সম্বেদনের ওপিঠে

 জানি, বরাবরের মতোই, আমি কেউ নই।
 
অনুভূতির বিস্তর মাঠে,
কোথাও, একটা ছেঁড়া ঘাসেও--
আমার শিশিরটুকুও জমে না।
একদিন, চিরতরে নীরবে ‘নেই’ হয়ে গেলে,
ছিলেম--সে কথা মনে করাটাও দুস্কর।
মনমঞ্চে, কেন আমার খেলা নেই,
সে আমার বেশ জানা।
 
কষ্ট হয়।
 
তবুও, দুঃখ নেই যে...
অমন নর্তকী হয়ে,
কেবলই শরীরী ভরে,
নাচতে চাইনি কখনো;
নাচাতেও চাইনি--
সে ইচ্ছেই নেই।
 
জানি, এই শুনে, হাহাহা হাসির শব্দে
চারপাশ মাতাল।
কিন্তু, এ উন্মত্ত মাদকতার রেশ--
আর কত? কতকাল?
 
যে, সস্তা কিছু চায়,
তার কাছে দামী কিছুও
ঢের সস্তা বৈকি!
 
ভালোবাসার যত রং
এ পৃথিবীর সমস্তটা জুড়েও নেই,
তত রং, দেখো না;
দেখে ফেললেও, দেখিয়ো না।
কিছু ঐশ্বর্য, লুকানোই সুন্দর!
 
যে ভালোবাসার
যোগ্য যে নয়,
তাকে সে ভালোবাসা দেয়াটা--
পাপেরও পাপ...
এই পাপ, কত সহজেই শেষ করে দেয় সবকিছু!
সব, সব, এবং সব।
 
তবুও, এই পাপেই
পৃথিবী কী সুখেই ডুবে!
হিংসে হয়--ভীষণ হিংসে হয়;
কেননা, নিজের মনের খোঁজ--
সে তো কেবল নিজেরই জানা। (সত্যিই কি?)
অন্যের জন্যে, মনের ভেতরে জমেওঠা
ভালোবাসার নিখাদ নিখুঁত নিঃসংশয় পর্বতে
নিজেই মাথা-কুটে মরি। প্রতিক্ষণেই!
 
অসীম সে ভালোবাসা যে বোঝে না,
তাকে ক্ষমা করে দেয়া যায়।
কেন?
প্রবল ঘৃণাও--
সে বুঝতে পারে না যে, তাই!
 
ভালোবাসায় ঘৃণায় পুরনো কাটাকাটি। এইতো জীবন!
 
সেও ভালো!
কেননা--
সে বড় যন্ত্রণার,
যখন একই ছাঁচে
গা ঘেঁষে-ঘেঁষে
ওই দুটি বাঁচে!
 
যে ভালোবাসায়, ঘৃণ্য কিছুও,
স্রেফ চোখে না-পড়ার নিপুণ অভিনয়ে
উপেক্ষিত,
সে ভালোবাসাকে
তীব্র ঘৃণায় দেখি।
অমন মানুষ আর মানসিকতা, দুইই ঠেলি সুখে!
 
এমনকি, কোনো অহেতুক কারণেও যদি ভালোবাসার জন্ম হয়,
তবে, ঘৃণারই কারণ, কেন ঘৃণার জন্ম দিতে পারে না?
ভালোবাসায়, যদি জীবন দেয়া যায়,
ঘৃণায়, কেন যাবে না নেয়া?
কিংবা--উল্টো করে,
ঘৃণায় দেয়া, আর ভালোবাসায় নেয়া?
যায়ই তো, না?
নিয়ম তো মূলত তা-ইই, যা আমরা বানাই। নয় কি?
 
স্বার্থের নোংরা পৃথিবীটাকে
কেটে ছিঁড়ে ব্যবচ্ছেদে
রক্তাক্ত করে, আদিম রূপে
বড় দেখতে ইচ্ছে করে।
কী অমন আছে এতে বাঁচাতে,
কী মোহে, কীসের নেশায়,
মানুষ স্বার্থস্নানে
বুঁদে-বুঁদে কাটিয়ে দেয়
অলীক সব শৌকতে-সুনামে-শরীরে!
 
কই মুক্তির উদ্দেশ কেবল
ওই আকাশে
মুক্ত বিহঙ্গের
ডানার রোদ্দুরে ঝাপটায়?
ভাবো তো,
কখনোবা মুক্তি মেলে
দাপুটে লৌহের
নানান বিন্যাসে নিশ্চিন্ত,
অথচ দুর্বোধ্য খাঁচার মাঝটায়!
হ্যাঁ, মেলে মেলে! খোঁজোই না!
 
ভালোবাসি--নেইস্বার্থ অবারিত ভালোবাসায়
স্পষ্ট কণ্ঠে অন্যসুরে ভাসায়।
ভালোবাসি--সময়ের তীব্র প্রয়োজনে, ঘৃণায়ও
অবিরাম মাতায়; ওতে জড়ানো ল্যাপ্টানো মায়ায় আর মমতায়।
 
ভালোবাসা এসে-এসে জমতে থাকে
বিশ্বস্ত মনপাত্রে।
কী এক টানে দায় যায় বেড়ে!
ওর প্রতি বিলাসী ঔদাসীন্য, খুনের চেয়েও বড়--
যদি সে ভালোবাসা সত্য হয়!
 
ভালোবাসা--চিরকাল ভালো থাকুক, ভালো বাঁচুক।...এই এইটুকুই!