স্কুলে যে-বাংলা শিখিনি/তিন

 
আজকে নাহয় থেকেই যাও। (আজকে না হয় থেকেই যাও।) তাকে নাহয় ভাই হিসেবেই টাকাটা দিলে, কিন্তু আমাকেও কেন দিলে? (তাকে না হয় ভাই হিসেবেই টাকাটা দিলে, কিন্তু আমাকেও কেন দিলে?)
‘না হয়’-এর ব্যবহার: ‘গাঁথা যদি না হয় মালা/ক্ষতি তাহে নাই গো বালা,/ভূষণ যদি না হয় সারা/ভূষণে নাই কাজ।’ এতে যদি কাজ না হয়, তবে আর কিছুই করার নেই।
ওখানে যেতে নাহলে আমি আজকে থেকে যেতাম। (ওখানে যেতে না হলে আমি আজকে থেকে যেতাম।) টাকাটা দাও, না হলে ভিসা পাবে না। (টাকাটা দাও, নাহলে ভিসা পাবে না।) [‘নইলে’ অর্থে ‘না হলে’, অন্য ক্ষেত্রে ‘নাহলে’ ( = ‘ছাড়া’ বা ‘অন্যথায়’ অর্থে)...নইলে, নচেৎ, নতুবা, নয়তো, না হলে শব্দগুলির আগে কমা বসে।]
কমিটির প্রস্তাব কী কী? (কমিটির প্রস্তাবনা কী কী?)
কীসের প্রেক্ষিতে তুমি এ কথা বলছ? (কীসের পরিপ্রেক্ষিতে তুমি এ কথা বলছ?) ব্যাপারটির পরিপ্রেক্ষিতটা জানো ভালো করে? (ব্যাপারটির প্রেক্ষিতটা জানো ভালো করে?) [প্রেক্ষিত: reason, পরিপ্রেক্ষিত: background]
কাজটার ফলে সবার অনেক উপকার হলো। (কাজটার ফলশ্রুতিতে সবার অনেক উপকার হলো।) [consequence অর্থে ‘ফলে’, ‘ফলশ্রুতিতে’ নয়।]
বিষধর সাপ হতে সাবধান! (বিষাক্ত সাপ হতে সাবধান!) [বিষাক্ত=বিষমিশ্রিত]
মেয়েটা দেখতে ভারি মিষ্টি! [‘খুব’ অর্থে] (মেয়েটা দেখতে ভারী মিষ্টি!) এ বড় ভারী কাজ, তুমি পারবে না। [‘গুরুভার’ অর্থে] (এ বড় ভারি কাজ, তুমি পারবে না।)
যেই কথা সেই কাজ। (যে-ই কথা সে-ই কাজ।) যে-ই বলুক না কেন, সে-ই যাবে। (যেই বলুক না কেন, সেই যাবে।)
সে আসেনি কেন জানি না। (সে আসেনি কেন, জানি না।) সে আসেনি কেন, তা জানি না। (সে আসেনি কেন তা জানি না।)


পরবর্তীকালে/পরবর্তী সময়ে/পরে সে নিজের ভুলটা বুঝতে পেরেছিল। (পরবর্তীতে সে নিজের ভুলটা বুঝতে পেরেছিল।) আগামী দিনে/ভবিষ্যতে এটা মাথায় রেখো। (আগামীতে এটা মাথায় রেখো।) পূর্ববর্তীকালে/পূর্ববর্তী সময়ে/আগে এমনটাই হতো। (পূর্ববর্তীতে এমনটাই হত।) [পরবর্তী, আগামী, পূর্ববর্তী বিশেষণপদ, ফলে এগুলির সাথে বিভক্তি যুক্ত হবে না।]
যুদ্ধ চলাকালে/চলার সময়ে তিনি ভারতে আশ্রয় নেন। (যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে তিনি ভারতে আশ্রয় নেন।) [অনুরূপ: ‘থাকাকালীন সময়ে’ অসংগত। কাল ও সময় একই অর্থ-প্রকাশক, তাই পরপর বসানো যাবে না।]


মাটির উর্বরতা শক্তি/উর্বরতা-শক্তি পরীক্ষা করা হলো। (মাটির উর্বরা শক্তি পরীক্ষা করা হল।)
তুমি আমাকে ওপারে নেবে? (তুমি আমাকে ওপারে নিবে?) [‘নিবে’ নয়, ‘নেবে’। ‘দিবে’ নয়, ‘দেবে’।]
আর-একটা মাছ দিই? (আর একটা/ আরেকটা মাছ দেই?) [‘নেই’ নয়, ‘নিই’। ‘দেই’ নয়, ‘দিই’। ‘আরেক’ না লিখে লিখব ‘আর-এক’। অনুরূপভাবে এক-এক, এক-একটা, এক-একদিন, আর-একদিন ইত্যাদি]
বাধ্য/অনুগত ছেলের মতো একটা উত্তর দাও তো: কে প্রথম অভিধান লিখেন? (বাধ্যগত ছেলের মতো একটা উত্তর দাও তো: কে সর্বপ্রথম অভিধান লিখেন?) [বাধ্যগত, সর্বপ্রথম অশুদ্ধ প্রয়োগ।]
আমি এখানে শিগগির আসব না। (আমি এখানে সহসা আসব না।)
তিনি কখন দেশ ত্যাগ করেছেন? (তিনি কখন দেশত্যাগ করেছেন?) তাঁর দেশত্যাগের উপর নিষেধাজ্ঞা আছে। (তাঁর দেশ ত্যাগের উপর নিষেধাজ্ঞা আছে।)


তাঁর আসার কথা ছিল দুদিন: গতকাল ও আগামীকাল। (তাঁর আসার কথা ছিল দুদিন: গত কাল ও আগামী কাল।) কিছুকাল তিনি দার্জিলিংয়ে ছিলেন। (কিছু কাল তিনি দার্জিলিঙয়ে ছিলেন।)
প্রাসঙ্গিক আলোচনা: -কাল ও -ক্ষণ আলাদা না বসে একসাথে বসবে। যেমন অনেককাল, একাল, এতকাল, কতকাল, ততকাল, যতকাল, কিছুকাল, গতকাল, বহুকাল, সেকাল; এক্ষণ, এতক্ষণ, কতক্ষণ, ততক্ষণ। তবে ‘দিন’ আলাদা বসবে। যেমন এত দিন, কত দিন, গত দিন, অনেক দিন, কয়েক দিন ইত্যাদি। তবে ‘পরের’/‘পরবর্তী’ অর্থে ‘পরদিন’ (‘পর দিন’ নয়) ‘অত’ ‘এত’, ‘তত’, ‘কত’, ‘কিছু’, ‘অনেক’ শব্দগুলির পর অন্যান্য শব্দ বসলে আলাদা বসবে। যেমন: এত সকালে, কত লোক, তত কান্না, যত হাসি, অনেক বই, অনেক সময়, কিছু সময় ইত্যাদি। বিদেশি শব্দের শেষে অনুস্বার থাকলে সে শব্দের শেষে ‘-এ’ বা ‘এর’ বিভক্তি যুক্ত হলে শব্দের শেষে ‘য়ে’ বা ‘য়ের’ বসবে, ‘ঙে’ বা ‘ঙের’ নয়।]


নানান রঙের মানুষ আছে এ দুনিয়ায়। (নানান রংয়ের মানুষ আছে এ দুনিয়ায়।) [অনুরূপ: ঢঙের (ঢংয়ের নয়), সঙের (সংয়ের নয়), জঙের (জংয়ের নয়), টঙের (টংয়ের নয়)]
নানা রকম কথা শুনেছি ওঁর সম্পর্কে। (নানারকম কথা শুনেছি ওঁর সম্পর্কে।) [‘নানা’ ও ‘নানান’-এর পরের শব্দটি আলাদা বসে। নানান দেশ, নানা পথ ইত্যাদি। ব্যতিক্রম: নানারূপ, নানাভাবে, নানাবিধ ইত্যাদি।]


প্রতিমুহূর্তে তোমাকে মিস করি। (প্রতি মুহূর্তে তোমাকে মিস করি।) [অনুরূপ: প্রতিদিন, প্রতিবছর, প্রতিনিয়ত, প্রতিঘণ্টায় ইত্যাদি। ‘প্রতি-’র পর গ্যাপ হবে না।]
সে এখানে প্রায় সময় আসে। (সে এখানে প্রায়সময় আসে।) [‘প্রায়’ শব্দের আগে বসলে আলাদা বসবে, পরে বসলে একসাথে বসবে। যেমন মৃতপ্রায়, ভগ্নপ্রায়, ধ্বংসপ্রাপ্তপ্রায় (‘ধ্বংসপ্রায়’ নয়), অসম্ভবপ্রায় ইত্যাদি। ‘বহুল’, ‘বিশেষ’-এর ক্ষেত্রেও একই নিয়ম।]
বহুকাল ধরে বহুদূর হাঁটার পরও মনে হয়, যেন হাঁটিনি কিছুই! (বহু কাল ধরে বহু দূর হাঁটার পরও মনে হয়, যেন হাঁটিনি কিছুই!) [লক্ষণীয়: বহুগুণ, বহুমূল্য, বহুসংখ্যক; বহু লোক, বহু কাজ, বহু আশা, বহু কষ্ট ইত্যাদি।]
বিনা মূল্যে বিতরণের জন্য এই বইগুলি। (বিনামূল্যে বিতরণের জন্য এই বইগুলি।) [‘বিনা’ শব্দের পরের শব্দ আলাদা বসবে। যেমন বিনা যুদ্ধে, বিনা কষ্টে, বিনা পারিশ্রমিকে, বিনা বাধায় ইত্যাদি।]


সে এক মহা ধুরন্ধর লোক। (সে এক মহাধুরন্ধর লোক।) [‘অত্যধিক’ বা ‘প্রচণ্ড’ অর্থে ‘মহা’-র পরের শব্দ আলাদা বসবে। যেমন মহা আলসে, মহা দুষ্টু, মহা উদার ইত্যাদি। অন্য সব ক্ষেত্রে (বিরাট, বিশাল, বৃহৎ, ব্যাপক, মহান, মহৎ, পদবি ইত্যাদি) একসাথে বসবে। যেমন মহাবিপদ, মহাসমাবেশ, মহাসচিব, মহাজ্ঞানী, মহাপরিচালক ইত্যাদি। আরও সহজে বললে, মহা+বিশেষণ (আলাদা বসবে), মহা+বিশেষ্য (একসাথে বসবে)।]


সারা দিন কোথায় ছিলে? (সারাদিন কোথায় ছিলে?) সারাদিন তো শুধু টই টই করে ঘুরেই বেড়াও দেখি! (সারা দিন তো শুধু টই টই করে ঘুরেই বেড়াও দেখি!)
ব্যাখ্যা: ‘সারা দিন’ অর্থ ‘পুরো দিন জুড়ে’, ‘সারাদিন’ অর্থ ‘সারাক্ষণ’। একসাথে বসে, এমন আরও কিছু শব্দ: সারাক্ষণ, সারাজীবন, সারাবছর, সারাবেলা, সারামাস, সারারাত, সারারাত্তির, সারারাত্রি, সারাসকাল ইত্যাদি। কিন্তু সারা বাংলা, সারা বিশ্ব, সারা শহর...আলাদা বসে। সবকিছু, সবশেষে, সবচেয়ে সমাসবদ্ধ শব্দ বলে দুই শব্দ একসাথে বসে।


একদিন সময় করে এসো। (এক দিন সময় করে এসো।) আমি সেখানে মাত্র এক দিনই ছিলাম। (আমি সেখানে মাত্র একদিনই ছিলাম।) আমি ভাইয়ের বাসায় এক দিন ছিলাম। (আমি ভাইয়ের বাসায় একদিন ছিলাম।) দুইপয়সার মানুষ তুমি, এত লাফাও কেন? (দুই পয়সার মানুষ তুমি, এত লাফাও কেন?) দুইটাকার ছাগলে সাবাড় করে লক্ষটাকার বাগান। (দুই টাকার ছাগলে সাবাড় করে লক্ষ টাকার বাগান।) সাতসমুদ্র তেরোনদী পার হয়ে তোমার কাছে এলাম! (সাত সমুদ্র তেরো নদী পার হয়ে তোমার কাছে এলাম!) [‘একদিন যাব’ বাক্যে ‘একদিন’ দিনের সংখ্যা প্রকাশ করছে না। প্রাগুক্ত উদাহরণসমূহতে অনুরূপ: দুইপয়সা, দুইটাকা, সাতসমুদ্র, তেরোনদী। তবে প্রকৃত সংখ্যা প্রকাশ করলে আলাদা বসবে। যেমন দুই টাকা, পাঁচ মাইল, দুই বছর ইত্যাদি।]


’৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থানের ইতিহাস ভুলে গেছ? (’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের ইতিহাস ভুলে গেছ?)
সে কি এখনও আগের মতোই ঘুম-কাতুরে? (সে কি এখনও আগের মতোই ঘুমকাতুরে?) [সমাসবদ্ধ শব্দে পরপদের শুরুতে স্বরবর্ণ থাকলে দুই পদের মাঝে হাইফেন বসবে। যেমন গীতি-আলেখ্য (কিন্তু গীতিকাব্য, গীতিনাট্য) আপাত-অসম্ভব (কিন্তু আপাতসম্ভব, আপাতদৃষ্টিতে)]
তোমার এখানে আসা না-আসা একই কথা। (তোমার এখানে আসা না আসা একই কথা।) [অনুরূপ: বলা না-বলা, খাওয়া না-খাওয়া, পড়া না-পড়া, দেখা না-দেখা, পারা না-পারা ইত্যাদি।]
কথাটা বলতে বলতে/বলতে-বলতে সে কেঁদে ফেলল। (কথাটা বলতেবলতে সে কেঁদে ফেলল।) [অসমাপিকা ক্রিয়াপদের দ্বিত্বের ক্ষেত্রে পদ দুইটিকে আলাদা-আলাদা শব্দে লিখতে হয়, কিংবা মাঝখানে হাইফেন বসাতে হয়। যেমন করতে করতে/করতে-করতে, চলতে চলতে/চলতে-চলতে, দেখতে দেখতে/দেখতে-দেখতে, ঘুরতে ঘুরতে/ঘুরতে-ঘুরতে, কেঁদে কেঁদে/কেঁদে-কেঁদে ইত্যাদি। ক্রিয়া বিশেষণের (adverb) দ্বিত্বের বেলায়ও একই নিয়ম। যেমন পাশে পাশে/পাশে-পাশে, কাছে কাছে/কাছে-কাছে, কালে কালে/কালে-কালে, পরে পরে/পরে-পরে ইত্যাদি।]


বইটি পাঁচটি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। (বইটি পাঁচটি ভাষায় অনুদিত/অনুবাদিত হয়েছে।)
আমি এসেছি অনাহূত হয়েই। (আমি এসেছি অনাহুত হয়েই।) সে অবশেষে অগ্নিতে আহুতি দিল। (সে অবশেষে অগ্নিতে আহূতি দিল।) [আহুতি=উৎসর্গ, আহূতি=আহ্বান]


তোকে আমি জানপরান দিয়ে ভালোবাসি। (তোকে আমি জান-পরাণ দিয়ে ভালোবাসি।) [মরণ (মরন নয়), টেবিলের কোণ (কোন নয়), মেঝের কোনা (কোণা নয়), কোনাকুনি (কোনাকুণি নয়), অসুখের ভান (ভাণ নয়) করা, লোকের বান (বাণ=তীর নয়), গুনে (গুণে= ‘গুণ (multiply) করে’ নয়) বলো, কত টাকা আছে। ছুরিতে শাণ দাও। (অন্যদিকে, শানবাঁধানো ঘাট) জান আর পরান সমজাতীয় শব্দ, তাই এই দুই শব্দের মাঝখানে হাইফেন হবে না। অনুরূপ: বিয়েশাদি, মিলমিশ ইত্যাদি। সমজাতীয় শব্দ না হলে হাইফেন হতো কিংবা আলাদা আলাদা বসত। যেমন জন্ম-মৃত্যু, আকাশ-পাতাল ইত্যাদি।]


বিয়ের ধুম পড়েছে। (বিয়ের ধূম পড়েছে।)
বেশি কথা বোলো না। (বেশী কথা বল না।)
দুর্নীতি জাতীয় জীবনে দুর্যোগ আনে। (দূর্নীতি জাতীয় জীবনে দূর্যোগ আনে।)
লোকটা দেখতে কিম্ভূতকিমাকার। (লোকটা দেখতে কিম্ভুতকিমাকার।)


গ্রন্থস্বত্ব লেখকের স্ত্রীর। (গ্রন্থসত্ত/গ্রন্থসত্ত্ব/গ্রন্থস্বত্ত্ব লেখকের স্ত্রীর।) [স্বত্বাধিকারী] আমসত্ত্ব খাও? (আমসত্ত্ব/_সত্ত/_সত্ব/_স্বত্ব খাও?) তিনি সাত্ত্বিক মানুষ। (তিনি সাত্তিক/সাত্বিক মানুষ।) বধূটি অন্তঃসত্ত্বা। (বধুটি অন্তসত্তা/অন্তঃসত্বা/অন্তঃস্বত্বা।) এতবার নিষেধ করা সত্ত্বেও সে চলে গেল। (এতবার নিষেধ করা সত্তেও/সত্বেও সে চলে গেল।) তাঁর কবিসত্তার তুলনা নেই। (তাঁর কবিসত্ত্বার তুলনা নেই।)


ডা. সেন একজন ভালো হৃদ্‌রোগ-বিশেষজ্ঞ। (ডাঃ সেন একজন ভালো হৃদরোগ/হৃৎরোগ-বিশেষজ্ঞ।) [বানান-সতর্কতা: হৃৎকম্প, হৃৎক্রিয়া, হৃৎপিণ্ড, হৃদ্‌যন্ত্র]


সে তো সেদিন আসেইনি; বরং তুমিই এসব বানিয়ে বলছ। (সে তো সেদিন আসেইনি, বরং তুমিই এসব বানিয়ে বলছ।) [যৌগিক বাক্যে যদিও, বরং, নতুবা, নয়তো ইত্যাদির আগে সেমিকোলন বসে, কমা নয়।)]


সে ব্যাবসায় আমারও সমান অংশীদারিত্ব আছে। (সে ব্যবসায় আমারও সমান অংশিদারিত্ব আছে।)
বাংলা ভাষার ব্যাবহারিক প্রয়োগ নিয়ে একটা ভালো বইয়ের নাম বলো। (বাংলাভাষার ব্যবহারিক প্রয়োগ নিয়ে একটা ভাল বইয়ের নাম বল।) [ব্যবহার+-ইক=ব্যাবহারিক, ব্যবসায়+-ইক=ব্যাবসায়িক। ব্যবহারিক, ব্যবসায়িক নয়।]


অহংকারে তার পা মাটিতে পড়ে না। (অহঙ্কারে তার পা মাটিতে পড়ে না।) [অলংকার/অলংকরণ/অহংকার/ভয়ংকর/শুভংকর/ঝংকার হবে, অলঙ্কার/অলঙ্করণ/অহঙ্কার/ভয়ঙ্কর/শুভঙ্কর/ঝঙ্কার হবে না। এ শব্দগুলি সন্ধিজাত বিধায় ঙ-এর জায়গায় অনুস্বারও বসতে পারে, এবং সেটাই প্রমিত।]
সে অঙ্কে কাঁচা। (সে অংকে কাঁচা।) [অনুরূপ: অঙ্কন, অঙ্কুর, একাঙ্ক, কম্পাঙ্ক, কলঙ্ক, আতঙ্ক, আশঙ্কা, কঙ্কণ (কঙ্কন নয়), কঙ্কাল, কঙ্কর, চিত্রাঙ্কন, অর্ধাঙ্গিনী, গঙ্গা, তরঙ্গ, বঙ্গ, মঙ্গল, সঙ্গ, আকাঙ্ক্ষা, ইঙ্গিত, পঙ্গু, প্রত্যঙ্গ, রঙ্গ, সঙ্গী, কাঁকন (কাঁকণ নয়), জঙ্গম, পতঙ্গ, প্রসঙ্গ, বিহঙ্গ, লঙ্ঘন, শঙ্কা, সাঙ্গ, জঙ্গল, পুঙ্খানুপুঙ্খ, প্রাঙ্গণ (প্রাঙ্গন নয়) [রুগ্‌ণ, রোপণ, প্রয়াণ, লক্ষ্মণ (রামের বৈমাত্রেয় ভাই), লক্ষণ (চিহ্ন)], ভঙ্গ, শঙ্খ, সুড়ঙ্গ/সুরঙ্গ (অনুস্বার-যুক্ত নয়)। এ শব্দগুলি সন্ধিজাত নয় বিধায় ঙ-এর জায়গায় অনুস্বার বসবে না।]


দুর্গাপূজা কখন? (দূর্গাপুজা কখন?) [পূজা, কিন্ত পুজো। ধূলি/ধূলা/ধুলা, কিন্তু ধুলো। সূর্য, কিন্তু সুজ্জি। পূর্ব, কিন্তু পুব।]
অনেক ঠান্ডা পড়েছে। (অনেক ঠাণ্ডা পড়েছে।) [দেশি, তদ্ভব ও বিদেশি শব্দের বানানে ‘-ণ্ড’ না-লিখে ‘-ন্ড’ লেখাই সংগত। যেমন: গন্ডার, ঠান্ডা, ডান্ডা, পান্ডা, মন্ডা, মুন্ডু, লন্ঠন, গন্ডগোল ইত্যাদি।]
অবশেষে পরীক্ষা পিছোল। (অবশেষে পরীক্ষা পিছলো।) [অনুরূপ: জুড়োল, ফুরোল, ফুরোবে, লুকোবে ইত্যাদি।] [শেষে ও-কার হবে কি হবে না, তা মনেরাখার টেকনিক আবারও বলছি: শব্দটির সাধুরূপে ও-কার না থাকলে চলিতরূপেও থাকবে না। পিছাইল, জুড়াইল, ফুরাইল ইত্যাদি।]


ওঠো, এখুনিই বেরোতে হবে। (উঠো, এখুনিই বেরোতে হবে।) সামনে কখনও দার্জিলিংয়ে এলে আমার বাড়িতেই উঠো। (সামনে কখনও দার্জিলিংয়ে এলে আমার বাড়িতেই ওঠো।) [তবে ওঠাও, উঠাও নয়।]


আলোচনা:
১। কিছু শব্দের বিবর্তিত রূপ ও মূল রূপ দেখানো হলো এইভাবে---বিবর্তিত রূপ (মূল রূপ): অত্যেচার (অত্যাচার), ইচ্ছে (ইচ্ছা), ঘেন্না (ঘৃণা), ছুঁচ (সুচ=সুঁই), তেষ্টা (তৃষ্ণা), ধন্যি (ধন্য), নেমন্তন্ন (নিমন্ত্রণ), পুব (পূর্ব), পেছন (পিছন), বিকেল (বিকাল), ভিখিরি (ভিখারি), মুক্তো (মুক্তা), অভ্যেস (অভ্যাস), বিচ্ছিরি (বিশ্রী), জন্যে (জন্য), দুয়ার/দুয়োর/দোর (দ্বার), চুড়ো (চূড়া), ধুলো (ধূলি=ধুলা), পুজো (পূজা), পুণ্যি (পুণ্য), পুরনো (পুরাতন), বয়েস (বয়স), বিদ্যে (বিদ্যা), ভেতর (ভিতর), মুখ্যু (মূর্খ), মিঠে (মিঠা), রুপো (রুপা), সন্ধে/সন্ধ্যে (সন্ধ্যা), সুবিধে (সুবিধা), শিগ্‌গির (শীঘ্র), সুতো (সুতা<সূত্র), [‘সুতি কাপড়’, ‘সূতি কাপড়’ নয়। ‘সূতি’ অর্থ প্রসব,…সূতিকাগার।] হিসেব (হিসাব)। প্রমথ চৌধুরীর হাত ধরে দুই রূপই লেখ্যরূপ হিসেবে গৃহীত হয়েছে।
২। পদের মধ্যে বিসর্গের বর্জন হয় না। যেমন: মনশ্চক্ষু (বিসর্গের জায়গায় ‘শ’), যশঃপ্রদ, অতঃপর, উচ্চৈঃস্বরে (বা উচ্চস্বরে), বয়ঃক্রম, মনঃকষ্ট, মনঃপূত, মনোবেদনা (বিসর্গের জায়গায় ও-কার), শিরঃপীড়া, সদ্যঃস্নাত, অধঃপাত, জ্যোতিঃশাস্ত্র, পয়ঃপ্রণালী, বয়ঃপ্রাপ্ত, মনঃক্ষুণ্ণ, মনঃপ্রাণ (বা মনপ্রাণ), মনোভাব, সদ্যোজাত, ছন্দঃপতন (বা ছন্দপতন), ততোধিক (ততঃ+অধিক, তাই ও-কার হবে। তবে ‘তত’ শব্দে ও-কার নেই। তুলনীয়: মনোভাব, মনোযোগ।), পুনর্মুদ্রণ, বয়ঃসন্ধি, মনঃক্ষোভ, মনঃসংযোগ, মনোমোহিনী, সদ্যঃপক্ব, সদ্যোমুক্ত, ছন্দোবদ্ধ, বয়ঃকনিষ্ঠ (‘কনিষ্ঠতম’ বলে কিছু নেই), বয়োজ্যেষ্ঠ (‘জ্যেষ্ঠতম’ বলে কিছু নেই), মনঃপীড়া, মনোনিবেশ, মনোযোগ, সদ্যোমৃত।
৩। পদের শেষে স্ত, স্থ, স্প থাকলে বিসর্গ না দিয়ে লিখলেও চলে। যেমন নিশ্বাস, দুস্থ, নিস্পৃহ, মনস্থ শুদ্ধ।
৪। তরণি, তরি, ধরণি, যুবতি, শ্রেণি বানানগুলিও শুদ্ধ।


কী উদ্দেশে এসেছেন? (কী উদ্দেশ্যে এসেছেন?) আমাকে উদ্দেশ করে কথাগুলি বলা হয়েছে। (আমাকেই উদ্দেশ্য করে কথাগুলি বলা হয়েছে।) নদী যায় সাগরের উদ্দেশে। (নদী যায় সাগরের উদ্দেশ্যে।) মনের শান্তির উদ্দেশে তিনি সেখানে গেলেন। (মনের শান্তির উদ্দেশ্যে তিনি সেখানে গেলেন।) আমার উদ্দেশ্য তোমাকে অপমান করা নয়। (আমার উদ্দেশ তোমাকে অপমান করা নয়।) [উদ্দেশ=দিকে বা প্রতি। উদ্দেশ্য=অভিপ্রায়ে।] অনুরূপ: লক্ষ করা (খেয়াল করা), লক্ষ্য (উদ্দেশ্য)। আমার জীবনের লক্ষ্য সিভিল-সার্ভিসে আসা ছিল না। ভদ্রলোক আমাকে লক্ষ করেননি বোধহয়। সবার অলক্ষেই ব্যাপারটা ঘটে গেল! আর-একটা ‘লক্ষ’ অর্থ ‘লাখ’, এটা আমরা সবাই জানি।


‘অদ্ভুত’ বাদে সকল ‘ভূত’ ঊ-কারবিশিষ্ট।
তিনি তেলুগু ভাষার অন্যতম পণ্ডিত। (তিনি তেলেগু ভাষার অন্যতম একজন/একজন অন্যতম পণ্ডিত।)
সায়ান তো বোধহয় এখন এ-বি-সি-ডি মুখস্থ বলতে পারে, তাই না? (সায়ান তো এখন বোধ হয় এবিসিডি/‘এ’ ‘বি’ ‘সি’ ‘ডি’/এ বি সি ডি মুখস্থ বলতে পারে, তাই না?)
থাক থাক, আর লাগবে না। (থাক, থাক, আর লাগবে না।)


তাঁর ভুঁড়ি আছে, ভূরিভূরি/ভূরি ভূরি টাকা আছে, ঘরে সুন্দর বউ আছে। (তাঁর ভূড়ি/ভূঁড়ি আছে, ভুরি ভুরি টাকা আছে, ঘরে সুন্দরী বউ আছে।) নিজের শর্তে, পরের অর্থে বাঁচে, ‘দূরবীন’-এর ধ্রুব ছিল এমনই এক অথর্ব মানুষ। বাস্তবেও এমন উদাহরণ ভূরিভূরি/ভূরি ভূরি আছে। (নিজের শর্তে, পরের অর্থে বাঁচে, ‘দূরবীন’-র ধ্রুব ছিল এমনই এক অথর্ব মানুষ। বাস্তবেও এমন উদাহরণ ভুঁড়িভুঁড়ি/ভুরিভুরি আছে।)


সে এতদূর কী করে এল? (সে এত দূর কীকরে আসল/আসলো?) কতদিন পর এলে! (কত দিন পর আসলে!) সায়েম এলে আমি যাব। (সায়েম আসলে আমি যাব।) [লক্ষণীয়: কত করে, কতকাল, কত কী, কতদূর, কত-না, কতরকম, কত রকমের, কত সময়, কত-যে]


এঁর নাম, ওঁর নাম, দুটোই লিখে পাঠাও। (ইনার/এনার নাম, উনার/ওনার নাম, দুটোই লিখে পাঠাও।) ওঁকে এমন করে বোলো না। (উনাকে এমন করে বলো না।) ওঁদের কি আসার কথা আজকে? (উনাদের কি আসার কথা আজকে?) উনিই জানতেন এই কথাটা। (ওঁই/ওঁ-ই জানতেন এই কথাটা।)


ঘুরে-ফিরে সে একই কথা! (ঘুরেফিরে/ঘুরে ফিরে সে একই কথা।)
তিনি আমাদের দশহাজার টাকা দিয়ে বলেছিলেন, আমায়/আমাকে একটা সাইকেল এনে দেবে তোমরা? (তিনি আমাদেরকে দশ হাজার টাকা দিয়ে বলেছিলেন, আমায়/আমাকে একটা সাইকেল এনে দেবে তোমরা?) [অনুরূপ: তোমাদের, তোমাদেরকে নয়; তোদের, তোদেরকে নয়; আপনাদের, আপনাদেরকে নয়; তাদের, তাদেরকে নয়; ওদের, ওদেরকে নয়; তাঁদের, তাঁদেরকে নয়; ওঁদের, ওঁদেরকে নয়। উনি, ওঁ নয়; ওঁরা, উনারা/ওনারা নয়; ওঁকে, উনাকে/ওনাকে নয়; ওঁর, উনার/ওনার নয়; ওঁদের, উনাদের/ওনাদের নয়। এককথায়, উনার, ওনার, ওনাকে, উনাকে, উনাদের, ওনাদের এসবের বদলে লিখব: ওঁর, ওঁকে, ওঁদের। (‘ওঁদেরকে’-এর পরিবর্তে ‘ওঁদের’ লিখব।) উল্লেখ্য, তোমায়, তোমাকে দুই-ই শুদ্ধ। আমায়, আমাকে দুই-ই শুদ্ধ। মনে এল বলে/তাই লিখলাম: আজ, আজকে, কাল, কালকে সবই শুদ্ধ।]


যাঁরা এখানে আসেন, তাঁদের/ওঁদের সবাইকে চেন? (যাঁরা এখানে আসেন, তাঁদেরকে/ওঁদেরকে সবাইকে চিন?) তাঁদের/ওঁদের বলে দাও, এখানে যাতে আর না আসে। (তাঁদেরকে/ওঁদেরকে বলে দাও, এখানে যেন আর না আসে।) ওঁদের/তাঁদের বেলাতেই/বেলায়ই সব মাফ, তাই না? (উনাদের/ওনাদের বেলাতেই/বেলায়ই সব মাফ, তাই না?) [তবে ‘যে/যাকে/যারা/যাদের/যিনি/যাঁকে/যাঁরা/যাঁদের’-র পরিপূরক হিসেবে ‘সে/তাকে/তারা/তাদের/তিনি/তাঁকে/তাঁরা/তাঁদের’ ভালো যায়। ব্যাকরণের নিরিখে (নিরীখে/নীরিখে নয়) যদি আরও বলতে হয় তা হলে উনি/ইনি, ওঁদের/এঁদের এগুলি নির্দেশক সর্বনাম। উনি/ও দূরত্ববাচক, ইনি/এ সামীপ্যবাচক।]


বস্তুত, আমি ওখানে কখনও যাইইনি। (বস্তুত আমি ওখানে কখনও যাইইনি।) [বাক্যের শুরুতে বস্তুত, কার্যত, মূলত, জ্ঞানত, প্রকৃতপক্ষে ইত্যাদি থাকলে তার পর কমা বসে।]
তার এক পা জন্ম থেকেই খোঁড়া। (তার এক পা জন্ম থেকেই খোড়া।) রাস্তায় খোঁড়াখুঁড়ি চলছে। (রাস্তায় খোড়াখুড়ি চলছে।)
আমি ঢাকায় হেডকোয়ার্টার্সে বসি, একদিন আসুন সময় করে। (আমি ঢাকায় হেডকোয়ার্টারে বসি, এক দিন আসুন সময় করে।) [‘কোয়ার্টার্স’ অর্থে ‘কোয়ার্টার’ ব্যবহার করা যাবে না। যেমন আমি ফ্যামিলি নিয়ে স্টাফ-কোয়ার্টার্সে (‘স্টাফ-কোয়ার্টারে’ নয়) থাকি। ‘কোয়ার্টার’ অর্থ এক-চতুর্থাংশ।]


আজকে বাসায় হাঁসভুনা/ভুনাখিচুড়ি রান্না হয়েছে। (আজকে বাসায় হাঁস ভুনা/হাঁসভূনা/ভুনা খিচুড়ি/ভূনাখিচুরি/ভুনা খিচুরি রান্না হয়েছে।) খেয়ে যেয়ো, হাঁস ভুনা করা হচ্ছে। (খেয়ে যেয়ো, হাঁসভুনা করা হচ্ছে।)
ব্যস/বাস/বস মিটে গেল! (ব্যাস,/ব্যাস মিটে গেল!) [ব্যস/বাস/বস=এই তো, যেই মাত্র ইত্যাদি অর্থ-প্রকাশক]
জলের ছলাত-ছলাত শব্দ শুনলে ভালো লাগে। (জলের ছলাৎ-ছলাৎ শব্দ শুনলে ভাল লাগে।)
আমি সে-দিন/সেদিন আপনার প্রোফাইলে ঢু মেরেছিলাম। (আমি সে দিন আপনার প্রোফাইলে ঢুঁ মেরেছিলাম।)
আস্তেধীরে ঢোক গেলো। (আস্তে-ধীরে ঢোঁক গেল।) [‘আস্তে’ ও ‘ধীরে’ একই অর্থ প্রকাশ করে, মাঝখানে হাইফেন হবে না।]
ওরকম দেবো-দিচ্ছি করবেন না। (ওরকম দেব, দিচ্ছি করবেন না।)


‘না/না-’ নিয়ে কিছু আলোচনা: তুমি আর 'না' কোরো না, রাজি হয়ে যাও। তুমি যতই না না কর না কেন, ওরা তোমাকে দিয়ে কাজটা না-করিয়ে ছাড়বে না। ওরা না করে চর্চা, না করে ন্যূনতম চেষ্টা। ওসব না-করেই, এমনকি, না-পসন্দ কাউকে নিয়ে না-করা কাজটা করিয়ে নিতে ওরা একটুও নারাজ নয়।
না+সমাপিকা ক্রিয়া (হাইফেন নেই)
না+অসমাপিকা ক্রিয়া (হাইফেন আছে)
না+ক্রিয়া/বিশেষণ (নাম-, ভাব-, ক্রিয়া) যদি বিশেষণ অর্থপ্রকাশক হয়, তবে হাইফেন বসবে।
'না' উপসর্গের কাজ করলে নিরেটভাবে বসবে।
অন্য সব ক্ষেত্রে 'না' আলাদা বসবে।


এখন বলুন, আপনার আপত্তির জায়গাটা কোথায়। (এখন বলুন, আপনার আপত্তির জায়গাটা কোথায়?) [প্রধান খণ্ডবাক্য (principle clause) ‘এখন বলুন’-এর কারণে বাক্যের এসে দাঁড়ি বসবে।]
বললাম আরকি কথাটা! (বললাম আর কী কথাটা!) সে-ই আরকি! (সে-ই আর কী!) ভাবখানা এমন যেন সব জানে আরকি! (ভাবখানা এমন, যেন সব জানে আর কী!) পোড়া কপাল আরকি! (পোড়া কপাল আর কী!)
এইটুকুন ছেলের মুখে ওই কথা শুনে থ হয়ে গেলাম! (এইটুকুন ছেলের মুখে ওই কথা শুনে থ’ হয়ে গেলাম!)
সেখানে যাব কি যাব না, সে দেখা যাবে’খন। (সেখানে যাব কী যাব না, সে দেখা যাবে ’খন।)
আমি বসামাত্রই ওকে বলতে শুনলাম: মানুষমাত্রই ভুল করে। (আমি বসা মাত্রই ওকে বলতে শুনলাম: মানুষ মাত্রই ভুল করে।) সে তো সবেমাত্র এল! (সে তো সবে মাত্র এল!) [তবে ‘সবে’-এর পর মাত্র ব্যবহার না-করাই সংগত। (অনুরূপ: কেবল, শুধু।) বাক্যটি এভাবে লিখলেই ভালো: সে তো সবে/মাত্র এল!]
শুধু/কেবল তিনিই অমত করেছিলেন। (শুধুমাত্র/কেবলমাত্র তিনিই অমত করেছিলেন।)
সে এসেছে কি না, তা তো খোঁজ নিইনি। (সে এসেছে কিনা তাতো খোঁজ নিইনি।) সে এসেছে কি না তো খোঁজ নিইনি। (সে এসেছে কি না, তো খোঁজ নিইনি।)


আল্লাহ্‌ তাঁকে বেহেশ্‌ত্‌ নসিব করুন। (আল্লাহ তাঁকে বেহেস্তে/বেহেস্ত/বেহেশতে নসীব করুন।)
তিনি একজন নিপট ভদ্রলোক। (তিনি একজন নিপাট ভদ্রলোক।)


ওরা এসেছে। জানো না, কেন? [এর অর্থ: ওদের আসার কারণটা জানো না?] জানো না কেন? [এর অর্থ: ওদের আসার ব্যাপারটা জানো না কেন?]
ভাবীকালের গর্ভে সকল পাপ জমা হচ্ছে যেন! (ভাবিকালের গর্ভে সকল পাপ জমা হচ্ছে যেন!) [ভবিষ্যৎ অর্থে ‘ভাবী’, অন্য সব ক্ষেত্রে ‘ভাবি’।] পাশের বাসার ভাবির সাথে সুমাইয়ার খুব ভাব। (পাশের বাসার ভাবীর সাথে সুমাইয়ার খুব ভাব।)


কিছু আলোচনা: 'মাঝেমধ্যে', 'মাঝামাঝি', 'আশেপাশে', 'তাড়াতাড়ি' ইত্যাদি বানানসমূহ নিরেটভাবে লেখা হয়, কিন্তু 'মাঝে মাঝে', 'পাশে পাশে', 'ঘন ঘন', 'রাশি রাশি' ইত্যাদি বানানসমূহ ফাঁক রেখে লেখা হয়। তাই, এ ধরনের শব্দের বানান লেখার সময় কখন নিরেটভাবে এবং কখন ফাঁকা রেখে লিখতে হবে, তা নিয়ে অনেকে বিভ্রান্তিতে পড়ে যান। তবে এই বিভ্রান্তি থেকে রক্ষা পাওয়া একেবারেই সহজ। এ ধরনের শব্দের বানানে মাঝখানে ফাঁক রাখা না-রাখার কারণ সহজে মনে রাখতে চাইলে দ্বিরুক্ত শব্দের প্রসঙ্গ টানতে হবে। সেক্ষেত্রে প্রথমেই উল্লেখ করে দেওয়া উচিত যে, যখন কোনও শব্দের অর্থকে সম্প্রসারিত করার জন্য ওই শব্দটি অবিকৃতভাবে বা সামান্য বিকৃত করে পর পর দুবার ব্যবহার করা হয়, তখন তাকে দ্বিরুক্ত শব্দ বলে। যদি এই দ্বিরুক্ত শব্দসমূহ লেখার ক্ষেত্রে দ্বিতীয় বারের শব্দটি মূল শব্দ থেকে কিছুটাও বিকৃত হয়ে যায়, তবে তাদের বানান নিরেটভাবে লিখতে হবে। যেমন: মাঝেমধ্যে, তাড়াতাড়ি, আগেভাগে, মাঝামাঝি, ছোটাছুটি, লেখালিখি ইত্যাদি।
আবার, যদি দ্বিতীয় বারও মূল শব্দটি সম্পূর্ণ অবিকৃত থাকে, তাহলে শব্দ দুটির মাঝে ফাঁকা রাখতে হবে। যেমন: মাঝে মাঝে, ঘন ঘন, মধ্যে মধ্যে, দিন দিন, বাড়ি বাড়ি, সকাল সকাল, বড়ো বড়ো, রাশি রাশি ইত্যাদি। তবে হ্যাঁ, অবিকৃত শব্দগুলো মাঝখানে ফাঁকা রেখে লেখার ক্ষেত্রে আর-একটি বাড়তি শর্ত খেয়াল রাখতে হবে এবং সেটি হলো, শব্দগুলোকে আলাদাভাবেও প্রাসঙ্গিক অর্থবহ হতে হবে। প্রাসঙ্গিক অর্থবহ না-হলে নিরেটভাবেই লিখতে হবে। যেমন: মড়মড়, পতপত, ডগডগ, গজগজ ইত্যাদি। এই শব্দগুলোর ক্ষেত্রে 'মড়', 'পত', 'ডগ', 'গজ' ইত্যাদি প্রাসঙ্গিক অর্থ বহন করে না বলে এসব শব্দের বানান নিরেটভাবে লেখা হয়েছে।


উনিশ, উনত্রিশ, উনচল্লিশ এভাবে উননব্বই পর্যন্ত সবগুলো তদ্ভবশব্দ। এই বানানগুলোতে ‘উ’ হবে ‘ঊ’ নয়। কিন্তু এগুলোর তৎসমরূপ হলো যথাক্রমে ঊনবিংশ, ঊনত্রিংশ, ঊনচত্বারিংশ এভাবে ঊননবতি পর্যন্ত। এই বানানগুলোতে ‘ঊ’ হবে, ‘উ’ নয়।


(চলবে…)