সাঁকোর এপ্রান্তে ওপ্রান্তে


১. সে তোমায় ভালোবাসে, তুমি বাসো না। তাই তার ভালোবাসার গভীরতা মাপা তো দূরে থাক, তার অস্তিত্বটুকু পর্যন্ত তোমাকে যন্ত্রণা দেয়! এক্ষেত্রে, ভালোবাসা যত অগভীর হয়, যন্ত্রণা ততই গভীর হয়।


২. তুমি যাকে ভালোবাসো, সে তোমাকে ভালোবাসে না। তুমি কত চেষ্টাই না করলে, তবুও তার চোখে পড়লে না, সে চেয়েই দেখল না তোমাকে। মন খারাপ কোরো না, মোটামুটি সব ভালোবাসার গল্পটি এরকমই।


৩. তোমার নিজের মানুষটি তোমারই চোখের সামনে অন্য কাউকে ভালোবাসে। ওতে তুমি বড়োজোর দু-চার দিন চেঁচামেচি করো, তারপর চুপচাপ সবই মেনে নাও। কী-ইবা করতে পারবে আর? তখন তুমি নিজেকে সান্ত্বনা দাও, ‘ও আমার চোখের সামনে তো আছে অন্তত! ও যাকে ভালোবাসে, তার কাছে যাওয়ার থেকে তো অন্তত আটকাতে পেরেছি ওকে!’ একসময় দেখবে, তোমরা কেউ কাউকে ভালোবাসো না, তবুও একইসাথে থেকে যাচ্ছ, থেকে যাবেও হয়তো। এটাই তো জগতের নিয়ম, গার্হস্থ্য নীতি, জীবনের নিয়তি!...এটা আসলে অসহায়ত্ব, সংস্কারে বাঁচতে-হওয়ার শাস্তি!


৪. দুজন দুজনকে পাগলের মতন ভালোবেসেও সেটা আড়াল করে যাচ্ছে। সব কিছু যদি ছেলেবেলার মতন ওরকম চাইলেই বলে দেওয়া যেত! বড়ো হয়ে যাওয়ার একটা বিপদ হলো, মনের কথাটা যখন তখন যাকে ইচ্ছে বলে দেওয়া যায় না।


৫. কার কাঁধে মাথা রাখবার কথা ছিল, অথচ কার সাথে বিছানা শেয়ার করছ? যার সাথে বিয়েই হবার কথা ছিল না, তারই সাথে সংসারধর্ম পালন করে যাচ্ছ! হ্যাঁ, এর নামই জীবন। জীবন এমনই এক বিচিত্র জায়গা, যেখানে ভালো না বেসেও কী এক মায়ায় বা অভ্যস্ততায় কারও সাথে দিনের পর দিন থেকে যাওয়া যায়।


৬. যেই মেয়েটার প্রেমে পড়ে, একটা ফুটফুটে মেয়ের বাবা হতে ব্যাকুল হয়ে গিয়েছিলে, সেই মেয়ে অন্য কারুর সংসারে চলে গেছে। তার দুটো মেয়ে হয়েছে, যাদের বাবা অন্য কেউ। অথচ তুমি এখনও প্ল্যান করে বসে আছ, তোমার মেয়ে হলে নামটা রাখবে ওর নামের সাথে মিলিয়েই!


৭. দুজন মিলে যেই স্বপ্ন পূরণের কথা ভেবেছিলে, দুজনই, সেই স্বপ্নের কথা মনে এলে কোনও এক অলস দুপুরে, আজও একা একাই হেসে ওঠো, অথচ সেই স্বপ্নটাই আজ আর বেঁচে নেই।


৮. দুজনের দেখা হবার কথা…ভুলেই! সেই ভুলটা ইচ্ছে করেই করার জন্য দুজনে ইচ্ছে করেই একই রাস্তা দিয়ে চলাফেরা করে, কিন্তু হায়, দেখা যে আর হয় না!


৯. দুজনেই দুজনের থেকে পালাতে চাও, দেখা দিতে চাও না কেউ কাউকে, অথচ দেখাটা হয়েই যায়! মনের মধ্যে কত কথা জমে আছে, অথচ দেখা যখন হয়, তখন মনের কথা কিছুই যে আর মনে পড়ে না।


১০. কেউ কারুর সাথে নেই, থাকবেও না কখনও। তবুও কীসের যেন একটা টান, একটা তীব্র অনুভূতি। এই অদৃশ্য বন্ধন দুজনকেই মাতাল করে রাখে, গভীর আফসোসে ডুবিয়ে রাখে। এর কোনও ব্যাখ্যা নেই, যুক্তি নেই! কোনও অর্থও নেই বোধহয়।


১১. এই জন্মে দুজন পণ করেছ, পরের জন্মে আর কোনও স্যাক্রিফাইস করবে না। দুজন দুজনের সাথে ভালোবেসে থাকবেই থাকবে সেই জন্মে। ভালো না বেসে কতকালই আর বাঁচা যায়! ভালোবেসেও দুজন এই জন্মে একসাথে থাকতে পারলে না, সেই তোমরা এই বলেই নিজেদের সান্ত্বনা দিচ্ছ যে, পরের জন্মেই নাহয়…কিন্তু এক সাহিত্য বাদে পরের জন্মের অস্তিত্ব আদৌ কি আছে?