সিলেটি জিভ

: আপনি কে?

: আহা, কত বিশ্রী রকমের মৌলিক একটা প্রশ্ন! সেই প্রাক্‌-সক্রেটিসের সময় থেকে এ অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। এখনও শেষ হল না। সক্রেটিস ভায়া তো নৌ দাইসেলফ বলেই খালাস! কীভাবে জানব, তা আর বলে দিলেন না। অতো সোজা নাকি সে রাস্তা! সে রাস্তা জানার চেষ্টাই চলছে এখনও। সূফী সাধকরাও পুরোপুরি কোনও পথ বলে দিলেন না। কবে যে আত্মবীক্ষণের যাত্রা শেষ হবে, মনীষীরাই জানেন না, আর আমি তো তৃণবৎ ক্ষুদ্র মানুষ! আমি কীকরে জানব, আমি কে! জানতে পারলে তো মোক্ষলাভই হয়ে যেত! আহা!

আমার কথা ছাড়ুন! আপনি কে, তা নিয়ে আমার কোনও আগ্রহ নেই। বাই দ্য ওয়ে, আপনি কি খুব সুখী মানুষ?

: মনে হয় না।

: সুখ যে কার কীসে আসে, সে নিজেই বা কতটুকু জানে? আমি কিন্তু আপনাকে ভালো করে চিনি না। আপনার এতো বন্ধু, এতো লোক আপনাকে ফলো করে, এসব দেখে আপনার সম্পর্কে কৌতূহল জন্মাল। মেয়েরা তো কৌতূহল ছাড়া বাঁচতেই পারে না! বোঝেনই তো! তবে আমি আপনার টেক্সট আশা করিনি। আমাকে কোথায় পেয়েছেন, এটা জিজ্ঞেস করব না। কারণ, আমি যেহেতু ফেসবুকে নিজেকে লভ্য করে রেখেছি, সেহেতু আমাকে না পাওয়ার তেমন কিছু দেখি না। আমি কিন্তু আপনার ইন্টার্ভিউ নিচ্ছি না। আমাকে ভুল বুঝবেন না। আমি নিতান্তই নিরীহ গোছের প্রাণী। বিরক্ত করছি, জানি। তবে এটা যদি আপনি উপভোগ করে থাকেন, মানে, এতে যদি আপনার সম্মতি থাকে, তাহলে তো ঠিকই আছে। আর যদি এর অন্যথায় হয়, তবে আমি দুঃখিত।

ভালো কথা, আগে সম্মত হয়ে আমায় প্রশ্রয় দিয়ে পরে যদি কখনও আমি কিংবা আমার কথা আপনার কাছে আর উপভোগ্য মনে না হয়, তখন আবার বলে বেড়াবেন না যেন আপনি আমার সাথে গল্প করতে অসম্মত ছিলেন, আমিই জোর করে ইচ্ছেমত গল্পের ঝুড়ি ঝেড়েছি! আগে প্রেমের নামে বিছানায় গিয়ে পরে প্রেম ফুরোলে থানায় যায় যারা, আমি ওদের ঘৃণা করি। এতো কপটতা সহ্য হয় না!

: আপনার পরিচয়টা?

: আবারও? মশাই, আপনি আর অন্য হলেন না, আপনিই থেকে গেলেন! আচ্ছা, ঠিক আছে। আমি একজন বিদ্যার্থী। আমি এমন একটা বিষয় সম্পর্কে বিদ্যা অর্জন করছি, যার প্রয়োগ নির্ভর করে প্রকৃত সত্যের উপর নয়, যার উপর প্রয়োগ করা হচ্ছে, তার, এবং যে প্রয়োগ করছে বা করাচ্ছে, তার—ক্ষমতা কিংবা অক্ষমতার উপর। বিশেষত, এই দুর্ভাগা দেশে, যেখানে কোনও একটা ঘটনা কতটা গুরুতর কিংবা গুরুত্বহীন, তা ঠিক করে দেয়, ঘটনাটিকে কতটা সেন্সিটাইজ করা হচ্ছে বা হচ্ছে না, সেটি; ঘটনাটির নিজস্ব প্রকৃতি কিংবা সত্যতা, এখানে কোনও গুরুত্বই বহন করে না…………সে দেশে আমার অধ্যয়নের বিদ্যা কাগজেকলমে বেশ ক্ষমতাধর হলেও মাঠেঘাটে খুব ক্ষমতাধর কিছু নয়। খুনিও বিজয়ের মালা গলায় হাঁটতে পারে, যদি সবকিছুকে সে তার পক্ষে নিয়ে আসতে পারে। সেদিন এক মুভিতে খলনায়ককে একটা দামি কথা বলতে শুনলাম—এ দেশে শতকরা ৯৫ ভাগ কাজ হয় টাকা দিয়ে, বাকি ৫ ভাগ হয়………বেশি টাকা দিয়ে! মুভিটা সস্তা হলেও মুভির কথাটা দামি। এ দেশে হাজার কোটি টাকা লোপাট হয়ে গেলেও তা কোনও ঘটনাই নয়, যদি সেটাকে কর্তৃপক্ষ ঘটনা হিসেবে বিবেচনা না করেন কিংবা কেউই সেটাকে কোনও ঘটনা বলেই গ্রাহ্য না করে। আবার দেখুন স্যার, দুইটাকা খোয়া গেলেও সন্দেহের বশে কিংবা লোকমুখে শুনেশুনে কিংবা সেই টাকা খোয়া যাওয়ার ব্যাপারটিকে কোনও কৌশলে অনেক বড় ঘটনা বানিয়ে ফেলে কয়েকটা খুনও হয়ে যেতে পারে! বড়ই আজব দেশের গজব বাসিন্দা আমরা! যা-ই হোক, আপনি জ্ঞানী, নিশ্চয়ই এতক্ষণে বুঝে নিয়েছেন, আমি আইনে পড়ছি। পৃথিবীর অন্ধতম বিদ্যা হচ্ছে আইনবিদ্যা। আইন—এতটাই অন্ধ সে, নিজের অন্ধত্ব সম্পর্কেই উদাসীন!

আমি নেহায়েতই সাধারণ মানুষ। কারও সাতেও নেই, পাঁচেও নেই। আমি সন্ত হলেও আপনি আমায় চিনতেন, আবার শয়তান হলেও আপনি আমায় চিনতেন। মেজার ফর মেজার-এর একটা লাইন মনে এলো—কারও উত্থান হয় পাপে; আর কারওবা, পুণ্যেই পতন হয়। আমার এর কোনওটাই হয়নি, এটা নিশ্চিত। হলে, আপনি আমার পরিচয় সম্পর্কে অবগত থাকতেন কোনও না কোনওভাবে।

আপনার পাশে, সামনে, পেছনে কত লোক! আপনি কত সুখী! আমি আপনাকে ঈর্ষা করি, কারণ আমি ‘আপনি’ নই। দেখবেন, আবার এসব পড়ে মাথা খারাপ করে আমাকে পুলিশে দিয়ে দেবেন না যেন! লোকে পদে বড় হলে কেবল পুলিশের ভয় দেখায়। আপনি বড় মাপের মানুষ—দেহের মাপেও, মনের মাপেও। আমার এমন ধৃষ্টতাপূর্ণ আচরণ ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন, এটা আমার বিশ্বাস।

আচ্ছা, একটা কথা জানতে চাই, কিছু মনে নেবেন না। এই যে এতো মানুষ আপনাকে ফলো করে, আপনার ভয় করে না? আপনি হাঁটছেন, আপনার পেছনপেছন একটা কাফেলা হাঁটছে যেন! ভাবা যায়! আমি যখন বাসায় ফিরি, তখন মাঝেমাঝে আমাদের পাশের গলির একটা ছেলে আমার মত কয়লার ডিপোকেও দূর থেকে দয়া করে ফলো করে। আমি তো ওতেই ভয়ে অস্থির হয়ে পড়ি! আর আপনি এতো স্বচ্ছন্দে আছেন কীকরে? আমার কাজিনরা, ফ্রেন্ডরা সবাই আপনাকে ফলো করে। ওরা এটা কেন করে? ওদেরকেই জিজ্ঞেস করেছিলাম। ওরা বলতে পারেনি। মানে, ওরা নিজেরাই জানে না, কেন ওরা আপনাকে ফলো করছে! এতেই বোঝা যায়, ওরা সম্মানিত বাংলাদেশি ফেসবুক ইউজার! এতো কিছু জেনে আর বুঝে ফেসবুক চালাতে গেলে যে ফেসবুকিংই বন্ধ করে দিতে হয়! এ দেশে ফেসবুকিং করার একমাত্র থাম্ব রুল: কান কোথায় আছে, সেটা বড় কথা নয়, চিলে কান নিয়ে গেছে, সেটাই বড় কথা! অতএব, ছোঁড়ো ঢিল, মারো চিল!

আচ্ছা, আপনি কি জানেন এটার উত্তর? ভাবছেন, আপনার সম্মানে আঘাত করে কথা বলছি? আপনি কি আমায় নিয়ে বাজে কিছু ভাবছেন? কিংবা অন্য কোনও ভাবনা? শেয়ার করতে পারেন! আমি কিছু মনে করব না। আর মনে করলেই বা আপনার কী? কে কী মনে করল, এটা মাথায় নিয়ে চলার চাইতে বাড়িতে মশারি খাটিয়ে তার ভেতরে বসেবসে জিবাংলার সিরিয়াল দেখা ভালো।

আপনাকে এই যে এতো বড়বড় গরু রচনা লিখে যাচ্ছি, আর আপনি কোনও উত্তরই দিচ্ছেন না, এটা কি ঠিক, বলেন?

নিশ্চয়ই এতো বেশি বাচালতায় আপনি ভুলেই গেছেন, আমি আসলে কী জানতে চাই। ঠিক আছে, আমি অধৈর্য না হয়ে আবারও জিজ্ঞেস করছি: আপনাকে এতো লোক ফলো করে কেন? আপনি কি খুব বড় কিছু করেছেন আপনার জীবনে? কেউ বড় কিছু করলেই তাকে ফলো করার কী আছে? আরেকটা প্রশ্ন আছে। সেটা পরে জিজ্ঞেস করব, মানে, ওই তিনটা প্রশ্নের উত্তর দেয়ার ভঙ্গি দেখে ঠিক করব, চতুর্থ প্রশ্নটা জিজ্ঞেস করা আদৌ সমীচীন হবে কি না! দেখুন, আমি কিন্তু আপনাকে বিরক্ত করছি না। স্রেফ কৌতূহলবশতই এমন জ্বালাচ্ছি।

আমি সিলেটে থাকি। আপনি হয়ত কখনও আসেননি সিলেটে। চট্টগ্রামের পর প্রকৃতির এতো ঐশ্বর্য আপনি আর কোথাও পাবেন না। আপনি তো বোবার মত আমার মেসেজ কেবল সিন করে যাচ্ছেন, তাই রাগ করে সিলেট সম্পর্কে বেশি কিছু লিখে আপনাকে লোভে ফেলে দিচ্ছি না। আপনি তো সিলেটি নন, তাই আপনি আমার মত আন্তরিক কখনওই হতে পারবেন না। পৃথিবীতে দুই ধরনের ভালোমানুষ আছে। এক। যে সিলেটিরা সিলেটে থাকে। দুই। যে সিলেটিরা সিলেটের বাইরে থাকে। আমাদের আপনারা চেনেন ইতা-মিতা-কিতা-বিতা বলা মানুষ হিসেবে। অথচ আমাদের আসল সৌন্দর্যটাই এখনও আপনাদের চোখে পড়ল না। সিলেটকে প্রকৃতি কত যে রূপ ঢেলে দিয়েছে, সে খোঁজ আপনি কিছুটা হলেও জানেন বলেই বিশ্বাস করে নিচ্ছি। যা জানেন না, তা হচ্ছে সিলেটের অধিবাসীদের মনের খোঁজ। আমাদের হৃদয় যে কতটা প্রশস্ত, তা আপনি ভাবনাতেও আনতে পারবেন না। যাকে আমরা ভালোবাসি, প্রাণ দিয়েই ভালোবাসি। কাউকে কিছু দিলে, মন উজাড় করেই দিই। মনের সার্কিটে কোনও প্যাঁচ রাখি না। সিলেটিদের চাইতে বেশি আত্মসম্মানবোধ নিয়ে চলে, এমন কেউ আছে বলে অন্তত আমার জানা নেই। আমরা হাসিখুশি সহজ মানুষ। এই ছোট্ট একটা জীবন অপরূপা সিলেট এবং তার মানুষ নিয়েই দিব্যি কাটিয়ে দেয়া যায়!

আচ্ছা, আপনি কি কবিতা লিখেন? আপনার কি বই আছে বাজারে? আপনি কি বই পড়েন? নাকি, কেবল লিখে যান? কিছু মনে করবেন না, যারা বই লিখে, তারা কিন্তু অনেকেই না পড়েই লিখে। লেখা পড়লে সব বোঝা যায়। লেখকের মূর্খতা সহ্য করা খুবই বিরক্তিকর। বইপড়া তো প্রার্থনার মত। তো পুরোহিতই যদি ভুলভালো মন্ত্রোচ্চারণ করেন, তবে প্রার্থনা হয় কীকরে, বলুন? এখন তো দেখি, একুশের বইমেলাকে সামনে রেখে লোকে দুম্ করে লেখক হয়ে যায়। চাপে পড়ে বই লেখে, যাতে বইমেলায় বই বের করা যায়। আমি দেখি আর অবাক হয়ে ভাবি, এমন ফরমায়েশেও সাহিত্য হয়! একেবারেই যে হয়নি কখনও, তা বলছি না! কিন্তু এ যুগে তো আর কোনও দস্তয়েভস্কি লিখছেন না, তাই ‘মেলা এলো তো লিখে ফেলো’র দলটাকে আমি কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারি না। স্টলে গিয়ে অটোগ্রাফ দেয়ার জন্য কত লিখিয়ে যে হাঁ করে বসে থাকেন! রাস্তা থেকে কাউকে ধরে এনে তার হাতে অনেকটা জোর করেই অটোগ্রাফসমেত একখানা বই গছিয়ে দিয়ে সেলফি তুলে ফেসবুকে ছবি আপলোড করে এমন সব ক্যাপশন লিখে দেয়, পড়লে মনে হয়, আহা, প্রকাশক তো বই সাপ্লাই দিয়েই কূল পাচ্ছেন না! লেখকের জয় হোক! মিডিয়ার কথা তো বলাই বাহুল্য! দুনিয়ার যত অলেখক, কুলেখকদের কথাবার্তা নিয়ে অনুষ্ঠান করে! মিডিয়ার এখন একমাত্র কাজ ভুয়া ও অতিরঞ্জিত খবর প্রচার করা। যা দরকার নাই, তা নিয়ে বিশাল কাহিনি ফেঁদে বসে থাকে, আর যা সত্যিই দরকার, তার দিকে কারও কোনও খেয়ালই নেই। এ কালের মূলমন্ত্র—ধান্দা স্বর্গ ধান্দা ধর্ম ধান্দাহি পরমন্তপঃ। ধান্দাহি প্রীতিমাপন্নে প্রিয়ন্তে সর্বদেবতা।

আচ্ছা, আপনার কোনও কবিতা কি ক্লাস ওয়ান থেকে টেনের যেকোনও বাংলা টেক্সটবইতে এসেছে?

: ফাজলামো করেন কেন? আপনি কোন ভার্সিটিতে?

: এইতো স্যার, এতক্ষণে লাইনে এসেছেন! আপনাকে কথা বলাতে পেরেছি! ইয়েসসস্! কাস্ট অ্যাওয়ে’র কথা মনে আছে না? একা বকতে আর কতই বা ভালো লাগে, বলুন? আমার আগে ধারণা ছিল, ফেসবুকে স্টার টাইপের পাবলিকদের অনেক ফ্যান-ফলোয়িং থাকে! আপনি কি তাহলে তারকা টাইপের কিছু? মানে, সপ্তর্ষির অধিভুক্ত? আমার ভার্সিটির নাম দিয়ে কী করবেন? পুলিশবাহিনি সমভিব্যাহারে হাজির হবেন আমাকে পাকড়াও করতে? দেখুন, আপনার সাথে কিন্তু আমার সরাসরি কোনও পরিচয় নেই, আমাদের কখনও দেখাও হয়নি। আর ভালো কথা, আপনার ওয়াল ঘেঁটে জানতে পারলাম, আপনি সিলেটে এসেছিলেন, এবং সিলেট নিয়েও অনেক লেখা আছে আপনার। এসব দেখে খুবই বিব্রতবোধ করছি। না জেনে, না বুঝে আপনাকে কত জ্ঞান বিতরণ করে ফেললাম সিলেট নিয়ে! সরি, কেমন? বেশি রাগ করবেন না, রাগ করতে খুব ইচ্ছে করলে একটু করে করতে পারেন। বেশি রাগ যারা করে, ওদের মাথায় তাড়াতাড়ি টাক পড়ে। আপনি ভালোমানুষ, আশা করি আরেকজন ভালোমানুষের অনুরোধ রাখবেন। ভালোমানুষে ভালোমানুষে মাসতুতো ভাইবোন, তাই না? আমি যা কিছু বলেছি, জ্ঞান দিয়েছি, সবই না জেনে! সক্রেটিসের দোহাই লাগে, আপ্নের সকল ডার্লিংদের পিলিজ লাগে, আমারে ক্ষমাঘেন্না কইরা দেন!

আপনি সিন করেন, অথচ কিছুই লেখেন না কেন? হে কিউট কবি! আপনি কেন নীরব? আপনি কি আপনার ভাসুরের সম্মুখে দণ্ডায়মান? দেখুন, ব্যবহার এমন একটা জিনিস, যা দেখতে অসুন্দর মানুষকেও সুন্দর করে দিতে পারে। ভগবান না চাইলে তো আর কেউ কাউকে কিছু দিতে পারে না, তবে যে কেউই যা অন্যকে দিতে পারে, তা হল, ভালো ব্যবহারের মাধ্যমে অন্যকে আনন্দ দিতে পারে। আপনি এতো বড় মাপের মানুষ, এতো সুন্দর পোশাক আর মন নিয়ে চলেন, আর আমাকে একটা ছোট্ট করে রিপ্লাই দিতে পারেন না? আরে বাবা, আমি তো আর আপনার কিডনি চেয়ে বসিনি! এতো শিখলেন, অথচ এখনও অন্যের অনুভূতির কদর করতেই শিখলেন না? কবিতা লেখেন, আর অনুভূতি বোঝেন না? এমন কবি আপনি? আপনি এমন চিন্তাশীল মানুষ, আপনার মনের এই কদর্য রূপের খোঁজটা আগে জানলে আপনাকে এমন করে নকই করতাম না! প্রত্যেক মানুষের কাছেই তার নিজের সম্মানটা সবচাইতে বড়। আমার কাছেও তা-ই! আগে বুঝলে সাধ করে নিজেকে এমন অপমানিত হতে দিতাম না!

আপনার স্ট্যাটাস দেখলাম। বাব্বাহ্ সাহসী আসল পুরুষ! যার কথা তাকে বলার সাহস নেই, স্ট্যাটাস মেরে দুনিয়াসুদ্ধ পাবলিককে জানায়! আপনি যদি আমায় নিজ থেকে নক না করতেন, তবে আপনার আইডি’র খোঁজই বা আমি পেতাম কোথায়? আমাকে এতো কথা বলানোর সাধ্য আপনার নেই, আপনি তা পারতেনই না আমি না চাইলে! যদি আপনার মনে হত, আমি আপনাকে বিরক্ত করছি, তবে কেন আমাকে শুরুতেই ব্লক করে দিলেন না? পাবলিক পোস্টে এমন খারাপ কথা না লিখে আমাকে ইনবক্সে সরাসরি লিখে দিলেই তো হত! আপনাকে দেখে আমার মনে হয়নি যে আমাকে সরাসরি কিছু বলার মত সাহস আপনার নেই। আপনি উচ্চশিক্ষিত মানুষ, কিন্তু নিম্নমনের। শিক্ষার সাথে মনের সংযোগ দেখি না কেন? এ আপনার কেমন শিক্ষার নমুনা? আপনি আমায় ব্লক করে দিলে আমার কিছুই বলার থাকত না, কিন্তু আমাকে বলতে সুযোগ দিয়ে, কখনওবা বলার জন্য উস্কে দিয়ে তারপর আপনার প্রকৃত চেহারাটা সামনে নিয়ে এলেন!

আইনে বলে, Audi Alteram Partem, মানে, no one should be condemned unheard, অথচ, আপনি কী করলেন? আমাকে শাস্তি দিচ্ছেন, দিন না! কিন্তু আমি কী করেছি, আপনি যা ভেবে বসে আছেন তা আদৌ সত্য কি না—এসব যাচাই না করেই কিংবা আমাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের কোনও সুযোগ না দিয়েই একতরফা সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছেন! এটা কি ঠিক হল? আপনি আমাকে ইনবক্সে ব্লক করে দিলেই তো পারেন! কেউ যদি কারও সাথে কথা বলে আর এর বিনিময়ে উনার কাছ থেকে একটু ভালো ব্যবহার, নিদেনপক্ষে একটা রেসপন্স প্রত্যাশা করে, সেটা কি খুব অন্যায় হয়ে যায়? আমি তো আর আপনাকে প্রেম নিবেদন করিনি, আপনার হৃদয় পাওয়ার জন্য কেঁদেকেটে বুক ভাসাইনি, আমাকে দেড় প্লেট ফুচকা খাওয়ানোর জন্য বায়না ধরিনি, আমার জন্য আধালাইনও প্রেমময় কাব্যরচনা করতে বলিনি, আমি অন্য দশজন সাধারণ মানুষের মতই আপনার ইনবক্সে কেবল কিছু কথাই তো লিখে পাঠিয়েছি! এর বেশি কিছু তো না! তার জন্য আপনি আমাকে গালাগালি করতে পারেন না, তাই না? তাও আবার পাবলিক পোস্টে! একমাত্র কাপুরুষরাই মেয়েদের গালি দেয়, এটা কি জানেন আপনি?

ইনবক্সে কোনও অসুন্দরীর আগমন ভাতের প্লেটে হঠাৎ উড়ে এসে পড়া বিশ্রী এক তেলাপোকার মতন!—এটা দিয়ে আপনি কী মিন করেছেন? আমি তেলাপোকা? হতে পারি তেলাপোকা, তাও তো আমি মানুষ! তেলাপোকা বলে কি আমি মানুষ না? চৌধুরী সাহেব, আপনি আমাকে এভাবে বলতে পারেন না! এতো অহংকার আপনার? ঠাকুর সইবে না! মনে রাখবেন, এই দিন দিন না, আরও দিন আছে। এই দিনকে নেবে তেলাপোকারা সেই দিনের কাছে! হুহ্ হুহ্!

: অতি অতি অতি আজব! তোমাকে কিছু বলা হয়নি! কান্নাকাটি অফ্!

: হুহ্! যাকে বলা হয়, একমাত্র সে-ই বোঝে, এমন বাজে কথা শোনার জ্বালা যে কী! মাফ চাই, সাথে দোয়াও চাই। এই জীবনে আর কক্ষনো কোনও ছেলেবেটির সাথে গল্প করব না। চরম শিক্ষা পেয়ে গেছি! আপনাকে ধন্যবাদ! আপনি ওই কথাটা আমাকে না বললে আর কাকেই বা বলবেন! আমি সব বুঝি! হ্যাঙলাপনা করেছি বলে খুব যে বোকা, তা কিন্তু না! আমি কিন্তু সত্যিসত্যি অনেক কান্নাকাটি করেছি আপনার পোস্টটা পড়ার পর। নিজেকে তেলাপোকা-তেলাপোকা লাগছে! অথচ, তেলাপোকা দেখলেই আমি………ছিঃ! কী ঘিন্যা! আর শুনুন, আরেকটা কথা। আমি যদি তেলাপোকা হই, তবে আমি যে সময়ে আপনাকে নক করেছি, ঠিক একই সময়ে আপনাকে আরও যারা নক করেছে, ওরাও নিশ্চয়ই তেলাপোকা! ওদের মধ্যে যাদের মন আমার মনের মত দুর্বল, তারাও হয়ত কষ্ট পেয়ে কান্নাকাটি করেছে। আমি এতো কথা বলছি, প্রতিবাদ করছি, এর একটাই কারণ—আমি তেলাপোকা নই! ওরা কেউ করছে না, কারণ ওরা আমার চাইতে ভদ্র আর সংযত। আপনার কথা উইথড্র করুন, কবি সাহেব! সবার ক্ষেত্রে হোক না হোক, অন্তত আমার ক্ষেত্রে আমার ওই কথাটা খাটে না।

ওগো তুমি নিরুপম,

হে ঐশ্বর্যবান,

তোমারে যা দিয়েছিনু সে তোমারি দান–

গ্রহণ করেছ যত ঋণী তত করেছ আমায়।

হে বন্ধু, বিদায়।