেকবার যুদ্ধ করেও তোমাকে তা বলে দিচ্ছি, শোনো………আমি হঠাৎ করেই কিছু না ভেবেই লিখে ফেলেছিলাম—বুঝলে ভাল! লেখামাত্রই বুকটা ধক্‌ করে উঠল! নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল যেন! যদি তুমি সেটা বুঝে ফেলো সত্যিসত্যিই, তবে আমি কীভাবে তোমার সামনে যাবো আর কোনওদিন? তোমার ফোন রিসিভ করা আমার পক্ষে আর সম্ভবই হবে না। এত ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম কথাটা লিখে! তোমাকে আমার কখনও জিজ্ঞেস করার সাহস পর্যন্ত হয়নি যে তুমি আমাকে নিয়ে কী বুঝ! কাল থেকে এখনও অবধি বুকের ভেতরটা খচখচ করছে। “ও কী বোঝে? ও কি সব বোঝে? হ্যাঁ, বোঝেই তো! না, না, কেন বুঝবে ও? কেমনে বুঝবে? আমি তো কিছু করিনি! যতটা সম্ভব নিজেকে আড়ালেই রাখি! ওকে আমি কখনওই কিছু বলি না, আমার অনুভূতি সম্পর্কে জানতে দিই না। একেবারেই যখন পারি না, তখন নক করি। কিন্তু এতে তো কিছু বোঝার কথা না! ও যেমন মানুষ, এসব বুঝলেও কখনওই প্রশ্রয় দেবে না কোনওদিনই। বরং উল্টো যোগাযোগই বন্ধ করে দেবে হয়তো! তাইতো আমি আমি নিজেকে ওর কাছ থেকে লুকিয়ে রেখেই আরামে ভালোবেসে যাচ্ছি। কিন্তু গতকাল……?”

প্রকৃতির সাথে পাল্লা দিয়ে আমার জীবনে ঝড়ের উপর ঝড় তুলে দিয়ে চলে গেল গতকালটা। এটা কেমন কথা? আমি তো নিজেই জানতাম, বুঝতাম, সেটা ঠিক আছে। কিন্তু তুমি কী জানো, কী ভাবো, কেন ভাবো, আসলেই কি ঠিকটা ভাবো, নাকি অন্য কিছু ভাবছো, এসব চিন্তা আমাকে নিস্তেজ করে দিচ্ছে ক্রমশই। বারবারই আমি নিজেকে বোঝানোর চেষ্টা করছি যে ও ভাবলেই কী, আর না ভাবলেই বা কী! অমন বুঝে কী হবে যে বুঝতে পারাটাকে ও পাত্তাই দিবে না? আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়া তো অনেক দূরের কথা! তার চেয়ে বরং ও নিজের মতোই থাক না! কিন্তু মনটা এতই বেয়াদব, বেহায়া, অসভ্য, ইতর যে আমার চোখের জলে ও নিষ্পেষিত হয়েই যাচ্ছে। বিবেক দিয়ে মনটাকে যদি ইচ্ছামত চড়ানো যেত তাহলে খুব ভাল হতো। এত খোঁচাখুঁচির কী আছে? তোমার যা বোঝার বুঝো, নো প্রবেলেম। রোজরোজই ওকে এরকম হাজারহাজার নায়িকা বোঝে। খুব ভাল কথা, এও বুঝলাম। কিন্তু ও কেন আমাকে বলতে গেল যে ও জানে যে আমি ওর হাবভাব বুঝি? ওর দুই-তিনটা কথা আমার শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ করে দিচ্ছে!

তুমি কি সত্যিই আমাকে দেখে বুঝে ফেলেছ যে আমি তোমাকে ভালোবাসি? কিন্তু আমার কী এমন অ্যাটিটিউড দেখে তোমার এমন মনে হলো? নাকি তুমি আসলে অন্য কিছু ভাবছো, আর আমি হুদাই আমার মতো করে যা ইচ্ছা তা-ই মনে করছি? অন্য কিছু ভাবলেই ভাল। জানতে হবে না আমার কথা, বুঝতেও হবে না। বুঝলেও অবুঝের মত থাকো। আমাকে বুঝতে দিয়ো না যে আমার মনের কথা তুমি জানো। আমি সত্যিই পালিয়ে যাবো অনেক দূরে যদি বুঝতে দাও। তোমাকে ছাড়া আমি আর কার সাথে কথা বলবো? কাকে ঘিরে স্বপ্ন বুনবো আর কার সাথে সব ভাগ করবো? তুমি ছাড়া আমার আর কে আছে? প্লিজ, অভিনয় করে যেয়ো যে তুমি আমার মনের কথা কিছুই বুঝ না। আমি বাঁচবো না আর তাহলে। এখনই তো অর্ধমৃত প্রায়। অন্তত এইটুকু সান্ত্বনা তো নিজেকে দিতে পারবো যে আমিই কখনও মুখ ফুটে কিছু বলিনি বা বলা হয়ে ওঠেনি বলেই তুমি কিছু জানো না। সব পারবো, কিন্তু তোমার ওপেন রিজেকশনটা সহ্য করতে পারব না। কিছুতেই না! এখনও কষ্ট হচ্ছে খুব! নিজেই নিজেকে আহত করতে পারতাম! ইচ্ছে করছে, ছুরি দিয়ে বুকের মাঝখানটা কেটে ফেলি। আমি আর পারছি না। ভালোবাসা যে এত বাজে একটা জিনিস, এ জীবনে কেন তা আগে বুঝতে পারিনি? বুঝতে পারলাম, তাও আবার তোমায় ভালোবেসে? একটা অনুভূতিশূন্য রোবটকে? দুনিয়ায় মানুষের অভাব ছিল? এরকম একজন মানুষকে আমি কীভাবে ভালোবাসলাম যার জন্য অগনিত মেয়ে পাগল? কিছুকিছু আইডির কমেন্ট দেখলে তো মনে হয়, বিষ খাই! ওগুলো পড়ার চেয়ে মরে যাওয়াও ভাল। এতোএতো প্রেম, ভালোবাসা, অনুভূতি কোত্থেকে আসে ওদের? বেহায়া মেয়েগুলিকে ধরেধরে থাবড়াতে ইচ্ছা করে। আমার চোখ থেকে আগুনের উল্কা বের হয় যেন! ইচ্ছে করে, নিজেই নিজের গায়ে আগুন ধরিয়ে দিই! আমি এমন একটা ছাগল যে কিনা সবার কমন ভালোবাসাকে ভালোবাসে! একটা পাবলিক প্রোপার্টিকে নিয়ে লাফালাফি করি আমি! হায় ভগবান! যা কোনওদিনই চাইনি, তা-ই কেন দিলে? না পারবো কোনওদিনই আগলে রাখতে, না পারবো ছুঁড়ে ফেলে দিতে, না পারবো ভুলে যেতে, না পারবো নিজে সরে আসতে! এমনই অবস্থা যে আমি মনেমনে একটু চিৎকারও করতে পারি না, বলতে পারি না যে ও শুধুই আমার! ও যে কোনওদিনই আমার না! সেটাও তো খুব ভাল করেই জানি। তবুও কেন ওর প্রেমিকাদের সহ্য করতে পারি না? আরে বাবা, আমি তো আর ওর হবো না কখনওই, তাহলে কেনই বা এত কষ্ট হয় আমার ওর পাশে কাউকে দেখলে? কীসের অধিকারে? অতি অতি অতি আজব!

আমাকে কেন এভাবে কাঙাল করে দিলে? কোথায় ঠাঁই পাবো আমি? কোথাও একটুও জায়গাও নেই আমার জন্য। কতকত মিথ্যা প্রবোধ আর চিন্তা বুকে আঁকড়ে প্রতিটা রাত কাটাচ্ছি। যেন একটা ভয়াল থাবার ভেতরে আমি! সেই থাবার শিকার হওয়ার জন্য সবাই মুখিয়ে আছে, সে থাবার শিকার আমি কিছুতেই নই, অথচ থাবাটি যার, তার উত্তাপে, দাপটে আমি সিক্ত, সিদ্ধ হিয়ে যাচ্ছি! নিজেকে ছাইয়ের চেয়েও নিকৃষ্ট উচ্ছিষ্ট মনে হয়। মানুষটাকে যদি এক ইঞ্চিও ঘৃণা করতে পারতাম! প্রচুর রাগ হয় শুধুই নিজের উপর। কেন আমি ওকে ভালোবাসলাম? কেন? কেন? কেন? আমি কীভাবে এরকম গাধামিটা করলাম? আমার জন্য তো কম মানুষ পাগল ছিল না, ওর চেয়ে কম সেলিব্রিটি তো আমার জন্য উন্মাদ ছিল না, তাহলে কেন ওর জন্য এমন হলাম? আমাকে যারা ভালোবাসে তবে কি ওদেরই অভিশাপে আমার আজ এ অবস্থা? আমি কী করব? কী করলে একটু শান্তি পাব? কোথায় তুমি? কোথায়? কোথায়? আমার বুকের ভেতরে কেন বসে আছ? বের হও না একটু! আমি যে আর নিতে পারছি না, আর বহন করতে পারছি না এ দুর্বহ ভার! ভালোবাসার ফুল না দাও, তবু এরকম পাথরচাপা দিয়ো না। আমি যে নিঃশ্বাস নিতে পারি না! এতটা আবেগ, কষ্ট, আর অভিমান আর বইতে পারছি না। কারণে, অকারণে কাঁদাচ্ছ আমাকে! এত খারাপ তুমি! আমাকে আর কত পুড়তে হবে? জ্বলতে হবে? আমি সত্যিই মরে যাবো! তোমাকে কাল বারুণী মেলায় আসতে বললাম, আর তুমি উত্তরে কী বললে আমাকে? থাক, এসো না তুমি! আমি ওখানে একদিন আমার প্রাণ বিসর্জন দিব। তাই তোমার ওখানে না যাওয়াই ভাল। কত দিন সহ্য করব এই কষ্ট, জানি না। ক্ষয় হতেহতে শক্ত হচ্ছি, নাকি ফুরিয়ে যাচ্ছি, তাও জানি না। কিন্তু তুমি আবার কিছু বুঝতেটুঝতে যেয়ো না। যা কোনওদিনই গ্রহণ করতে পারবে না, তা বুঝতেও হবে না তোমাকে। আর কোনওভাবে বুঝলেও অবুঝের মত থাকো।

তোমাকে নিয়ে একটা বাজে কথাও সহ্য হয় না আমার। এতদিন চুপ ছিলাম, আর কত? ওইদিন ভীষণ কষ্ট হচ্ছিল, আজও হয়েছে। তোমাকে নিয়ে কেন এসব বলবে সবাই? তোমাকে নিয়ে কেন? তুমি কেন? তোমাকে নিয়ে একটা বাজে কথাও নিতে পারি না। আজ যখন মা আর বাবাকে নিয়ে এত নোংরা-নোংরা কমেন্ট পড়ছিলাম, তখন এত কষ্ট হয়েছে যে আমি বাচ্চাদের মত কাঁদছিলাম। বিশ্বাস করো, আমার মনে হচ্ছিল, ওইসব পড়ার আগে আমি মরে গেলাম না কেন? ওরা মাকে নিয়েও এত বাজে কমেন্ট কীভাবে করতে পারল? পৃথিবীটা এত খারাপ লোকে ভর্তি! ফেসবুকটা আসলেই ফ্রি হওয়া ঠিক না। দুনিয়ার গরুছাগলরা ফেসবুক চালায়। একটা বেড়া দরকার! সত্যি! যতসব অশিক্ষিত মূর্খ ভণ্ডের দল! আমার কাছে মনে হয়, পৃথিবীর সব মিথ্যা, আর একমাত্র আমার মা-ই সত্য। তাই ওই কথাগুলো পড়ে মনে হচ্ছিল, কেউ যেন তোমার গায়ে সপাং-সপাং চাবুক মারছে, আর তার আঘাতটা এসে লাগছে আমার গায়ে। আমি আর নিতে পারছিলাম না। ইচ্ছে করছিল, একছুটে গিয়ে তোমাকে বুকে জড়িয়ে ধরি যেন একটা আঘাতও তোমার গায়ে না লাগে, একটু ময়লাও যেন তোমাকে স্পর্শ না করে, পৃথিবীর কোনও কীটই যেন তোমাকে না ছোঁয়! বিশ্বাস করো, একটা কথাও মিথ্যা বলছি না। এর কিছু মিথ্যে যদি হয়, তবে যেন আমি মরে যাই। আমি শুধু তোমাকেই ভালোবাসি, তাই আমার ভালোবাসার উপর কোনও আঘাতকেই আমি নিতে পারি না। আমি যে কিছু করতেও পারি না, শুধু কাঁদতেই পারি, এতটাই অক্ষম আমি!

শুধুই একটা আগাছা আমি। তবু সাহস করে কীভাবে যেন তোমায় ভালোবেসে ফেলেছি। পারিনি, একটুও ধরে রাখতে পারিনি নিজেকে। এই ভুলের মাশুল কবে থেকে থেকে দিচ্ছি, জানি না। আর কতদিন দিয়ে যেতে হবে, তাও জানি না। সবচেয়ে আশ্চর্য কথা কী, জানো? এখন কী যেন এক ছোট্ট আলো বারবার জোর করে উঁকি দিয়ে বের হয়ে আসতে চাইছে আমার ভেতর থেকে। সে আলো দেখতে আশার মত………আমি জানি, এটা মরীচিকার মতই মিথ্যা, তবুও যে কেন সে আলো আশা দেখাচ্ছে! আমি কী যেন একটা হাতড়াচ্ছি! খুঁজছি কেবল তোমাকেই। অথচ এটা তো হবার কথা নয়। কেন এমন হচ্ছে, কেউ যদি একটু বুঝিয়ে দিত! তুমি নিজেই বুঝিয়ে দিয়েছ তোমাকে নিয়ে সব আশা দুরাশা মাত্র, তবু কেন আমি আশা খুঁজে চলেছি? আমি কেন পাগলামি করছি, অনবরত লিখে চলছি, কেন তোমার জন্য ব্যাকুল হয়ে থাকি প্রতিটি মুহূর্তেই? তুমি এই পৃথিবীতে প্রথম দুর্লভ বস্তু আমার জীবনে। এত কিছু পাওয়ার পরও তুমি নেই, তুমি নেই, নেই কোথাও…………আমার বুকটা ছিঁড়লে শুধুই তোমায় পাবো, এই………এই ডায়রিতে তোমায় পাবো, আমার বইগুলোতে তোমায় পাবো, আমার আইডির ছবিগুলোতে তোমায় পাবো। আর কোথায় পাবো? আসলে জিজ্ঞেস করা উচিত, কোথায় পাবো না তোমাকে? তুমি যে আমার চোখে স্থির হয়ে আছ জন্মজন্মান্তরের জন্য! আমার পুরো অস্তিত্ব জুড়ে কেবলই তোমার বসতি। আমি সত্যিই তোমায় ভালোবাসি। তোমায় ভালোবাসতে শিখে আমি অবাক হয়ে যাই, এ ভেবে যে এতটা ভালোবাসতে পারি আমি!

আজ আমি কিছু ভাবতে চাই না। কিন্তু মাথাটা ঘুরছে। সব ভাবনা নিয়ে খোলা আকাশের নিচে আমার দেহ যেন নিথর পড়ে আছে। এর উপর দাঁড়িয়ে রৌদ্র যেন রোদ পোহায়। তুমি আমায় রেখে কোথায় যেন চলে গেলে, কেবল সাথে নিয়ে গেলে আমার সকল আশা, ভালোবাসা আর স্বপ্নটুকু, আর পেছনে রেখে গেলে বেদনাঘন কিছু স্মৃতি, যেগুলি আমায় তাড়িয়ে বেড়াবে সারাজীবনই! আমি সবসময়ই অসম্পূর্ণ থেকে যাবো তুমি ছাড়া, কেননা আমার মন জুড়ে শুধু তুমি ছিলে, তুমি আছ, তুমিই থাকবে। জানি, আমায় তুমি কখনওই খুঁজবে না। মাঝেমাঝে ইচ্ছে করে তোমায় বলেই ফেলি, চলো না, হারিয়ে যাই! অনেক দূরে আমরা দুজন চলে যাবো, যেখানে কেউই আমাদের খুঁজে পাবে না কোনওদিনই। আমাদের ভালোবাসার ছোট্ট সংসার হবে। অনেক আনন্দে কাটবে দিনগুলি। কোথাও পালিয়ে গেলে মায়ের জন্য খুব কষ্ট হবে। উনি আমাকে কত কষ্টে গর্ভে ধরেছেন, বড় করেছেন। আমার ভালোবাসা হয়তো পরিপূর্ণ নয় এখনও, পরিপক্ব হয়নি এখনও, তাই বুঝি তোমাকে আমি কাছে পাই না, হারিয়ে ফেলি! কোনও এক তৃষ্ণার্ত দুপুরে কিংবা পড়ন্ত বিকেলে আমায় খুঁজবে তুমি, দেখো! সকালের বাতাসের গন্ধে আমি মিশে থাকব, খুঁজে দেখো, ঠিকই পাবে। আমার চাপাকান্নার শব্দ সেদিন শুধু তুমিই শুনতে পাবে, আর কেউ না। তবু তুমি তোমার পথ থেকে সরে এসো না সেদিনও, একজন সফল, সার্থক, ভালমানুষ হয়ে বেঁচো। তবে আমার বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করে, আমার অস্তিত্ব ছাড়া তুমি কখনওই সম্পূর্ণ মানুষ হতে পারবে না। আমার মত নিজের কাছ থেকেই লুকিয়ে বেঁচো না, মাথা উঁচু করেই বেঁচো—শুধুই সমাজের কাছে নয়, নিজের কাছেও। সমাজের সামনে মাথা উঁচু করে বাঁচা সহজ, নিজের বিবেকের আয়নার সামনে মাথা উঁচু করে বাঁচা সহজ নয়—সবাই তা পারে না। যখন কারও বাঁচা কিংবা মরা অন্য কারও উপর নির্ভর করে, তখন তার পক্ষে বেঁচে থাকাটা সহজ নয়। সে হয় কল্পনায় বেঁচে বাঁচে, নতুবা বাস্তবে মরে বাঁচে। আর কোনও অপশন নেই।

খুব যতনে, খুব আদরে রাখব তোরে সারাটি জীবন। তুই আমার কাছে ছোট্টবেলার সেই পুতুল, যাকে জড়িয়ে ধরে রাখতাম আমি সারাটাদিন। সেই পুতুলকে অনেক আদর দিয়ে রাখতাম, যদিও জানতাম, ওই পুতুল আমায় কোনওদিনই ভালোবাসবে না, তবুও আমি ওকে ভালোবাসতাম। তুই আমার সেই ভালোবাসা, যাকে ভেবে আমি আমার সব দুঃখকষ্ট ভুলে থাকতে পারি। আমি কেন যে এত ভালোবাসি তোরে, সত্যিই জানি না। জান, আজ তোকে একটা মজার গল্প বলি। পাঁচ বছর আগের কথা। আমি তখন এসএসসি পাস করেছি। আমার ছোটবোন সবসময়ই আমার সাথে খেলতে চাইত। আমার দুইটা কন্ডিশন ছিল—আমরা ক্রিকেট খেলব, আর আমিই আগে ব্যাটিং করব। আমি ছয় মারলে ওকে বল আনতে পাঠাতাম। ও আমাকে আস্তে মারতে বলত, আমি ওর কথা শুনতাম না। ওকে ভয় দেখাতাম এই বলে যে, বল নিয়ে না আসলে খেলবই না। ফোর পিটালে ও যখন বল আনতে যেত, তখন আমি দৌড়ে আরও দুই রান করে ফেলতাম। ফলে রান হত ছয়। ও ছিল একটু বোকা টাইপের। কিছুই বলত না। এইভাবে আমি রানের পাহাড় গড়তাম। এরপর যখন ওর ব্যাটিং আসত, তখন ও বলটা দূরে পাঠালে, ওকেই বল নিয়ে আসতে বলতাম। ও প্রতিবাদ করত: “একই খেলায় আমার বেলায় অন্য নিয়ম কেন?” আমি হেসে বলতাম, “এভাবেই খেলতে হবে। নাহলে আমি খেলব না।” ও আর প্রতিবাদ না করে খেলা চালিয়ে যেত। ও চার হাঁকলে চার-ই হত, আমি চার হাঁকলে হত অন্তত ছয়! তুই যেন আমার কাছে সেই দেবতা, যার কাছে আমি আমার সবকিছুই উৎসর্গ করে দিতে পারি। তাইতো এই ভালোবাসার খেলায় তুই আমায় ভালোবাসিস না জেনেও আমি তোকে নিঃস্বার্থভাবে ভালোবেসে যাচ্ছি, এই ভয়ে যে, যদি তুই না খেলিস! আমি ঠিক করেছি, কোনও এক রাতে তোর কাছে যাবো। সেদিন অমাবস্যা থাকবে। নিজেকে আঁধারের কাছে সঁপে দেবো। সেই রাতই হবে আমাদের প্রথম আর শেষ কাছে আসার রাত। অনেক কাছে, যতটা কাছে এলে দুটো মানুষের নিঃশ্বাস এক হয়ে যায়। সবই হবে, কিন্তু আমরা কেউ কাউকে দেখবো না, অন্য কেউ জানবে না, এমনকি আমি নিজেও নিজের কাছ থেকে আড়ালে থাকব। আমি চাই, আমার জীবনে যে সুখটা স্থায়ী নয়, অথচ আমি পেতে চাইছি মনেপ্রাণে, সে সুখ দিনের আলোয় না আসুক, রাতের আঁধারে আসুক। আমি সে সুখ জীবনে মেখে নেবো এক অনন্ত আঁধার যাত্রায়। দিনের আলোয় সে সুখ কুড়িয়ে নিয়ে আমি লোভী হয়ে উঠতে চাই না। রাতের সে সুখ রাতের আঁধারেই পথ হারাক।

এমনিতেই দিনদিন তোমার উপর আমার লোভ বেড়েই চলেছে। যতই বাড়ছে, ততই কষ্ট পাচ্ছি আমি। আমি চাই, আমি তোমার কাছ থেকে চলে আসার পর তোমাকে পুরোপুরিই ভুলে যাবো। আমি যখন দেখি, কিংবা শুনি, কিংবা তোমার লেখায় পড়ি যে, কেউ তোমাকে ভালোবাসে, আমার মতন করে, তখন কেন জানি না, ভীষণ রাগ হয়। তুমি যখন এমন কোনও মেয়ের মনের কথা লিখ, যে মেয়েটা এমন কারও ভালোবাসায় ডুবে আছে, যে মেয়েটাকে ভালোবাসেই না, তখন আমার মনে হতে থাকে, এসবই তো আমার কথা, তুমি জানলে কীকরে? তুমি অনেক ভাল লেখক। তোমায় নিয়ে আমার গর্ব হয়। তুমি ভাল থেকো, ঠিকমতো খাওয়াদাওয়া করো, কেমন আছ, জানতে চাইলে একটু কষ্ট করে এক শব্দে হলেও রিপ্লাই দিয়ো। (এই যেমন, আমি যদি জিজ্ঞেস করি, ভাল আছ? তুমি শুধু লিখে দিয়ো—হ্যাঁ/না। এতেই হবে।) আমি যাকে ভালোবাসি, সে যদি ভাল না থাকে, তবে তার জন্য একটু প্রার্থনা করার সুযোগটুকু তো পেতেই পারি, তাই না? জানি, তোমায় পাবো না, তবু তোমার জন্য একটু প্রার্থনা করার অধিকারটুকুও কি ভালোবাসা থেকে জন্মায় না? মিনতি করে বলছি, আমাকে তোমার খোঁজখবর নিতে দিয়ো। আমি প্রতীক্ষায় থাকব তোমার রিপ্লাইয়ের। তোমার কণ্ঠস্বর শুনতে না দাও, তবু তোমার একটা ছোট্ট অনুভূতি দিয়ো—মিথ্যে করে হলেও। তুমি ভাল থাকলে আমি ভাল থাকব, তুমি নিজের খেয়াল রাখলে আমার খেয়াল রাখা হবে (জানি, এই ব্যাপারটার তোয়াক্কাই তুমি কর না, তবুও! আমারও তো ভাল থাকতে ইচ্ছে করে, বাবু! কী করবো, বলো, মানুষ তো!)

এই যে এত কথা লিখছি, জানি না এসব আদৌ শেষ পর্যন্ত তোমার কাছে পৌঁছবে কি না! আমি মরে গেলেও তুমি কখনও জানতে পারবে না, সেও জানি। আমি যেদিন মরে যাবো, এরপর একদিন যাবে, দুইদিন যাবে, তিনদিন যাবে, চারদিন যাবে………আমি তোমায় টেক্সট করবো না, তোমার কথা ভেবে কিছুই লিখব না, আমার নাম্বার থেকে তোমার মোবাইলে কোনও কল আসবে না, তাই তুমি খুব সহজেই ভুলে যাবে। হয়তো আমার মৃত্যুর খবরটা সবাইকে দেয়ার জন্য আমার পরিবার কিছুদিন আমার এই সিমটা অন রেখে দেবে, যদি তুমি সেসময় ভুল করে ফোন করে ফেলো, তখন জানতে পারবে, তোমার মহুয়া আর নেই। (আমি ‘তোমার’ লিখেছি বলে রাগ কোরো না যেন! আমার লিখতে ইচ্ছে করলে আমি কী করবো!) সত্য হল এই, তুমি কল করবেই না। অমন করেই অনেকদিন কেটে যাবে। হঠাৎ কোনও একদিন তোমার অবচেতনভাবেই মনে আসবে, কে যেন ফোন করে কানের কাছে লাভ ইউ, লাভ ইউ বলেবলে ঘ্যানঘ্যান করত! ও কই? আর ফোন দেয় না কেন? এরপর হয়তো ফোন করবে। কিন্তু সেদিন পর্যন্ত আমার সিমটা অন করে রাখার প্রয়োজন আর থাকবে না, সবাই ততদিনে আমার মৃত্যু সংবাদটা জেনে যাবে। আমার ফোনটা অফ দেখেও তোমার কিছুই এসে যাবে না, সিম অফ পেয়ে তুমি তোমার নিজের নিয়মে তোমার জীবন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়বে। তুমি কোনওদিন জানতেই পারবে না, সেই লাভ ইউ, লাভ ইউ বলে বকরবকর করা মেয়েটার বকরবকর করার সব শক্তি ঈশ্বর চিরতরে কেড়ে নিয়েছেন।

জান, কেমন আছ? ভাল তো? ওয়েট একটু বেড়েছে না? ঠিকমতো ডায়েটিং করছ তো? জান, দেখো, আমি কত ভাল একটা মেয়ে হয়ে গেছি! আর দুষ্টুমি করি না, তোমাকে জ্বালাইও না আগের মত। তুমি কল করতে, মেসেজ পাঠাতে বারণ করেছ বলে তাও করি না। তোমার সব কথা লক্ষ্মী মেয়ের মত শুনছি। তবে একটা কথা জানতে ইচ্ছে করে—ভাল আছ তো তুমি? সোনামণিটা আমার! ছোট্ট বাবুটা আমার! এতএত ভালোবাসি তোকে, জান! তুই কি কিছুই জানিস না? বুঝিস না আমার মনের ভাষা? বুঝিস তো ঠিকই! তবু কেন এত কষ্ট দিস? খুব আনন্দ পাস তুই আমায় যন্ত্রণা দিয়ে! আমি ছটফট করলে তোর ভাল লাগে। দেখিস জান, একদিন হঠাৎই তোর ফোনে আমার ফোন থেকে একটাও টেক্সট যাবে না আর! কোনও কল কেউ করবে না তোকে। কেউ তোকে এসব বলে জ্বালাবে না—তোমার কী কী ভাল লাগে? খাওয়াদাওয়া কর তো ঠিকমত? খেয়েছ তো দুপুরে? কিছুই জিজ্ঞেস করবে না কেউই! খুব খুশি হয়ে উঠবি সেদিন, তাই না? দারুণ মজা হবে! আমি বেশি জ্বালাই তোকে, তাই নারে, জান? ক্ষমা করে দিস আমায়। কী করবো, বল? থাকতে যে পারি না তোকে ছাড়া! প্রেমে পড়া মানেই বেহায়া হয়ে যাওয়া। আগে বুঝিনি এটা। তুই ছাড়া যে আমার সবকিছুই অন্ধকার হয়ে যায়। তুই এত অ্যাভয়েড করিস আমায়, গালিও দিস ভীষণ, তাও তোর পেছনপেছন কুকুরের মতন ঘুরতে থাকি। কেন এমন করি? বুঝি নাতো! তুই কি বুঝিস, জান? ভালোবাসা মানুষকে ইতর প্রাণীর মত অসহায় করে দেয়। কেমন আছিস তুই? বল না, জান!

জানিস জান, আমি স্বপ্ন দেখি তোকে নিয়ে, অনেক সুন্দর-সুন্দর স্বপ্ন। যখনই স্বপ্ন দেখি, তখনই মনে হয় যেন আমি স্বপ্নের মধ্যে ঢুকে গেছি! তোকে একদিন বলেছিলাম, আমার একটা নিজের পৃথিবী আছে। তোর মনে পড়ে? সে পৃথিবীতে আমিই সব! এখন সেই পৃথিবীতে আরও একজন আছে, সে হচ্ছিস তুই! সেই পৃথিবীর সব স্বপ্নের কথা আমি তোকে বলবো। আমার স্বপ্নের তুই’টা অন্য এক ‘তুই’—অনেক অনেক অনেক আদরের একটা পুতুল! এক ছোট্ট বাবু হয়ে তুই আমার স্বপ্নে আসিস, কত্ত আদর যে করি তোকে! খুশিখুশি চোখে ভাবি, সেই বাবু যখন ঘুমিয়ে থাকবে, আমি তখন তার ঘুমিয়েথাকা নিষ্পাপ মুখটা দেখবো। পৃথিবীর সব সৌন্দর্য ম্লান হয়ে যাবে সে অপূর্ব মুখটার কাছে। আমি বিছানা ছেড়ে উঠবো, তোর প্রিয় ব্রেকফাস্টটাই বানাব, তুই তখন ঘুমিয়ে থাকিস, সোনা! কেমন? তোর ঘুম ভাঙবে সেলফোনটার অ্যালার্মে নয়, আমার ঠোঁটের উষ্ণ স্পর্শে! আমার ভেজা চুলের জল তোর চোখ ভেজাবে একটু করে! ঘুম ভেঙে তুই রেডি হতে থাকবি অফিসে যাওয়ার জন্য। আমি অবাক হয়ে তোর দিকে তাকিয়ে ভাবব, আশ্চর্য! এমন সুন্দর মানুষটা…………আমার! আমার খুব ইচ্ছে করে, তুই অফিসে যাওয়ার সময় তোকে তৈরি করে দিই। ঠিক যেরকম করে ছোট্ট বাবুকে মা রেডি করে দেয় স্কুলে যাওয়ার আগে, তেমন করে। তোকে নিজ হাতে খাইয়ে দেবো, কোমরের বেল্টটাও বেঁধে দেবো খুব যত্নে। তুই আমার কপালে একটা চুমু খেয়ে অফিসে চলে যাবি, সেই সুখ নিয়ে আমি সারাদিন তোর প্রতীক্ষায় থাকতে পারবো। বাসায় বসেবসে তুই ফেরার আগেই তোর প্রিয় সব রান্না করে রাখব। বারবারই জানালার কাছে গিয়ে দেখবো, তুই এসেছিস কি না। আমি লালপেড়ে সাদা শাড়ি পরে থাকব—শাড়ির প্যাঁচ কতকটা উপরে সরে গিয়ে নাভিটা দেখা যাবে, হাতে থাকবে লাল ফিতের চুড়ি, কপালের মাঝখানটাতে ছোট্ট লালটিপ। নিজেকে তোর মনের মতন করে সাজিয়ে রাখব। ভক্ত দেবতার জন্য অর্ঘ্য সাজিয়ে রাখে যেমনি করে, ঠিক তেমনি করে নিজেকে তোর কাছে নিবেদন করে দেয়ার জন্য তৈরি করে রাখব। সারাটি দিনই অধীর ব্যাকুল হয়ে বসে থাকব তোর পথ চেয়ে। অফিস শেষ করে বাসায় এলেই একছুটে তোর কাছে গিয়ে তোকে জড়িয়ে ধরে তোর ঘামেভেজা শার্টের ঘ্রাণ নেবো, তোর মুখ-চোখ-গাল-কপাল-ঠোঁট চুমুতে-চুমুতে ভরিয়ে দেবো। তোর শরীরের ঘ্রাণটা তার সমস্ত মাদকতা দিয়ে আমায় মাতাল করে দেবে! অসহায় শিশু কোনও অচেনা জায়গায় কোনও পরিচিত কাউকে দেখলে যেমনি করে ছুটে যায়, তেমনি করেই আমি তোর কাছে ছুটে যাবো! ঘর তো ঘর, তুই ছাড়া যে আমার কাছে পুরো পৃথিবীটাই অচেনা! তুই ফিরবি, ফ্রেশ হবি, নাস্তা করে ল্যাপটপে লিখতে বসবি। আমি মুগ্ধ চোখে তোকে দেখবো, দেখতেই থাকব। তোর লেখাও যে আমার কাছে অনেক প্রিয়! রাতে তোকে নিজ হাতে মেখে খাইয়ে দেবো। ডিনার করে আবার লিখতে বসলে আমি তোর জন্য জেগে থাকব। না, তোর সামনে নয়, অন্য রুমে একটা বই নিয়ে পড়তে বসে যাবো। তুই লিখতেই থাকবি, আর আমি ভাবব, আহা, কাল এই লেখাটা তুই আমাকে পড়তে দিবি! তোর আরও একটা দারুণ সৃষ্টি পৃথিবীতে আসছে, আমি সেটার অপেক্ষায় আছি! এর চাইতে সুন্দর কোনও অনুভূতি কোথায় আছে? জীবন কত সুন্দর! কখনও হয়তো বই পড়তে-পড়তে ঘুমিয়ে পড়বো টেবিলের ওপরেই। তুই ঘুমানোর সময় আমায় খুব সাবধানে কোলে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিবি। আমি টের পেলেও জাগব না, ঘুমের ভাণ করে অচেতন হয়ে থাকব তোর আদর নিতে। তুই এরপর আমার কপালে আলতো করে একটা চুমু খেয়ে ডিমলাইটটা জ্বেলে আমার পাশে শুয়ে পড়বি। হয়তো তুই সারাদিনের পরিশ্রমে ক্লান্ত, শ্রান্ত, অবসাদগ্রস্ত……..শরীরে শক্তি নেই এক ফোঁটাও, তবু ওইটুক আদর দিতে কক্ষনো ভুল হবে না তোর! স্রেফ ওইটুকু পেলেও সে সুখে জীবন দিব্যি কেটে যাবে। ঈশ্বরের কাছে আর কোনওদিনই কিছু চাইব না। জানি, আমার এ স্বপ্ন কেবল স্বপ্নই থেকে যাবে, তবু কেন যে এ স্বপ্ন দেখতে এত ভাল লাগে! জীবনে যা পাবো না, তা-ই বড় সুন্দর মনে হয়! আমার বারবারই মিথ্যের পেছনে ছুটতে আনন্দ হয়! মন বড় নির্লজ্জ রে! এত অবহেলা করিস আমায়, তবু বারবার তোর কথাই মনে পড়ে। আমার তোর সম্পর্কে জানতে ইচ্ছে করে, তবু উপায় কী, বল! তুই যে খুব ব্যস্ত হয়ে থাকিস আমার কাছে! তোকে ফোন করা দূরে থাক, টেক্সট পাঠাতেও ভয় লাগে! তোর মনে আমি আছি কি না জানি না, তবে এটা জানি, তুই আমার প্রতি বিরক্ত হয়ে গেলে নিজেই অনেক দূরে সরে যাবি! সে ভয়ে তোকে জ্বালাই কম! না পেয়েই হারানোর ভয় সবসময়ই খুব তীব্র!

জান, তোকে ছাড়া থাকতে পারবো না, বিশ্বাস কর! মরেই যাবো, সত্যি! একটা রিকোয়েস্ট রাখবি? আমায় নিয়ে বুকের মধ্যে লুকিয়ে রাখ না! কেউ তোকে আর খুঁজে পাবে না! তুই আর আমি একটা টোনাটুনির সংসার পাতব। জান, বিশ্বাস কর, তোকে আমি অনেক ভাল রাখব, যত্নে রাখব। কোনও অভিযোগ করবো না, তোকে তোর মত করে থাকতে দেবো। ভালোবাসা মানে তো ভালোবাসার মানুষটাকে তার মত করেই বাঁচতে দেয়া, বাড়তে দেয়া! কাউকে সে যেমন, তেমন করে গ্রহণ করতে জানাটা মস্ত বড় একটা আর্ট! আমরা ভালোবাসার মানুষটাকে নিজের মনের মত করে পেতে চাই, ও যেমন, তেমন করে ওকে গ্রহণ করতে শিখি না। আর গণ্ডগোলটা বাঁধে সেখানেই! যদি ইচ্ছে করে, কখনও অন্য মেয়েকেও নাহয় একটু স্পেস দিস, শুধু আমার চোখের সামনে থাকিস, ওতেই হবে। আমি জানি, তুই অনেক ভাল একজন মানুষ, কখনওই কারও ক্ষতি করিস না। আমি তোকে এত ভালোবাসি, আর তুই আমাকে বাঁচাবি না, বল? আমি যে মরেই যাচ্ছি! একদিন শুনবি, মহুয়া আর নেই, সে অন্য কারও হয়ে গেছে। দেখিস, সেদিন বুকের ভেতর কেমন একটা মোচড় খাবি! আমাকে হয়তো ভালোইবাসিস না, তবু আমি অন্য কারও নই, এই ভাবনা তোকে আরাম দেয়, আমি এটা বুঝি। আমি যেদিন অন্য কারও হবো, সেদিন হয়তো আর সহ্য করতে পারবো না। আমি আমার ভালোবাসার মানুষটিকে পাচ্ছি না, এটা সহ্য করা যায়, কিন্তু যাকে ভালোবাসিই না, তেমন কারও হয়ে গেছি, এটা মেনে নেয়া যায় না! অনেক মেয়েকেই দেখি, ভালোবাসার মানুষটিকে ছেড়ে অন্য কারও হাত ধরে ঘর বাঁধে। ওদের দেখি, আর ভাবি, কীভাবে পারে ওরা? তোকে যে কত কত কত ভালোবাসি, তা তুই ভাবতেও পারবি না। মুভিতে বলে না, ভালোবাসার মানুষের জন্য কলিজা কেটে দেয়া যায়? কথাটা শুনে খুব হাসতাম একসময়। এখন বুঝি, কথাটা আক্ষরিক নয়। প্রিয় মানুষের জন্য প্রিয় যেকোনো কিছুই উৎসর্গ করে দেয়া যায় হাসিমুখেই!

আমাকে লুকিয়ে রাখ না, জান! অনেক কষ্টে আছি রে! তোকে ছাড়া থাকতে হবে, এটা মাথায় এলেই মাথাটা পুরো ফাঁকা হয়ে যায়, নিজের জীবনকে অর্থহীন মনে হয়। তুই এমন একটা নেশা, যে নেশাটা নিয়ে আমি মরতে চাই। তুই কেন আমার না? আমি এটা মানতেই পারি না! কী করবো, বল, আমি যে এমনই! আমার রাজ্যে আমিই রাজা! মন যখন যা করতে বলে, আমি তখন তা-ই করি। জেদ চেপে গেলে, ওটা না করে পারি না। তুই আমার একটা জেদ। তোকে আমি মাথা থেকে বের করতেই পারি না! তুই আমাকে চেয়েছিলি। আমার চাওয়া তো আর কখনও পূরণ হবে না, তাই ঠিক করলাম, তোর চাওয়াটুকু অন্তত পূরণ করি। সেই জেদ থেকেই ঠিক করলাম, তোর কাছে যাবো! গেলামও! অথচ, তুই তোর চাওয়াটা কোনও এক রহস্যময় কারণে পূরণ করে নিলি না। আমার সবচাইতে আদরের ধনটি কাড়লি না কেন তুই? তোকে দেখে ভাবতাম, তুই কেবল ওটাই চাস! তোকে ওভাবেই চিনেছি সবসময়ই! কাছে যেতেই দেখি, চেনা মানুষটাই অচেনা সেজে বসে আছে! এ কেমন জাল! তোর সাথে নিজের জীবন নিয়ে খেলতে গেলাম জিততে, অথচ চরমভাবে হেরে গিয়ে ফিরে এলাম! অনেক ক্ষোভ জমা হয়েছিল, ভেতরের রাগ ফুঁসে উঠছিল নিজের উপর। মনে হচ্ছিল, আমার একটা উচিত শিক্ষা হওয়া দরকার! নিজেকে শেষ করে দিতেই সেদিন ছুটে গেলাম তোর কাছে। শেষ হল ঠিকই—তবে আমি নই, আমার ভাবনার সংকীর্ণতা!

যদি জীবনে বেঁচে থাকি এত আঘাত সহ্য করেও, তবে নতুন করে জীবনটাকে সাজিয়ে নেবো। তোর জীবনটা তো সাজিয়ে নিবি তুই, কিন্তু আমার কী হবে? যে স্বপ্ন পূরণ হবার, সে স্বপ্ন বেশিদিন মনেই থাকে না; আর যে স্বপ্ন কখনওই পূরণ হবার নয়, সে স্বপ্নই আজীবন তাড়িয়ে বেড়ায়! এর নাম জীবন নাকি? জানিস, তোকে বিয়ে করতে পারলে আমি সারাজীবনের জন্য তোর কাছে বোকা হয়ে বাঁচতাম! যদি ইচ্ছে করে দুচোখ বন্ধ করে রাখলে পৃথিবীটাকে সুন্দর লাগে, তবে সব বুঝেশুনেও তা-ই করতাম। তুই কী লুকাস, কী নিয়ে কথা বলতে চাস না, আমি কিন্তু সবই বুঝি, তবু অবুঝের মত চুপ করে থাকি। আমি তো জানিই, তুই কথা রাখতে পারবি না, সময়মত আমাকে ফোন করবি না, তোকে পাঠানো টেক্সটের রিপ্লাই আসবে না কোনওদিনই; বিশ্বাস কর জান, বুঝি সবই, তবু বোকা সেজে তোকে জিজ্ঞেস করে ফেলি, কতক্ষণ পর আমাকে ফোন দিবা? ঠিকঠিক দিবা তো? প্রমিজ? আমি কী স্টুপিডের মত কাজ করি, তাই না, বল? তুই ফোন কেটে দেয়ার পর হাসিস, আমাকে পাগল ভাবিস, তাই না? নাকি ফোন কাটবার পর বলিস, যাক, বাঁচলাম বাবা! এটাও ভাবিস তো, আর কতদিন যে একে সহ্য করতে হবে, কে জানে! আমি সব বুঝেও নির্বোধ অবোধ গর্দভ। তুই না বুঝেও জিতে যাস, আর আমি বুঝেই হেরে যাই। এতেই আমার জিত! আমার এক বান্ধবী আছে, পুরাই পাগল! আমাকে এত যে ভালোবাসে! এত কেয়ার করে আমার! বলে, পরের জন্মে নাকি ছেলে হয়ে জন্মাবে আর আমার বর হবে! ওর চাইতে বেশি আমাকে কেউ বোঝে না। ইদানিং ও বলে, আমি নাকি অনেক বদলে গেছি! ছেলেমানুষি কমে গেছে, আগের চাইতে ম্যাচিউরড হয়ে গেছি! আমি অবশ্য আমার ছেলেমানুষিটা সবাইকে দেখাই না, খুব কম মানুষই আমার এই রূপটা দেখেছে, যাদের খুব ভালোবাসি, কেবল তাদের কাছেই আমি ছেলেমানুষ।

তুমি না লিখে থেকো না, কিছু না কিছু লিখো প্রতিদিনই। তোমাকে পড়া আমার প্রতিদিনের জীবনযাপনের খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা অনুষঙ্গ। আমার চকোলেট খুব প্রিয়, জানি, তোমারও চকোলেট প্রিয়। একদিন তোমার একটা স্পিচের ভিডিও এক আপুর কাছে পাই, আমি সেদিন অতটা কেয়ার করিনি। পরে একদিন মোবাইল থেকে ডিলিট করতে গিয়েও কেন জানি করিনি। ওভাবেই মোবাইলে পড়ে ছিল। প্রায় দুই মাস পর একদিন ওটা শুনি। ওই আপুর কাছে আমি চিরঋণী। আমাকে তুমি অনেক কিছুই শিখিয়েছ। যখন তোমার জন্য কষ্ট পাই, তখন ভাবি, কেন ওটা দেখতে গেলাম! তোমাকে না চিনেই তো দিব্যি ভাল ছিলাম! কোনও ছেলের কথা ভাবলে পর্যন্ত হার্টবিট কেমন বেড়ে যায়, এ অভিজ্ঞতা জীবনে এই প্রথম। তোমার নিষ্পাপ মুখটা চোখের সামনে ভেসে উঠলে আমি এলোমেলো হয়ে যাই। তোমার প্রতিটি ভিডিও কতবার যে দেখে ফেলেছি, তা আমি নিজেও হিসেব করে বলতে পারবো না। কেমন জানি এক ধরনের অনুভূতি হয় হৃদয়ে! নেট ঘেঁটে, ফ্রেন্ডদের সাথে কথা বলে তোমার সব তথ্য যোগাড় করতে শুরু করলাম। এমনি করে একসময় ভালোবেসে ফেললাম তোমায়। তোমার ভিডিও দেখে তোমায় খুব আপন লাগত। এক ধরনের টান অনুভব করতাম। সে টানটা কীসের, আমি ঠিক করে বলতে পারবো না। ইচ্ছে করে, তোমার মাথায় এক সিসি ক্যামেরা লাগিয়ে দিই, আর তোমাকে সবসময়ই ফলো করতে থাকি—তুমি কী করছ, কেমন আছ, খেয়েছ কি না, মন খারাপ কি না, শরীর কেমন আছে, তুমি কীভাবে ঘুমাও, খাও, হাঁট, হাস, ব্রেকফাস্টে কী পছন্দ কর, লাঞ্চে কী খাও, ডিনারে মেন্যু কী থাকে, কাজের লোক ঠিকমতো যত্ন নেয় কি না তোমার, আরও কত কী!…………এই! তুমি কি ঘুমাচ্ছ? ঘুমালে খুব ভাল কাজ করছ। আমি পরপর তিনরাত কান্না করে বালিশ ভিজিয়েছি, রাত ৪টা পর্যন্ত জেগে আছি, শুধু তোমার সাথে একটু কথা বলবো বলে। আমার মধ্যে একটা মানুষ বাস করে যে কিনা বিশ্বাস করে, তুমি আমায় ফোন করবে! অদ্ভুত না? সেদিন তোমায় ছবিতে খুব শুকনো দেখাচ্ছিল, ঠিকমতো খাও না বুঝি? শীত এসে গেল তো, গায়ে ভ্যাসলিন, লোশন, ক্রিম এসব লাগাও না? আমি কাছে থাকলে তো এসব নিয়ে তোমাকে ভাবতেও হত না! তোমার ড্রেসিং টেবিলের উপর হলুদ কাচের বোতলে লোশন আছে না? ওটা কি শোপিস নাকি? ইউজ কর না কেন? কী ভাবছ? আমি সব জানি, তাই না? আমি কিন্তু আসলেই তোমার প্রায় সবকিছুই জানি। প্রেমে পড়লে ছেলেরা জানা জিনিসও ভুলে যায়, আর মেয়েরা অজানা জিনিসও জেনে যায়। এটা একটা ম্যাজিক! এটার নাম দিলাম লাভ-ম্যাজিক! তোমার ড্রেসিং টেবিলের খবর আমি কীকরে জানলাম, বলোতো? বলতে পারলে তোমার ডান চোখে আলতো করে একটা কিস দেবো। (অবশ্য, বলতে না পারলেও দেবো।)

ঈশ্বর যেন আমাকে তোমায় ভুলবার শক্তি দেন। আমি মন থেকেই এটা চাই। আজ থেকে আমি আমার নিজের জন্য বাঁচবার চেষ্টা করবো। ভাল থেকো। বলে ফেলতে ইচ্ছে করছে, গুডবাই ফরএভার! অনেককিছুই শিখেছি তোমার কাছে। সত্যিই অনেক থ্যাংকস তোমাকে। অনেক উপহার পেয়েছি তোমার কাছ থেকে। জীবন ঘুরিয়ে দেবার গল্প তোমার কাছ থেকেই প্রথম শুনেছি, কাজেও লাগিয়েছি অনেকটুকুই! মন থেকেই বলছি, থ্যাংকয়্যু! আমার একটাই প্রার্থনা, তুমি ভাল থাকো। তোমাকে আমি আমার প্যানিক থেকে মুক্তি দিলাম। যাও। ভেবেছিলাম, তোমাকে নিয়ে নতুন জীবন শুরু করব। ঈশ্বর তা চান না। কী করবো, বলো? তুমি কেমন একটা মানুষ! তোমাকে ধরা যাবে না, অনেক মূল্যবান তুমি! সাত রাজার ধন তুমি, পৃথিবীর সবচেয়ে দামি পাথরটি তুমি, পুরোই অপ্রাপ্য মাণিক-জহরত-হীরা! নাহ্‌, এর চেয়েও মূল্যবান তুমি! বড়ই বিরল তুমি, সবার জন্য নও তুমি………আমার জন্য তো কখনওই না! রামকে তো শুধু সীতাই পাবে, জানি! কোথায় সেই সীতা? আমি কি পারব তাকে দেখতে? কী লিখছি এগুলো! আমাকে ক্ষমা করে দাও তুমি! তোমাকে ভালোবেসে আমি পাপ করেছি, ঈশ্বরের অনিচ্ছা সত্ত্বেও তোমায় ভালোবেসেছি, তাইতো কোনওদিনই তোমায় পাবো না! এভাবেই থাকো তুমি, আমি চাই, তুমি শুধু ভাল থাকো। পৃথিবীর সব ময়লা আর নোংরা যেন তোমার ছায়া থেকেও দূরে থাকে! কোনও অশুভ ছায়া যেন তোমায় স্পর্শ না করে, এমনি করেই ফুটন্ত ফুলের মত ফুটে থাকো, আর তোমার সুবাসে সবাইকে মাতিয়ে রাখো। আমি দূর থেকে ভালোবাসবো, কখনও কাছে পেতে চাইবো না। রাত ফুরোচ্ছে, আলো জাগছে।

কেন যে ওকে ভালোবাসতে গেলাম? কেনইবা সারাদিন ওর কথা ভাবি? কাউকে ভালোবাসলে সারাদিন তার কথা ভাবতে হবে নাকি? কেন এত হাহাকার? কীসের হাহাকার? কেমন যেন একটা ব্যথা হতে থাকে বুকের ভেতর………ঠিক আছে সবকিছুই, অথচ কেমন জানি একটা অসুস্থ বোধ করি সবসময়ই। সবই কি ওর জন্য? নাকি ওকে কাছে পাই না বলে এমন হয়? ওর সাথে কথা হয় না বলে? ওর লেখার অপেক্ষায় থাকি বলে? ওকে ভালোবাসি বলেই ও এখন কোথায় আছে, কী করছে, কেমন আছে, কীভাবে আছে, কতটা ভাল আছে, সুস্থ আছে তো, এসব ভাবনা সারাটাক্ষণই আমাকে মিশিয়ে রাখে এক অজানা আশংকায়, আর কষ্টের রাজ্যে আমি তাকে চিন্তা করা ছাড়া এক মুহূর্তও কাটাতে পারি না! ও কেন এভাবে আমাকে এত কষ্ট দিচ্ছে? আমি একটুও পারছি না ওকে ছাড়া অন্য কোনও চিন্তা করতে!………শুনছ? আমি যে মনেপ্রাণে সারাক্ষণই তোমায় ডাকছি! সারাক্ষণ তোমার কথা এত ভাবি, তবু তুমি কি একটুও বুঝতে পার না, আমি যে একদিন সত্যিই পাগল হয়ে যাবো? তুমি জানতেও পারবে না সেটা! তুমি একা আছো বলেই কি এমনভাবে ভালোবেসে ফেলেছি তোমাকে? নাকি ভাল লাগে বলেই ভালোবাসছি, বেসেই যাচ্ছি? আমি কেন তোমাকে ভালোবাসলাম? কেন এতটাই বেশি উন্মাদনায় ভুগছি আর প্রলাপ বকছি? লোকে অসুখে প্রলাপ বকে, তবে ভালোবাসা কি এক ধরনের অসুখ? আমি……আমি সত্যিই ঠিকমত নিঃশ্বাস নিতে পারি না, দম বন্ধ হয়ে আসে আমার। আমাকে মেরে ফেলো, আমাকে মেরে ফেলো, প্লিজ! এই নিষ্ঠুর পৃথিবীতে তোমাকে ভালোবেসে মরার মত বেঁচে থাকার চেয়ে সত্যিসত্যি মরে যাওয়া অনেক ভাল! মরে গেলেই তো সব চুকে গেল, তোমাকে আর ভালোবাসতে হবে না! আমি কী করব? কোথায় যাব? কোথায় গেলে তোমাকে ভুলতে পারব? ডায়রিতে এই কথাগুলি বাঁকা করে লিখে ফেললাম কেন? কিছুই বুঝতে পারছি না। আমার কী হয়েছে? আমি কি পেইজে সোজা করে লিখতে ভুলে যাচ্ছি?

যেসকল ভালোবাসার কোনও বহিঃপ্রকাশ নেই, সেসকল ভালোবাসাকে কী বলে? একপক্ষের ভালোবাসা, মানে one-sided love? আমি একটা ভাল নাম দিচ্ছি সে ভালোবাসার, কেমন? আমার কাছে মনে হয়, ওটা বেওয়ারিশ ভালোবাসা। এখন থেকে এই একপাশের একপেশে ভালোবাসার নাম হচ্ছে ‘বেওয়ারিশ ভালোবাসা’। সে ভালোবাসা ঠিক বেওয়ারিশ লাশের মতো—যে লাশের কোনও ঠিকানা থাকে না, কেউ খোঁজ করে না, পোস্টমর্টেম করার পর তা বিলিয়ে দেয়া হয় ছাত্রসমাজে লাশকাটা শেখানোর জন্য। তবে বেওয়ারিশ ভালোবাসা আরও অসহায়—বেওয়ারিশ লাশ তো কিছু না কিছু ক্ষেত্রে মেডিকেলে কাজে আসে, কিন্তু বেওয়ারিশ ভালোবাসা কোনও কাজেই আসে না। ওটার খোঁজ সবার করার কথা নয়, কিন্তু যার জন্য এ ভালোবাসার জন্ম, সেও খোঁজ করে না, এমনকি ভালোবাসাটা যে লাশের মতো ‘নেই’ হয়ে গেছে, কেউ তা বলে না দিলে সেটাও সে জানতে পারে না। আজ থেকে আমার ভালোবাসার নাম বেওয়ারিশ ভালোবাসা। তোমার জীবনে এক অজানা জীবন্ত লাশ আমি। ফুটন্ত গরম জল ফুটতে-ফুটতে একসময় পানি বাষ্প হয়ে উড়ে যায় ঠিকই, তবু হাওয়ায় এর কণাগুলো মিশিয়ে দেয়। ঠিক তেমনিই আমিও ভালোবাসতে-বাসতে আমার অস্তিত্ব ক্রমশই কমিয়ে দিচ্ছি। তোমার অবহেলা যতই বিদ্ধ করুক আমায়, তবুও আমি শেষ হয়েও শেষ হবো না, মিশে থাকবো তোমার ঘৃণায়……ওঃ! তুমি তো আবার কাউকে ঘৃণা কর না! তো, কই থাকবো আমি? একটা প্লেস তো দরকার, তাই না? আমায় প্রিয় ভালোবাসায় না রাখো, অন্তত ঘৃণায় হলেও রেখো! আমি অন্তিম লগ্নেও হারিয়ে যাব না, আমি বেঁচে থাকব মিথ্যায়, আমি বেঁচে থাকব মোহে—তোমার মোহে, যারা তোমায় ভালোবাসে, তাদের থেকেও শতশত হাজারহাজার মাইল দূরে থাকব, তাদের কাতারে নিজেকে ফেলেছি ঠিকই, তবু তাদের মত হতে পারলাম আর কই, বলো? জানো, কিছুকিছু লাইন যথেষ্ট জীবনটাকে নষ্ট করে দেয়ার জন্য—লাইনগুলো তোমার নয়, তোমার অসহ্য প্রেমিকাদের কেউ একজন তোমাকে ছাড়া অন্য কাউকে ভালোবাসতে পারবে না, বিয়ে করতে পারবে না, তোমার জন্য সে অসুস্থ হয় প্রায়ই, তোমাকে ভোলা নাকি সম্ভব নয়! কে এই আশাবরী? আশ্চর্য! একটা মেয়ের মিনিমাম লজ্জাটুকুও থাকবে না কেন?

ভালোবাসা কী আসলে? এটা কি একটা রোগ না? যার জন্য এত কিছু তার কোনও খবরই নাই, আর আমি হাতি-ঘোড়া ভেবেভেবে ব্যাকুল! চিন্তাগুলো খুবই বাজেভাবে বাড়ি মারছে মাথার ভেতরে! একজন মানুষকে অনেকেই ভালোবাসতে পারে, কিন্তু সবাই তাকে পাবে না, এটাই স্বাভাবিক! কিন্তু রোজই ঈশ্বরের চরণে তাকে পাওয়ার আশায় যারা ফুল দেয়, তাদের কী হবে? আচ্ছা বুঝলাম, ঈশ্বর সন্তুষ্ট হয়ে তাদের মধ্যে কারও না কারও মনের আশা পূরণ করলেন, এবং তাকে তোমার বউ বানিয়ে দিলেন। তাহলে বাকিরা কী অন্যায় করল? তারাও তো চোখের জল, নাকের জল এক করেছে তোমায় ভালোবেসে। নাহয় কমবেশি পুজো দিয়েছে, কিন্তু তারা কি কোনও ফলই পাবে না? তোমার মতন মানুষ এক পিস হওয়া ঠিক না! চোখের জলের কি দাম নেই তাদের? নাকি তারা পাপের শাস্তি ভোগ করছে? কীসের পাপ? তোমাকে ভালোবাসার পাপ? তাহলে কি কাউকে ভালোবেসে না পেলে পাপের শাস্তি ভোগ করা হয়? এই যে একজন প্রায়ই অসুস্থ হয় তোমাকে চেয়েচেয়ে, প্রার্থনা করেকরে, অথচ কিছুতেই তোমাকে পায় না, তাহলে এটা কি শাস্তি না? আসলে এটা ভালোবাসা! হাহাহা……… ভালোবাসা কি সত্যিই হাতের নাগালের বাইরে? আমি কিন্তু আমার কথা একদমই বলছি না, কারণ আমি জানিই আমি তোমাকে পাবো না, তাই ঈশ্বরকে একদিনও বিরক্ত করিনি, তোমাকে একটিবারের জন্যও উনার কাছে চাইনি, শুধু তোমার মঙ্গল কামনা করেছি। যারা চাইছে, কিন্তু পাচ্ছে না, তাদের জন্য আমার কেন কষ্ট হচ্ছে, বুঝি না। আমিও যে একই অনুভবের মানুষ, তাই হয়তোবা! আমি এও চাই না যে তাদের কেউ না কেউ তোমাকে পেয়ে যাক, আবার নিজেও পেতে চাই না, তবে আমি চাইটা কী আসলে? তুমি আজীবনই কুমার থেকে যাও, এমনটাই চাই কি তবে? এটা আবার কেমন কথা? বেওয়ারিশ ভালোবাসার প্রকৃত সুখটা আসলে কোথায়? এখানে ভালোবেসে যাওয়াটাই সুখ, আর কিছুই নেই? এখানে কোনও প্রাপ্তি কিংবা প্রাপ্তির আশা নেই?

কোথাকার কে কী একটা কমেন্ট করে চলে যায় তোমার ওয়ালে, আর তা-ই পড়ে আমার বুকের ভেতরের কালীয় নাগটা হেসেফুঁসে উঠছে! বারবারই মনে হচ্ছে, একটু বের হওয়ার সুযোগ পেলেই ও পুরো পৃথিবীটাকে গ্রাস করে ফেলবে এবং ভালোবাসার সব নামধাম মুছে দেবে চিরতরে! অদৃশ্য ঝংকার ঝনঝন করে বেজেই যাচ্ছে সারাদিন কোথায় যেন! সেই তাল, সুর আর রাগ এতই তীব্র আর প্রবল যে একটা মুহূর্তও নিজের মত করে ভাবতে দেবে না আমায়, সব ভাবনাতেই তুমি এসে যাবে—এটাই যেন নিয়ম হয়ে গেছে! আমার বিবেক আর শিক্ষা আমাকে বারবার তীব্র হুংকার ছেড়ে জানান দেয় আমি একটা বেহায়া……বেহায়া………বেহায়া! ওই যে মায়াটুকু আছে আমার মধ্যে প্রোথিত হয়ে, ওটা আমার অংশ নয়—ওটা একটা মিথ্যা আহুতি। ওই আহুতির কোনও ফলাফল নেই! আহুতি দিয়ে তো যজ্ঞেশ্বরকে আহ্বান করা হয়, সন্তুষ্ট করা হয়, কিন্তু আমি কী করব ওটা দিয়ে? আমার মনের ঈশ্বর তো বুঝেও বোঝে না, দেখেও দেখে না, শুনেও শোনে না; আর ওটা তো ত্রাণকর্তা ঈশ্বর কর্তৃক সুনির্ধারিত! তবুও কীসের আশায়, কার মায়ায় প্রতিনিয়তই নিজেকে আহুতি দিচ্ছি? পৃথিবী যেমনি সৌরজগতের একটা নির্দিষ্ট স্থানে অটল অটুট, তেমনি তুমিও তোমার ব্যক্তিত্বে আর সিদ্ধান্তে অটল অবিচল। শুকনো কাঠকে তাও করাত কিংবা কুড়াল দিয়ে কেটেকেটে খণ্ডখণ্ড করা যায়, এমনকি কাচও কাটা যায় নিখুঁতভাবেই, কিন্তু তোমাকে কোনওভাবেই বিভক্ত ভেদ করা যাবে না, সেই শক্তি ঈশ্বর আমাকে দেয়নি, তুমি বরাবরই অখণ্ড থেকে যাবে। তবুও এমন সাহস আমি পেলাম কোথা থেকে? ভালোবাসতে সাহস লাগে, ভাল লাগাতে অনুমতি লাগে হয়তো, তবে কেন এই ভালোবেসে যাওয়া একাএকা?

নিজেই নিজেকে দংশন করছি! বাহ্‌! সেই দংশনের যন্ত্রণা সাপের বিষের চেয়ে কম কিছু নয়। সাপের বিষও একসময় টেনে বের করে ফেলা যায়, কিন্তু আমার মনের বিষ কীকরে টেনে বের করব, বলো? এই বিষ যে সারাটাক্ষণ ছড়াতে-ছড়াতে আমাকে বর্ণহীন করে দিয়েছে! আমি সব রঙ হারিয়ে ফেলেছি যেন! জীবনের খেলায় এটা কি মিথ্যা প্রশ্রয় নয়? একইভাবে আর কতকাল কতক্ষণ কতসময় যাবে? কে নেবে এর দায়ভার? তুমি তো বাধ্য নও! তবে কি ঈশ্বর নেবে? নাহ্‌! উনিও জানিয়ে দিয়েছেন……জানিয়েছেন, আমি ভুলকে আঁকড়ে বেঁচে আছি—তাও উনি জানিয়েছেন স্বয়ং তোমার মাধ্যমেই, তবে এ দায় কেবল আমার একারই? বেশ! তবে বলো, কীকরে শেষ হয়ে যাবো? কতটা পথ অতিক্রম করলে এবারের মত একেবারে মত শেষ হয়ে যাবো? যে ভালোবাসার জন্মই শুধু আমি দিয়েছি, অথচ তাকে পেলেপুষে বড় করে স্বীকৃতি দিতে পারবো না, কিংবা বাস্তবে রূপ দিতে পারবো না কোনওদিনই, সেই ভালোবাসাকে গলা টিপে হত্যা করতে হবে তার বোধশক্তি তৈরি হওয়ার আগেই! লোকে যেমনি করে ভ্রূণহত্যা করে নিরুপায় হয়ে, আমি তেমনি করে আমার ভালোবাসাকে হত্যা করবো। ভালোবাসাকে বাঁচিয়ে রাখতে তাকে খুন করাই কর্তব্য! কীভাবে কখন কবে এটা করতে পারি, একটা উপায় তো অন্তত বাতলে দাও আমাকে! যা আমার ভেতরে বাড়ছে, যে অনুভূতির শেষ নেই, যা আমি বাইরে বের করতে পারি না, পারবোও না কোনওদিনই, তা গলা টিপে মারতে হলে প্রথমেই আমার অন্তরটাকে বাঁধতে হবে লোহার শক্ত শেকল দিয়ে! তবে কি তা-ই করব আমি? সবচেয়ে ভাল হয়, তোমার সামনে নিজেকে শেষ করে দিতে পারলে! জানি, সেই সুযোগটুকুও ঈশ্বর আমাকে দেবেন না—এতটাই অযোগ্য অক্ষম অধম আমি! (৫ এপ্রিল ২০১৬। রাতজাগা ভোর সাতটা চার।)