হরিণের গা পিছলে জ্যোৎস্না/ শুরু

 
You are vaguely sweeping
out of the memory of the
sea, like a wanderer sleeping
in an abyssal forest---
I followed after you,
and I was shuddering
in the misty evening of
two black feathers.


After the last meeting
to meet oblivion,
I rose, I fell
and I suffered in the face.
That night made me love,
the days go by,
our joy doubles
our cheerful greetings.


মাঝেমাঝে তোমার উপর এত এত রাগ হয়, তখন ইচ্ছে হয়, তোমার মাথায় এক বালতি পানি ঢেলে দিয়ে আসি। ইচ্ছে হয়, তোমার মাথার চুলগুলো মুঠোয় ধরে একটা একটা করে তুলতে পারতাম যদি! তা হলে বুঝতে আমার কেমনটা কষ্ট হয়। না হলে ইচ্ছে হয়, জোরে করে তোমার হাতে একটা কামড় বসিয়ে দিই! না হলে ইচ্ছে করে, দুই হাত দিয়ে ইচ্ছেমতো ঘুসি মারতে থাকি যতক্ষণ ক্লান্ত না হই। অথচ দেখো, তোমার উপর সামান্য রাগটাও দেখাতে পারি না। তখন মনে হয়, একটা বাড়ি মেরে নিজের মাথাটাই ফাটিয়ে ফেলি! বোধহয়, এরই নাম ভালোবাসা! তোমার কিছু টেক্সটের রিপ্লাইয়ে জানাচ্ছি, না স্যার, আমি ক্যারিয়ারিস্ট নই। কখনও ছিলামই না। হয়তো তুমি ভাবতে পার সারাদিন আমি ক্যারিয়ারের বাইরে কিছুই ভাবতে পারি না, ভাবি না। তেমন কিছু আসলে না। খিদে পেলে আমি পেয়ারা খাই, গাজর খাই---ক্যারিয়ারভাবনা আমার খাদ্যতালিকাতেই নেই! চাকরি করার ইচ্ছে কখন‌ওই আমার মধ্যে ছিল না। আমি চাকরি করব, এমনটা কখন‌ওই কল্পনাতেও আনিনি। আমি আসলেই খুব সাদামাটা একটা জীবন চেয়ে এসেছি, ছোট থেকেই। অত বিলাসিতা, জাঁকজমক ওসব কিছুতেই মন ছিল না আমার। হয়তো চাকরি পেলে আরও সাদামাটাভাবে চলব। আমি আমার উদ্বৃত্ত টাকা মানুষের মঙ্গলের জন্য দান করে দেবো, এটাই আমার ইচ্ছে। এখন চাকরি করতে চাই, হয়তো এর পেছনে কিছু কারণ আছে। আমি তোমাকে অথবা অন্য কাউকেই কারণগুলো বলতে চাই না। অনেক কিছুই কথাপ্রসঙ্গে অনেক সময় উঠে এসেছে, বলতে হয়েছে বলেই বলেছি সেসব, কিন্তু যে স্মৃতির চাদরে ধুলো পড়ে গেছে, সেটিকে আর পরিশুদ্ধ করে বারেবারে টেনে এনে নিজেকে জখম করার ইচ্ছে আমার নেই। শুধু জেনে নিয়ো, আমি অবোধ তবে বাধ্য, অন্য কিছুর জন্য না হলেও শুধু নিজের জন্যই দারুণ বাধ্য আমি।


তুমি প্রায়ই বল, আমি ভীষণ অভিমানী প্রাণী। আমি অভিমান না করলে তুমি ভালো থাকবে? সত্যি? তা-ই যদি হবে, আমার অভিমান আমলে নাও কেন তবে? তুমি তো বাধ্য নও আমার অভিমানকে পাত্তা দিতে। আমার অভিমান, অভিযোগ তোমাকে বেশি বিরক্ত করলে, আঘাত করলে, ওগুলোকে আমলে নিয়ো না, আস্তে আস্তে দেখবে আমি আর অভিমান করব না, অভিযোগ তুলব না কোনও। আমার মনে হয়েছে, ভালোবাসার তো একটা অধিকার থাকে, সে অধিকার থেকে একটু অভিমান, অভিযোগ আমি করতেই পারি। কিন্তু সেসব কিছু তোমার শান্তির বিরুদ্ধে গেলে আর করব না। তবে এতে আরও অনেক কিছুই পরিবর্তন হতে পারে, তখন আবার বলে বোসো না যেন, আমি বদলে গেছি। তুমি আমার অভিমানে অভ্যস্ত হয়ে গেছ, আমি অভিমান করা ছেড়ে দিলে তোমার নিজেরই খুব অস্বস্তি হবে। মিলিয়ে নিয়ো।


তোমাকে একটা ঘটনা বলি, যখন আমার ডিভোর্স হয়, তার কিছু দিন পরই যখন বন্ধুমহলের সবার মধ্যে ব্যাপারটা জানাজানি হলো, তখন সবাই আস্তে আস্তে দূরে সরে গিয়েছিল। তো, তখন দুএকজন ফ্রেন্ড এমন ছিল, যারা বোঝাতে চাইত তারা আমার পাশে আছে সব সময়, সব সময় এমন কথাবার্তাই বলত, সেদিনগুলোতে মাঝেমাঝে যখন বাসার চারদেওয়ালের মাঝে থাকতে থাকতে দম আটকে আসতে চাইত, তখন ওদের রিকোয়েস্ট করতাম আমার সাথে একটু বাইরে ঘুরতে যেতে, এই ধরো, কলেজ-ক্যাম্পাসে অথবা রেস্টুরেন্টে খেতে যেতে, নয়তো শপিংয়ে যেতে, এই তো। ওরা যেতে রাজি হতো, কিন্তু কলেজে কিংবা রেস্টুরেন্টে অথবা মার্কেটে আমার সাথে যেতে চাইত না, কারণ ওদের ধারণা ছিল, আমার সাথে কেউ দেখে ফেললে অন্যরা ওদেরকেও আমার মতো 'খারাপ মেয়ে' ভাববে। আমাদের হিপোক্রিট সমাজ এখনও পর্যন্ত ডিভোর্সি মেয়েদের 'খারাপ' হিসেবেই দেখে। ওরা এমন সব জায়গায় আমাকে নিয়ে যেত, যেখানে আমাদের কারও চেনা কেউ নেই, আমার সঙ্গে রিক্সায় বসলে হুড তুলে দিয়ে বসত, নয়তো কখন‌ও কখনও বলত, তুই অমুক জায়গায় চলে যা, আমরা আসছি। আমি বুঝতাম কেন এমন বলছে, কিন্তু কিছু বলতাম না। এসব দেখতাম আর দেখে দেখে শিখছিলাম সব কিছু, এখনও শিখছি যদিও। ছেলেদের দিকে তাকিয়ে শিখেছি: যে ডিভোর্সি মেয়েটা একা চলে, তাকে সবাই কাছে পেতে চায়, কিন্তু কেউ কাছে রাখতে চায় না।


এখন অবশ্য আমার বান্ধবীরা অনেক বদলে গেছে, আমাকে নিয়ে সব জায়গায় যেতে চায়, রিকোয়েস্ট করে যেতে, আমার সাথে সময় কাটাতে চায়, কিন্তু আমার কেন জানি ওদের ভালো লাগে না। ওদের সাথে কোথাও যেতে বিরক্ত লাগে, তা ছাড়া আগের সেই দিনগুলোর কথা, সেই ব্যবহারের কথা যখন মনে পড়ে, তখন মন থেকে ওসব আর মেনে নিতে পারি না। যদিও ওদের উপর আমি একটুও রাগ করে নেই, অভিমান তো দূরের কথা। আমি আসলে কার‌ও উপর আজ পর্যন্ত অভিমান করিনি। অভিযোগ অথবা আবদার করার মতো কোনও জায়গাই আমার নেই, আগেও ছিল না। তোমার উপর অভিমান করতে ইচ্ছে হয়, এজন্যই করি। যেদিন বুঝব, এখানে আর অভিমান করা যাবে না, করব না। মেয়েদের অভিমানের সাথে অসীম দাবি মেশানো থাকে। সে দাবিটা যে রাখতে জানে না, তার প্রতি আবার কীসের অভিমান? আমার অভিমানের দাবি যার কাছে নেই, তার সাথে অভিমান করা মানেই কষ্টকে নিমন্ত্রণ জানিয়ে জীবনে নিয়ে আসা।


তুমি বল, মেয়েরা একেকটা ইগোর ডিব্বা, আমিও কি তেমন? কিছুটা, না কি পুরোটাই? হলে বোলো কখন কখন কী কী বিষয়ে অমন করি, নিজে বুঝতে পারি না তো, তাই জানা থাকলে হয়তো কমাতে চেষ্টা করব। আমি নাকি খুব সেনসিটিভ, তুমি প্রায়ই বল। আসলে এটাকে কি সেনসিটিভনেস বলে, না কি আত্মসম্মানবোধ বলে? অবশ্য আমি এখনও অনেক বিষয়ে কষ্ট পাই, ভেতরে খুব খারাপ লাগে। ঠিক হয়ে যাবে, ঠিক করে ফেলব আস্তে আস্তে। মেয়েরা সব পারে। আমিও পারব। আমি তো জানতামই না যে এমন আজব আজব সব রোগ বাধিয়ে বসে আছি আমি! তোমার কাছ থেকে নিজের সম্পর্কে অনেক নতুন কিছু জানতে পারছি, ভালোই লাগছে। আচ্ছা, আজ সারাদিন এতগুলি মেসেজ করলাম, একবারও রিপ্লাই করলে না। কী ভুল করেছি আমি?


তোমার কি মনে পড়েই না আমাকে? এই দুইটা দিন তোমাকে ভীষণ মিস করেছি। জানি, তুমি ব্যস্ত ছিলে, তাও কি একবারের জন্যও মনে পড়ে না আমাকে? আর আমার এমন হয় কেন আজকাল? তোমাকে ছাড়া কিছুই ভালো লাগে না। তুমি আমাকে যত চাও আঘাত দিতে, দাও। আমি আরও অনেক আঘাত চাই তোমার কাছ থেকে। একটুও ভালোবেসো না আমাকে। আমি তোমার আঘাতেই বাঁচতে চাই। আজকাল তোমাকে দেখলে কেন আমার মনে হয় যে তুমি জোর করে হাসছ? তোমার সেই প্রাণখোলা হাসি কেন দেখি না? হ্যাঁ, তোমার ছবি দেখে আমি সব বুঝতে পারি সত্যিই কতটা ভালো তুমি আছ! আমার মন খারাপ থাকলে, আমি কষ্টে থাকলে যেমনি তুমি টের পাও, আর তোমার তখন ভালো লাগে না একটুও, তেমনি তুমি কষ্টে থাকলে আমিও ভালো থাকি না, কিছুই ভালো লাগে না আমার। তুমি যত ভালো থাকবে, সুখে থাকবে, আমিও দূর থেকে ততই তোমার সেই ভালোথাকা আর সুখেথাকাকে অনুভব করব। আমি ভেবে নেব, আমি খুব সুখী। তোমাকে কাছ থেকে সুখী দেখার ভাগ্য আমার জন্য তুমি রাখোনি, তাই বলে কি দূর থেকেও রাখতে পার না? তুমি খুব আনন্দে থাকলে আমি ভীষণ শান্তি পাই, তুমি কষ্টে থাকলেও ঠিকই টের পেয়ে যাই সবই আমি। আমার মধ্যে কখনও তোমার সুখ দেখে হিংসা হয়নি, তা সে তুমি যার সাথেই থাক না কেন। তুমি আমার কলিজাপাখি আর আমার কলিজাপাখিটা সব সময় সুখে থাকবে, আনন্দে থাকবে, আমি এ-ই চাই! আর কিছুই পার না পার অন্তত এই শান্তিটুকু আমাকে দিয়ো। আমি আর কিছুই তোমার কাছে চাইব না। নিজেকে অন্তত এটুকু বুঝিয়ে সান্ত্বনা দিতে পারব যে আমার কথা ভেবে হলেও তুমি ভালো আছ। আর যদি আমার এমন কিছু করার থাকে, যেটা করলে তুমি ভালো থাকবে, তুমি তা হলে তাও বলে দিয়ো, আমি তা-ই করব।


জানপাখিটা, আমি যে তোমাকে কী পরিমাণ মিস করি, তা তুমি বোঝ না একেবারেই। একদিন তুমিও আমার জন্য পাগলের মতো করবে, এটা জানি। মোবাইলে যখনই মেসেজের সাউন্ড হয়, ভাবি, এই বুঝি তুমি মেসেজ করলে! সাথে সাথে মেসেজ চেক করি। মোবাইলটা কখনও সাইলেন্ট করে রাখি না, এমনকি ঘুমাতে যাবার আগেও না। মনে মনে ভাবি, যদি কখনও তুমি আমাকে মিস কর ভীষণ, ইচ্ছে হয় কথা বলতে, তার পর যদি ফোন করে আমাকে না পেয়ে কষ্ট পাও, তখন কী হবে? আমি যদি টের না পাই তোমার ফোন এসেছে! অথচ তুমি ভুল করেও কখনও একটা বাড়তি মেসেজ অথবা অপ্রয়োজনীয় একটা ফোনকল দাও না, কেন কখনও একটাও বাড়তি কল কর না তুমি? আমার ভীষণ কষ্ট হয়, জানো? জানি, এমন থাকবে না তুমি, একটাসময় তুমিও আমাকে একটু কাছে পাবার জন্য, একটু ভালোবাসার জন্য পাগলের মতো করবে। কিন্তু সময় থাকতে কেউ করে না সেটা। ভীষণ কষ্ট হচ্ছে, জানো? খুব ইচ্ছে, তোমার সাথে একটু কথা বলি, তোমাকে একটু জড়িয়ে ধরি। মাঝে মাঝে মনে হয়, আমি বোধহয় ভালোবাসা না পেয়ে পেয়ে একটু একটু করে কষ্ট পাবার জন্যই জন্মেছি। মানুষের ঝগড়া হয়, তার পর একে অন্যের সাথে রাগ করে কথা বলে না, সে ভিন্ন কথা, কিন্তু কথাই হয় না কোনও, অথচ আমাদের দুজনের মধ্যেই একটা দায়সারা বিশ্বাস আছে যে আমরা একটা সম্পর্কে আছি! সব কিছু কেমন যেন জোরপূর্বক নিজের উপর নিয়ে নিলাম আমি।


আমি তোমার কাছে ওইদিন না এলে তো আমাকে তুমি ভুলেই গিয়েছিলে, কিংবা যেতেই, আর ভুলেই থাকতে। যদি-বা কোনও দিন হঠাৎ মনে পড়ত, তা হলে একটা ফোন করতে, কথা হতো, তার পর আবার সেই আগের মতো। ড্রয়ারে হাজারটা কাপড় থাকলে যেমন কোনও এক কোনায় পড়েথাকা কাপড়গুলো সহজে চোখে পড়ে না, আবার হঠাৎ অনেক দিন পর চোখে পড়লে কী যেন মনে পড়ে যায়, তখন ইচ্ছে হয়, একটু গায়ে জড়াই---আমি তোমার কাছে ঠিক তেমনই। নিজেকে আর ছোট করব না, অপমান করব না। কাউকে ভালোবাসলেই যে নিজেকে অসম্মান করে হলেও তাকে ভালোবাসার কথা বলে যেতে হবে, তার ইচ্ছেখুশিমাফিক চলতে হবে, তার অবহেলার পাত্র হয়ে হলেও তার কাছেই থেকে যেতে হবে, আমার এমনটা মনে হয় না। ভালোবাসা আসলে ওসব কিছু না। ভালোবাসলে দূর থেকেও ভালোবাসার মানুষের ভালো থাকার জন্য প্রার্থনা করে, তার মাথার উপরের নিশ্চিত ছায়া হয়ে, কোনও প্রতিদান আশা না করে চুপচাপ আজীবন ভালোবেসে যাওয়া যায়। ভালোবাসি, তাই বলে সব সময় কাছে থেকে, বিরক্ত করে, রাগ দেখিয়ে, অভিমানে মুখ ফুলিয়ে সব অবহেলা, অসম্মান সহ্য করে হলেও তার সামনে ভালোবাসা জাহির করতে হবে, এমনটা না।


ভেবো না আবার, আমি হতাশায় ডুবে যাব, হয়তো-বা শেষ হয়ে যাব, ক্রমেই ফুরিয়ে আসব, কিছুই করতে পারব না, বাঁচতে পারব না, উঠে দাঁড়াতে পারব না, সামনে এগুতে পারব না…সত্যি বলছি, সবই আগের মতোই চলবে। সব কষ্ট ধুয়ে যায়, সব আঘাতের ক্ষত শুকিয়ে পূর্ণ হয়ে যায়। আর হ্যাঁ, আমি ভয় পাই, কারণ আমি জানি ভালোবাসা মানুষকে দুর্বল করে দেয় ,অকেজোও করে দেয় কখনও কখনও। খুব গভীরে যেতে চাই না এজন্যই, যখন তা অভ্যাসে পরিণত হয়, তখন আর দূরে থাকাও যায় না। এজন্য এতটা গভীরে গিয়ে কী লাভ, যেখানে আমার কষ্ট ছাড়া আর কিছুই নেই? আমি এখন আর কোনও কিছুই সিরিয়াসলি নিই না। যতটা সম্ভব, যতটা পারি, গুরুত্ব দিই। দূরে থাকি, আর কিছু হোক না হোক, অন্তত বাঁচতে তো পারব, কাছে থাকলে কাছে থেকে এসব দেখলে তো বাঁচতেই পারতাম না। আমায় কাছে কি নিয়েছিলে কখনও? সত্যিই কাছের করেছিলে কখনও? নিজেকে প্রশ্ন করে দেখো তো? তা হলে কেন বারেবারে নিজেকে পুড়িয়ে পুড়িয়ে শেষ করে দেবো? তুমি কাছেই আছ যদি, কেন আমি টের পাই না তা? কেন নিজেকে এমন একা একা লাগে? আমার মনটা আসলেই খুব ছোট, আমার আত্মাটা ছোট খুব, অনেক ছোট মনের মানুষ আমি। কখনও কি ভুলেও চেষ্টা করেছ আমার কতটা কষ্ট হয়, কতটা ছটফট করতে থাকি, তোমার জন্য অপেক্ষা করে থাকতে থাকতে মন কতটা ছোট হয়ে থাকে আমার…এসব বুঝতে? তুমি কখনও বুঝতে পারবে না এসব, কেননা তুমি বুঝেশুনেই আমাকে কষ্ট দাও। তুমি চাও, আমি যেন এভাবেই একটু একটু করে পুড়তে থাকি। তোমার সত্যি শুধু আমার জন্যই সময় হয় না। এজন্যই এত দিন বলিনি এতটা, কিচ্ছু বুঝতে দিইনি, কারণ আমি জানতাম তুমি বুঝবে না, এমনকি কিছুই আসবে যাবে না তোমার। আমার নিজেকে সান্ত্বনা দেবার এখন একটা অজুহাত হয়েছে---এখন আমি নিজেকে বলতে পারি, ও যেখানে ভালো আছে, সেখানেই তো আছে, যে ওকে ভালো রাখে তার কাছেই তো আছে, ও যেহেতু ভালো আছে সেহেতু আর কিচ্ছু চাই না আমার ওর কাছ থেকে, আমাদের দুইজনের মধ্যে একজন তো অন্তত ভালো আছে!


গতকাল রাত ১১টা পর্যন্ত ছাদে চাঁদের আলোয় বসে ছিলাম। জোছনারাত খুব ভালো লাগে আমার, একা একা থাকলে আরও ভালো লাগে। আসলে যে পাশে থাকলেও মনে হয় না পাশে কেউ আছে, তার না-থাকাই বরং ভালো। অযথা অমন একটা মানুষ পাশে থাকলে বরং অস্বস্তি লাগে, একাকিত্বটাও ঠিকমতো অনুভব করা যায় না। অনেক অনেক প্রশ্ন করেছি নিজেকে, অনেক কিছু জানার ছিল নিজের কাছে। যখন যা জানতে চেয়েছি, সে উত্তরই পেয়েছি। আসলে কষ্ট হবেই, আমি তো আর বোধহীন কোনও মানুষ নই। সুতরাং কষ্ট এলে কষ্ট অনুভব হবেই হবে। ওটা আমি আটকে রাখতে পারব না, হয়তো এড়িয়ে যেতে চাইব, নিজের অজান্তেই বারবার নিজের কাছে নিজেকে প্রমাণ করতে চাইব যে আমি বেশ ভালো আছি, কিচ্ছু হয় না আমার ওসবে, আমার ভেতর কষ্ট-রাগ-ঘৃণা ওসব কোনও অনুভূতিই নেই, কিচ্ছু নেই ওসব। কিন্তু আদৌ কি আমি তা-ই? আমি কী লুকাতে চাই নিজের কাছে? নিজেকেই লুকাতে চাই? নিজের কাছে মিথ্যে বলে বলে নিজেকেই আড়াল করে রাখা যায় হয়তো, কিন্তু থেকে যাওয়া যায় সেই আড়ালেই? হ্যাঁ, সান্ত্বনা দিই নিজেকে, কিন্তু কষ্টের পরিমাণ অবশ্যই ওটুকু সান্ত্বনার চেয়ে অনেক অনেক…খুব রাগ হতে থাকে, সব কিছু ভেঙে তছনছ করে ফেলতে ইচ্ছে হয়, যখন তোমার পাশে অন্য কাউকে দেখি, একটুও সহ্য হয় না আমার, আমি আসলে শেষ পর্যন্ত হিংসুটেই। আমার ভেতরটা শুধু হিংসা আর হিংসা দিয়ে ভরা।


একটু পরেই যখন মন শান্ত হয়, আমার কাছে তখন পরিষ্কার হয় সব কিছু, তুমি তো সেখানে ভালো আছ, দিব্যি আছ নিজের নিয়মে, তা হলে কেন আমি সহ্য করতে পারি না? আমি কি তা হলে ভালোবাসি না তোমাকে? নিজের ভেতর থেকে উত্তর আসে, অবশ্যই আমি ভালোবসি। আর এজন্যই সব মেনে নিতে হবে, আমাকে শক্ত হতে হবে আরও, সহ্য করতে হবে এবং তোমাকে তোমার জীবনে সুখে থাকতে দিতে হবে। অবশ্যই এবং অবশ্যই আমি সেখানে কেউ নই। কোনও জায়গা নেই আমার সেখানে, এমনকি আমার কোনও অস্তিত্বও সেখানে নেই। আমার সব কিছু ভুলে থাকতে হবে, আমাকে ব্যস্ত হয়ে যেতে হবে, আমাকে সরে আসতে হবে। আমাকে কাজ করতে হবে আরও অনেক অনেক কাজ করতে হবে আমাকে। আরও অনেক জোরে দৌড়াতে হবে আমাকে, যেন হঠাৎই যদি মৃত্যুও এসে সামনে দাঁড়ায়, তখনও কোনও কিছু বোঝার বা মৃত্যুকে আলিঙ্গন করার অনুভূতিটুকুও যেন না হয়। ভালোবাসা অনুভব করার জন্য বাঁচতে বড় ইচ্ছে করে।


কখনও এমন হয়েছে তোমার? কখনও নতুন কোনও রান্না খেয়ে অথবা নতুন কোনও কিছু পড়ে শেষ করার পর মনে হয়েছে কখনও---কী ছিল এটা! তার পর আজ পর্যন্ত সেই রান্নার স্বাদ, সেই বইয়ের অথবা সেই আর্টিকেলের কোনও লাইন আজও মনে দাগ কাটে? থাকে সেই পুরনো রেশ? অথবা কোনও কথার লাইন পড়ে মনে হয়েছে কখনও, থাকুক, দ্বিতীয়বার আর পড়ব না, দ্বিতীয়বার পড়তে গিয়ে যদি ভালোলাগাটুকু চুরি হয়ে যায়? মনে হয় কখনও এমন? আমার এমন হয় মাঝে মাঝে---যদিও খুব কমই, তার পরও মনে হয় যা পড়েছি, যেটুকু পড়েছি, যেটুকু বুঝেছি, ওটুকুই থাক, যদি দ্বিতীয়বার পড়তে গিয়ে অর্থ বদলে যায় অথবা ভালোলাগাটুকু টুপ্‌ করে উবে যায়, সে ভয়ে আর পড়িনি। আজও মনে সেসব লেখার রেশ মুখে লেগেথাকা প্রিয় কোনও খাবারের স্বাদের মতই লেপটে আছে।


বলো তো, এটা কী একটা যাচ্ছেতাই ব্যাপার! আমার শুধু মনে হয়, তোমাতেই সারাজীবন আমার ভালোবাসা থাকবে, অথবা মনে হয় তোমাকে ছাড়া আর কোনও দিন কাউকে ভালো লাগবে না। মনে হয়, সারাজীবন তোমাকেই শুধু ভালোবাসব, আর এভাবেই এতটা ভালোবাসা থাকবে। আচ্ছা, আমার এ ধারণা কি ভুল? আবার তুমি যখন বল, সময়ের সাথে মানুষের পছন্দ বদলে যায়, তখন খুব রাগ হয় তোমার প্রতি, মনে হয় যেন আমার কাছ থেকে সরে যাবার একটা পাকা বন্দোবস্ত আগে থেকেই যুগিয়ে রাখছ যেন হুট করে বেশি কিছু বোঝাতে না হয়। তখন ইচ্ছে হয় তোমাকে ভালো করে বুঝিয়ে দিই যে তুমি ভুল বলছ, এমন কখনও হবে না, আমি হতে দেবো না এমন কখনওই! তুমিই বলো, আমি কী করব! আমি আজকাল সব কিছু গুলিয়ে ফেলি, কিছুই বুঝি না আমি। আগে যেগুলো মনে হতো ঠিক, আজ সেগুলো দুর্বোধ্য মনে হয়, যেন কোনও কিছু কখনও বুঝিইনি আমি। একেবারে পুরো বিশ্বটাই অজানা, নিজেকে একটা শিশুর চেয়েও অবুঝ মনে হয়, আর মনে হয় এত বছর কী শিখেছি আমি তা হলে? এতটা বছর ধরে শুধুই কি সময় নষ্ট করে গেছি অযথাই?


জোর করে কেউ আমার কাছ থেকে কিচ্ছু পাবে না। হ্যাঁ, তোমরা ভাবতেই পার, এটা আমার রাগ, জেদ। প্রচণ্ড জেদি একটা মেয়ে আমি, এমনই ভেবে বসতে পার আমাকে। ভাবতে পার, ভীষণ স্বাধীনচেতা আর স্বেচ্ছাচারী আমি। আসলে এসবের কিছুই আমি নই। আমি খুব সহজ, সাধারণ। তোমরা যেগুলো দেখ, ওগুলো আমার বাইরের আবরণ, কেননা আমি ভেতরটা উগরে দিতে জানি না, চাই না। যদি আমাকে বিচার না করে আমি যেমন তেমনভাবেই গ্রহণ করতে পারতে, তা হলে এর চেয়ে আরও অনেক আদায় করতে পারতে আমার কাছ থেকে, হয়তো তোমাদের মনের মতোই হয়ে উঠতাম আমি তোমাদের কাছে। আসলে আমি কারও মনের মতো হয়ে উঠতে চাই-ই না এবং পারিও না কখনও, আমি শুধুই আমি হয়েই থাকতে পারি। আর আমাকে যদি আমি থাকতে দাও, তবে তোমরাই বরং জয়ী হবে। তোমরা যতই চাইবে আমাকে তোমাদের মতো করে গড়ে নিতে, আমি ততই দুর্ভেদ্য আর জটিল হয়ে উঠব তোমাদের কাছে, আর আমার এই জটিল রূপটা তোমাদের কাছে আমাকে জেদি হিসেবেই প্রকাশ করবে। তোমরা আসলে নিতে জানো না, তোমাদের গ্রহণক্ষমতা থাকলে আমি দেওয়ার জন্য সব সময়ই প্রস্তুত আছি, থাকব। জেনে রেখো, তোমাদের ইচ্ছেপুতুল হয়ে ওঠা আমার কাছে অপ্রয়োজনীয়। আমাকে যত চাইবে তোমাদের মতো করে, ততই আমি দূরে সরে যাব তোমাদের কাছ থেকে, কেননা ওসব আমাকে ভীষণ বিরক্তি এনে দেয়। আমি ঠিক যতটা দিতে জানি, ততটাই গুটিয়ে নিতে জানি। আমি আর যা-ই হই, অসহায় নই।


যেদিন আমার ঠোঁট দুটো আর কথা বলবে না, সেদিন থেকে আমার মনের ভাষাগুলো বুঝবে তুমি? আজ যেমনটি বোঝ তেমনটি করেই বুঝবে? আজ তো আমার না বলা কথাগুলোও তোমার মস্তিষ্কের কাছে ধরা পড়ে যায়, খুব কি মজা পাও আমায় হাতেনাতে ধরতে পেরে? আমার আর কী কী লুকোতে হবে, বলো তো? বোধ লুকোলাম, আবেগের বাঁধনখানি আরও শক্ত করে বাঁধলাম, অথচ তাও আমাকে রোজ রোজ সবটাই তোমার করে নাও। আমাকে ভেঙেচুরে আবার যে গড়, বলো তো ওসব করে কী মজা পাও?


যে শব্দ কোনও উপলব্ধি সৃষ্টি করে না, সেগুলো শুধুই বর্ণমালা। সে শব্দের হয়তো অর্থ থাকে, কিন্তু সে অর্থগুলো নিষ্প্রাণ, কিছু নিরর্থক শব্দ কানের পাশ দিয়ে পেরোয় মাত্র। আমরা যে উপলব্ধিগুলোকে আমাদের অনুভবে জড়াই, ওগুলো নিজেই একটি অন্যটিকে বেঁধে নেয়। ভালোবাসা পৃথিবীর সেইসব উপলব্ধির মধ্যে শ্রেষ্ঠতম উপলব্ধি। ভালোবাসা আমাদের সৃষ্টি করে এক অনন্য বৈশিষ্ট্যে। আমরা যখন ভালোবাসার অনুভূতিগুলো উপলব্ধি করতে শুরু করি, তখন আমাদের মধ্যে এটাও পরিষ্কার হয় যে ভালোবাসা সম্পূর্ণই এক অভ্যন্তরীণ বিষয়। ভালোবাসা আমাদের ভেতরেই সৃষ্টি হয়, পরিবর্তিত হয়, নিজেকে সমর্পণ করে ও নিজের ঊর্ধ্বে উঠে নিজেকে চেনায়, নিজের সামনে নিজেরই সত্য স্বরূপ তুলে ধরে, নিজেকে সংশোধন করে, নিজের আত্মকেন্দ্রিকতার মধ্য থেকে নিজেকে মুক্ত করে, সর্বজনীন করে মেলে ধরে, এবং আবশ্যিকভাবে আমাদের মাঝেই আবার ফিরে আসে। যুগ যুগ ধরে ভালোবাসা যে নিয়মে চলছে অথবা ভালোবাসা বলে আসলে আমরা যা-কিছু শুনে আসছি কিংবা বলে আসছি, যেমন করে একে সংজ্ঞায়িত করে আসছি, এটি আদৌ কি তেমনই কিছু? ভালোবাসার প্রশ্ন যখনই ওঠে, তখনই একগাদা নীতি তুলে ধরি, গাদাগাদি করে কিছু ভারী, গম্ভীর আর জটিল কথার মালা সাজাই, আসলেই কি ভালোবাসা তেমনই কিছু? ভালোবাসলে নিঃস্বার্থ হতে হয়, ভালোবাসার মানুষের প্রতি আর ভালোবাসার প্রতি সৎ থাকতে হয়, ভালো ভালো কাজ করতে হয়, সব সময় স্বচ্ছ থাকতে হয়, ভালোবাসার যত্ন করতে হয়, ভালোবাসাকে মনের গভীরে লালন করতে হয়, ভালোবাসলে ভালোবাসার মানুষকে স্বাধীনতা দিতে হয়, ভালোবাসার মানুষের ভেতর যাতে কখনও কোনও দূরত্ব তৈরি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হয়, ভালোবাসার মানুষকে কোনও কিছু করতে কখনও বাধ্য করতে নেই, তাকে অবহেলা করতে নেই, তাকে আঘাত করতে নেই, তার বিশ্বাস অর্জন করে চলতে হয়, তার প্রতি অটুট বিশ্বাস রাখতে হয়, ভালোবাসার মানুষটিকে সব সময় নির্ভার, নিঃসংশয় রাখতে হয়, সারাজীবন কিছুই প্রত্যাশা না করে কেবল দিয়ে যেতে হয়, ভালোবাসাকে অধিকার করার কিছু নেই, তাকে সুখে রাখতে হয়, ভালোবাসার মানুষকে সুখে রাখার অর্থই হচ্ছে নিজে সুখে থাকা, ভালোবাসার মানুষ সব সময় অনুভবে থাকে কখনও সেই অনুভূতি মিলিয়ে যায় না...এই তো ভালোবাসা? এর বাইরে আরও কিছু কি আছে? এগুলোকেই কি মানুষ ভালোবাসা বলে না? এগুলোকেই কি মানুষ পরম নিয়ম করে নেয়নি? এইসব ভালোবাসার সৃষ্টি অথবা শুরু কখন, কোথায় অথবা কী প্রয়োজনে হয়েছে, এর কোনও ইতিহাস আমার জানা নেই, আমার ইচ্ছেও নেই জানার।


আমি আসলে ভালোবাসাকে কোনও নিয়মে বাঁধতে চাই না। ভালোবাসা আমার কাছে খুব স্বাভাবিক একটা ব্যাপার। আমার শরীরের প্রতিটি অঙ্গ যেভাবে নিজের অজান্তেই শারীরিক ক্রিয়া করতে থাকে, এমনকি কখনও থামে না, তেমনি করে ভালোবাসাও খুব সহজ আর সাবলীল একটা বিষয় আমার কাছে। ভালোবাসাকে কখনও কখনও আমারই এক অংশ, অঙ্গ ভাবতে ভালো লাগে। এটি প্রয়োজনে গুরুত্বপূর্ণ, অপ্রয়োজনে স্বাভাবিক। হ্যাঁ, ভালোবাসা আমার কাছে প্রয়োজনে ‘প্রয়োজন’ যেমনি, তেমনি অপ্রয়োজনেও সেই ‘প্রয়োজন’ই হয়ে থাকে। হয়তো সেখানে সেই প্রয়োজনের মাত্রা কখনও ঐচ্ছিক নয়তো আবশ্যিক, কখনও আশ্রিত বা অনাকাঙ্ক্ষিত, কখনও বর্তমান আবার সময়ের দাবিতে স্থিতিশীল। ভালোবাসার এই রূপগুলোকে কি তাই বলে সব সময়ই ধ্রুবই হতে হবে? সময়ের প্রয়োজনে, স্রোতের সাথে তো সব কিছুই বদলে যায়, তবে ভালোবাসার নামে আমরা যা-কিছু ধারণ করে আছি, সেগুলো কেন বদলায় না? ভালোবাসাকে কেন সব সময় নিঃস্বার্থ হতে হবে? ভালোবাসার স্বার্থপর হতে দোষের কী আছে? মন্দের মাঝে কখনও ভালোবাসা থাকতে পারে না, এমনই-বা কে বলেছে? কে বলেছে ভালোবাসায় সৎ হয়েই থাকতে হবে? যে ব্যক্তি সারাজীবন তার ভালোবাসার মানুষের প্রতি অথবা ভালোবাসার জিনিসের প্রতি শুধুই সৎ থেকে গেল, কিন্তু কঠিন মুহূর্তে ভালোবাসার মানুষকে বিপদের হাত থেকে রক্ষা করতে মন্দ হতে পারল না, সে ভালোবাসায় সৎ থেকে কী হয়? সময়ের প্রয়োজনে ভালোবাসা কিছু অসততার ও মন্দত্বের দাবিও রাখে।


আমার কাছে ভালোবাসার মানে কিছুটা অন্যরকম। আমি ওসব রীতিনীতি বুঝি না। আমার কাছে ভালোবাসা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ এক অদৃশ্য, তবে পূর্ণ সত্তা। এটি এমন কিছু, যা নিজেই নিজের মাঝে সুখ, দুঃখ, আঘাত সবটা ধারণ করতে পারে, এমনকি প্রয়োজনে সব অনুভূতিকে সব উপলব্ধিকে একেবারে নিশ্চিহ্ন করে দিতে পারে। আমরা যে শব্দ ধারণ করি, তার সবই তো সেই গভীর এক উপলব্ধি থেকেই আসে। এইসব আত্ম-উপলব্ধিই আমার কাছে ভালোবাসার প্রাণ। ভালোবাসা আসলে নিজেই এতটা পরিপূর্ণ যে তাকে বাইরে থেকে পূর্ণ করার কিছু নেই। আমার কাছে প্রকৃত ভালোবাসা কখনও কিছু অধিকার অথবা অর্জনের মধ্যে দিয়ে আসে না। ভালোবাসা এমন এক সম্পূর্ণ অনুভূতি, যা আমাদের সব সময় সজাগ এবং সূক্ষ্ম আনন্দে ভাসিয়ে নেয়। ভালোবাসা পরিস্থিতির চাপে কখনও বদলায় না, বরং আরও জোরালো হয়। আমি অনুধাবন করেছি, ভালোবাসার এক তীব্র অনুভূতি যা আমার ভেতরে তৈরি হয়েছে সচেতনভাবে, তবে কখনও কখনও এটি সম্পূর্ণ অচেতনভাবেও এসেছে। কখনও-বা আমার এই উপলব্ধিগুলো আমারই তৈরি শৃঙ্খলকে ভেঙে দিয়েছে। আমি ধরেই নিয়েছিলাম আমি যে কাজ করতে ভালোবাসি, যে মানুষকে ভালোবাসি, যা-কিছু আমি ভালোবাসি, আর যেগুলো আমাকে কাছে টানে, সে অনুভূতিগুলোকে অবশ্যই প্রকাশ করতে হবে, নয়তো ভালোবাসা ফুরিয়ে যাবে। আমি হয়তো একটা প্রাপ্তিই চেয়েছি সব সময়।


ভালোবাসাকে আসলে কখনও ছোঁয়া যায় না, একে শুধুই অনুভবে জড়ানো যায়। ভালোবাসা প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য দুই জায়গাতেই সম্পূর্ণ সজাগ, পরিপূর্ণ এবং সক্রিয়। ভালোবাসার পূর্ণতা কখনও কখনও একে সংকীর্ণ করে তোলে। এটি সব সময় নতুন। নিজেকে ছাপিয়ে যায় এমন অনেক কিছু আছে যা আমাকে একটা পরিপূর্ণ জীবন নিয়ে বাঁচতে শেখায়, যার অনেকগুলোরই কোনও দৃশ্যমান স্বীকৃতিই থাকে না। কিছু মানুষের প্রতি অগাধ অকৃত্রিম ভালোবাসা আমাকে তাদের সামনে শ্রদ্ধায়, কৃতজ্ঞতায় অবনত হতে শেখায়। আমি এক কোমল হৃদয় নিয়ে তাদের অগোচরে তাদের মাঝে আসা-যাওয়া করি, অথচ ওদের কিছুই বলা হয় না কখনওই। ভালোবাসা নিজেই যে সেই শ্রেষ্ঠ পুরস্কার, যা তাকে সকল যুক্তির ঊর্ধ্বে যেতে শেখায়---যে যুক্তিগুলো কখনও কখনও মানুষের মহৎ গুণগুলো থেকে দূরে সরিয়ে রাখে কিংবা মানুষকে তার প্রয়োজন থেকে, প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত করে রাখে। আসলে সকল যুক্তিই ভালোবাসার বিপরীতে চলে। যুক্তি মানুষকে ভালোবাসতে দেয় না। যুক্তি মানুষের ভেতর একরকম আমিত্ববোধ জাগিয়ে তোলে এবং এরই চর্চা করে জীবন থেকে ভালোবাসাকে, এর পরম অনুভূতিগুলোকে ছেঁকে ফেলে দেয়। এসব যুক্তি মানুষকে তার ভালোবাসার আত্মোপলব্ধিকে মেলে ধরতে বাধা দেয়। আমার কী হয়, জানো? আমার খুব ইচ্ছে হয় তোমার হাতটা ধরে বসে থাকি অনেকক্ষণ। গল্প করি, অনেক কথা বলি তোমার সাথে। তোমার বুকে মাথা রাখি। তোমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরি। অনেক অনেক আদর করতে ইচ্ছা হয় তোমাকে। অনেক মিস করি তোমাকে। যা বলি তা সত্যিই খুব কম। যা অনুভব করি তার সবটা বলা যায় না।


কী টেক্সট করেছ? তুমি সুইসাইড করবে নাকি এত ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছ যে? এত অপরাধবোধে ভুগছ কেন? তোমার এত অস্থিরতা বাড়ছে কেন? কেন মনে হচ্ছে যে আমি রাগ করেছি? যা-ই কর, আমার কাছে তোমার কোনও দায়বদ্ধতা নেই, কৈফিয়ত বা বাইন্ডিং কিচ্ছু নেই, এটা জেনে রাখো। Do whatever your heart wants. Do whatever your brain asks for. Life is too short. আফসোস করে বাঁচার চেয়ে দুয়েকটা আনন্দের ভুল করে মরে যাওয়াও ভালো। আমাকে আরও ভালোবাসতে ইচ্ছে করছে কেন? এই ভুল কোরো না, আমাতে ডুবলে কেবল ডুবতেই থাকবে, খুঁজে কোনও তল পাবে না। আমি পুরোটাই একটা মায়াজাল, যত আটকাবে ততই জড়িয়ে যাবে আরও…আরও বেশি গভীরে। আর একটা রিকোয়েস্ট, প্লিজ, আমাকে আহামরি বিশ্বাস কোরো না, কারও বিশ্বাস কাঁধে থাকাটাও একটা বড় দায়, বোঝা। তখন সে বিশ্বাস রক্ষা করার এক অলিখিত দায়িত্ব চেপে যায় কাঁধে। যে দায়িত্ব আমি রক্ষা করতে পারব না, সে দায়িত্ব কাঁধে নেওয়ার পক্ষে আমি মোটেও না। আমি সন্ধ্যায় জ্বলা জোনাকির মতো, চোখ ঝলসে দিয়ে নিজের ইচ্ছেতেই আবার নিভে যাই। আমার ভেতর ভালোবাসাটা সময়ের সাথে সাথে ক্ষয়ে যায়, আমি যে পাত্রে যাই, সেই পাত্রের রূপ ধরতে পারি বলে আমি নিজেই নিজেকে বিশ্বাস করি না। তুমি ডুবতে রাজি থাকলে তবেই আমার হাতটা ধোরো, নাহয় কিছুতেই না। আমার উপর মেনটালি ডিপেনডেন্ট হয়ে যেয়ো না, প্লিজ, আমি সত্যিই সময়ের সাথে সাথে বদলে যাই। যতক্ষণ তুমি সামনে আছ, ততক্ষণই তোমার জন্য কলিজা কেটে দিতেও রাজি, তুমি সামনে থেকে সরেছ তো, অমনিই অন্যহাতে প্রাণ সঁপে দিই। আমার ভেতরটা রংচটা পেন্সিলের মতো। I am not trustworthy. আমার কাউকে নিয়েই কখনও দীর্ঘমেয়াদী প্ল্যান থাকে না। বর্তমানটাকে সম্পূর্ণরূপে ভোগ করে যাওয়াটা আমার স্বভাব, কালকের কথা খুব কমই ভাবি। তোমার আমার সম্পর্কে ধারণার অনেক অনেক অভাব! আমার ব্রেইনটা ওভাবেই তৈরি। আমার প্রায়ই মন খারাপ থাকে, তোমার মতোই। তুমিও বুঝতে দাও না, আমিও দিই না। যদিও দুইএকবার বুঝে ফেলেছ তুমি...দুইদিনের জীবনে এত আয়োজনের কী দরকার? Life is just a stupid time-machine, nothing else.


ছোটবেলাটা কেটে যায় জন্মদাতাদের ইচ্ছানুযায়ী, শৈশব কাটে নানা শাসন-শোষন আর শিক্ষালয় নামক জেলখানার ভেতরে,আর যৌবন? যৌবন কেটে যায় ক্যারিয়ার নামক ফালতু বিষয়ের পিছে দৌড়ে, ক্যারিয়ারের পরের জীবনটা উৎসর্গই হয়ে যায় নিজের সংসারের ঘানি টানতে টানতে, জীবনের শেষকালটা বয়ে যায় শারীরিক বার্ধক্যে। অথচ দেখো,মানুষ নাকি জন্মায়ই স্বাধীনভাবে বাঁচতে। জন্মের পর থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মানুষ আর স্বাধীন হলো কই? পৃথিবীতে একমাত্র স্বাধীন ও সুখী মানুষ হলো সে, যে বদ্ধপাগল! তার কোনও অপ্রাপ্তি অশান্তি অসুখ নেই। আমার হিংসে হয় তাদের, ওরাই একমাত্র মানুষ যারা যেখানে সেখানে কারণে অকারণে প্রাণখুলে হাসে, হাসতে পারে। আমি চাই, মরার আগে হলেও যেন একবার পাগল হই। একবার হলেও সুখী হবার লোভ আমার প্রবল। ভালোভাবে বাঁচতে ও ভালো মানুষ হতে পাগল হতেই হয়! চলো, আমরা দুইজন একসাথে পাগল হয়ে যাই। তুমি আমাকে কখন‌ওই জিজ্ঞেস করবে না আমি তোমার উপর রেগে আছি কি না। আমি তোমার উপর কখনও রেগে যাই না। কখনও যাব‌ও না। যদি কখনও যাইও, তবে সেটা সাময়িক। আমার ভালোবাসার কাছে এটা অনেক তুচ্ছ।


তুমি তো আমাকে বলেছ তুমি আমাকে সময় দিবে, কিন্তু আমি যে তোমার সাথে কথা বলার জন্য অপেক্ষা করতেই থাকি কখন তোমার সময় হয়, তুমি তো বোঝও না, আর আমি কষ্ট পাই। আমার খুব ইচ্ছা করে তোমার সাথে কথা বলতে। আমার তো আর সবার সাথে কথা বলতে ইচ্ছা হয় না। আমি অপেক্ষা করতেই থাকি করতেই থাকি, তবুও তুমি খোঁজ নাও না। আমি তো তোমাকে পাই-ই না। তুমি আমাকে অন্য ছেলেদের সাথে কথা বলতে বল, কিন্তু আমার অন্য কারও সাথে কথা বলতে ইচ্ছা না হলে আমি কী করব? তুমি আমাকে একটু সময় দিলে কি আমি এমন অভিযোগ করি? আমি তো তোমাকে ভালোবাসি, তা হলে আমি কেন তোমার কাছে সময় পাব না? আমি তো আর কিছুই চাই না তোমার কাছে।