হাতে ঘুড়ি, উড়ছে নাটাই

  
 আচ্ছা, ভালোবাসা মাপে ঠিক কেমন করে? কোনও যন্ত্র তো নেই!
 তা হলে এখন ভালোবাসাটা মাপব কী করে?
 ভালোবাসা মেপে ফেলা যায়, এমন একটা হোক না মিটার!
 যারা মিটার বানায়, ওদের একটা অর্ডার দেবে?
 আমার একটা মিটার লাগবে।
 মিটার পেলে দেখতে পাবো, ভালোবাসা ঠিক কেমন করে ওঠে-নামে!
 তখন যদি বলো ফের, ভালোবাসো তো?...মিটারে মেপে দেখিয়ে দেবো,
 ভালোবাসি আমি ঠিক কতটুক!
 সে-দিন লুকিয়ে রেখে, বানিয়ে বলে নিজেকে ভীষণ ভোগাব না আর!
 ঠিকঠাক করে বলেই দেবো, আমি কতটা খারাপ আছি!
 ভালোবাসার জ্বরে ভুগছি, ঘোরে ডুবছি...
 এই যে এখন বলি ‘ভালো আছি’, ওতে পুরোটায় মিথ্যের দায়!
  
 তুমি আমাদের ভালোবাসাটাও এমন করে বিকিয়ে দিলে!
 কিছুই রাখলে না আর ব্যক্তিগত!
 থাকতেই তো পারে অনেক কিছু, যা আমাদের---কেবলই তোমার আমার!
 যার কেউ কোনও দিন খোঁজ পাবে না,
 এমন একটা ঘর আমাদের হলো না কেন?
 এই যে এত সূক্ষ্ম-ছোটো রাগ-অনুযোগ,
 যা-কিছু আমায় বাঁচিয়ে রাখে...ওদের তুমি
 অগোচরে রোজ ছুঁয়ে যাও, তাই তো ওরা বড্ড কাছের!
 অভিমান আর অশ্রু যা আছে, তোমার আমার ব্যক্তিগত,
 সবটাই কেন বুঝিয়ে দিলে? কষ্ট কিছু থাক না আড়াল!
  
 আমায় ধরে বেঁধে মঞ্চে তুলে ভালোই তো আছ ওদের দলে!
 আমার ভেতরটাকে নেবার পরে বাইরে যে তাপ, ওদেরই দিলে!
 সে তাপের এতটুকও কি নাওনি তুমি?
 ভয়টা কীসের? বলেই ফেলো! ভালোবাসার আবার উচ্ছিষ্ট কী?
 মনে আছে, বলেছিলাম...ভালোবাসাটাও, সুযোগ বুঝে,
 কখনওবা, চড়া দামে বিকোয় শেষে? মিলে গেল তো!
  
 তুমি পেয়েছটা কী? এমন ধোঁয়ার বেশে আবছা এসে অকেজো করে ফেলে রেখে যাও!
 এক মায়া-পৃথিবী, অচেনা খুব...এক পরশ-তিয়াস, বেয়াড়া ভীষণ...
 রোমকূপের প্রতিটি গোড়ায় বাঁধন ছেঁড়ার মাতাল কাঁপন...
 অচেনা সুরে হারিয়ে যাবার, আর নিজেকে ভাসিয়ে নেবার দায়ের শাসন...
 এত কিছুর পরেও এ-মন দেবে না ধরা,
 তোমার প্রেমের মাদকতায় থাকব বেঁচে দূরে থেকেই!
 ভালোবাসা কী, বোঝার আগেই তোমায় ছায়ায়
 বোধ, অনুভব সবই হারাই!
 তুমি যত শরীর খোঁড়ো, আমি ততই মনকে খুঁড়ি!
 ভালোবাসা...তাকে জেনেছি যত, বুঝেছি ততই,
 ভালোবাসার মানেই হলো, কিছু না পেয়েও দেওয়ার সুখে নিজেকে রাখা!
 সেই হিসেবে আমার চেয়ে বেশি সুখী আর কে-ইবা আছে!
  
 এই যে আমি বুঝে না-বুঝে আঘাত করি,
 কষ্ট দিয়ে নষ্ট হয়ে ইচ্ছে করেই অবোধ থাকি,
 ওতে তোমারও কি বুকের ভেতর ক্ষত বাড়ে?
 তবুও কেন বলো না কিছুই? তোমারও বুঝি হৃদয় পোড়ে?
 কখনও তো চাইনি কিছুই তোমার কাছে,
 আমি যে কেমন, বলিনি তা-ও...
 তবু এ জীবনে যা দিয়েছ, যেমন আমায় নিয়েছ বুঝে,
 সেটুক দিয়েই তোমার পাশে হেঁটেছি তো পথ অনেকখানি...
  
 আমি জ্বালাই, না...খুব? কী করব, বলো...মনটা যে আমার বড্ড অবুঝ!
 ইচ্ছে তো হয়, তোমায় যখন তখন জড়িয়ে ধরে চুমু খেয়ে নিই,
 একটা জীবন লেপটে কাটাই তোমার বুকে...ইচ্ছে করে আরও কত যে কী!
 তুমি যখন তাকিয়ে থাকো, তখন আমি দৃষ্টি ফেরাই অন্য দিকে!
 তোমাকে দেখি, খুব লজ্জায় ছুঁই তোমাকে, বলি অনুরাগে...
 খুব তো মশাই তাকিয়ে আছ! ভালোবাসো তো?
 ঢের হয়েছে...এবার দেখি তাকাও তো ওদিক!
 আমার চোখে চোখ রাখলে আমি কি আর তাকাতে পারি!
  
 তোমার অমন রৌদ্র-হাসি দেখলে বড়ো ভালো লাগে, ক্লান্তি পালায়...
 হেসো না তো অমন...একটু-আধটু দুঃখ দিয়ো সময় করে।
 কষ্ট গিলে, নিজের বুকেই একহিমালয় দুঃখ ঠেলে,
 পরাজয়ের গ্লানি মেখে যখন আমি তোমার কাছেই আসব ফিরে,
 তখন আর কিছু নয়, একটুখানি ছুঁয়ে দিয়ো, ছুঁতে দিয়ো!
 পাশে থাকো যদি, ইচ্ছেঘুড়ি উড়িয়ে দেবো...ভালোবাসার পাল ছোটাব...
 নাটাই কি হাল, ধরব না তো...ছুটুক না মন ইচ্ছেমতো!
  
 তুমি এ ঘরে এলে আঁচল পেতে বসতে দেবো, জিরোতে দেবো...হাতে তুলে খাইয়ে দেবো...
 বাঁধব প্রেমে, একজীবনে তোমার হব...যেমন করে চাইবে তুমি, তেমনই রব।
 সবারই বুঝি এমন একটা মানুষ থাকে, যাকে জিতিয়ে দিয়েই শান্তি মেলে!
 তুমি যে আমার তেমন মানুষ...
 এ জীবনে এমনি করে সূর্য হয়েই হেসো,
 আঁধারঘরের সলতে ক্ষয়ে প্রদীপ হয়ে এসো।