স্বপ্নছোঁয়ার গল্প


আজ আমি আমার কিছু অনুভূতি আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করব। ৩০তম বিসিএস পরীক্ষার রেজাল্টের জন্য আমরা সবাই বেশ কিছুদিন ধরেই অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছিলাম৷ অবশেষে রেজাল্ট বের হল৷ তারিখটা ছিল ২ নভেম্বর৷ সেদিন ছিল আমার জন্মদিন৷ কী অদ্ভুত, তাই না? আনন্দে আমার চোখে পানি এসে গিয়েছিল৷ জীবনে এইবারই প্রথম স্রষ্টার কাছ থেকে অনেক বড় একটা birthday gift পেলাম৷ ব্যাপারটাকে আপনারা স্রেফ মিরাকল কিংবা কাকতালীয়, যা-ই বলুন না কেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি, Miracles happen when you believe. হ্যাঁ, মিরাকল ঘটে! আমরা অনেকেই জানি, আমাদের সীমাবদ্ধতাগুলো কোথায়৷ অথচ, আমার মনে হয়, আমাদের মধ্যে বেশিরভাগ মানুষই, আমাদের শক্তির জায়গাগুলোকে চিনতে ভুল করি৷ তাই, আমরা সাহস করে বড় কিছু চাইতে পারিনা৷ ব্যাপারটা যে একেবারেই সহজ, তা বলছি না৷ তবে যাঁরা আমার মত মিরাকলে বিশ্বাস করেন এবং মিরাকল ঘটানোর জন্যে কাজ করে যান, তারা মাঝে-মধ্যেই ওরকম অদ্ভুত সুন্দর মুহূর্তগুলোর দেখা পান৷
বিসিএস-এর ব্যাপারে আমার এই passion এবং feeling কিন্তু খুব বেশি দিনের নয়৷ বরং আমার অনেক সহযোদ্ধার তুলনায় আমাকে অনেক কম সময় অপেক্ষা করতে হয়েছে৷ আমার একটা সমস্যা ছিল৷ সমস্যাটা হলো, আমি আসলে কী হতে চাই — এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে আমার সময় লেগেছে প্রায় ২০ বছর৷ অথচ, সিদ্ধান্ত নেয়ার পর লক্ষ্যে পৌঁছতে সময় আমি সময় নিয়েছি মাত্র এক বছর৷ আমার সেই কষ্টের দিনগুলোর কথা বেশ মনে আছে৷ আমার চিন্তা-ভাবনা, কাজ — সবকিছুকেই আমি এককেন্দ্রিক করে ফেলেছিলাম —- আমার স্বপ্নকেন্দ্রিক৷ মাঝেমাঝে নিজের ভেতরটা বিদ্রোহ ঘোষণা করত, বেঁকে বসত; তবু নিজের সাথে যুদ্ধ করেছি সবসময়৷ আমি নিজেকে প্রায়ই বলতাম, If you are not thinking about your dream, you are not thinking at all. আরো বলতাম, If you are not thinking about BCS, you are not thinking at all. হ্যাঁ, এই BCS –ই আমার স্বপ্ন ছিল৷ আমার dream cadre ছিল BCS Customs & Excise. ৩০তম বিসিএস ছিল আমার প্রথম বিসিএস পরীক্ষা — প্রথম প্রিলিমিনারি, প্রথম লিখিত, প্রথম ভাইভা৷ শুধু তা-ই নয়, এই চাকরিটা আমার জীবনের প্রথম চাকরি৷ ৩০তম বিসিএস-এর ভাইভা ছিল আমার জীবনের প্রথম জব ইন্টারভিউ৷ তাই সবকিছু মিলিয়ে আমি একটু বেশিই excited ! স্বপ্ন ছুঁয়ে ফেললে যেমনটা হয় আর-কি! আমি সবসময়ই আমার স্বপ্নের প্রতি sincere থেকেছি; তাই বোধ হয়, আমার স্বপ্নও শেষ পর্যন্ত আমার প্রতি sincerity দেখিয়েছে৷ স্বপ্ন এবং বাস্তবতার এই যে mutual interaction — এটা সত্যিই বেশ দারুণ!! আমি এটাকে খুব enjoy করছি; জানি, আপনারাও করবেন৷
যখন আমি CUET থেকে Computer Science & Engineering এ আমার গ্র্যাজুয়েশন শেষ করলাম, আমি তখন বুঝতে পারছিলাম না, সামনের দিনগুলোতে আমি কী করব। আমি ব্যবসা শুরু করেছিলাম৷ খুব ইচ্ছে ছিল, Business Magnet হবো৷ ব্যবসা, বই পড়া, বিভিন্ন blog এবং facebook-এ বন্ধুদের সাথে feelings শেয়ার করা, movie দেখা, গান শোনা — এসব নিয়েই বেশ ছিলাম৷ এরই মাঝে হঠাৎ মাথায় একটা পুরনো ভূত নতুন করে চাপলো — লেখক হবো, দার্শনিক হবো৷ ৩০তম বিসিএস পরীক্ষার circular হওয়ার মাত্র কয়েকদিন আগে আমার দুই বন্ধু — সত্যজিত এবং পলাশের কাছ থেকে BCS সম্পর্কে জানলাম৷ সেইদিন আমার BCS-এ প্রথম হাতেখড়ি৷ আমার এখনও মনে আছে, অনেক ভাল লেগেছিল সেদিন৷ কেন জানি বারবারই মনে হচ্ছিল, আমার স্বপ্নের পালাবদল হওয়ার সময় এসেছে; সাথে অবশ্য লেখক হওয়ার ঝোঁকটাও ছিল৷ Civil Service এ join করলে writer হওয়াটা সহজ হবে — এমনটা মনে হয়েছিল৷ আমার স্বপ্নযাত্রা শুরু হলো৷ আমার জীবনের ছোট-বড় যেকোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় আমার মা-বাবা এবং ছোট ভাইয়ের সমর্থন পেয়েছি সব সময়। পরিবার পাশে থাকলে মনের জোর অনেকটাই বেড়ে যায়৷ আমি মনে-প্রাণে বিশ্বাস করি, বাবা-মায়ের আশীর্বাদে আমি আমার জীবনের অনেক বড় বাধা পার হয়ে এসেছি এবং সামনেও হবো৷ সাথে ছিল বন্ধুরা, শুভাকাঙ্খীরা৷
আপনাদের মনে হতেই পারে, কীভাবে বিসিএস-এর মতো এত competitive একটা exam-এর বাধা পার হবো! এটা স্বাভাবিক৷ আমারও মনে হতো৷ আমার ভাবনাগুলো সবসময়েই আমার স্বতন্ত্র ছিল। আমি বিশ্বাস করি না যে, অন্য ১০ জনের সাথে আমার ভাবনাগুলো না মিললেই সেগুলো ভুল হয়ে যায়৷ আমি একজন Computer Engineer, এখন MBA পড়ছি Dhaka University-র IBA-তে, MDS পড়ছি Dhaka University-তে৷ আমি সবসময়েই শুনে এসেছি, BCS নিয়ে ভাবনা আমার জন্যে স্রেফ পাগলামি ছাড়া আর কিছু নয়৷ শুনে আমার বেশ ভাল লাগত, জেদ চেপে যেত; কারণ আমি বিশ্বাস করি, আমার পাগলামি আমার জন্যে অনেক বেশি important! আপনার স্বপ্নপূরণে পাগল হতে শিখুন৷ Work hard — শুধু এই পুরনো slogan নিয়ে বসে থাকার দিন শেষ; এর সাথে এখন যুক্ত হয়েছে Work smartly. হ্যাঁ, আপনাকে smartly পরিশ্রম করতে হবে৷
আপনাদের মধ্যে যাঁরা আমাদের উত্তরসূরি, তাঁদের উদ্দেশ্যে দু’টো গল্প বলছি৷
প্রথম গল্প:
একটা কাক গাছের উঁচু ডালে কোনও কাজ না করে অলসভাবে বসে ছিল৷ ঠিক সে সময়ে ওই পথ দিয়ে এক খরগোশ যাচ্ছিল৷ খরগোশ কাককে জিজ্ঞেস করল, “আচ্ছা ভাই, আমিও কি তোমার মতো কোনও কাজ না করে এই গাছের নীচে বসে থাকতে পারি?” কাক বলল, “নিশ্চয়ই পারো!” খরগোশ তা-ই করল৷
কিছুক্ষণ পর সেই পথ দিয়ে এক শেয়াল যাচ্ছিল৷ শেয়াল খরগোশটাকে বসে থাকতে দেখে খপ্ করে ধরে খেয়ে ফেলল৷
এই গল্পের lesson কি? lesson হলো, যখন আপনি এতটাই উঁচু আসনে বসে আছেন যে, কেউ আপনাকে ছুঁতে পারবে না, তখন আপনি হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকতে পারেন৷ তবে, এর আগে পরিশ্রম করে আপনাকে সেই আসনে বসার যোগ্যতা অর্জন করতে হবে৷ ভাবুন, আপনারা এখন কোন আসনটাতে বসে আছেন৷
দ্বিতীয় গল্প:
শীতের প্রকোপ থেকে বাঁচতে একটা ছোট্ট পাখি সাইবেরিয়া ছেড়ে যাচ্ছিল৷ হঠাৎ পাখিটা জমে গিয়ে বরফের টুকরোর মতন টপ্ করে মাটিতে পড়ে গেল৷ বেশ কিছু সময় পড়ে সেই পথ দিয়ে একটা গরু হেঁটে যাওয়ার সময় পাখিটার উপর মলত্যাগ করল৷ কিছুক্ষণ পর গোবরের উষ্ণতায় পাখির গায়ের সমস্ত বরফ ঝরে গেল৷ পাখিটা তখন খুশিতে গান গাইতে শুরু করল৷ কাছেই একটা বেড়াল বসেছিল৷ গান শুনে বেড়ালটা গোবর থেকে পাখিটাকে বের করে খেয়ে ফেলল৷
এই গল্পের lesson গুলো কী কী?
প্রথম lesson হলো, Not everyone who drops shit on you is your enemy. এর মানে হল, যারা আমাদের উপরে ময়লা ছিটিয়ে দেয় অর্থাৎ আমাদের বকা-ঝকা করেন, তাদের সবাই কিন্তু আমাদের শত্রু নন; অনেকেই আমাদের ভাল চান৷ এই দলে আছেন, আমাদের বাবা-মা, সিনিয়ররা, স্যাররা৷
দ্বিতীয় lesson হলো, Not everyone who gets you out of shit is your friend. এর মানে হল, অনেকেই আছেন যাঁরা আমাদের বিপদ থেকে মুক্ত করার কথা বলে হাত বাড়িয়ে দিয়ে আরো বড় বিপদে ফেলে দেন৷ এই দলে আছেন, আমাদের আশে-পাশের সেইসব মহাপণ্ডিত ব্যক্তিরা, যাঁরা বলেন, “বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে আর কি হবে? তার চেয়ে অন্য কিছু কর৷” অথবা বলেন, “তোমাকে দিয়ে বিসিএস হবে না৷” আমি মনে করি, If you cannot help a person to do something, you have no right to demoralize him/her saying that he/she cannot do it.
আমার মনে হয়, তৃতীয় lessonটাই সবচেয়ে important. সেটি হলো, When you are in the shit, always keep your mouth shut!! এর মানে হল, যখন আপনি বিপদে আছেন, তখন সবসময় আপনার মুখ বন্ধ রাখবেন৷ রেজাল্ট বের হওয়ার আগের ১-১.৫ বছর আমি মুখ বন্ধ রেখেছি৷ অনেক কথা জমে গেছে; সেই কথাগুলোই এখন আপনাদের বলছি৷ Success talks the loudest. Success can buy silence. আপনার সাফল্য সবার মুখ বন্ধ করে দিতে পারে৷ তাই, নিজের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিন; অন্যদের প্রতি নয়৷
Steve Jobs এর একটা চমৎকার পরামর্শ দিয়েছিলেন, Stay Foolish, Stay Hungry. আমিও বলছি, সাফল্য লাভ করার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত বোকা থাকুন, বিসিএস-এর জন্যে ক্ষুধার্ত থাকুন, পড়াশোনা করুন, চোখ-কান খোলা রাখুন; মুখ নয়৷
এই লেখা যখন আপনার হাতে পৌঁছবে, তার ঠিক একদিন পরেই তো প্রিলিমিনারি পরীক্ষা৷ তাই আপাততঃ দু’-একটা কথা বলেই বিদায় নিচ্ছি৷
• বিসিএস ক্যাডার হওয়ার জন্যে আপনি কী কী পড়বেন, সেটা ঠিক করার চাইতে অনেক বেশি জরুরী আপনি কী কী পড়বেন না, সেটা বুঝতে পারা৷ একটি অপ্রয়োজনীয় topic একবার পড়ার চেয়ে প্রয়োজনীয় topicগুলো বারবার পড়ুন৷
• বিসিএস এবং পিএসসি’র নন-ক্যাডার পরীক্ষার প্রশ্নোত্তরগুলো (সম্ভব হলে অন্ততঃ ২০০-২৫০ সেট) একবার skim through করে নিন৷
• যে প্রশ্নগুলো একটু কঠিন মনে হয়, সেগুলো একাধিকবার পড়ুন৷ একটা fact শেয়ার করি৷ কিছু কঠিন প্রশ্ন থাকে যেগুলো বারবার পড়লেও মনে থাকে না৷ সেগুলো মনে রাখার চেষ্টা বাদ দিন৷ কারণ এই ধরনের একটি প্রশ্ন আরো কয়েকটি সহজ প্রশ্নকে মাথা থেকে বের করে দেয়৷
• বাজারে কিছু মডেল টেস্ট এর গাইড বই পাওয়া যায়, যেগুলো আপনারা ইতোমধ্যেই solve করেছেন৷ প্রশ্নোত্তরগুলো আরো একবার পড়ে নিন৷ আচ্ছা ভাল কথা, মডেল টেস্টগুলোতে একটু কম marks পেলেও মন খারাপ করার দরকার নেই৷ আপনি কী জানেন, তার চেয়ে বেশি important হলো আপনি যা জানেন তা কতটা কাজে লাগাতে পারছেন৷
• সব প্রশ্নের উত্তর করতে যাবেন না ভুলেও৷ প্রিলিমিনারি highest marks পাওয়ার পরীক্ষা নয়, just পাস করার পরীক্ষা৷ কিছু difficult & confusing questions ছেড়ে দেওয়ার উদারতা দেখান, কিপ্টেমিটুকু আপাততঃ জমিয়ে রাখুন written exam-এর জন্য৷
• Blind guessing করতে যাবেন না, তবে কিছুটা intellectual guessing করলে কোনও দোষ নেই৷ ৬টা questions ছেড়ে zero পাওয়ার চাইতে ৩টা correct করে 1.5 পাওয়া অনেক ভাল৷
• Competitive examগুলোতে ভাল করার ক্ষেত্রে প্রস্তুতির চাইতে আত্মবিশ্বাস বেশি কাজে লাগে৷ I’m the best এই ভাবটা exam hall-এ ধরে রাখুন৷ এটা magic এর মতো কাজ করে! একটি প্রশ্নের উত্তর নিজে ভুল করলে যতটা না মেজাজ খারাপ হয়, তার চাইতে অনেক বেশি মেজাজ খারাপ হয় কারো কাছ থেকে শুনে ভুল করলে৷ (তখন মনে হয়, ইসস্ এটা তো আমি নিজেনিজে পারতাম!)
• প্রশ্নে দু’-একটা ছোট-খাট ভুল থাকতেই পারে৷ এটা নিয়ে মাথা খারাপ করার কিছু নেই৷ সমস্যা হলে তো সবারই হবে, আপনার একার নয়! Nervousness দূর করার চেষ্টা করুন, কারণ ওতে প্রশ্নগুলো তো আর সহজ হবে না, বরং সহজ প্রশ্ন ভুল answer করার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে৷ মনে রাখুন, Que sera, sera.
• এই সময়টাতে বন্ধু-বান্ধবদের সাথে পড়া শেয়ার করা কমিয়ে দিন৷ বন্ধুদের preparation ভাল না শুনলে মন খারাপ হয়, আর preparation আপনার চেয়েও ভাল, এটা শুনলে কিন্তু মেজাজ খারাপ হয়! কেউ আপনার চাইতে ভাল student হওয়া মানেই এই নয় যে, উনি প্রিলিমিনারি পাস করবেন, আপনি করবেন না৷ শেষ হাসিটা হাসার চেষ্টা করুন৷
• বৃহঃস্পতিবার সন্ধ্যায় এমন কিছু করুন যা করতে আপনি enjoy করেন৷ (আমি academic পড়াশোনা খুব একটা enjoy করি না৷ যতটুকু মনে পড়ে, প্রিলিমিনারি পরীক্ষার আগের দিন সন্ধ্যায় আমি movie দেখেছিলাম, instrumental শুনেছিলাম৷) পরীক্ষার প্রয়োজনীয় জিনিস-পত্র গুছিয়ে নিয়ে রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ুন৷ এক ঘণ্টা মাথা ঠিক রাখার জন্য দারুণ একটা ঘুম অনেক help করে৷
• শুক্রবার সকালে কিছু পড়ার প্রয়োজন নেই৷ টেনশন ফ্রি থাকুন৷ বাবা-মা’র আশীর্বাদ আপনার সাথে আছে৷ আত্মবিশ্বাস রাখুন৷ রাস্তায় জ্যাম্ থাকতে পারে, তাই হাতে যথেষ্ট সময় নিয়ে বাসা থেকে রওয়ানা হয়ে পড়ুন৷ তাড়াহুড়ো করবেন না৷
বিসিএস পরীক্ষায় ভাল করা মূলতঃ চারটি বিষয়ের উপর অনেকংশে নির্ভর করে —- ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান ও বাংলা৷ এই চারটি বিষয় বেশি জোর দিয়ে পড়ুন৷ কোন-কোন segment-এ candidateরা সাধারণতঃ কম marks পায় কিন্তু বেশি marks তোলা সম্ভব, সেগুলো নির্ধারণ করুন এবং নিজেকে ওই segmentগুলোতে ভালভাবে prepare করে competition-এ আসার চেষ্টা করুন৷ বিসিএস পরীক্ষার difficulty level আমার কাছে কিছুটা overrated বলেই মনে হয়েছে৷ বিসিএস competitive exam, এটা যতটা সত্য, real competition-এ আসার মতো candidate খুব বেশি সাধারণতঃ থাকে না, এটা ততোধিক সত্য৷ তাই ভয়ের কিছুই নেই৷ আপনাদের জন্য শুভ কামনা রইলো৷ স্রষ্টা আপনাদের সহায় হোন৷
লেখাটি কিছুটা পরিবর্তিত আকারে ‘প্রথম আলো’তে ছাপা হয়েছিল৷ লিঙ্কটি এখানে—http://www.prothom-alo.com/deta…/date/2012-05-30/news/261703

স্বাগত হে স্বপ্ন
………………………………
ধুলোর ঝড়ের মধ্যে চোখ বন্ধ করে হাঁটাটা যতটা বিপত্তিকর, তার চেয়েও অনেক বেশী কষ্টের, যখন দেখি, ঝড় থেমে গেছে, অথচ শুধু হাঁটতে শিখিনি বলেই যে পথে অনেকেই হেঁটে গেছে, সে পথ আমার আর পেরুনো হলনা৷ ফিনিক্স পাখির উপমা যদি বেশি বাড়াবাড়ি মনে না হয়, তাহলে বলা যায় যে এ পাখির মতনই আমাদের স্বপ্ন বারবার মরে এবং বাঁচে৷ স্বপ্নেরা কখনও-কখনও ভেঙে যায়, দূরে ভেসে হারিয়ে যায় না৷ মাঝেমাঝে নিজের অস্তিত্বকেই অতিথি মনে হয়৷ যে অন্ধকারের মধ্যে ডুবে আছি তাকে নিয়েই গান গাইবার বড্ড সাধ হয়৷ ভেতরের ক্লান্ত ‘আমি’টা বিদ্রোহ করে যেন, আমি ওকে থামিয়ে দিই—-সচেতনভাবেই৷
একটা ছোটো পালতোলা নৌকা, ভাসছে সমুদ্রের বুকে৷ রোমাঞ্চকর এই আপাত নিরুদ্দেশ যাত্রার প্রথম সীমাটি আপনারা পার হয়েছেন৷ অভিনন্দন৷ এখন সময় এসেছে বৃহতের সামনে দাঁড়ানোর, স্বপ্ন-ছোঁয়ার শিহরণটুকু নেয়ার পূর্বপ্রস্তুতি গ্রহণের৷ আপনার স্বপ্ন নিয়ে ভাবুন, স্বপ্নও আপনাকে নিয়ে ভাববে৷ অন্য কিছু নিয়ে ভাববার সময়টুকুতে ধরে নিন আপনি কিছুই ভাবছেন না৷ ভাবনার এই সময়োচিত সংকীর্ণতাটুকু আপনাকে অনেক দূর নিয়ে যাবে—এতে কোনও সন্দেহ নেই৷
• প্রথমেই পড়ে ফেলুন ১০ম থেকে ৩২তম বিসিএস লিখিত পরীক্ষার সব প্রশ্নোত্তর৷ ভালভাবে স্টাডি করুন বারবার৷ প্রশ্নের ধরন সম্পর্কে একটা স্বচ্ছ ধারণা নিন৷ যুদ্ধে যাবার আগে নিজের দুর্বল ও সবল দিকগুলো জানা থাকলে প্রস্তুতি নেয়া সহজ হয়৷ যেকোনও প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় ভাল করতে হলে কী কী পড়তে হবে তা জানার চাইতে অনেক বেশী জরুরী কী কী বাদ দিয়ে পড়বেন, সেটা ঠিক করা৷
• সব কিছু পড়ার সহজাত লোভ সামলান৷ শতভাগ প্রস্তুতি নিয়ে বিসিএস পরীক্ষা দেয়া কারো পক্ষেই সম্ভব নয়৷ একটি অপ্রয়োজনীয় প্রশ্ন একবার পড়ার চেয়ে প্রয়োজনীয় প্রশ্নগুলো বারবার পড়া অনেক ভাল৷
• বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, ইংরেজি, গণিত ও মানসিক দক্ষতা, বাংলা—এই চারটি বিষয়ের উপর বেশি জোর দিন৷ লিখিত পরীক্ষায় কিছু প্রশ্ন আসে যেগুলোর উপর প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারা বা না থাকতে পারা অনেকখানি নির্ভর করে৷ এ ধরনের প্রশ্নের মধ্যে রয়েছে সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন, টীকা, শর্ট নোট, সারাংশ, সারমর্ম, ভাবসম্প্রসারণ, অনুবাদ, ব্যাকরণ ইত্যাদি৷
• বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, বাংলাদেশ বিষয়াবলি, আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি—–এই বিষয়গুলোতে প্রয়োজনীয় চিহ্নিত চিত্র ও ম্যাপ আঁকুন৷ যথাস্থানে বিভিন্ন ডাটা, টেবিল, চার্ট প্রদান করুন৷
• নিয়মিত পেপার পড়ুন৷ সম্ভব হলে অন্তত ৫-৬ টা৷ অনলাইনে পড়তে পারেন৷ এই সময়টাতে পুরো পেপার না পড়ে শুধু যে অংশগুলো লিখিত পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয়, সেগুলোই পড়ুন৷ পেপারের গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেল/কলামগুলি পড়ে সেগুলি নিজের মত করে পুনর্লিখনের (rewrite) চর্চা করুন। প্রতিদিনই বিসিএস পরীক্ষার জন্য দরকারি কোনও টপিক নিয়ে অন্তত ৩ পৃষ্ঠা লিখুন। পেপারের সম্পাদকীয়কে নিয়মিত অনুবাদ করুন।
• গাইড বই পড়ুন৷ সম্ভব হলে, অন্তত ৩-৪ সেট৷ তবে খেয়াল রাখবেন, গাইডে অনেক ভুল থাকে৷ এটা স্বাভাবিক৷ তাই পড়ার সময় সংশোধন করে নিতে হবে৷
• বিভিন্ন রেফারেন্স, টেক্সট ও প্রামাণ্য বই অবশ্যই পড়তে হবে৷ বিসিএস পরীক্ষায় অনেক প্রশ্নই কমন পড়েনা৷ এসব বই পড়া থাকলে উত্তর করাটা সহজ হয়৷
• প্রশ্নের উত্তর দেয়ার সময় বিভিন্ন লেখকের রচনা, পত্রিকার কলাম ও সম্পাদকীয়, সংবিধানের সংশ্লিষ্ট ধারা, বিভিন্ন রেফারেন্স থেকে উদ্ধৃতি দিলে মার্কস বাড়বে৷ এই অংশগুলো লিখতে নীল কালি ব্যবহার করলে সহজে পরীক্ষকের চোখে পড়বে৷
• নোট করে পড়ার বিশেষ প্রয়োজন নেই৷ এতটা সময় পাবেন না৷ বরং কোন প্রশ্নটা কোন সোর্স থেকে পড়ছেন, নোটবুকে সেটা লিখে রাখুন৷ রিভিশন দেয়ার সময় কাজে লাগবে৷
• বাংলাদেশের সংবিধানের ব্যাখ্যা, বিভিন্ন সংস্থার অফিসিয়াল ওয়েবসাইট, কিছু আন্তর্জাতিক পত্রিকা ইত্যাদি সম্পর্কে খোঁজ-খবর রাখুন৷ তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহে রাখুন৷ প্রয়োজনমত পরীক্ষার খাতায় রেফারেন্স উল্লেখ করে উপস্থাপন করুন৷
• লেখা সুন্দর হলে ভাল, না হলেও সমস্যা নেই৷ পরীক্ষায় অনেক দ্রুত লিখতে হয়৷ তাই, প্রতি ৩-৫ মিনিটে ১ পৃষ্ঠা লেখার প্র্যাকটিস্ করুন৷ খেয়াল রাখবেন, যাতে লেখা পড়া যায়৷ সুন্দর উপস্থাপনা মার্কস বাড়ায়৷
• কোনওভাবেই কোনও প্রশ্ন ছেড়ে আসবেন না৷ উত্তর জানা না থাকলে ধারণা থেকে অন্তত কিছু লিখে আসুন৷ আপনি প্রশ্ন ছেড়ে আসছেন, এটা কোনও সমস্যা না৷ সমস্যা হল, কেউ না কেউ সেটা উত্তর করছে৷
• নিজের সাজেশনস্ নিজেই তৈরী করুন৷ কারো সাজেশনস্ ফলো করবেন না৷ এই প্রশ্নটা আসবেই আসবে—এ জাতীয় মিথ্যে আশ্বাসে কান দেবেন না৷
• যেকোনও প্রয়োজনীয় বিষয় নিয়ে ননস্টপ লেখার দক্ষতা অর্জন করুন৷ পড়ার অভ্যাস বাড়ান৷ এতে আপনার লেখা মানসম্মত হবে৷
• কোনও উত্তর মুখস্থ করার দরকার নেই৷ বরং একাধিকবার পড়ুন৷ ধারণা থেকে লেখার অভ্যাস গড়ে তুলুন৷
• কোন ভাষায় উত্তর লিখবো? ইংরেজিতে? নাকি, বাংলায়? এ প্রশ্ন অনেকেরই৷ আমি বাংলায় লিখেছি৷ এ ভাষায় ‘আসি’ বলে স্বচ্ছন্দে চলে যাওয়া যায়—কী আশ্চর্য রহস্য! তাই না? তবে, আপনি ইংরেজিতেও লিখতে পারেন৷ এক্ষেত্রে সাবলীলতা ও প্রাঞ্জলতাই মুখ্য৷
• অনেকেই বলবে, আমার তো অমুক-অমুক প্রশ্ন পড়া শেষ! ব্যাপারটাকে সহজভাবে নিন৷ আপনার আগে কেউ কাজ শেষ করলেই যে শেষ হাসিটা উনিই হাসবেন—এমন তো কোনও কথা নেই৷
• মাঝেমাঝে পড়তে ইচ্ছে করবে না, আমারও করত না৷ সারাক্ষণ পড়তে ইচ্ছে করাটা মানসিক সুস্থতার লক্ষণ না৷ হোয়াই সো সিরিয়াস? তাই, ব্রেক নিন, পড়াকে ছুটি দিন৷ মাঝেমধ্যেই৷ দু’দিন পড়া হলো না বলে মন খারাপ করে আরো দু’দিন নষ্ট করার তো কোনও মানে হয় না৷ সেই দু’দিন বরং পড়ুন৷ অনুশোচনা করার সময় কোথায়?
অনেক বকবক করলাম৷ এবার একটি গল্প হোক৷ পড়ুন, ভাবুন৷
শীতের প্রকোপ থেকে বাঁচতে একটা ছোট্ট পাখি সাইবেরিয়া ছেড়ে যাচ্ছিল৷ হঠাৎ পাখিটা জমে গিয়ে বরফের টুকরোর মতন টপ্ করে মাটিতে পড়ে গেল৷ বেশ কিছু সময় পরে সেই পথ দিয়ে একটা গরু হেঁটে যাওয়ার সময় পাখিটার উপর মলত্যাগ করল৷ কিছুক্ষণ পর গোবরের উষ্ণতায় পাখির গায়ের সমস্ত বরফ ঝরে গেল৷ পাখিটা তখন খুশিতে গান গাইতে শুরু করল৷ কাছেই একটা বেড়াল বসেছিল৷ গান শুনে বেড়ালটা গোবর থেকে পাখিটাকে বের করে খেয়ে ফেলল৷
এই গল্পের লেসন গুলো কী কী?
যারা আমাদের উপরে ময়লা ছিটিয়ে দেয় অর্থাৎ আমাদের বকা-ঝকা করেন, তাদের সবাই কিন্তু আমাদের শত্রু নন; অনেকেই আমাদের ভাল চান৷ এই দলে আছেন, আমাদের বাবা-মা, সিনিয়ররা, স্যাররা৷
অনেকেই আছেন যাঁরা আমাদের বিপদ থেকে মুক্ত করার কথা বলে হাত বাড়িয়ে দিয়ে আরো বড় বিপদে ফেলে দেন৷ তাঁরা বলেন, “তোমাকে দিয়ে বিসিএস হবেনা৷ তার চেয়ে অন্য কিছু কর৷” আমি মনে করি, আপনি যদি কাউকে কোনও ব্যাপারে সাহায্য করতে না পারেন, তবে তাকে সে ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করার কোনও অধিকার আপনার নেই৷
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, যখন আপনি বিপদে আছেন, তখন সবসময় আপনার মুখ বন্ধ রাখবেন৷ রেজাল্ট বের হওয়ার আগের ১-১.৫ বছর আমি মুখ বন্ধ রেখেছি৷ অনেক কথা জমে গেছে; সেই কথাগুলোই এখন আপনাদের বলছি৷ আপনার সাফল্য সবার মুখ বন্ধ করে দিতে পারে৷ তাই, নিজের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিন; অন্যদের প্রতি নয়৷
জীবনটা যেন পৃথিবীর সমস্ত দূরপাল্লার দৌড়বীরদের জুতোর মতন৷ তাকে ছোটাতে হয়৷ তবু জীবন মাঝেমাঝে থমকে যায়৷ হঠাৎ নিজেরই পরসত্তা ভিন্ন দর্পণে সামনে এসে যায় যেন! মুক্তি অনিশ্চিত জেনেও মুক্ত হওয়ার আকুতি—-যতটা অনর্থক, ততটাই তীব্র৷ নাম-পরিচয়হীন থাকার যে কী যন্ত্রণা, সেটা আমি খুব ভালভাবে বুঝি৷ বিশেষ করে, যখন আশে-পাশের সবাই চাইছে, আমি এমন কিছু একটা হয়ে যাই, যা আমি হতে চাইছি না, তখন নিজেকে খুব অসহায় মনে হয়৷ শাণিত যুক্তির ঝলকানির চেয়ে অধিগত চেতনার স্ফূরণ বেশি প্রভাব বিস্তারকারী৷ বলতে পারেন, মনোগত কৈবল্যকে একেবারে ওলট-পালট করে দেয়৷ আমার ধারণা, অন্তর্গত চেতনার কাছে যুক্তির অসহায়ত্বেই আত্মিক মুক্তি ঘটে৷ আমার ক্ষেত্রে তা-ই হয়েছে৷ সাফল্যের জন্যে আত্মবিশ্বাস জরুরী, নাকি আত্মবিশ্বাসের জন্যে সাফল্য জরুরী—-এই দ্বন্দ্বে কেটেছে বহুদিন৷ ভেবেছিলাম, বুঝি হারিয়েই যাবো! কঠিন সময়ের স্রোতে শুধু কঠিন মানুষগুলোই টিকে থাকে—-এই বোধটুকু কাজ করত সবসময়৷ নিয়তি সহায় হয়েছে৷ আমি হারাইনি! স্বপ্ন নির্মাণ করুন৷ তাকে স্পর্শকের স্পর্ধায় ছুঁয়ে ফেলার শপথ নিন৷ স্বাগত হে স্বপ্ন৷
লেখাটি কিছুটা পরিবর্তিত আকারে ‘প্রথম আলো’তে ছাপা হয়েছিল৷ লিঙ্কটি এখানে—
http://www.prothom-alo.com/deta…/date/2012-07-04/news/270941