ভাবনাদেয়ালের পলেস্তারা: ১০৩


ভাবনা: সাতশো চৌদ্দ
...............................................................
এক। কিছু মানুষ আদর করে ছাগলকে, আর দুধ খেতে ইচ্ছে করলে ছুটে যায় গরুর কাছে, কেননা ছাগলের দুধের চাইতে গরুর দুধ খেতে ভালো। অথচ ওদের মাথায়ই আসে না যে, ছাগলটা আদর পেয়েছে বলে দুধ দিতে অনেকটা বাধ্য, গরুটা নয়। আবার ওদের মধ্যে কিছু কিউট বেআক্কেলও দেখি, যারা গরুর কাছ থেকে দুধ না পেলে রীতিমতো 'মাইন্ড' করে বসে! বাই দ্য ওয়ে, ওরা যদি কোনওমতে গরুর কাছ থেকে দুধটা সংগ্রহ করতেও পারে, তারপর ওরা কিন্তু ঠিকই ফিরে যাবে আবার সেই ছাগলেরই কাছে। আমি বলি কী, গরুর দুধ পেতে চাইলে আগে গরুকে সময় দিতে হবে, আদর দিতে হবে। তখন দুধটা আর চাইতে হবে না, ওটা আপনাআপনিই পেয়ে যাবেন। আদর পাবে ছাগল, আর দুধ দেবে গরু---এটা আবার কেমন বিচার?
দুই। যে কথা রাখতে পারব না, সে কথা ঠোঁটের বাইরে বের করে না দেওয়াই ভালো। কথা বরাবরই ঠোঁটের ভেতরেই নিরাপদ। মানুষের সম্মান কমে কখন, জানেন? কিছু করতে ব্যর্থ হলে কারও সম্মান কমে না, ব্যর্থতা আমাদের জীবনযাপনেরই অবিচ্ছেদ্য অংশ। তবে কিছু করতে পারবে, এমন কথা দিয়ে কেউ তা রাখতে না পারলে তখনই কেবল তার সম্মান কমে। কমিটমেন্ট অনেক বড়ো একটা ব্যাপার। কথা রাখতে না পারলে শুরুতেই সরাসরি 'না' বলে দেওয়াটাই সম্মানজনক। পরের তিতার চাইতে আগের তিতা অনেক অনেক ভালো। শুরুতে মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে পরে তা রাখতে ব্যর্থ হলে মানুষের কাছ থেকে ঘৃণা ছাড়া আর কিছুই পাওয়া যায় না। যে কথা দিয়ে কথা রাখতে পারে না, আমি মনে করি, এমন মানুষের কারও পায়ের জুতা হবারও যোগ্যতা নেই।
তিন। নিজের শক্তির উপর পূর্ণ বিশ্বাস রাখার মানে এ নয় যে অন্যের শক্তিকে ছোটো করে দেখা। কোনও একটি বিষয়ে অগাধ পাণ্ডিত্য অর্জনের অর্থ এ নয় যে ওই বিষয় নিয়ে অন্য কারও জানাটাই পাপ। নিজেকে সেরা ভাবা দোষের কিছু নয় ততক্ষণ পর্যন্তই, যতক্ষণ আমার এমন ভাবনা অন্য কারও জীবনযাত্রায় কোনও বাধার সৃষ্টি করছে না। অন্যকে খারাপ না ভেবে নিজেকে ভালো ভাবতে জানার নামই মানসিক পরিপক্বতা। যদি কেউ ধরেই নেয়, সে যা ভাবে, তা-ই সঠিক, বাকিদের ভাবনা ভুল, তবে বুঝতে হবে, সে একধরনের হীনমন্যতায় কিংবা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।
চার। মুকুট পরার চাইতে অনেক বেশি জরুরি নিজের মাথাকে মুকুটটা ধরে রাখার জন্য যথেষ্ট মজবুত করে তৈরি করা। সময়ের আগে পুরস্কারের ভার অনেকেই সামলাতে পারে না, তাই সময়টা আসবার জন্য অপেক্ষা করতে হয়। আমরা ঠিক ততটুকুই পুরস্কৃত হই, যতটুকু ধারণ করার সামর্থ্য আমাদের আছে। সময়ের আগে কিংবা সামর্থ্যের বাইরে কিছু পাওয়ার অর্থই হলো, নিজের অস্তিত্বকে বিপন্ন করে তোলা। যে ব্যক্তি দুদিন পরই অন্ধ হবেন, তিনি ঈশ্বরের কাছে আয়না চাইলেও ঈশ্বর তাঁকে তা দেবেন কেন?
পাঁচ। মানুষের দোষত্রুটি দেখে সে কোন স্তরের মানুষ, তা বোঝা যায়। উঁচু স্তরের মানুষের দোষের সাথে নিচু স্তরের মানুষের দোষ কখনওই মিলবে না। দোষ একই হলেও দোষটা করার ধরনটা অবশ্যই ভিন্ন হবে। মজার ব্যাপার হলো, কখনও কখনও, এক স্তরের দোষ বা দোষটা করার ধরন, আরেক স্তরের চোখে হয়তো দোষের মধ্যেই পড়ে না! দোষ বরাবরই আপেক্ষিক একটা ব্যাপার।
ছয়। জীবনে তুমি চার ধরনের প্রাক্তনের দেখা পাবে:
১। যে তোমাকে এখনও ভালোবাসে, কেননা সে তোমাকে ঘৃণা করতেই পারে না, কিংবা ভুলতেই পারে না।
২। যে তোমাকে ঘৃণা করে না, কেননা তোমাকে ঘৃণা করার সময়ই তার হাতে নেই, কিংবা তুমি তার কাছে ঘৃণ্য নও।
৩। যে তোমাকে ঘৃণা করে, কেননা তোমরা আসলে পরস্পরকে কখনও ভালোবাসতেই পারোনি!
৪। যে তোমাকে ভালোও বাসে না, ঘৃণাও করে না, কেননা তোমার কথাই তার মনে নেই, কিংবা সে ভীষণ ব্যস্ত!
সাত। তুমি যার সত্যের কদর করতে পারো না, তার মিথ্যের আদর করা তোমাকে ক্রমেই শিখে নিতে হবে। যার চেহারা দেখলে তুমি রেগে আগুন হয়ে ওঠো, তার মুখোশ দেখেই তোমাকে বাকি জীবনটা কাটিয়ে দিতে হবে। এই পৃথিবীতে কত কত মানুষ যে স্রেফ শান্তি বজায় রাখতে দিনের পর দিন মিথ্যের আশ্রয়ে বাঁচে, তা তুমি ভাবতেও পারবে না। জেনে রেখো, এর জন্য তুমি এবং তোমার মতন মানুষেরাই দায়ী। তোমরা মুখে মুখে সত্যের জয়গান গাইতে থাকো, অথচ মেনে নিতে পারো কেবলই মিথ্যা, বড়োজোর অর্ধসত্য।
আট। যা হয়ে গেছে---ঠিক পথে কিংবা ভুল পথে, তা নিয়ে ঘাঁটানোর মানে হলো, তোমার হাতে করার মতন তেমন কাজ নেই।
যা হয়ে আসছে---ঠিক পথে কিংবা ভুল পথে, তা নিয়ে ঘাঁটানোর মানে হলো, সেটাতে তোমার কিছু-না-কিছু স্বার্থ আছে।
মানুষ কোনও কিছু নিয়ে ঘাঁটায় তখনই, যখন সে বেকার কিংবা সেখানে তার একটা স্বার্থ থাকে।
নয়। আমরা দেবতার ছবি চোখের সামনে রেখে প্রণাম করবার সময় ভাবি, দেবতা যেন আমাদের সামনেই উপস্থিত আছেন।
আমরা নিজের বাবার ছবি চোখের সামনে রেখে প্রণাম করবার সময় জানি, বাবা আমাদের সামনে নেই, তিনি গত হয়েছেন।
প্রথমটির নাম বিশ্বাস, দ্বিতীয়টির নাম জ্ঞান।
দশ। যে তোমাকে সহজভাবে গ্রহণ করতেই পারে না, তোমার প্রতিটি কথার মধ্যেই প্যাঁচ খুঁজতে থাকে অকারণেই, তার সাথে কথা বলার চাইতে যন্ত্রণার আর কিছু নেই। তোমার হৃদয়কে যে তার মগজ দিয়ে বোঝার চেষ্টা করে, তার মগজকে তোমার হৃদয় দিয়ে বোঝার চেষ্টা করার অর্থই হলো, নিজেকে ইচ্ছে করে কষ্ট দেওয়া। প্যাঁচ সুস্বাদু লাগে জিলাপিতে, মানুষের মধ্যে নয়। কিছু কিছু মানুষ জন্ম নেবার সময় থাকে মানুষের বাচ্চা, বেড়ে ওঠার সময় হয়ে যায় জিলাপির বাচ্চা।
এগারো। প্রতিদ্বন্দ্বিতা যদি করতেই হয়, তবে তার সাথেই করব, যার সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামলে জেতার সম্ভাবনা ক্ষীণ। জিততে না পারি, কিছু শিখতে তো অন্তত পারব। ওদিকে, যার সাথে সহজেই জিতে যাব, তার সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামলে দুটো ব্যাপার ঘটতে পারে:
১। যদি কোনওভাবে হেরে বসি, তবে নিজের সমস্ত আত্মবিশ্বাস একেবারেই ধূলিসাৎ হয়ে যাবে। আমার তুলনায় কম সামর্থ্যসম্পন্ন কারও কাছে হেরে যাওয়ার চাইতে লজ্জার আর কিছু নেই।
২। যদি স্বাভাবিকভাবেই জিতে যাই, তবে সে প্রতিদ্বন্দ্বিতা আমাকে নতুন কিছুই শেখাতে পারবে না। ছাগলের শিং ধরে তাকে শূন্যে ঘোরানোর চাইতে বরং সিংহের থাবার ঘায়ে রক্তাক্ত হওয়া অনেক গৌরবের।


ভাবনা: সাতশো পনেরো
...............................................................
এক। মানুষের প্রতি বিশ্বাস হারিয়ে বাঁচা খুব কঠিন। তবে তার চাইতে কঠিন হলো, মানুষকে বিশ্বাস করে ক্রমাগত ঠকে ও কষ্ট পেয়ে বাঁচা। মানুষের বিশ্বাস গাড়ির ইঞ্জিনের মতো, ইঞ্জিন যেমনি গাড়িকে চলতে সাহায্য করে, ঠিক তেমনি বিশ্বাস মানুষকে বাঁচতে সাহায্য করে। তবে কী জানেন তো, বিকল ইঞ্জিনে গাড়ি চালিয়ে দুর্ঘটনায় পড়ার চাইতে ঢের ভালো...কষ্ট করে হলেও ঠেলে ঠেলে গাড়িটা চালিয়ে নেওয়া। কাজটা সময়- ও শ্রমসাপেক্ষ হতে পারে, তবে পুরোপুরি নিরাপদ।
দুই। সত্যকে বুঝেও সে অনুযায়ী কাজ না করা, এর নাম কাপুরুষতা, তবে সবসময় তা নয়। কখনও কখনও, এর নাম আত্মরক্ষা। আত্মরক্ষার বদলে সত্যরক্ষায় আত্মাহুতি নির্বুদ্ধিতার নামান্তর। একটা সত্যের প্রতিষ্ঠার স্বপ্নে মৃত্যুবরণ করার চাইতে বেঁচে থেকে হাজারো সত্যের প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা অনেক অনেক ভালো।
তিন। যদি সত্যিই আপনার কারও সাহায্যের কিংবা সময়ের দরকার হয়, তবে সে আপনার ব্যাকরণে চলবে, এমন চিন্তা ভুলেও মাথায় আনবেন না, বরং আপনাকেই তার ব্যাকরণে চলতে হবে, এটাই মেনে নিন। যদি তা করতে না পারেন, তবে তার কাছ থেকে সাহায্য কিংবা সময় পাবার আশা এই মুহূর্তেই ছেড়ে দিন। আমি কিছু মানুষকে দেখেছি, যারা নিজেকে খোলসের মধ্যে রেখে অন্যকে খোলস থেকে বের করে আনার স্বপ্ন দেখেন। ওদের দেখি আর হেসে বলি: ভায়া, কেন বুঝতে চাইছ না যে দরকারটা কেবলই তোমার!
চার। কেন শিখছি, তা না-ভেবেই আমরা অনেক কিছু শিখে ফেলি। প্রায়ই, সেই শিক্ষা আমাদের তেমন কোনও কাজে লাগে না।
কখনও কখনও, ভেবেই শিখি, তবে ভাবনাটা আসে মনের সংকীর্ণতা বা অন্ধত্ব থেকে, সেক্ষেত্রে শিক্ষাটা ভয়ংকর পরিণতি নিয়ে আসে।
পাঁচ। দামি মানুষ তার কাজ অনুযায়ী কথা বলে। ওদের একটাই নীতি: আগে কাজ, পরে কথা। ওদের কাজই ওদের কথাটা বলে দেয়।
সস্তা মানুষ তার ইচ্ছা অনুযায়ী কথা বলে। ওদের একটাই নীতি: আগে কথা, কাজ হবে কি হবে না, তা পরে দেখা যাবে।
ছয়। মানুষের একটা বিচিত্র স্বভাব হলো, সে কীসে শান্তি পায়, তা কখনও কখনও লুকিয়ে রাখতে পারলেও, কীসে সে অশান্তিতে ভোগে, তা প্রায়ই লুকিয়ে রাখতে পারে না, প্রকাশ করে ফেলে। ফলে সে সবসময়ই তার আশেপাশে এমন কাউকে-না-কাউকে পেয়ে যায়, যে তার দেখানো পথেই তাকে অশান্তির দিকে ঠেলে দেয়। যারা নিজেরা শান্তিতে নেই, তারা অন্যদের অশান্তিতে দেখতে ভীষণ পছন্দ করে---হ্যাঁ, এমন লোকের সংখ্যাই বেশি!
সাত। ৯৬% প্রেমই নিচের যে-কোনও এক ধরনের:
যে প্রেমে ইতোমধ্যে ব্রেকআপ হয়ে গেছে
যে প্রেমে এখনও ব্রেকআপ হয়নি
(এই পোস্টটা যাঁরা পড়ছেন, তাঁদের ৯৬%-ই ধরে নিচ্ছেন, তাঁরা 'এ বাঁধন যাবে না ছিঁড়ে' টাইপের কোনও রিলেশনে আছেন, মানে তাঁরা বাকি ৪% কাপলদের অন্তর্ভুক্ত হবেনই হবেন! এরকম হয়, ব্যাপার না!)
আট। প্রত্যাশাশূন্যতা---এর চাইতে বড়ো সম্পদ আর নেই। যার কাছে এই সম্পদ আছে, তাকে চোখ বন্ধ করে ভালোবাসা যায়, কিংবা তার ভালোবাসা চোখ বন্ধ করে গ্রহণ করা যায়। আর যার কাছে এটা নেই, তাকে ভালোবাসলে, কিংবা সে ভালোবাসলে দুই পক্ষকেই তীব্র যন্ত্রণার মধ্যে জীবন কাটাতে হয়। প্রকৃত ভালোবাসা সবসময়ই প্রত্যাশাশূন্য। আসলে ভালোবাসা কষ্ট দেয় না, কষ্টটা দেয় প্রত্যাশা।
নয়। যদি করো এত এত বার ফোন,
ধরে বলব, 'কেমন আছো, বোন?'
ভাবছো তুমি, ভালো বুঝি বাসছো বেশ,
বোঝোই তো না, এ যে বিরক্তির একশেষ!
আমি সত্যিই বাজে প্রেমিক, ব্যস্ত নানান কাজে,
ভালো পাবে রাস্তাঘাটেই, সারাদিন ভেরেন্ডা ভাজে।
স্বপ্ন দেখতে, ভালো নাহয় ওকেই বেসো,
স্বপ্ন ধরতে, সময়মতো ফিরে এসো!
দশ। কেউ কেউ, পান না, তাই খান না।
কেউ কেউ, পেলেও খান না।
কেউ কেউ, পেলেই খান না।
(স্ট্যাটাসটা বুঝেন নাই কারা কারা, হাত তুলেন।
.........................................................................
হ্যাঁ, হাত দেখা শেষ, এবার নামায়ে ফেলেন।)
এগারো। ওরে, হালার ভাব রে!
আয়, ভাই, বুকে আয়!
তুই জীবনে কিছু করতে না পারলেও ভাব বেইচা চানাচুর খাইতে পারবি।
বারো। Life is too short. If I spend whole of it in just compromising, when will I enjoy it?
তেরো। ধরুন, আপনি কারও ফ্রেন্ডলিস্টে আছেন (ফলোয়ারলিস্টে নয়)। তো সেই ব্যক্তিকে ইনবক্সে কোন‌ও মেসেজ পাঠালে, তিনি প্রতিদিন অনলাইন হওয়া সত্ত্বেও, যদি কয়েক দিন আপনার মেসেজ না দেখেন, কিংবা দেখেও রিপ্লাই না করেন, তবে সেই মহামান্য ব্যক্তিকে ফ্রেন্ডলিস্টে রাখার কি কোনও মানে আছে? এমন কাজ যদি আমিও আপনার সাথে করে থাকি, তবে আমাকে এই মুহূর্তেই আপনার ফ্রেন্ডলিস্ট থেকে রিমুভ করে দিন। পৃথিবীতে কেউই অপরিহার্য নয়, কেউ কেউ কিছু আত্মতৃপ্তি কুড়ানোর জন্য নিজেকে অপরিহার্য ভাবেন, আর ভাব নেন।
চৌদ্দ। ইনবক্সে প্রায় সময় মেসেজ পাই:
ইংরেজিতে ও গণিতে দুর্বলতা দূর করার জন্য কী করণীয়?
আয়নার সামনে দাঁড়ালে নিজেকে ইদানীং ঘোড়ার পাশে সালমান খানের ছবিওয়ালা কলিকাতা হারবাল কলিকাতা হারবাল লাগে।
পনেরো। এই দেশে, যাঁরা গ্রুপ অব কোম্পানিজের করদাতা মালিক, তাঁদেরও (সত্যি সত্যি) অতটা ভাব নেই, যতটা ভাব দেখান গ্রুপস অব ফেইসবুকের কিছু সম্মানিত মালিক।
ছোটোবেলায় রেডিওতে অনুরোধের গানের আসর-এ শ্রদ্ধেয় শিল্পী আঞ্জুমান আরা বেগমের কণ্ঠে 'পিতাপুত্র' মুভির একটা গান খুব বাজত:
নামের বড়াই কোরো নাকো,
নাম দিয়ে কী হয়?
নামের মাঝে পাবে নাকো সবার পরিচয়।
গানটা আজ, কেন জানি না, কানে মনে এরকম করে বাজছে:
গ্রুপের বড়াই কোরো নাকো,
গ্রুপ ফইন্নিরও হয়,
গ্রুপের মাঝে পাবে নাকো নিজের পরিচয়।
তারপর বলুন, এই যে মাথায় ও পকেটে তেমন কিছু না থাকা সত্ত্বেও, এত এত গ্রুপের সম্মানিত মালিক হয়ে বসে আছেন, সবাইকে সমানে সেগুলিতে যুক্ত করেই যাচ্ছেন, গ্রুপের সদস্যদের সামনে হেব্বি ভাব **চ্ছেন,...বাসায় জানে?
ষোলো। যদি কোনও প্রত্যাশা না-রেখে থাকতে পারো, এসো। বুকের মধ্যে যত্ন করে রাখব। ব্যথা দেবো না, ব্যথা নেবো না। এটুক জানি।
যদি না পারো, এসো না। এলে কাঁদতে হবে, জেনে রেখো। তারচে বরং, ভালো থাকো, আমিও একটু থাকি অমন ভালো।
ভালোবাসা ধারণ করার মতো আয়ু আছে কি না জানি তো না! যখন বাঁচব আর কদ্দিন, তা-ই জানি না, তখন অত চাপ মাথায় নিয়ে কী হবে, বলো?


ভাবনা: সাতশো ষোলো
...............................................................
এক। তুই আমার সাথে কথা বল, আমার খারাপ লাগছে। একটা মানুষ পাগলামো করছে, এটাও নাকি দেখতে ভালো লাগে মানুষের। লোকে যখন পাগলাগারদ, মানে মানসিক ব্যাধির হাসপাতালে যায়, তখন ব্যাপারটা আমার কাছে একটুও ভালো লাগে না।
জানি, এসব একটা কথারও কোনও মানে নেই তোর কাছে। পড়েও দেখবি না তুই। সব শেষ হয়ে গেছে, তাই না? আচ্ছা সব শেষ হয় কীভাবে? কী করলে? দেখা না করলে? আমরা কি শুধু দেখাটাই করতাম? আর কিছুই কি ছিল না? তোর কী ছিল, জানি না। আমার তো অনেক কিছুই ছিল। এগুলোকে কি তুই আমার দোষ বলবি?
কেন আমার তোকে মেসেজ দেওয়ার আগে এত কিছু ভাবতে হবে? আমার ভয় পেতে হবে কেন? কেন আমার যখন ইচ্ছা তখনই, যা ইচ্ছা তা-ই তোকে বলে ফেলা যাবে না? কেন তোর কাছে কথা লুকিয়ে রাখতে হবে আমার? আমি কেন আমার সুখের কিংবা যন্ত্রণার কথা তোকে বলতে পারব না? আমার এত নিয়ম মেনে চলতে হবে কেন?
আমি পাগলামি করছি এটা ঠিক, কিন্তু আমাকে পাগল ধরে নেওয়ার কিছু নাই। আমি পাগল না কিন্তু, যদিও তুই কখনও আমার কথায় গুরুত্বই দিস না! বুঝিসই না, আমি কী বলি। আমি কত হাজার মেসেজ দিয়েও তোকে আজ পর্যন্ত বোঝাতেই পারিনি যে আমি কী বলতে চাই!
তুই সবাইকে ভালোবাসিস, আমাকে বাসিস না। তুই সবাইকেই সময় দিস, আমাকে দিস না। তুই এমন একটা ভাব করিস যেন আমি তোর কেউই হই না। এত মানুষের জায়গা হয় তোর পৃথিবীতে, আর আমার একলার একটুও জায়গা কোথাও হয় না ওখানে।
হ্যাঁ, আপনি সবার সাথেই কম-বেশি কথা বলেন। যাদের সাথে কথা বলার কোনও দরকার নাই, তাদের সাথেও বলেন। শুধু আমার সাথেই বলেন না। আপনি শুধু আমাকেই দেখতে পান না, আর সবাই-ই আপনার চোখের সামনে থাকে। আপনি শুধু আমাকে দেখলেই চোখ বন্ধ করে রাখেন।
আপনার কাছ থেকে সেইসব মানুষই সব পায়, যা তাদের পাওয়ারই কথা। এমনকি সেইসব মানুষও সব পায়, যা তাদের পাওয়ার কথাই না। শুধুমাত্র আমাকেই বঞ্চিত করেন আপনি। এবং সেটা করেন ইচ্ছে করেই, সবসময়ই!
দুই। আমি দুনিয়ার যা-ই বলি, সবই আপনি সন্দেহের চোখে দেখেন। আমাকে চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করার কিছু নেই, এটা ঠিক, কিন্তু এত সন্দেহ করারও কিছু নেই। আজকে কী হয়েছে, বলি। আমি একটা সবুজ শাড়ি পরেছিলাম। আমাকে সুন্দর লাগছিল দেখতে। আজকের ছবিগুলোও সুন্দর হয়েছে। আমি সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় আঁচলে পা লেগে একদম সিনেমার মতো করে গড়িয়ে নিচে পড়ে গেছি। (অবশ্য, উইথ নো ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক!) এমন ব্যথা পেয়েছি মাথায় আর কোমরে যে জ্বর এসে গেছে। মাকে বলার সাহসই পাইনি এখনও।
এ সবই করেছি টেনশন সরিয়ে রাখতে। যখনই টেনশন কমানোর জন্য কিছু করি, তখনই টেনশন বাড়ে। তার মধ্যে বাসায় এসে দেখি ওই মেসেজ, ওই যে স্ক্রিনশট পাঠালাম যেটার। সে আপনাকে নিয়ে কয়েকটা বাজে কথা বলেছে। আমার তো খুবই মেজাজ খারাপ হয়েছে। জানেন, মানুষ যখন আপনাকে নিয়ে বাজে কথা বলে বা বাজে কমেন্ট করে, আমি না সহ্যই করতে পারি না! যখন ভান ধরতে হয় যে আমি আপনাকে চিনিই না, সেই সময়টায় যে কী খারাপ লাগে, তা বলে বোঝাতে পারব না।
অবশ্য আপনাকে এসব খারাপ-লাগার কথা বলে লাভও নাই। আপনি জীবনেও আমাকে, আমার খারাপলাগাকে বোঝেন নাই। এত বড়ো কিছু আসলে আমি এক্সপেক্টও করতাম না কখনও। যে ভুল আমি করিইনি, তারও বিশাল বিশাল শাস্তি আপনি আমাকে দিয়েছেন। শুধুই কান্না ছাড়া আমি আর কিছুই করতে পারিনি। আমার আশেপাশের উলটাপালটা কথা বলা লোকজন যতখানি কষ্ট দেয়, তার চেয়ে কয়েকশো গুণ বেশি কষ্ট আপনি আমাকে দিয়েছেন। সব সময় খারাপ ব্যবহার আর অবহেলা সহ্য করতে করতে নিজেকে মাঝেমধ্যে আর মানুষই ভাবতে ইচ্ছে করে না।
জানেন, আমার না সত্যিই মনে হয় এখন যে আমি যদি আপনাকে আসলেই না চিনতাম! কিংবা সত্যিই যদি এসব বাজে কথা আমার গায়ে না লাগত! আমি যদি এগুলোকে ‘আমার কিছুই যায় আসে না!’ ভেবে উড়িয়ে দিতে পারতাম! আমি কেন কষ্ট পাবো আপনার সমালোচনায়? আপনি তো কেউ না আমার, এটা যদি ভাবতে পারতাম, খুব সুখ হতো তাহলে!
তিন। প্রিয় মানুষটাকে অনেক কিছু লিখি! কিন্তু লেখার পরে আবার কেটে ফেলি, পাঠাই না আর! সে কি-না-কি ভাবে! আমি যতদূর জানি, প্রিয় মানুষটাকে কিছু বলতে, কোনও কিছুই ভাবতে হয় না, অনর্গল সব বলে দেওয়া যায়। ভুল হলে ভুল, ঠিক হলে ঠিক---সেটা প্রিয় মানুষটাই বুঝে নিবে! অথচ ভেবে ভেবেই কথা বলতে হয় এই কঠিন সমাজে কথা বলতে চাইলে! কঠিন কঠিন মানুষ, কঠিন কঠিন কথা, কঠিন কঠিন যুক্তি…আরও কত কী!
পৃথিবীর সব কঠিন শব্দ এক দিকে, আর প্রিয় মানুষটা ঠিক অন্য দিকে থাকে। প্রিয় মানুষটাকে শুধু ভালোবাসা যায়, আর সম্মান করা যায়। কারণ তারই কাছে আমার পুরো অস্তিত্বটা! আফসোস, এইসব কথা কেবল লিখতে আর পড়তেই ভালো লাগে, বাস্তবে এতটা সহজ নয় ব্যাপারটা!
চার। আমাদের একজন স্যার আছেন, যাঁর কাছে আমরা চারজন মেয়ে আর তিনজন ছেলে প্রাইভেট পড়তাম। স্যার মোটামুটি বয়সের। আমি তাঁকে ভালো হিসেবেই জানি। আমার অন্য মেয়ে-ফ্রেন্ডরা বলত, স্যার, ভালো না। উলটাপালটা কথা বলে, বাজে মেসেজ দেয়। কিন্তু আমি নিজে কখনও স্যারের কাছ থেকে ওরকম কিছু পাইনি।
হঠাৎ সেদিন আমি মেসেঞ্জারের আনরিড মেসেজের অপশনে গিয়ে দেখলাম, সে আমাকেও কত কিছু যে লিখেছে! কী যে নোংরা সব মেসেজ! চিন্তাও করা যায় না। পরে ধীরে ধীরে আরও জানলাম যে, সে এরকম করে অনেকের সাথেই। তারা ভয়ে আর লজ্জায় বলতে পারে না। আমি স্যারকে বলেছি, এইসব কাজ উনি আরও করলে আমি প্রিন্সিপ্যাল স্যারকে সব বলে দেবো।
এর পরে দেখলাম, আমাকে ভাইভায় ফেইল করানো হয়েছে। অথচ আমি সাবজেক্টিভে ৮৩ পেয়েছিলাম। নিজে দেখেছি। আমার সাথের ছয়জনের একজন মেয়ের ছাত্রত্ব বাতিল করা হয়েছে এইজন্য যে, সে নাকি স্যারের চরিত্র নিয়ে ‘মিথ্যা’ অভিযোগ করেছে। সেই মেয়ে সুইসাইড করতে গিয়ে শেষসময়ে বেঁচে গিয়েছে। সে এখনও হসপিটালে। সে তার বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান, আর খুবই নিডি ফ্যামিলির একটা মেয়ে।
এরকম হয়, অনেক কলেজেই হয়। আরেকটা ঘটনা বলি। অনেক দিন আগে এক সিনিয়র ভাইয়া আমাকে নিয়ে এটা সেটা বলত। তখন আমার ফেইসবুক অ্যাকাউন্ট ছিল না। সে আমাকে মোবাইলেই হাবিজাবি মেসেজ দিত। কী কী যে সব লিখত সে! সেই ভাইয়া ৩৬ কি ৩৭ বিসিএস-এ আমাদের এখানেই ফাইন্যান্সের টিচার হয়েছে। সে এখনও আমাকে মেসেজ দেয়। কিন্তু আমি কিছুই না বোঝার আর তাকে না চেনার ভান করি। কারণ আমার আর কিছুই করার নাই এখানে।
এখন আমাদের ওই আগের স্যার আমাদের নিয়ে এমন কথা বলেছেন যে, ডিপার্টমেন্টে মেয়েদের একটা গ্রুপ আছে, যারা নানান উলটাপালটা কথা বলে টিচারদের নিয়ে। আর এই কথায় ওই সিনিয়র ভাইয়া, মানে আমাদের নতুন ‘স্যার’ সহমত প্রকাশ করেছেন, যেহেতু সে নিজেও আমার বিপক্ষে।
অন্য দিকে, যেই যেই বিভাগের মেয়েরা স্যারকে নিয়ে আগে অভিযোগ করত, তারা সবাই এখন চুপ হয়ে গেছে, কেউ কিছুই বলে না আর। প্রিন্সিপ্যাল স্যার আমাকে ডেকে সব জিজ্ঞেস করেছেন। আমি বলেছি সব। স্যার অবশ্য অনেক ভালো। তিনি বলেছেন, তুই যা, গিয়ে ওই দুই স্যারের কাছেই ক্ষমা চেয়ে নে। নাহলে তারা দুজনেই তোর বিপক্ষে বলবে, আর তোকে আসলেই চলে যেতে হবে এই কলেজ থেকে। অগত্যা, আমি আর কী করব? সেটাই করলাম। আলাদা আলাদা করে দুজনের কাছেই ক্ষমা চাইলাম, যাতে তাঁরা আমাকে নিয়ে কিছুই না বলেন।
এর পরে কী হয়েছে, তা লিখতেও আমার হাত কাঁপছে। তাঁরা দুজনেই ইশারায় ইঙ্গিতে বুঝিয়েছেন,---তোমাকে কোনও প্রতিদান ছাড়াই এত বড়ো মাফ করা হবে না। প্রতিবাদী হয়েছ, শাস্তি তো পেতেই হবে। দুইজন দুইভাবে বললেও তাদের চাওয়া একটাই আসলে। এবং, যে সিনিয়র ভাইয়া, সে তো এটাও বলেছে যে, টিচার-স্টুডেন্টের এরকম সম্পর্ক নতুন কিছু না। এসব আগেও হতো। সিম্পলি মেনে নাও যা হবে। নাহলে কলেজ থেকে বেরিয়ে যাও।
আমি এসব শুনে অসুস্থ হয়ে গেছি। রাতে ঘুমাতে পারছি না। একজাম চলছে বলে ক্লাসে যাই। আমি আসলে কিছুই বুঝতে পারছি না কীভাবে কী করব। এসব বলব কাকে? কে বিচার করবে? আমার বাসায় কেউ কিচ্ছু জানে না। ফ্রেন্ডরা দুই-চারজন যারা জানে, তারা কেউ আওয়াজও করেনি। সবাই বলেছে, মেনে নে, কী আর করার? আমার মাথায়ও আসছে না আসলেই কী করার আছে। সত্যিই যদি ছাত্রত্ব বাতিল হয়ে যায়, তাহলে কী করব, সেটাও বুঝতে পারছি না।
এই জীবনে কখনও মিথ্যা বলে আমি শাস্তি পাইনি, তবে যত বার সত্যি বলেছি, আমি তত বারই শাস্তি পেয়েছি। এসব কি কাউকে বলতে পারব? সমাধানই-বা কী এটার? আমি সাবজেক্টিভ একজাম যত ভালোই দিই না কেন, ভাইভা পুরোটাই ওদের হাতে। ওরা চাইলে বেরও করে দিতে পারে, আবার ফেইল করিয়ে আরও চার বছর রেখেও দিতে পারে। ভয় পাচ্ছি খুব।


ভাবনা: সাতশো সতেরো
...............................................................
এক। আপনি চাইলেই এমন মেয়ে পাবেন, যে আপনাকে আমার মতন এত কথা বলবে না, এত জ্বালাবে না। তবে একটা ব্যাপার হচ্ছে কী, তাকে স্বাধীনতা দিয়েন। মানুষের সাথে কথা বলতে দিয়েন অন্তত। তাহলে আর আপনাকে সারাদিন মেসেজ দেবে না। সব ছোটোখাটো ব্যাপারই আপনাকে বলতে চাইবে না। আপনার বাইরেও একটা দুনিয়া যে আছে, সেটা তাকে একটু বুঝতে দিয়েন। তাহলে আর কোনও ঝামেলা থাকবে না। আপনি শান্তিতে থাকবেন, স্বস্তিতে থাকবেন।
সে নিশ্চয়ই কয়েক হাজার বার রিজেক্টেড হবার পরেও একই জায়গায় আটকে থাকবে না, আর থেকে গিয়ে দিনের পর দিন কথা শুনবে না। সে স্মার্ট হবে নিশ্চয়ই। প্রার্থনা করি মন থেকে, সে আপনাকে ভালো রাখুক। নিজে তো কিছু দিতে পারিনি, অন্য কেউ দিক অন্তত। আপনি পরিপূর্ণতা পান। আমার মতো ছোটো মানুষের কাছে যেন আপনার আসতে না হয়।
এসব শুধুই কথার কথা না। সত্যিই এমন হোক একদিন। যে যোগ্য, সে থাকুক আপনার জীবনে। এরকম কেউ যদি অলরেডি থেকে থাকে, তাহলে তো ঠিক আছে। আর না থাকলে আসবে। আপনি অপেক্ষা করেন, আসবে। এসে আপনার আইডি থেকে আমাকে ব্লক করে দেবে। হি হি হি। দিক। তা-ও ভালো। আপনি অশান্তিতে আছেন, এটা শোনার চেয়ে দুনিয়ার অন্য যে-কোনও খারাপ খবরই ভালো।
আপনি যে আমাকে অবহেলা করেন, এটা পেতে আমার আর তেমন একটা খারাপ লাগে না। প্রত্যেকটা অবহেলাই এক-একটা গালির সমান। যে দেয়, সে না বুঝলেও, যে পায়, সে ঠিকই বোঝে। দিয়ে যান, দেখি কত নিতে পারি। এরকম মেয়ে যদি না পান তো আমি খুঁজে দেবো। আমি চিনি। কিন্তু ওরা যদি কখনও আপনাকে নিয়ে আমার সামনে উলটাপালটা কথা বলে, আমি এটা মানতে পারব না বলে আপনাকে কিছু বলি না, কারও খোঁজ দিই না। আপনি নিজেই পাবেন খুঁজলে।
তারপর আপনারা দুজন মিলেই আমাকে বের করে দেন। দুজন মিলেই আমাকে কথা শোনান। তাতে যদি কিছু কাজ হয়! নাহলে আমি যে কোন ধাতুতে গড়া, ঈশ্বরই তা ভালো জানেন।
দুই। আচ্ছা, আপনি যে আমাকে সহ্যই করতে পারেন না, তবুও কিছু বলেন না কেন? হি হি হি। আমার লজ্জাহীনতা দেখলে আপনারই লজ্জা লাগে, তাই না? জানেন, আমি না আপনাকে খুব মিস করি! আমার কিছুই ভালো লাগে না। আপনাকে যদি এসব না বলে থাকতে পারতাম, তাহলে খুব ভালো হতো। থাকতে পারি না তো!
আমি সবসময়ই ওসব কাজই করি, আপনার কাছে যেগুলির কোনও মূল্যই নেই। এটা আমিও বুঝি। আমার একটা ছবি সিলেক্ট করে দিতে বললাম, দিলেন না! অবশ্য আমার ছবি সিলেক্ট করতে আপনি তো আর বসে নেই! আপনার ঠ্যাকাও পড়েনি। আমার এসব দেখলে নিশ্চয়ই আপনার হাসিই পায়, আপনার তো কাজ আছে আরও কত! আমার আর আপনার বয়সেও তো কত তফাত আছে, আমার এইসব প্যানপ্যানানি আপনার ভালো না লাগাটাই স্বাভাবিক। আমি সব বুঝেও শেষ পর্যন্ত আর চলে যেতে পারি না। আমার বোধহয় আর কিছুই নেই এই একটা জায়গা ছাড়া, যেখান থেকে আমি কোনও রেসপন্স পাই না ঠিক, কিন্তু একা একাই কথা বলে যেতে পারি!
মাঝে মাঝে মনে হয়, আমি এতদিনেও বড়ো হতে পারলাম না আজও! সেই ছোটোই রয়ে গেলাম। যেসব আচরণ করি, সেগুলির কথা বাচ্চারাও শুনলে হেসে গড়াগড়ি খাবে!
এই যে, আরেকটা কথা। আপনি ফ্রেন্ড-রিকোয়েস্টটা রিমুভ করে দিন, চোখের সামনে দেখতে অস্বস্তি লাগছে। আপনি কেন আমার বন্ধু হবেন শুধু শুধু? আমি তো ফ্রেন্ড না হয়েই আপনার সাথে দিব্যি ভ্যাজর ভ্যাজর করতে পারি। আমার তো আপনার ফেইসবুক-ফ্রেন্ড হবার কোনও দরকারই নেই! দুই দিন ধরে বলে যাচ্ছি, আপনি কথা শুনছেনই না! এত জেদ কেন আপনার? কথা শোনেন না কেন?
এদিকে মন খারাপ আমার। তার মধ্যে আপনি আমার একটা কথাও শোনেন না। বুঝতেও চান না কিছুই। বলে দিলেও বোঝেন না! কোথাও চলে যেতে পারলে ভালো হতো। আপনি রেগে আছেন আমার উপর? পাত্তাই দেন না আমার কোনও কথায়। আসলে অন্য কোনও ছেলের কাছে চলে যাওয়াই উচিত আমার। আর যা-ই হোক, সারাজীবনই ইগনোর করবে না অন্তত!
তিন। আজকে বিকেলে বাইরে গিয়েছিলাম। নতুন জুতায় আমার পায়ে ফোসকা পড়ে গিয়েছিল, ঠিকভাবে হাঁটতেই পারছিলাম না। কিন্তু অনেক কাজ ছিল বাইরে। তো ফেরার সময় আমি জুতো জোড়া হাতে নিয়ে হেঁটে এসেছি। ইদের ভিড়ের কারণে কয়েকটি রাস্তায় রিকশা চলতে দেওয়া হচ্ছে না।
আমি হেঁটে আসার সময় এক বয়স্ক ভদ্রলোক আমাকে দেখে বললেন, ‘এই বেটি, জুতা ছাড়া হাঁটস কেন? রাস্তায় কত ক্যাদামাটি, দেখস না?’ আমি ওঁকে কিছু বলিনি। হেঁটে সামনের দিকে যাচ্ছিলাম, উনিও আসছিলেন একই দিকে। তখন প্রথমে আমার মনে হয়েছে, ওঁর নিশ্চয়ই কোনও বদমতলব আছে, তা না হলে এত কথা কেন বলছেন!
আমি সামনে গিয়ে সিএনজির জন্য দাঁড়ালাম যখন, তখন উনি বললেন, ‘ও আচ্ছা, পায়ে ব্যথা পাইসস? ভালো জুতা কিনস না ক্যা? আহারে, ব্যথা লাগসে? তোর বাড়ি কই? ভাড়া থাহস, না নিজের বাড়ি? যা যা, জলদি জলদি বাড়ি যা, বেটি। এই জুতা ফালায় দিবি।’
আমি তখন মনে মনে ভাবছিলাম যে এই লোক এবার বোধহয় কোনও-না-কোনও বিয়ের প্রপোজাল দেবেন। এরকম মাঝেমধ্যে হয় মেয়েদের সাথে। আমি ইচ্ছে করেই দাঁড়িয়ে ছিলাম ঘটনার শেষটা দেখতে। আর অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে, তাঁর উদ্দেশ্য ছিল, আমাকে সিএনজিতে উঠতে না দেখা অবধি উনি সেখান থেকে যাবেন না, এটা বুঝলাম আমি। তবুও আমি দাঁড়িয়ে রইলাম। উনি অনেকক্ষণ পরে চলে গেলেন।
আর যাবার সময় এমন একটা হাসি দিলেন, যা দেখে আমার সব কনফিউশন দূর হয়ে গেল। আমি ঠিক বোঝাতে পারব না ওটার অনুভূতিটা। যাবার সময় উনি বললেন, ‘বেটি, সাবধানে থাহিস, সময় ভালা না, মাটি পাড়ায় না এই সময়তে, যাইগা রে!’
উনি বয়স্ক লোক, আমাকে মায়া করে এত কিছু বলেছেন, অন্য কোনও উদ্দেশ্যই তাঁর ছিল না। মানুষ অপরিচিত কারও জন্যও মায়া করে, এটা আমরা ভাবতেই পারি না। ধরেই বসে থাকি যে সবাই-ই খারাপ মানুষ। আসলে সবাই কিন্তু একরকম না।
হয়তো এটা মনে রাখার মতন কিছুই না, কিন্তু আমার কাছে এটা অনেক কিছু। অনেক বড়ো ব্লেসিং এসব, অন্তত আমার জন্য। আমি সত্যিই খুব লাকি যে এমন দেবদূতের মতো মানুষের সাথে আমার দেখা হয়ে যায় কখনও কখনও। অথচ লোকটাকে আমি না চিনেই, না বুঝেই প্রথম দিকে নিজের মতো করে জাজ করতে শুরু করে দিয়েছিলাম। শুধুমাত্র এই জাজমেনটাল হবার কারণে অনেক সুন্দর সুন্দর জিনিস আমাদের জীবন থেকে হারিয়ে যায়।


ভাবনা: সাতশো আঠারো
...............................................................
এক। আমি কিছুদিন ধরে একটা ছেলেকে পড়াই। ওকে প্রথমে নিতে চাইনি নানান কারণে, কিন্তু ওরা খুব সহজসরল আর একটু অভাবী মনে হলো, তাই রাজি হয়েছি। ওর মা অনেক কেঁদেছিলেন সেদিন। আমি কান্না সহ্য করতে পারি না। তাই টিউশনিটা নিয়েছিলাম মাসের শেষ সপ্তাহে।
তো হয়েছে কী, ইদের আগের দিন ওকে পড়াতে গিয়েছি বলে ওর বাবা খুবই অবাক হয়েছেন। আমি ওকে মাত্র কয়েক দিন পড়িয়েছি, ওই কয়েক দিনের জন্য বেতন না দিলেও চলে, অনেকেই দেয় না; অথচ ওর বাবা সেদিন খাবার রেখে উঠে এসেছেন আমাকে টাকা দিতে। বলেছেন, ‘আপনি এই টাকাটা রাখেন, আরও দেওয়া উচিত, কিন্তু আমার সত্যিই এখন ইনকাম নাই ওরকম। যেহেতু ইদ কালকে, আপনি একটু ছুটি কাটান।’
আমি কিছুই বলতে পারিনি। একদম অল্প টাকাই উনি আমাকে দিয়েছেন, কিন্তু এই সেন্সটাই তো অনেক বড়োলোক, ভদ্রলোকের নাই। আরেকটা কথা, উনি কিন্তু সমাজের তথাকথিত ভদ্রলোকদের চোখে, একদমই 'নিচু শ্রেণি'র মানুষ। সোজা বাংলায়, উনি পেশায় একজন নাপিত। আমি ওঁর আচরণ ভুলতেই পারছি না। এরকম একজন মানুষ এতটা ভদ্র আর বিবেকবান হতে পারে, সেদিনের আগে আমি জানতামই না। আমার ইদের গিফট বোধহয় এই শিক্ষাটাই।
দুই। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই,
কার‌ও বিপদের সময় বা কাউকে কোন‌ও কাজে সাহায্য করতে আপনি তাকে নিজের পকেট থেকে টাকা ধার দিলে আপনার সাথে রিলেশন খারাপ হবে একজন লোকের---যাকে ধারটা দিয়েছেন, তার সাথে;
আর যদি আপনি আরও সরল মনের মানুষ হন, কার‌ও বিপদে আপনার নিজের কাছে অত টাকা নেই বলে কো‌ন‌ও বন্ধুর কাছ থেকে টাকা ধার এনে সেই টাকা ওই বিপদগ্রস্ত লোককে ধার দেন, তবে আপনার সাথে রিলেশন খারাপ হবে দুইজন লোকের---যাকে ধারটা দিয়েছেন আর যার কাছ থেকে ধারটা এনেছেন, দুজনের সাথেই।
প্রায় লোক‌ই উপকার ও সারল্যের দাম দিতে জানে না। নির্লজ্জ ও আত্মসম্মানবোধহীন মানুষকে ধার দেওয়ার চাইতে দুঃখের আর কিছু হয় না। এক্ষেত্রে, ধারটা ফেরত নেওয়ার সময় আপনার উলটো নিজেকেই পথের ভিখারি মনে হবে! অবশ্য, কাউকে টাকা ধার দেওয়ার আগ পর্যন্ত বোঝাই যায় না যে সে একজন নির্লজ্জ ও আত্মসম্মানবোধহীন মানুষ! ওরকম লোক অবশ্যই ঘৃণ্য, তাই তার ব্যাপারে যে-কোন‌ও কঠিন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করাও সমর্থনযোগ্য বলে আমি মনে করি।
সবচাইতে ভালো হচ্ছে, ঠিক তত টাকাই ধার দেওয়া, যে টাকাটা ফেরত না পেলেও আপনি তেমন কোনও সমস্যায় পড়বেন না।


ভাবনা: সাতশো উনিশ
...............................................................
এক। বুদ্ধিমান ব্যক্তি কোন‌ও কাজ করার আগে দুই বার ভাবেন, আর জ্ঞানী ব্যক্তি ভাবেন তিন বার:
কাজটা করা ভালো হবে কি না,
কাজটা না-করাই ভালো হবে কি না,
কাজটা সামনে এল বলে এটি করে কিংবা না-করে তার সাথে অন্য কোনও কাজ করে রাখতে বা করা বন্ধ রাখতে হবে কি না।
দুই। কিছু মানুষ আছে, যারা, যতটুকু ভালো কথা শুনেছে, ততটুকু কাজে না লাগিয়ে আরও ভালো কথা শুনতে চায়। ওদের এই ভালো ভালো কথা শোনাতেই আনন্দ। এমন মানুষ সাধারণত নানান ধরনের ভালো পরামর্শ শুধু শুনেই যায় আজীবন, কাজে আর লাগাতে পারে না। নির্বোধের চিত্ত ও কৃপণের বিত্ত---কোন‌ও কাজেই আসে না। ওদের জীবনটাই সেই হতভাগ্য অন্ধের জীবনের মতো, যে সারাজীবনই তার সুন্দরীশ্রেষ্ঠা স্ত্রীর রূপদর্শন থেকে বঞ্চিত থেকে যায়। না, একটু ভুল হলো। আসলে ওরকম মানুষের জীবন আরও কষ্টের, কেননা অন্ধের তো সাধ আছে, কিন্তু বেচারার সাধ্য নেই; আর ওদের সাধ্য তো আছে, কিন্তু সাধ‌ই নেই!
নির্বোধ---জ্ঞানের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে মরে যায়।
কৃপণ---ধনের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে মরে যায়।
তিন। শিক্ষিত চাইলেই সবাই হতে পারে, কিন্তু নিজেকে তৈরি করতে সবাই পারে না। লোকে অনেক দূর পর্যন্ত হাঁটতে চায়, তবে হাঁটার যে রাস্তা, ওটার জন্য নিজেকে তৈরি করতে পারে খুব কম মানুষই।
চার। কিছু মানুষ আছে, বুদ্ধিতে যাদের সমকক্ষ অনেককেই পাবেন, কিন্তু বুদ্ধিহীনতায় তাদের ধারে কাছেও ঘেঁষতে পারে, এমন কাউকেই পাবেন না। ওরকম মানুষের বুদ্ধিতে চলতে হয় যেখানে, সেখানে মানসিক সুস্থতা নিয়ে বাঁচাটা সত্যিই অনেক চ্যালেঞ্জিং!
পাঁচ। তুমি আর আমি একসাথে মিলে পাড়ি দিলাম কত কত গোলাপি বিকেল আর ঘুটঘুটে কালো অন্ধকার রাত! কত গল্প, কত হাসি, কত স্মৃতি...আহা!
আর ইদানীং যখন তুমি মনের ব্যথায় একলা একলাই কাঁদো, আমাকে জানতে দিতে চাও না কিছুই,
তখন জিজ্ঞেস করতে বড়ো ইচ্ছে করে---তোমার চোখের জল কি তবে শুধু তোমার একারই, এখন?
ছয়। কোনও কারণ ছাড়াই আমার কান্না পাচ্ছে! ইদানীং প্রায়ই এমন হয়। আচ্ছা, আমি কবে সত্যিকারের বড়ো হব? বয়স যত বাড়ছে, তত ছোটো হচ্ছি। নিজেকে নিয়ে আর পারি না!
সাত। : ইদানীং আর আগের মতো ফোন করো না, টেক্সটও পাঠাও না। সব ঠিকঠাক তো? না না, অন্য কিছু ভেবো না, রিলেশনশিপটা না থাকলেও তো বন্ধুত্বটা ঠিকই আছে এখনও, সে জায়গা থেকে জিজ্ঞেস করছি! মানে একজন বন্ধু হিসেবে জানতে চাইছি আরকি!
: এমনিই চুপ হয়ে গিয়েছি। নাথিং সিরিয়াস! আর রোজ রোজ কাঁদার চেয়ে আমি বরং একদিন অনেক অনেক কেঁদে আমার চোখের সব জলই শেষ করে ফেলতে চাই, সেজন্য এত চেষ্টা, এত নীরবতা। এসব নিয়ে একদমই প্রশ্ন কোরো না। যে প্রেমিক থাকবার সময়েও আমার হাসির দায়িত্বটা নিতে পারল না, তাকে আমি বন্ধুত্বের খাতিরেও আমার কান্নার দায়িত্ব দিতে চাই না।
আট। তোমার ভাবনাদেয়ালে এটাও যোগ করে নিয়ো, শুধু তোমার জন্যই আমি বাঁচব, আমি তোমাকেই শুধু ভালোবাসব! উথালপাথাল হয়ে আমি তোমাকেই কাছে চাইব, পাগলের মতো করে আমি তোমাকেই নিয়ে থাকব! রাগ অভিমান করে কখনও দূরে সরে গেলেও, ঘুরপাক খেয়ে আমি তোমার উপরেই এসে পড়ব!
তুমি আবার সরিয়ে দিলেও, আমি আবার এসে ঠিক তোমার কাছেই বসব। আমার মন খারাপের দিনেও সারা দিনই কাছে কাছে থাকব! তোমার একটুখানি রিপ্লাই পেয়েও খুশিতে অনেক হেসে ফেলব! সবার সামনে বসেও, বিনা কারণেই আমি তোমাকেই নিয়ে ভাবব।
আমার পড়ার মাঝেও তুমিই জুড়ে থাকবে, ঘুমের ঘোরে আমার পাশে তুমিই জেগে থাকবে! ঘুম ভেঙে গেলে মোবাইল হাতে তোমাকেই আগে দেখব। অনলাইন না পেয়ে আবার মন খারাপ করেই থাকব। ঘটুক যা-কিছু, আমি তোমারই তবু থাকব।
তোমার একটি ছবিতেও কোনও মেয়ের লাভ রিঅ্যাক্ট দেখলে, আমি ভীষণ রেগে একাকার হবই তো হব! তোমার পাশে কেউ থাকবে, এটা দেখেও, চুপ থাকব, সহ্য করব, এমন ভেবো না ভুলেও!
শুধুই আমার ভালোবাসার স্বার্থের সাথে মেখে রাখব তোমায়! ঘুমের মধ্যে তোমার হৃৎপিণ্ডের শব্দটা শুনতে পারা, তোমার নিঃশ্বাসের আওয়াজ বুঝতে পারা, তোমার গায়ের ঘ্রাণটা নিজের গায়ে লেপটে রাখা, তোমায় ঘুমন্ত অবস্থায় একদৃষ্টিতে দেখতে পারা,---এ সবই আমার এই একটা পুরো জন্মের লালিত স্বপ্ন!
তোমার রুমে যে তোমার সাথে সাথে কেউ একজন থাকে, সেটা তুমি জানো আজও? ওটা আমারই ছায়া গো! তুমি তো কখনও খেয়ালই করোনি! তোমাকে নিয়ে ভাবা আর এমন হাজারো জল্পনা-কল্পনায় ভাসা...আমার জীবনযাপনেরই একটা প্রধান অংশ। কেন, জানো? কেননা পাগলের মতো ভালো আমি তোমাকেই বাসব! এলোমেলোভাবে, গুছিয়ে প্রেমে আমি তোমারই শুধু পড়ব!
তুমি যতই দাও সরিয়ে, আবারও ঠিকই ফিরে ফিরে...তোমারই কাছে দেখো আসব! আমি এই এক জীবনে কেবল তোমায় ভালোবাসব!


ভাবনা: সাতশো বিশ
...............................................................
এক। আমার ইচ্ছে ছিল তোমার ইচ্ছেগুলো পূরণ করবার,
তোমার তাড়া ছিল এক্কেবারে ভোরবেলার ওই ট্রেনটি ধরবার।
আজও জানতে ইচ্ছে হয়, ট্রেন ধরে তুমি আসলে কতটা পালাতে পারলে!
তুমি ভালো আছ, ধরেই নিচ্ছি; ওই যে, শুনতে পেলাম...
মাত্রই তো দীর্ঘশ্বাসটা ছাড়লে!
দুই। তুমি আমার সঙ্গে এমন আচরণ করে করে আমাকে আর কষ্ট দিয়ো না। আমি মরে যাব তাহলে। আমি তোমাকে না পেয়ে যতটা অসুস্থ হয়ে আছি, অন্য কোনও কারণে আমি ততটা অসুস্থ নই। আমার কোনও কিছু ভালো লাগে না। তোমার সাথে কথা না বলে আমি কীভাবে থাকব? আমি কীভাবে আছি তোমার সাথে কথা না বলে, তুমি একটুও ভেবে দেখো না এটা! তুমি নাহয় পারো, কিন্তু আমি তো পারি না। তাহলে আমি কী করব, তুমিই বলে দাও! আমি কোথায় যাব? সারাদিনই কিছু ক্ষণ পর পরই না চাইতেও ফোনের দিকে হাত চলে যায়। বার বার চেক করি তোমার কোনও ফোন কিংবা কোনও মেসেজ এল কি না। কিন্তু ভুলেও তুমি নিজে থেকে একটাও মেসেজ করো না। তুমি কীভাবে পারো? আমি কেন পারি না তাহলে?
এখন আমি বুঝি, মানুষ একা থাকলে যতটা না নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে, কারও সাথে সম্পর্কে জড়ালে বা কাউকে ভালোবাসলে বোধহয় তার চাইতে হাজার গুণ বেশি নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। তখন মানুষটি আগের একাকিত্বে যতটা না একাকী অবস্থায় ছিল, সেই অবস্থাটার প্রভাব তার নতুন একাকিত্বে বহু গুণে বেড়ে যায়।
তুমি এলে আমার জীবনে, আমার সমস্ত একাকিত্বকে গ্রাস করে নিলে। আমার পুরনো একাকিত্বে অবাধ স্বাধীনতা ছিল, কিন্তু এই যে নতুন একাকিত্ব, এটি আমাকে পরাধীন করে দিয়েছে। আমি হয়তো আবারও সেই একাকিত্বেই এসে থেমেছি, কিন্তু পুরনো স্বাধীনতাটা আর নেই। পুরোনো একাকিত্বে আনন্দ ছিল, গৌরব ছিল যে আমি একাই থাকতে পারি, নিজেকে নিয়েও দিব্যি সুখী থাকা যায়; কিন্তু এই নতুন একাকিত্বটি যন্ত্রণার, এটি আমাকে প্রতিনিয়তই কথা শোনায় যে আমি এখন একা থাকতে বাধ্য হচ্ছি; এটি স্বেচ্ছামৃত্যু নয়, এটি গ্লানিময় পরাজয়। এই একাকিত্ব কষ্টের, এই একাকিত্ব ভয়ের, এই একাকিত্ব অদৃশ্য এক শেকলের।
তিন। চুপ করে থাকলে তো আর বিরক্তি বোঝা যায় না। কিছুই বোঝা যায় না আসলে। বলতে তো হবে যে...মেসেজ দিয়ো না, ভালো লাগে না। আমি তো নাহলে বুঝি না। সবই গড়গড় করে বলতে থাকি গাধার মতো। জানিসই তো, আমি একটা গাধা। তবে এক তুই বাদে এটা কিন্তু আর কেউই জানে না।
আমাকে আনসার দিস না কেন? আমি কষ্ট পেলে তোর খুব আরাম লাগে, তাই না? শোন, আনসার তো দূরে থাক, তোর আমাকে আর কিছুই দিতে হবে না। সব কিছুর অধিকার আমি ছেড়ে দিলাম। ওসব অন্য কাউকে দিয়ে দিস। আমাকে ঠকিয়ে যদি তুই ভালো থাকতে পারিস, তাহলে ওভাবেই ভালো থাক, আমাকে ঠকিয়েই যা প্রতিদিনই।
তোর কান্নাটুকু আমার কাছে থাকুক রে। আমি তো তোকে কাঁদতে দেখেই ভালোবেসেছিলাম, হাসতে তো দেখিনি। সেজন্য চলে যেতে পারি না। মনে হয়, এখনও তোর কান্না থামেনি বোধহয়। তোর জন্য খুব মায়া হয়। আমি কোনও উদ্দেশ্য নিয়ে তোর সাথে কথা বলি না। আমার কোনও স্বার্থ ছিল না কখনওই।
একটাই চাওয়া বাকি। আমাকে বিদায় বল। আমি তো শুনি তোর কথা। এই যে যেমন মেসেজ লিখতে 'না' করেছিস, আমি লিখব না আর। তুই আমাকে প্রতিদিনই এক বার করে মেরে ফেলিস, কীভাবে মারিস, এটা জানতেও পারবি না। বিধাতা‌ এরকম মৃত্যুসম অবহেলায় তোকে যেন কখনও কোনও দিনই না ফেলেন। আমাকে ভালো করে বিদায় বল, আমি চলে যাই।


ভাবনা: সাতশো একুশ
...............................................................
এক। আমি একটা মানুষও বটে! কত্ত ছোটোখাটো ব্যাপারও আপনাকে না বললে আমার পেটের ভাতই হজম হয় না, বমি আসে। আমি রাতে কী খেলাম, দুপুরে কোথায় গেলাম, পরীক্ষা কেমন দিলাম, সবই মনে হয় আপনাকে বলে দিই। এপাশ থেকে তো আর বুঝি না আপনার মুড কীরকম বা ব্যস্ততা কেমন। আমার বলতে ভালো লাগে, তাই বলি।
আপনি কি আমার আচরণে বুঝতে পারেন না যে আমি পাগল হয়ে গেছি বা যাচ্ছি? কোনও সুস্থ মানুষ কি এমন করে? আমার আগে চিন্তা হতো যে আমি তো প্রায়ই অসুস্থ থাকি, তাহলে মরে যদি যাই (মানে যেতেই তো পারি!) আপনাকে আমি কি এক বারও দেখতে পাবো না শেষ বারের মতো? আগে ভাবতাম আরকি, এখন অবশ্য আর অত আশা করি না। শুধু মনে হয়, না থাকি যদি, আপনাকে যাবার সময় একটা মেসেজ দেবার সময়ও কি আমি পাবো না? কালকে রাতে আপনাকে মেসেজ দিতে গিয়ে আমার দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল। খুব খারাপ লাগছিল।
গ্রামে এসেছি। আমাদের গ্রামের বাড়িতে নেটওয়ার্ক কানেকটিভিটির অবস্থা খুবই খারাপ। আমি কালকেও সারারাত ঠান্ডায় বাইরে বসে ছিলাম, আজকেও বসে আছি। ঘরের ভেতরে নেট কাজ করে না। ভালো লাগছে বসে থাকতে। জানেনই তো, সেই অপেক্ষাই সুন্দর, যেই অপেক্ষার শেষ নেই। হায়, আমি সেই মানুষের কথা শুনতে বসে থাকি, যে মানুষ আমার সাথে কোনও কথাই বলবে না। তাকেই আমার দেখতে ইচ্ছে করে, যাকে কিনা আর দেখা যাবেই না। কোনও এক্সপেকটেশন রাখি না, কিন্তু একধরনের অধিকারবোধ ভর করে কাঁধে, মাথায়।
তুই তুই করতে থাকি তাকেই, যাকে আপনি আপনি সম্বোধন করে দূরে রাখা উচিত। বিশাল বিশাল রচনা লিখি তাকে, যাকে আর মেসেজই দেওয়া যায় না। কত কথা বলে যাই, অথচ আমার একটি অক্ষরও তাকে ছুঁতে পারে না। ও আচ্ছা, একটা কথা, ওই লোক না আমাকে জিজ্ঞেস করেছে আমি মাঝেমধ্যে পাগল হয়ে যাই কি না! কোন লোক, বলুন তো? এটা আপনার জন্য ক্যুইজ!
তুই আমার সাথে কথা বলিস না কেন? বোরড লাগে? তোর কথা বলার অনেক মানুষ আছে, তাই না? তুই কি কাউকে ভালোবাসিস? আমাকে বলিস না কেন? এটা শুনলে তো আমি খুশিই হব। এই সহজ ব্যাপারটা বুঝিস না কেন তুই? তুই আসলেই একটা বোকার হদ্দ!
আচ্ছা, এত যুক্তি দিয়ে কি সব হয়, বল? তুই কি সব জায়গায়ই যুক্তি মেনে চলতে পারিস? তোর কাছ থেকে আমি কিছুই আশা করি না, বিশ্বাস কর। আমার কোনও চাওয়াও নেই আর। শুধু মুখেই বলি, এটা চাই, সেটা চাই। তুই শুধু হ্যাঁ হ্যাঁ বলে দিবি, প্লিজ? আমি ঠিক পেয়ে যাব। তুই তো ওইটুকুও বলিস না। তুই বড্ড হাড়কিপটে রে। তোর শব্দ, অক্ষর, কথা সবই জমিয়ে রাখছিস কেন? করবিটা কী জমিয়ে জমিয়ে? তোর কাছে তো শব্দের অভাব নেই। তুই কেন এত ভাবিস, বল তো?
দুই। ছিলেম হয়তো মিথ্যে-বাসা ভালো,
অবহেলায় ভাসিয়েই তাই দিলে!


সুখের সাথী না-ইবা হলেম তবে,
ফোন দিয়ো হঠাৎ লাগলে একা!


হয়তো ছিলেম ধূসর রঙের আলো,
অনাদরে তাই পুড়িয়ে করলে ছাই!
থাকতে ভালো গেলেই যখন ছেড়ে,
ভালো থাকার খবর যেন গো পাই!
তিন। তুই প্রোফাইলের ছবি চেইঞ্জ করিস না কেন? আমি ওই বাহানায় তোকে একটু দেখতে পারব তবুও! তুই আমাকে চুড়ি কিনে দিবি? অনেক অনেক সবুজ চুড়ি? আমার সবুজ খুব প্রিয়। আলতা কিনে দিবি? আলতাও খুব প্রিয় আমার, কিন্তু নিজে কিনিনি কখনও। অফ-হোয়াইট কালারের একটা শাড়ি কিনে দিস? সেদিন কিনেছি একটা সাদা শাড়ি। বার বার তোর কথা মনে পড়ছিল শাড়ি দেখে।
তুই অফলাইন হয়ে গেলি কেন? কী করছিস রে? আমি তোর কাজের সময়ে তোকে জ্বালাই, না...খুব? আমাদের যখন আর যোগাযোগ থাকবে না, তুই কি তখন আমাকে ভুলে যাবি? তুই অনলাইনে ছিলি না কেন? কী হয়েছে? তোর ইগনোর করতে খুব ভালো লাগে, তাই না? আচ্ছা, ঠিক কেমন লাগে রে? খুব শান্তি? তোর উপরে আমার কোনও অধিকার নেই?
তুই আমাকে নক করতে 'না' করেছিলি, কিন্তু আমি ভুলে যাই শুধু। আসলে আমি মরে যাচ্ছি। আমাকে সাহায্য কর। আমার সময় খারাপ যাচ্ছে। খারাপ সময়ে কেউ থাকে না পাশে। আপনি থাকলে ভালো হতো। আপনি কি বোঝেন আঠারো মাস মানে কত সময়? আমাদের শেষ বার দেখা হয়েছে আঠারো মাস হতে চলল...।
আমি আমার জীবনে সবচেয়ে বেশি যাকে ভালোবেসেছি, তার কাছেও কখন কিছু চাইতে পারিনি। চাইলেই পাবো, এতে কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু জীবনেও চাইতে পারব না। শুধু আপনার কাছেই যা ইচ্ছা, তা-ই চাইতে পারি আমি। অথচ আমি যে দুইজন মানুষকে সবচাইতে বেশি ভালোবাসি, তাদের মধ্যে আপনি প্রথম নন, দ্বিতীয়। যাকে আপনার চাইতে বেশি ভালোবাসি, তার কাছে কিছু চাইতে না পারলেও আপনার কাছে ঠিকই সব চেয়ে ফেলতে পারি!