হৃদয়ের জন্যে দুইচার লাইন

 
আচ্ছা, ধরো, আমাদের কথা তোমার পরিবার জেনেই গেল!
অবাক হচ্ছ? জেনে তো যেতেই পারে, না? যদি জেনে যায়ই,
কী হবে তখন, বলো তো?
ধরো, ওরা এও জানল, আমি অন্যধর্মের মানুষ।
সবার আগে তোমার বাবা-মা’ই তো আঙুলটা তুলবে, তাই না?
আর বলবে, এত নিচে নামলি তুই? জাতকুলটাও খোয়ালি শেষপর্যন্ত? ওই মেয়েটাই কিনা তোকে ফাঁদে ফেলল, বাবা! ছিঃ!


তখন তুমিও কি জীবনটাকে ওই একটা ছিঃ’তেই আটকে ফেলবে?


ধরো, ওরা জানল হঠাৎ, তুমি সময় পেলেই লুকিয়ে লুকিয়ে
আমার হাতের রান্না খেতে চলে আসতে।
আমার ঘরে তোমার জন্য ফ্রিজভর্তি করে নিষিদ্ধখাবার রান্না করা থাকত।
তুমি গাপুসগুপুস করে, চেটেপুটে পেটপুরে রোজ সে খাবার খেতে।
তখন ওরা ভীষণ রেগে তোমায় পাপী করবে অন্নপাপে?
তোমায় টেনেহিঁচড়ে ঠাকুরঘরে নিয়ে যাবে, আর
দেবতার সামনে বসিয়ে শপথ করাবে,
যেন আমার হাতে এই অন্নপাপটি আর কক্ষনো না করো! তাই না?


তুমিও কি তখন এমন পাপের সবটুকু সুখ ভুলেই বসবে পুণ্য খুঁজে?


ধরো, ওরা কোনও একভাবে জেনে ফেলল,
তুমি ভালোবেসে আমায় আদর করতে, আর
বুকে লেপটে জড়িয়ে ধরে রাখতে।
কখনও-বা হারানোর ভয়ে কেঁদেও ফেলতে!
এসব জানতে পেরে ওরা বুঝি তোমায় নরকের কীট ডাকবে?
তোমায় গঙ্গাজলে স্নান করাবে, আর পাপধুয়ে শুদ্ধ করবে। তাই না?


তুমি কি তখন শুদ্ধ হয়ে সকল অশুদ্ধতার শ্রাদ্ধ করার ভারটা নেবে?


ওরা যখন ঠিক জানবে,
তুমি কত রাত যে না ঘুমিয়ে আমার সাথে প্রেম করতে!
দুজনের ভোর আসত একইসাথে, ফোনের এপারে ওপারে!
ওরা এসব জানতে পেরে শেষমেশ বসবে বলেই, তুই চরিত্রহীন!
শক্ত শক্ত কথার তীরে বিদ্ধ করে,
তোমার ছেঁড়াছিন্ন কলজেটাকে আরও একটু ছিঁড়েই দেবে!


ভীষণ কাঁদবে তখন? ছেঁড়াকলজে থেকে আমায় বুঝি ফেলবে ছুড়েই…অভিমানে?


ধরো, ওরা যদি জেনেই যায়,
তোমার আগের মুঠোফোনটা আমার কাছে,
আমরা দুজন খুব গোপনে বেনামি একটা সংসারও পেতেছি,
তুমি আমি মিলে একটা চিলেকোঠার ঘর নিয়েছি,
আমাদের সে নতুন ঘরে রাশি রাশি সুখ ছড়ানো,
…এটুক জেনেই ওদের মেজাজ ভীষণ চড়বে! রেগেমেগে
তোমার টাকাপয়সার হিসেব চাইবে, আর বলবে,
ফের যদি গেছিস ওই মেয়ের কাছে, আমরা দুজন মরব তবে!


এমন মৃত্যু তো চলছে ঘটেই বছর বছর! তবুও আমায় দূরে ঠেলবে?


ধরো, তুমি ধরাটা পড়েই গেলে ওদের কাছে!
মা তোমায় বকছে ভীষণ!
বাবা খুব রাগের চোটে তোমার গালে চড় বসাল!
তোমার ছোট বোনটা ছিঃ ছিঃ বলে ছুড়ছে ঘৃণা!
বাকিরা সবাই এ-কানে ও-কানে তোমার কুৎসা রটাচ্ছে, হয়নি যা ছড়াচ্ছে তাও!


তুমি নিশ্চয়ই খুব ভড়কে যাবে! এই ঘরটা তখন ভেঙেই ফেলবে!...সত্যিই তুমি করবে এমন?


এবার আসি আসল কথায়!
তুমি যখন একাকিত্বে ডুবছ ভীষণ,
প্রতিদিনই মরতে যখন,
কাঁদতে যখন অহর্নিশি,
…তখন ওরা তোমার খোঁজ জানত?
তোমার পোড়া-কলজের দাগগুলো কেউ দেখতে পেত?
যে হৃদয় ছিল অগ্নিগিরি, তার খবর নিত?
তোমার ভালোলাগা, মন্দলাগা…ওরা জানত কি কেউ?
তুমি ভালো কী বাসো, আর কী বাসো না…ওরা কেউ বুঝত নাকি?
ওরা তোমায় নিয়ে ভাবত কিছু?
জানত আদৌ তুমি সত্যিই কে?


কেউ একজন জানত সবই! তোমায় তোমার মতোই মেনে নিয়ে বাসত ভালো। এখনও বাসে!


অথচ দেখো, এই যে
কেউ তোমার খোঁজ রাখছে খুব গোপনে,
তোমার প্রিয় কী, বোঝে; অপ্রিয়টাও বুঝতে পারে,
মরখারাপের গল্পগুলোর কারণ জানে,
…তুমি তারই সাথে জীবনটাকে ভাগ করেছ,
ওর দরোজায় সুখ খুঁজেছ, পেয়েও গেছ…
এর যখনই হদিস পাবে, তখনই ওরা সবাই মিলে
তেড়ে আসবে…চোখে লাল কাপড়বাঁধা ষাঁড়ের মতন! আমাদের এই ঘর ভাঙবে…সেই একছুটে!


সমাজের সব শালারাই ধর্ম বোঝে, মন বোঝে না!
তুমি ওদের চোখে বাধ্য থাকো,
গলাটাও নামিয়ে রাখো ওদের রায়ে,
ওরা চায় তো এটাই!
তুমি মরে গেলে কি থাকলে বেঁচে,
ওতে ওদের কী এসে যায়?


খোদা ভগবান, যা ইচ্ছে বলো,
বুদ্ধ কিবা যিশুই বলো,---
তিনিই তো প্রেম দিয়েছেন এই হৃদয়ে!
প্রার্থনা কিংবা ইবাদতই বলো…সেখানে
ভালোবাসা বাদে আর কী রয়েছে!
যদি ভালোবাসা হয় আলাদা জাতে,
কুলে গোত্রে মিলও না থাকে,
সত্যিই কার ক্ষতি কী তাতে?


দিল রাজি তো খোদাও রাজি!
হাসলে হৃদয়, ভগবানও ওঠেন হেসে!
এ সত্যটা সবাই বোঝে, তবু কেউ মানে না!
এ সমাজ কেবল ধর্মই চেনে, মানুষ চেনে না!