স্বপ্নের পেটে তন্দ্রা ও সংলাপ

কেন আজকাল সব কিছু অমন রঙিন দেখায়?
যা-কিছু ধরি, তার সবটাই কেন ভালো লেগে যায়?
যা জড়াই গায়ে, তাতেই কেন বড্ড বেশিই যায় মানিয়ে?
কেন ইদানীং নিজের মধ্যে শক্তি ধরি অনেক বেশি?
কেন মনে হয়, আসে যা আসুক, সব কিছুতেই সয়ে নেব ঠিকই?
হঠাৎ ভাবি, এই যে আমার ‘তুমি’টা আছ,
তাতেই আমার সবটা আছে!
এমন কেন মনে এসে যায়?
তুমি কি আমার এই জীবনের প্রার্থনা আর শক্তি হয়েই এসেছ তবে?


এখন যা আছে, এসব কিছু ছিল আগেও,
তার পরেও নিজেকে ভীষণ অসহায় আর অবোধ লাগত!
তুমি এলে আর সবটা কেমন পাল্টে গেল!
যা-কিছু কাল ছিল বাড়ন্ত,
আজকে তার পুরোটাই যেন মুক্তোঝরানো!
বেঁচে-থাকার এই এতটা সাহস ছিল কই হায় এতগুলি দিন?
আমায় যে তুমি চিনেছ বেশ ভালো করেই,
জানি, তুমি জেনেই গেছ দুর্বলতা ঠিক কোথায় আমার!
কোথায় কোথায় করলে আঘাত ঠিকই তখন দুমড়েমুচড়ে পড়েই যাব!
তুমি বুঝেই গেছ, তোমার একটু আঁচেই আমি ধ্বসে যাব ঠিক!
জেনে রেখো শুধু, এই যে তোমায় জানাতে পেরেছি…এখানেই আমার ভালোলাগা যত!


ভেঙে যাবার এই ভয় যে আসে,
পড়ে যাবার কি পুড়েই যাবার ভয়ও তো আছে,
এই যে আমায় তোমার মাঝেই মরে বাঁচার ভয়টা মারে
…এসব কিছু থাক না বেঁচে…দিব্যি ওরা যেমন আছে!
এই তো আমি জীবন পেলাম!
এই তো হলো দারুণ বাঁচা!
দেখো তো গিয়ে যাচনা করে
হারাবার ভয় নেই কিছুই যাদের,
ওরা বেঁচে আছে ঠিক কতটা?
ওরা আদৌ কি বাঁচে?
নির্ভাবনার মানুষ যারা, তারা মৃত নয় কি?


আমাকে পুড়িয়ে তোমার সুখ যদি হয়, ওতেই আমার জয় গো কেবল!
তোমায় মাড়িয়ে আমার যতটা পাওয়ার, সেইটুকু যে না-চেয়েও পাওয়া হয়ে যায়!
না, যেয়ো না তুমি…ঘুমিয়ে থাকো, বসে থাকো, থাকো যেভাবেই চাও…
শুধু পাশে থেকে যাও…আর চাই না কিছুই!
এমন অবাধ প্রবেশ প্রস্থান তুমি দেখেছ কবে…দেখেছ আদৌ?
চাইলেই যদি পার যেতে চলে, তবে আর বলো যাবেই-বা কেন?
আমি তো জানিই এখন, প্রস্থানে তুমি সেয়ানা দারুণ!
তবুও যাওনি তো প্রিয়, রয়েছ পাশে, এই দিকে চেয়ে পড়ে আছ তুমি,
তোমাকে এটুক জানাই অনেক জানা…আমার কাছে!


মাথার উপর বড্ড যে রোদ…তুমি চলে গেলে জিরোবো কোথায়?
ঝড় কি বাদল, বিজলি কঠিন,
তুমুল তুষার, কনকনে শীত…ভোগায় যখন,
তখনও যে আমার ছাদ একটাই!
আশ্রয় নেবার একটাই বুক, নির্ভরতার একটাই নাম,
উষ্ণ-কোমল বাহু একটাই…
এই ছাদটাও যদি দূরে সরে যায়, তবে আমি আর দাঁড়াব কোথায়?
দিনান্তের ক্লান্তি ধুয়ে জিরোবো কোথায়?
নির্ভার মনে ঘুমাতে বলো কার বুকে আর পাতব মাথা?
আজকাল এই ছাদগুলি কেমন নড়বড়ে খুউব,
একটুকুতেই গুঁড়িয়ে পড়ে!
দেখলে ভাবি, ওসব আবার ছাদও বলে!


ভালোবাসা…সে কি শেষ হয়ে যায় কখনও গিয়ে?
কিংবা ফুরোয়, হারায়?
আমি তো বুঝি, ভালোবাসা কেবল বদলায় রং…
ভালোবাসা ঠিকই থাকে ভালোবাসাই শেষ অবধি, তাই না, বলো?
ওই যে কিষাণ, সেও কি তার ফসলটাকে বাসে না ভালো?
দিনে কি রাতে, ঝড়ে বাদলে, এমনকি প্লাবন এলে ভেসে যাবার অকূল ভয়ে
তারও কি এমন বুক চেরে না? এই ফসলের মায়া ভালোবাসা নয়?
তার পর যখন ভয় মাড়িয়ে সোনালি ফলে মাঠের শরীর ভর্তি দেখে,
তখন তার চোখ দুটো কি সোনা রঙের দীপ্তি মেখে নেচে ওঠে না?
চোখের কোণে আনন্দের কি জাগে না ভাঙন?
সে দৃপ্ত হাতে ঘরে তুলে নেয় ভালোবাসাকে, আর চিন্তা ভুলে ঘুমোয় জিরোয়।
ঠিক তেমনি করেই ভালোবাসবে তুমি--সে স্বপ্নেই বিভোর থাকি, কষ্ট হলেও বেঁচে থাকি!