সময়ের প্রতি

 শোন রে সময়,
তোকে বড় ভালোবাসি।
বুঝতে পারিস?
একটু এবার থাম তো দেখি,
আমার কিছু কথা আছে, সময় হবে?
তোর কীসের এত তাড়া?
কেন অমন করে ছুটিস?
পেটটা তোর কত্তো বড়?
কত্তোটুকু ওতে ভরিস?
বল না রে তুই!
চুপটি বসে একটু হেসে
তোর সাধনা করি,
স্থির হয়ে রই, অবাক চোখে
ছুটতে তোকে দেখি!
 
সময় বলে, বোকা মেয়ে!
বাসলে আমায় ভালো,
লক্ষ্যটাকে সামনে রেখে,
সঠিক পথের রাস্তা ধরে,
ছুটিস জোরে যত পারিস!
অমন করে ঘাপটি মেরে,
সময়ে আর অসময়ে,
থমকে কেন থাকিস?
 
শোন না সময়,
তোকে দেখি, জীবনটা ভর,
কেবল ভীষণ ছুটতে থাকিস,
ক্লান্তি তোকে থামায় নাতো!
শিখিয়ে দে না কেমনে পারিস?
নে না আমায়! সঙ্গে যাব,
ছুটব দ্রুত তোরই সাথে,
কষ্ট আমায় পাবে না ছুঁতে--
দারুণ হবে!
কত কী যে তুই নিয়ে যাস,
সময় হলেই!
অসময়টা বাঁধিস দেখি একই ভাবে!
আর তো ফিরে তাকাস না রে,
রাখিস ফেলে জ্বালাতনে!
 
আচ্ছা বলি,
এই যে এত নিয়ে ছুটিস,
এসব নিয়ে কোথায় রাখিস?
ওই পৃথিবী কত্তো বড়,
একটুখানি বলতে পারিস?
কত দ্রুত ছুটলে পেছন,
শৈশবকে হায় পাব ছুঁতে?
পেছন ফিরে কী নিমিষে
হারানো সে সুখ যাবে ছুঁয়ে?
টাইমমেশিনে চড়ব যেদিন,
সেদিন দেখিস, কেমন করে
তোকে নাচাই,
ইচ্ছে মত সুখকে ভরাই!
সুখ যে কত হারিয়ে গেছে তোর ইশারায়!
তোর উপরেই ভর করে হায়,
আনন্দও পালিয়ে গেছে!
এত কেন হিংসুটে তুই?
কী হয় অত অমন ওতে?
 
একটু হেসে আধটু বসে সময় বলে,
সুখ কি কেবল নিয়েছি সাথে?
দুঃখ কিছু নিইনি?
কষ্ট কত ম্লান করেছি,
আমার গায়ে মেখে!
মন্দ যত যা করেছি,
তুই তো দেখি রাখিস মনে।
ভালোটুকু রাখিস কোথায়?
দ্বীপান্তরের নির্বাসনে?
 
সত্যি তো তা-ই!
কত ব্যথার ক্ষত সেরেছে
তোর প্রবাহে মিশে!
কান্না কত হারিয়ে গেছে
তোরই বাঁশির নিশে!
কোন ইশারায়
বয়েই চলিস,
হোক না প্রলয়--
সৃষ্টি নাহয়!
থোড়াই দেখি
পরোয়া করিস!
 
ফুরোলে সময়, সময় মাপে--
এমন বোকার,
জীবন ফুরোয় কষ্ট মেপে।
এমন হলে মুহূর্তও ভাবিস না তুই,
শাস্তি দিয়ে কষ্ট মাপিস!
জানিস না তো,
দিন যে তখন কেমন কাটে!
জীবন হাঁটে, মৃত্যু ছোটে!
 
সময় বলে,
বারে আহা!
চলে গেলে পেছন ডাকিস,
আগে দারুণ ঘুমিয়ে থাকিস,
ঘুমটা ঘুমাস অসময়েই,
সময় হলে জাগবি শেষে--ঘুম হবে না!
ভুল কী এতে?
 
সময় রে তুই--
চুলকে করিস সাদা,
চামড়া করিস ঢিলা,
হাড়কে করিস জরো,
দৃষ্টি করিস ক্ষীণ...
কথা কেড়ে সময় বলে,
এটাই শুধু দেখিস?
একটা ভ্রুণ কেমন করে
মানুষ যে হয়, ভাবিস?
 
শূন্যটাকে পূর্ণ করিস,
পূর্ণ করিস শূন্য!
তোর যে কত ছলচাতুরি,
হই যে দেখে ধন্য!
রোজ পৃথিবীর নিভাস আলো,
খুন যে করিস নীরবে...
কথা আমার আবার কেড়ে সময় বলে,
হিসেব রাখিস,
কত আলো জ্বলে ওঠে নিভতে গিয়েও,
কত আলোয় ভুবন সাজে,
আলোর ফুলকি নাচায় দুলকি--
আমার চালে!
 
থাম রে এবার,
হার মানছি!
অবহেলায় তোকে ভুলে
কয়েক জন্মের
সুদ টানছি!
তোকে নিয়ে বললে কথা
রাত পেরুবে, সকাল হবে--
শেষ হবে না।
তাই এখানে থামছি এসে,
একটু হেসে।
একদিন তো যাবই ভেসে
তোরই স্রোতে!
জানা পৃথিবীর পাঠ চুকিয়ে
অচিন দেশে।
তার আগেতেই বেঁচে নেবো,
তুই যতদিন আছিস পাশে।