দূরত্বের নেপথ্যে

শুরুতেই ডিসক্লেইমার দেয়ার প্রয়োজন অনুভব করছি। এই লেখাটির অর্থ কোনওভাবেই এমনকিছু নয় যে, কীভাবে দূরত্ব সৃষ্টি করতে হয়। আমি শুধু বলার চেষ্টা করেছি, কীভাবে দূরত্ব সৃষ্টি হয়। লেখাটি সম্পূর্ণরূপেই আমার ব্যক্তিগত নির্মোহ পর্যবেক্ষণের প্রতিফলন। লেখা পড়ে ভুলভাল বুঝে মেজাজখারাপ করার অভ্যেস যাদের আছে, তারা দয়া করে লেখাটি পড়বেন না। আমার লেখা পড়ার কোনও দায় যেমন আপনার নেই, ঠিক তেমনি আপনার আজেবাজে কমেন্ট সহ্য করার দায়ও আমার নেই----এটি মাথায় রাখতে পারার মত মানসিক পরিপক্বতা না থাকলে লেখাটি এড়িয়ে যান।
ছেলেটি মেয়েটিকে বুঝতে পারে না, মেয়েটি ছেলেটিকে বিশ্বাস করে না---এটাই মোটামুটি সব সম্পর্কের সাধারণ সুতো। কেন সম্পর্কে-থাকা দুজন মানুষ-মানুষী পরস্পরকে ঠকায়? বিয়ের আগে, কিংবা পরে? এই ব্যাপারটি নিয়ে অনেকদিন ধরে অনেকের অভিজ্ঞতা শুনেছি, পড়েছি, দেখেছি, জেনেছি। আমার নিজের কাছে এই ব্যাপারটা নিয়ে যা যা মনে হয়েছে, সেসব কথা অকপটে লিখছি। এই ঠকানোর ব্যাপারটি চটজলদি হয়ে যায় না। এটা নিয়ে অনেকদিন ধরেই ভাবনা চলতে থাকে, নানান ধরনের প্ল্যান হয়, এবং বিভিন্ন অজুহাত দাঁড় হয়ে যায়---নিজের কাছে আর পছন্দের মানুষটির কাছে। নিজেকে এরকম একটা চিটারের জন্য বদলে ফেলার চাইতে বরঙ সেই চিটারকেই বদলে অন্য কারওর সাথে কিংবা একা জীবন কাটানোই বেটার অপশন---এরকম মনে হয়। যে কয়েকটি কারণে ব্রেকআপ হয়, ডিভোর্স হয়ে যায়, কিংবা দূরত্ব সৃষ্টি হয়, কিংবা প্রেমিক-প্রেমিকা পরস্পরকে চিট করে, সেগুলি নিয়ে বলছি।
1) হয়তো একটা রিলেশনের কোনও সুন্দর সমাপ্তি নেই, স্রেফ ক্ষণিকের মোহেই সবকিছু হচ্ছে, এটা আগে থেকেই দুজন জানে। তখন ওরা মিউচ্যুয়ালি ব্রেকআপের সিদ্ধান্ত নেয়। এমনও হতে পারে, দুজনই খুব চমৎকার, কিন্তু ওদের ভাবনাগুলির ধরন সম্পূর্ণই আলাদা। তখন ওরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেও দূরে সরে যেতে পারে।
2) দুজন রিলেশনে আছে, কিন্তু দুজনই কিংবা যেকোনও একজন ভেতর থেকেই এক ধরনের অস্বস্তি অনুভব করছে, এবং প্রতি মুহূর্তেই ভাবছে, এই রিলেশনটা কন্টিনিউ করাটা ঠিক হচ্ছে না। এসব ক্ষেত্রে বেশিরভাগ মানুষই নিজের ইন্টিউশনের কথাটাই শোনে (এবং সেটা শোনাই উচিত)।
3) যদি এমন হয় যে, দুজন একসাথে থাকছে, গল্প করছে, ঘোরাঘুরি করছে, অথচ কী এক কারণে ওদের একজন সারাক্ষণই ‘লো ফিল’ করছে; তবে এরকম ক্ষেত্রে নিশ্চিতভাবেই একটা সময়ে দূরত্ব সৃষ্টি হয়।
4) অনেকের মধ্যেই ‘আমার কিছু ভাল লাগে না’ রোগ আছে। যদি এই রোগটি পছন্দের মানুষের সান্নিধ্যেও সেরে না যায়, তবে সে সম্পর্ক শুধু ভালোবাসায় টিকে থাকে না। স্রেফ ভালোবাসায় সম্পর্ক টিকে থাকে---খুব ভুল কথা।
5) বেশিরভাগ মেয়েই ভাল শ্রোতা হয় না। তারা শুধু নিজেদের কথা শোনাতেই ব্যস্ত। মজার ব্যাপার হল, এদের মধ্যে কেউ-কেউ আছে, যারা নিজের প্রিয় মানুষটিকে কথা বলতে দেয় না, এর আগেই নিজের কথা বলতে শুরু করে, কিন্তু ওর অন্য অনেক বন্ধুর কথাই মন দিয়ে শোনে। এক্ষেত্রে ছেলেটি নিশ্চয়ই এমন কাউকে মনে-মনে খুঁজে বেড়াবে, যার কাছে মনের কথাগুলি বলা যায়।
6) যদি কোনও ছেলেকে ওর প্রেমিকা অকারণেই সারাক্ষণ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে জেরা করতেই থাকে, তবে ছেলেটি ভাববে, ও বিশ্বস্ত থাকলেও কী, না থাকলেও কী, মেয়েটি তো আর ওকে বিশ্বাস করে না। ভালোবাসা কারাগার নয়। ব্যক্তিস্বাধীনতা খর্ব হলে ভালোবাসা আস্তে-আস্তে কমে যায়। সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্রে ভালোবাসার চাইতে শান্তির মূল্য অনেক বেশি।
7) যে মানুষটি ওর পার্টনার সম্পর্কে বলার মতো ভাল কিছু কখনওই পায় না, তাকে নিয়ে থাকার সিদ্ধান্ত নিঃসন্দেহে অনেক বড় একটা ভুল সিদ্ধান্ত। যে সবসময়ই তার পার্টনারের বাজে দিকগুলি নিয়েই গবেষণা করতে থাকে, তার সাথে ব্রেকআপ করাই উচিত। পৃথিবীতে কেউই পারফেক্ট নয়। ভালোবাসা মানেই হল, মনেমনে এটা বলা: আমি তোমার সীমাবদ্ধতাগুলিও মেনে নিতে রাজি আছি।
8) যখন সিঙ্গেল ছিলাম, তখনই বরঙ বেশ ভাল ছিলাম! ---- এই ভাবনাটি প্রায়সময়ই মাথায় কাজ করলে একটাসময় পর রিলেশন থেকে বেরিয়ে আসার অবিরত প্রৈতি থেকেও ব্রেকআপ হয়ে যায়। কোনও রিলেশন থেকে সত্যিকারের সুখ পাওয়া যাক আর না-ই যাক, অন্তত শান্তি পাওয়া না গেলে, সে রিলেশন টিকিয়ে রাখার কোনও মানেই হয় না। “ভালোবেসে যদি সুখ নাহি তবে কেন,...... তবে কেন মিছে ভালোবাসা.........”
9) যখনই রিলেশনে কোনও ঝামেলা দেখা দেয়, তখনই যদি সবসময়ই শুধু একজনই সে রিলেশনটা টিকিয়ে রাখার জন্য সবধরনের চেষ্টা আর ত্যাগ স্বীকার করে যায়, তবে খুব স্বাভাবিকভাবেই একটাসময় পর গিয়ে সে রিলেশনে ভাঙন দেখা দেয়। সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার একতরফা দায় একধরনের মানসিক দাসত্ব।
10) যদি কেউ তার নিজের কোনও একটি বদভ্যাস তার পছন্দের মানুষটিকেও গ্রহণ করতে বাধ্য কিংবা উৎসাহিত করে, তবে সে রিলেশন খুবই কম টেকে। ধরা যাক, কোনও ছেলে সিগারেট কিংবা অ্যালকোহল খায়। সে যদি মেয়েটিকেও সিগারেট কিংবা অ্যালকোহল খেতে শিখিয়ে দেয়, তবে সেখানে আসলেই ভালোবাসা কতটুকু আছে, সে বিষয়ে আমি সন্দিহান। হয়তোবা সে স্রেফ একজন বদভ্যাসের পার্টনার চাচ্ছে, আর কিছুই নয়। বদভ্যাসের টানে বন্ধুত্ব হয়, ভালোবাসার সম্পর্ক নয়।
11) স্রেফ শারীরিক সম্পর্কের বৈচিত্র্যের খোঁজে অনেক ছেলেমেয়েই অন্য কারও সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। এমন নয় যে, তারা পুরনো সম্পর্কে অসুখী। শুধু নতুনত্বের স্বাদ পেতে ওরা এমনটা করে।
12) স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বয়সের পার্থক্য খুব বেশি হলেও অনেকসময়ই শারীরিক ও মানসিক অতৃপ্তি থেকেও অন্য সম্পর্কে জড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতা দেখা যায়।
13) সম্পর্কের সময় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ঝগড়া হতেই পারে। কিন্তু যদি এমন হয় যে, মেয়েটির রাগ থেকে বাঁচতে ছেলেটি প্রায়সময়ই হার মেনে নেয়, কিংবা এর উল্টোটা, তবে সে সম্পর্ক দীর্ঘসময় ধরে টিকে থাকবে না, এটাই স্বাভাবিক।
14) সম্পর্কের শুরুতে ছেলেটি চায়, মেয়েটি খুব কেয়ারিং হোক। যখন পুরোপুরিই প্রেমটা হয়ে যায়, তখন মেয়েটি অতিমাত্রায় কেয়ারিং হয়ে পড়ে। এই ব্যাপারটি বেশিরভাগ ছেলেই সহ্য করতে পারে না। কুকুরবেড়ালকে পোষ মানিয়ে নিজের খেয়ালে চলতে বাধ্য করা যায়, মানুষকে নয়।
15) সম্পর্কটা যদি স্রেফ অভ্যেসের ব্যাপার হয়ে ওঠে, তবে একঘেয়েমি কাটাতে ছেলেরা মেয়েটিকে জানতে না দিয়ে অন্যকারওর সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে যেতে পারে। কখনও, মেয়েটির ক্ষেত্রেও এটি দেখা যায়।
16) সম্পর্ক যত এগোতে থাকে, ততই যদি সম্পর্কের শুরুর রঙগুলি আস্তে-আস্তে ফিকে হয়ে ওঠে, সম্পর্কটা বোঝার মতন মনে হয়, তবে ছেলেটি নতুন রঙের খোঁজে অন্যদিকে চলে যাওয়ার কথা ভাবতে পারে।
17) সম্পর্ক গড়ার এবং ভাঙার ক্ষেত্রে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলির ভূমিকা অসীম। ফেসবুকে, ভাইবারে, হোয়াটস্অ্যাপে, ইমোতে, অফিসে, ঘরের বাইরে ইত্যাদি জায়গায় নতুন-নতুন সম্পর্কে জড়ানোর অনেক অপশনই খুব সহজলভ্য। কেউ-কেউ নতুনের দিকে ঝুঁকেও পুরনো সম্পর্ক ভেঙে দিতে পারে।
18) কোনও মেয়েকে অ্যাপিয়ারেন্স আরও সুন্দর করা নিয়ে সবসময়ই বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দিতে থাকলে, মেয়েটি একটা সময়ে ভাবে, ছেলেটি আসলে তাকে ভালোইবাসে না। তখন সে খুব সহজেই এমন ছেলের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ে যে ছেলেটি তার শারীরিক গঠনের প্রশংসা করে।
19) মেয়েদের সন্দেহবাতিকগ্রস্ততা কিংবা বেশি-বেশি পসেসিভনেস খুবই বাজে জিনিস। এ ব্যাপারটি ছেলেটিকে বিরক্ত করে তুলতে পারে। ফেসবুকে ওর একটা মেয়েবন্ধুর সাথে ছবি পোস্ট করলে, কিংবা ওর কোনও ছবিতে কোনও মেয়ে লাইক দিলে, কিংবা ও কোনও মেয়ের পোস্টে লাইক দেয়া নিয়ে যদি মেয়েটি ওর সাথে খটমট করতেই থাকে, অনেকসময়ই সে সম্পর্কে ভাঙন ধরে। এর বিপরীতটাও ঘটে।
20) সন্তানের জন্মের পর সন্তানের প্রতি মাত্রাতিরিক্ত মনোযোগের ফলেও স্বামী-স্ত্রীর পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ এবং ভালোবাসা কমে দূরত্ব তৈরি হতে পারে। অনেক যুগলই সন্তান জন্মের পর ভুলে যান, তারা কেন বিয়ে করেছিলেন। এসবক্ষেত্রে কখনও-কখনও সম্পর্কে চিড় ধরতে পারে।
21) শুধু ভালোবাসাতেই কোনও সম্পর্ক টিকে থাকে না। সম্পর্কের পর সম্পর্কের প্রয়োজনে আচার-আচরণে কিছু পরিবর্তন এবং সেসব পরিবর্তনের নিয়মিত চর্চাতেই সম্পর্ক টিকে থাকে। অন্যথায়, সম্পর্কের নানান ধরনের অসুখ তৈরি হয়, এবং সেটা একটা সময়ে দূরত্বের দিকে চলে যায়।
22) শারীরিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে ছেলেটি যেভাবে করে চায়, যদি মেয়েটি ঠিক সেভাবে করে না চায়, তবে একটা সময়ে অস্বস্তি আর বিরক্তি থেকে ছেলেটি গোপনে অন্য সম্পর্কে জড়িয়ে যেতে পারে। ক্বচিৎ, মেয়েদের ক্ষেত্রেও এমন হয়।
23) যেসব মেয়ে ছেলেদের সব অজুহাতই বিশ্বাস করে, তাদেরকে ঠকাতে না পারলে অনেক ছেলেই অপরাধবোধে ভোগে। যে মেয়ের ভালোবাসা যত বেশি, সে মেয়ে তত বেশি ভালোবাসার মানুষের সকল অজুহাত বিশ্বাস করে, এবং তত বেশি ঠকে।
24) যেসব ছেলে একাধিক মেয়ের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ে, তারা হঠাৎ করেই বেশি রোম্যান্টিক আর যৌন আবেদনময় হয়ে ওঠে। ব্যাপারটি ওর ভালোবাসার মানুষ বেশিরভাগ সময়ই খুব নেতিবাচকভাবে দেখে, আর সেও সুযোগ পেয়ে আরও বেপরোয়া হয়ে যায় দিনদিন।
25) যেসব ছেলের নিজের সন্তানের প্রতি স্নেহ-ভালোবাসা কম, তাদের মধ্যে বহুগামিতার প্রবণতা বেশি। যে ছেলেকে নিজের ঘর টানে না, সে ছেলেকে নিশ্চয়ই অন্যঘর টানে।
26) যেসব ছেলে বিয়ের আগেও এক বা একাধিক শারীরিক সম্পর্কে অভ্যস্ত থাকে, ওরা সাধারণত বিয়ের পরেও সেটা থেকে সরে আসতে চায় না। এক্ষেত্রে ব্যাপারটি এমন নয় যে, সে তার স্ত্রীকে ভালোবাসে না। স্রেফ অভ্যস্ততা থেকেই ও এটি করে যায়। মেয়েদের ক্ষেত্রেও কখনও-কখনও তা-ই।
27) যেসব ছেলে প্রেমিকার সাথে প্রচুর মিথ্যে বলে, সেসব ছেলের প্রেমিকারা যা যা করলে তাদের সাথে মিথ্যে বলতে হয়, এমনসব কাজ লুকিয়ে-লুকিয়ে করতে থাকে। এতে দূরত্ব বাড়েই!
28) যেসব ছেলে তাদের ছোটবেলায় বাসায়, পরিবারে, প্রতিবেশীদের মধ্যে কিংবা পাড়ায় স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কে ভাঙন দেখে-দেখে বড় হয়েছে, তারা বড় হলেও সেই প্র্যাকটিসটাকে স্বাভাবিক ব্যাপার মনে করে। এই ধরনের ছেলেরা বিয়ের পর স্ত্রীর প্রতি বিশ্বস্ত হওয়ার কোনও প্রয়োজন অনুভব করে না।
29) যে মানুষের নিজস্বতা এবং স্বকীয়তা নেই, সে মানুষের সাথে দীর্ঘদিন একসাথে থাকতে সবাইই একটাসময়ে ক্লান্তিবোধ করে। সেই ক্লান্তি কাটানোর জন্যও নতুন কোনও সম্পর্কের প্রতি আকর্ষণ কাজ করতে পারে।
30) যে পুরুষ বিয়ের পর স্ত্রীর রান্না এবং সৌন্দর্যের প্রশংসা করে না, সে পুরুষ কখনওই ভাল স্বামী হতে পারে না। ছুটির দিনগুলিতে ঘুরতে যাওয়া, একসাথে মুভি দেখতে যাওয়া, বাইরের রেস্টুরেন্টে খেতে যাওয়া, পরস্পরকে উপলক্ষ ছাড়াও মাঝমধ্যে কিছু উপহার কিনে-দেয়া, লংড্রাইভে যাওয়া, রাতে হুট করে বের হয়ে আইসক্রিম খেতে যাওয়া, এরকম অনেককিছুই পরস্পরকে আরও কাছে নিয়ে আসে। এসবের অভাবে অনেক সম্পর্কেই দূরত্ব এসে যায়।
31) যে ছেলেরা প্রতারণা করে, তাদের সাধারণত অনেক প্রতারক বন্ধু থাকে। ওদের সাথে মিশে-মিশে ওরা প্রতারণার পক্ষে অনেক যুক্তি দাঁড় করিয়ে ফেলে এবং প্রতারণা করাটাকে একটা স্বাভাবিক ব্যাপার হিসেবেই বিশ্বাস করতে শুরু করে।
32) মানুষ তার পারিপার্শ্বিকতা দ্বারা প্রভাবিত হয়। যেসব বিবাহিতা মেয়ে ওদের ডিভোর্সি বান্ধবীদের সাথে বেশি-বেশি মিশে, ওদের সাথে সম্পর্কের টানাপড়েন নিয়ে কথা বলে, তাদের মধ্যে এই ধারণা জন্মে যেতে পারে যে, ডিভোর্স কোনও ব্যাপারই না! ওদের অনেকেই ছোটোখাটো সমস্যাগুলির সমাধান না করে ডিভোর্সের কথা ভাবতে পারে। পৃথিবীর প্রত্যেকটি মানুষই নিজের অবস্থানের পক্ষে যুক্তি দাঁড় করিয়ে ফেলতে পারে, তা সে অবস্থান সঠিক হোক, কিংবা ভুল হোক। তাই আমি কার সাথে মিশছি, সেটা সম্পর্কে সচেতন হওয়াটা জরুরি।
33) যে ছেলের প্রেমিকা ছেলেটির সবকথাই বিশ্বাস করে, কিংবা অবিশ্বাস করে, সে ছেলে নিশ্চিতভাবেই অন্য মেয়ের প্রতি আকৃষ্ট হয়।
34) যে ছেলেটি একবার সম্পর্কে অবিশ্বস্ত হয়েছে, সে ছেলেটিকে ক্ষমা করে দিলে, সে ছেলেটি মুখে যা-ই বলুক না কেন, প্রায়ক্ষেত্রেই আবারও চিট করে বসে। যদি সে মেয়েটিকে ‘ম্যানেজ’ করার টেকনিকগুলি একবার শিখে যায়, তবে বারবারই সেগুলি অ্যাপ্লাই করে এবং ‘পার পেয়ে’ যায়। প্রতারণা করা প্রতারকদের একটি স্বাভাবিক প্রবৃত্তি। প্রতারকদের গায়ের চামড়া খুলে নিলেও সে প্রতারণা করার অভ্যাস ছাড়তে পারে না।
35) যে ছেলে তার প্রেমিকার বকবক শুনতে পছন্দ করে না, সে ছেলে খুব দ্রুতই তার প্রেমিকার জীবনে অন্য একটি ছেলেকে আবিষ্কার করে, যে ছেলেটি মেয়েটির সবচাইতে গুরুত্বহীন কথাটিও খুব মন দিয়ে শোনে। এরকম ক্ষেত্রে সাধারণত দ্বিতীয়টি ছেলেটি অনাবিষ্কৃতই থেকে যায়, কিন্তু ওর সাথে মেয়েটির যোগাযোগ ঠিকই চলতে থাকে।
36) যে ছেলে একটি মেয়ের সাথে চিট করে অন্য এমন কারওর সাথে সম্পর্কে জড়ায়, যে মেয়েটি ছেলেটির আগের সম্পর্কের কথা জানে, সে ছেলে পরবর্তীতে দ্বিতীয় মেয়েটির সাথেও চিট করে অন্যকারওর সাথে সম্পর্কে জড়াবে। সে ধরেই নেয়, যে দ্বিতীয় মেয়েটি যেহেতু জেনেও ওকে গ্রহণ করেছে, সেহেতু ওর সাথেও চিট করার সকল অধিকার তার আছে।
37) যে কলেজপড়ুয়া গোবেচারা ছেলেটির প্রেমে পড়ে গিয়েছিল মেয়েটি, সে যদি সারাজীবনই ধরে নেয়, ছেলেটি ওরকম গোবেচারাই রয়ে গেছে, তবে একটাসময়ে ছেলেটির বিরক্তি চলে আসতে পারে।
38) যারা চিট করে, তাদের মধ্যে শতকরা ৯৫ ভাগ মেয়ে এবং শতকরা ৮৩ ভাগ ছেলে কখনওই ধরা পড়ে না। অনেকসময়ই সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার জন্য সবকিছু বুঝেশুনেও একে অপরকে কিছুই বলে না। যখন এই ব্যাপারটা নিয়ে মনোমালিন্য শুরু হয়, পরস্পরের প্রতি দোষারোপ চলতে থাকে, তখন আস্তে-আস্তে সম্পর্ক ইতির দিকে চলে যায়।
39) যদি স্ত্রীরও অন্য ছেলের সাথে সম্পর্ক থাকে, তবে স্বামীও অন্য মেয়ের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলে। এটাকে ওরা একটা সাধারণ ব্যাপার হিসেবেই নেয় এবং কেউই কারওর ব্যক্তিগত ব্যাপারে কিছুই জিজ্ঞেস করে না। পরস্পরের গোপনীয়তাকে শ্রদ্ধা করার নামে পরস্পরের ব্যাভিচারকে প্রশ্রয় দেয়া হয়। এই ধরনের পরিবারে শিশুদের মানসিক বিকাশ প্রায়ই ব্যাহত হয়।
40) যদি মেয়েটি অন্য কোনও ছেলেকে বেশি সম্মান করে, এবং ওর প্রেমিক তার প্রাপ্য সম্মান থেকে বঞ্চিত হয়, তবে ছেলেটি নিশ্চিতভাবেই সেই অন্য মেয়েটির প্রতি আকৃষ্ট হবে যে মেয়েটির কাছ থেকে সে সম্মান পায়।
41) যদি কোনও ছেলের সম্পর্কের কথা জেনেও অন্যকোনও মেয়ে ওকে পাওয়ার জন্য ক্রেজি হয়ে ওঠে, তবে সে মেয়েটির আহ্বানে সাড়া দেবে না, এমন ছেলে খুব বেশি নয়। ফ্রিতে পেলে কেউ-কেউ কয়লাও খেয়ে নেয়! একটা মেয়ের নিঃশর্ত আহ্বানে সাড়া দেবে না, এমন ছেলে বেশি আছে বলে মনে হয় না।
42) যদি কোনও ছেলের এক্স-গার্লফ্রেন্ড বর্তমান গার্লফ্রেন্ড কিংবা স্ত্রীর চাইতে বেশি কেয়ারিং হয়, তবে ছেলেটি দুজনের মধ্যে তুলনা করে, এবং তার আগের প্রেমিকার সাথে অনেকটুকুই মিলে যায়, এমন কোনও অন্যমেয়ের দিকে ঝুঁকে পড়ে।
43) যদি কোনও ছেলে তার প্রিয় মানুষটিকে অন্যদের সামনে হেয় করে কথা বলে কিংবা ওরকম আচরণ করে, তবে নিশ্চিতভাবেই সে মেয়েটি ওর কাছ থেকে আস্তে-আস্তে দূরে সরে যাওয়ার কথা ভাববে।
44) যদি কোনও ছেলে কখনও তার প্রেমিকার ভালোবাসা নিয়ে সংশয়ে পড়ে যায়, তখন সে অন্য মেয়ের কাছ থেকে সত্যিকারের ভালোবাসার খোঁজ করতে থাকে।
45) যদি আগের ঘরের সন্তান নতুন ঘরে বড় হয়, তবে অনেকক্ষেত্রেই নতুন ঘরের সন্তান এবং আগের ঘরের সন্তানদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণের কারণেও স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সম্পর্ক বৈরি হয়ে যেতে পারে।
46) যখন কোনও যুগলের পরস্পরের পারিবারিক ও সামাজিক অবস্থানের প্রতি শ্রদ্ধাবোধের অভাব ঘটে, তখন সম্পর্কের ছন্দপতন ঘটতে পারে।
47) যখন কোনও ছেলে দেখে, ওর অফিসে এমন কোনও নারী কলিগ আছে যে ওকে খুব কেয়ার করে, ওর জন্য রান্না করে খাবার নিয়ে আসে, ওর কাজের প্রশংসা করে, ওর রুচিবোধের তারিফ করে, মাঝেমধ্যেই একসাথে দুপুরে খেতে যায়, তাহলে ছেলেটি আস্তে-আস্তে ওই মেয়েটির প্রেমে পড়ে যেতে পারে। কর্মজীবী মেয়েরাও খুব কেয়ারিং পুরুষ কলিগের প্রতি মানসিক বা শারীরিক বা উভয় দিক দিয়েই আকৃষ্ট হতে পারে।
48) মেয়েরাই মেয়েদের সবচাইতে বড় শত্রু। অনেক মেয়েই অন্য একটি মেয়ের উপর যেকোনও কারণেই হোক, প্রতিশোধ নেয়ার জন্য ওর ভালোবাসার মানুষটিকে শারীরিক প্রেমের ফাঁদে ফেলে দেয়। রিভেঞ্জ সেক্স খুব আনকমন কোনও কিছু নয়।
49) মেয়েরা সাধারণত সেন্স অব হিউমার সম্পন্ন ছেলেদের পছন্দ করে। খুব আঁতেল টাইপের ছেলের গার্লফ্রেন্ড আড়ালে অনেক ছেলের সাথে ফ্লার্ট করে। একইভাবে, আঁতেল মেয়েদের প্রেমিকও প্রায়ই বিরক্তির মধ্যে থাকে, এবং বিরক্তি থেকে নানানভাবে রেহাই খুঁজে নেয়। আসলে, আঁতেল মানুষ বিরক্তিকর হয়। আঁতেলদের সাথে সময় কাটানোর চাইতে একা-একা সময় কাটানোও আনন্দের।
50) মেয়েরা যাকে একবার ভালোবাসে, তার সাথে অন্যকোনও মেয়েকে সহ্যই করতে পারে না, এমনকি ব্রেকআপ হয়ে যাওয়ার পরেও। যদি ও আবারও ছেলেটির সাথে যোগাযোগ করা শুরু করে, কিংবা ছেলেটি ফোন করলে আগের মতোই আচরণ করে, তাহলে ছেলেটি হঠাৎ করে ওর প্রতি দুর্বল হয়ে যেতে পারে।
51) মেয়েরা মনে-মনে একটা ছেলের মধ্যে অনেককিছুই চায়। যাকে সে পছন্দ করে, তার মধ্যে ওর পছন্দের সবকিছু পাওয়া কোনওভাবেই সম্ভব নয়। তখন তার অবচেতন মন খুঁজতে থাকে কার মধ্যে তার পছন্দের কোনও একটি জিনিস পাওয়া যায়। যদি ওরকম কাউকে পেয়ে যায়, তবে মেয়েটি ওর প্রতি ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ে। কখনও-কখনও এক্ষেত্রে পুরনো সম্পর্কের প্রতি অবিশ্বস্ততা জন্মে।
52) মেয়েরা প্রায়ই মুখে যা বলে, তার উল্টোটা মিন করে। ওদের না-বলা কথা বুঝতে না পারলে ওরা ধরে নেয়, এই ছেলেটি আমার জন্য নয়। মেয়েদের কোনটা ‘না’ আর কোনটা ‘হ্যাঁ’, এটা স্বয়ং ঈশ্বরও বুঝতে পারেন না। তাই সফল প্রেমিকমাত্রই ঈশ্বরের প্রতিদ্বন্দ্বী!
53) মেয়েটির ব্যবহারে, কথাবার্তায়, চিন্তাভাবনায় ছেলেটি কোনওভাবে কষ্ট পেয়েছে। মেয়েটির আর তাকে দরকার নেই, হয়তো সে এমন কোনও আচরণ দেখেছে মেয়েটির মধ্যে। এক্ষেত্রে ছেলেটি ‘বিকল্প প্রেয়সী’ খুঁজতে থাকে মনে-মনে।
54) মেয়েটির আত্মীয়স্বজন আর ফ্রেন্ডরা যদি ওর পছন্দের মানুষটিকে পছন্দ না করে, তাহলে কখনও-কখনও ওদের মতামত দ্বারা প্রভাবিত হয়ে মেয়েটি রিলেশনের ইতি টেনে দিতে পারে। ছেলেটির বেলাতেও তা-ই।
55) মেয়েটির অতীত নিয়ে খুব বেশি ঘাঁটাঘাঁটি করলে এবং অতীতের বিভিন্ন কিছু উল্লেখ করে-করে ওকে আহত করে কথা বললে, মেয়েটি মানসিকভাবে ছেলেটির কাছ থেকে অনেক দূরে সরে যেতে থাকে। সাধারণত ছেলেদের অতীত নিয়ে মেয়েদের মাথাব্যথা কম থাকলেও অনেক ছেলেই মেয়েদের অতীত নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করতে পছন্দ করে। মেয়েরা ছেলেদের বর্তমান নিয়ে আর ছেলেরা মেয়েদের অতীত নিয়ে উদ্বিগ্ন।
56) মানসিক অবসাদ, অতিরিক্ত কাজের চাপ, জীবনের প্রতি বিরক্তি, অফিসে বসের দুর্ব্যবহার, কলিগ এবং বন্ধুদের সাথে শীতল সম্পর্ক, অপ্রাপ্তির অনুভূতি, এসব থেকেও অনেক ছেলে কলগার্ল, পর্নোগ্রাফি, পরকীয়ার দিকে ঝুঁকে পড়ে শান্তি কিংবা স্বস্তির আশায়।
57) মাদকাসক্ত ছেলেরা প্রায় ক্ষেত্রেই প্রেয়সীর প্রতি অবিশ্বস্ত হয় এবং নিশ্চিতভাবেই অন্য মেয়েদের সাথে সময় কাটায়। মেয়েরাও তা-ই। মাদকাসক্ত প্রেমিক কিংবা প্রেমিকাকে নিয়ে সারাজীবন সুস্থভাবে থাকা কোনওভাবেই সম্ভব নয়।
58) মাঝেমাঝে এমনও হয়, মেয়েটির কোনও একটা ভুলের প্রতিশোধ নিতে ছেলেটি অন্য মেয়ের সাথে রিভেঞ্জ সেক্স করে। এটা চলতেই থাকে এবং একটা সময়ে ব্রেকআপ হয়ে যায়। ব্যাপারটি একটি মেয়ের ক্ষেত্রেও ঘটতে পারে।
59) মজার ব্যাপার হল, অন্য সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ার মানেই কিন্তু এই নয় যে, ওরা একে অপরকে এখন আর আগের মতন ভালোবাসে না। অনেক সুখী যুগলই আছে, যেখানে ছেলেটি কিংবা মেয়েটি সম্পর্কের সবকিছুকে ঠিকঠাক রেখেও দীর্ঘদিন ধরে অন্যকারওর প্রতি আসক্ত হয়ে থাকে।
60) ব্যক্তিগত কোনও বিষয় নিয়ে ছেলেটি হতাশার মধ্যে ডুবে থাকলে সে কখনও-কখনও ভাবে, অন্য মেয়ের সাথে সম্পর্কে গেলেই বোধহয় সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে এক নিমিষেই! মেয়েরাও কেউ-কেউ এমন করে ভাবে।
61) বেশিরভাগ মেয়েই মিথ্যে শুনতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। যদি কোনও ছেলে নিজেকে স্বচ্ছ রাখতে সে কোন মেয়ের উপর ক্রাশ খেল, কার সাথে গল্প করল, কোনও সুন্দরী মেয়ে সম্পর্কে ওর মতামত কী, এসবকিছু ওর প্রেমিকার সাথে খোলামেলা শেয়ার করে, তবে সে সম্পর্কে চিড় ধরতে শুরু করে। মেয়েটি মুখে কিছু বলুক আর না-ই বলুক, এমনসব শীতল আচরণ দেখায় যে ছেলেটি অন্য মেয়ে নিয়ে ভাবতে বাধ্য হয়। বেশিরভাগ সুখের সম্পর্কই অনেকগুলি ছোটোখাটো মিথ্যে দিয়ে সাজানো। যে ছেলে কিংবা মেয়ে যত ভাল মিথ্যুক, সে ছেলে কিংবা মেয়ে তত ভাল প্রেমিক কিংবা প্রেমিকা!
62) বেশিরভাগ ছেলের কাছেই সেক্স এবং ভালোবাসা সম্পূর্ণই ভিন্ন দুটি জিনিস। সেক্স করতে হলে ভালোবাসতেই হবে, এরকম কোনও ভাবনা ছেলেদের মাথায় প্রকৃতিগতভাবেই নেই। ওরা অন্য মেয়ের সাথে শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়ে গেলেও তার নিজের স্ত্রীকে ভালোবাসে, তাই কোনও অনুশোচনা কিংবা অপরাধবোধে ভোগে না। সেক্স করার পর ওরা যে দুটি আশংকায় তাড়িত হয়, সে দুটি হল: যদি আমার স্ত্রী কোনওভাবে জেনে যায়? যদি এই মেয়েটি কাউকে বলে দেয়? অন্যদিকে কোনও মেয়ে অন্য একটি ছেলের সাথে সেক্স করার পর যে ব্যাপারটি সবার আগে মাথায় কাজ করে, সেটি হল, এ আমি কী করলাম? প্রায়ক্ষেত্রেই, মেয়েটি পরবর্তীতে সেই অন্য ছেলেটির প্রতি এক ধরনের মনের টান আর মায়া অনুভব করে। মেয়েদের ভালোবাসা মন থেকে শরীরে, এমনকি কখনও-কখনও শরীর থেকে মনে; আর ছেলেদের ভালোবাসা শরীর থেকে শরীরে।
63) বিয়ের পরের জীবন সম্পর্কে অতিপ্রাকৃত ইওটোপিয়ান প্রত্যাশা ও স্বপ্ন অনেক বিয়েই ভেঙে দেয়। বিয়ের পর যখন কল্পনা ও বাস্তবতার মধ্যে দূরত্ব বাড়তে থাকে, তখন মনের দূরত্বও বাড়তে থাকে। একটা সময়ে সেটা উপসংহারে গিয়ে থামে।
64) বিয়ের পরবর্তীতে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের কারণেও ডিভোর্স হয়ে থাকে। আমাদের সমাজব্যবস্থায় মেয়েরাই সাধারণত এই নির্যাতনের শিকার হয়। অসুস্থ ও মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন কিছু পুরুষই এ ধরনের ডিভোর্সের জন্য মূলত দায়ী।
65) বিয়ের পরবর্তী চাপ আর দায়বদ্ধতাগুলি সামলানোর ব্যাপারে মেয়েরা প্রকৃতিগতভাবেই ছেলেদের চাইতে এগিয়ে থাকে। সেইসব চাপ সামলানোর জন্য যথেষ্ট মানসিক, সামাজিক ও আর্থিকভাবে পরিপক্ব হওয়ার আগেই বিয়ে করে ফেললে, অনেক ছেলেই অতিরিক্ত চাপ থেকে মুক্তির জন্য আগের জীবনে ফিরে যেতে চায় প্রতি মুহূর্তেই।
66) বিয়ের পর সেক্স যদি শুধুই দৈহিক অভ্যাসের ব্যাপার হয়ে ওঠে, মনের বিভিন্ন ভাষা আর আবেগগুলি সেখানে না থাকে, তবে একটা সময় পর দৈহিক স্পর্শই বরঙ মানসিক দূরত্বকে বাড়িয়ে দেয়।
67) বিয়ের পর শারীরিকভাবে অতৃপ্ত থাকলেও অনেক ছেলে কিংবা মেয়ে অন্য সম্পর্কের দিকে ঝুঁকে পড়ে।
68) বিয়ের পর শারীরিক নানান সমস্যার কারণে যখন মেয়েরা শারীরিক সম্পর্কে মিলিত হতে অস্বীকৃতি জানায়, তখন অনেক ছেলেই অন্যভাবে তার চাহিদাটি পূরণ করে নেয়।
69) বিয়ের পর শারীরিক চাহিদার ভিন্নতার কারণে দূরত্ব তৈরি হতে পারে।
70) বিয়ের পর শারীরিক এবং মানসিক অনেক অসংগতিই স্পষ্ট হয়ে ওঠে। কখনও-কখনও এসব কারণে সামাজিক ও পারিবারিক অনেক অপ্রীতিকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়ে অনেক ছেলেই সম্পর্কের ইতি টেনে দেয়। ছেলেরা সাধারণত অতিরিক্ত পারিবারিক চাপ সামলাতে পারে না। আমার পরিচিত একটি যুগল সাত বছর প্রেম করে বিয়ে করে। আমার জানামতে, ওরা প্রায় তিন বছর লিভ-টুগেদারও করেছে; অথচ বিয়ের মাত্র তিন মাসের মাথায়ই ওদের ডিভোর্স হয়ে যায়।
71) বিয়ের পর তর্কে জেতার সবচাইতে ভাল বুদ্ধি হল, তর্কে হেরে যাওয়া। ক্রমাগত শক্ত-শক্ত যুক্তির বাঁধনে জীবনের বাঁধন শিথিল হয়ে পড়ে। তর্ক-বিতর্কে জেতা যায় শুধুই বিতর্ক প্রতিযোগিতায়, জীবনে নয়। প্রতিনিয়ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তর্কাতর্কি পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধকে কমিয়ে দিয়ে বন্ধনকে শিথিল করে দেয়।
72) বিয়ের পর অনেক মেয়েই ভাবে, সেক্সের চাইতে ভালোবাসা বড়, আর ওর হাজব্যান্ড ভাবে, ভালোবাসার চাইতে সেক্সের গুরুত্ব কোনও অংশেই কম নয়। এই বৈপরীত্য কখনও-কখনও প্রত্যাশা আর প্রাপ্তির মধ্যকার দূরত্ব তৈরি করে।
73) বিয়ের আগের মানুষটি আর বিয়ের পরের মানুষটি যদি খুব বেশি ভিন্ন দুইজন মানুষ হয়, তবে সেক্ষেত্রে প্রত্যাশা আর প্রাপ্তির মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি হতে-হতে একটাসময় সম্পর্কের সেতুটি ভেঙে যেতে পারে।
74) বিয়ের আগের পুরনো সম্পর্কের প্রতি কেউ-কেউ সচেতন কিংবা অবচেতনভাবে টান অনুভব করে, এবং কখনও, আবারও কোনওভাবে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে। এসবক্ষেত্রে বন্ধন শিথিল হতে থাকে। যে সম্পর্ক ভেঙে গেছে, সেটার দিকে ফিরে তাকানো মানেই হল নিজের দুর্ভোগ বাড়ানো।
75) বিয়ে মানুষকে যৌনতাসহ আরও কিছু-কিছু ব্যাপারে নির্দিষ্ট সীমারেখায় বেঁধে দেয়। অনেক ছেলেমেয়েই এসব সীমারেখায় নিজেকে বাঁধতে চায় না। সুযোগ পেলে বারবারই গোপনে সীমা লঙ্ঘন করে। এতে ক্রমশই দূরত্ব বাড়ে।
76) বিভিন্ন মেয়ের সাথে সম্পর্ক রাখাটাকে অনেক ছেলেই পৌরুষ আর কৃতিত্ব মনে করে। স্রেফ এ কারণেই সে তার প্রেয়সীকে দিনের পর দিন ফাঁকি দেয়।
77) ফোনে কিংবা ইন্টারনেটে যেসব ছেলে সম্পূর্ণ অপরিচিত মেয়ের সাথে যৌন বিষয়ক আলাপে অভ্যস্ত, তাদের মধ্যে ভালোবাসার প্রতি শ্রদ্ধাবোধ খুবই কম থাকে। এ ধরনের ছেলেদের ভালোবাসাযাপন খুব কমই সুখের হয়।
78) প্রত্যেকটা পুরুষই পৌরুষ দেখাতে পছন্দ করে। যদি মেয়েটি ছেলেটিকে খুব বেশি নিয়ন্ত্রণ করে, ঝগড়া বেধে গেলে সংঘাত এড়াতে ছেলেটি সবসময়ই হার মেনে নেয়, তবে এটা প্রায়ই নিশ্চিত যে, ছেলেটি অন্য কোনও মেয়ের কাছ থেকে তার পৌরুষের স্বীকৃতিটুকু আদায় করে নিচ্ছে।
79) পোশাকআশাক, কথা বলার ধরন এবং রুচির মাধ্যমে একটা ছেলের ব্যক্তিত্ব ফুটে ওঠে। শোভন রুচির মেয়েরা অশোভন রুচির ছেলেদের কাছ থেকে দূরত্ব তৈরি করে চলে।
80) পৃথিবীতে for granted বলে কিছু নেই। যদি যেকোনও সম্পর্ককে ওরকম ধরে নিয়ে কেউ যোগাযোগ কমিয়ে দেয়, কিংবা বন্ধ করে দেয়, তাহলে সে সম্পর্ক বেশিদিন টিকে থাকে না।
81) পরিবারে যদি স্ত্রীর অর্থনৈতিক ভূমিকা স্বামীর চাইতে বেশি হয়, তবে অনেকক্ষেত্রেই সে পরিবার টিকে না। এক্ষেত্রে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ নষ্ট হয়ে যেতে পারে, ধীরে-ধীরে ভালোবাসার চাইতে ইগোর প্রাধান্য স্পষ্ট হয়ে ওঠে, এবং একটাসময়ে সম্পর্কে বিপর্যয় নেমে আসে।
82) পছন্দ এবং আগ্রহের জায়গাগুলি যদি এতোটাই ভিন্ন হয় যে, সেগুলির কারণে পরস্পরের মধ্যে দ্বন্দ্ব লেগেই থাকে, তাহলেও সম্পর্ক ভাঙনের দিকে অগ্রসর হতে পারে। এসবক্ষেত্রে সংঘাত মিটিয়ে ফেলাটাই সবচাইতে ভাল। ইগোকে দূরে সরিয়ে রেখে কিছু বিষয়ের সাথে উভয়েই কম্প্রোমাইজ করে কাজটি করা যেতে পারে।
83) নৈরাশ্য, হতাশা, বিষণ্ণতা থেকেও মানুষ বৈচিত্র্যের খোঁজে অন্য সম্পর্কে জড়িয়ে যায়। প্রায় শতকরা ৯০ ভাগ ক্ষেত্রেই অন্য সম্পর্ক থেকে সুখের বিশ্বাস মরীচিকামাত্র।
84) নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি মানুষের আকর্ষণ দুর্নিবার। বিয়ের পর অনেক ছেলেরই নিজের স্ত্রী বাদে সবাইকেই সুন্দরী মনে হয়, অন্য মেয়েদের সবকিছুকেই ভাল লাগে। খাঁচার হরিণের চাইতে বনের মুক্ত হরিণের প্রতি ভাললাগা থেকে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে অনেকেই।
85) নিজের ক্যারিয়ার আর কাজ নিয়ে খুব বেশি ব্যস্ত থাকে যেসব ছেলে, তাদেরকে অনেকসময়ই মেয়েরা পছন্দ করে না। ওদেরকে সময় দিতে পারে বলেই এমন অনেক ছেলেকেই মেয়েরা পছন্দ করে বসে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই যাদের ভবিষ্যৎ ঘুটঘুটে অন্ধকার, ফলে সে প্রেম পারিবারিকভাবে বিয়ে পর্যন্ত গড়ায় না। মেয়েটি সিঙ্গেল থাক, কিংবা না থাক, ওকে সময় দেয়, ওর সবচাইতে গুরুত্বহীন কথাটিও মন দিয়ে শোনে, এমন ছেলেদের সময় দেয়, ওদের সাথে ঘোরাঘুরি করে।
86) ধরা যাক, অল্প বয়সে কোনও মেয়ে যে ছেলের প্রেমে পড়ল, পরবর্তীতে মেয়েটি অনার্সে ভর্তি হল আর ছেলেটি এইচএসসি’র গণ্ডিই পার করতে পারল না। এক্ষেত্রে ছেলেটির আর্থিক অবস্থান যেমনই হোক না কেন, ওদের সম্পর্কটি বিয়ে পর্যন্ত গড়ানোর সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। অসম শিক্ষাগত যোগ্যতার অনেক সম্পর্কই টেকে না।
87) দ্রুত শুরু হয় যে প্রেমের, সে প্রেম প্রায়ই দ্রুত হারিয়ে যায়। পরস্পরকে বোঝার জন্য যথেষ্ট সময় না দিলে ভুল বোঝাবুঝির ফলে দূরত্ব তৈরি হতে পারে।
88) দূরত্বের কারণেও অনেক বিচ্ছেদ ঘটে। অনেকসময়ই দূরত্ব সম্পর্ককে নষ্ট করে দেয়। মানসিক এবং শারীরিক স্পর্শ স্রেফ ফোনে কিংবা ইন্টারনেটে সম্ভব নয়। কাছের মানুষের প্রতি আকর্ষণ মানুষের অবচেতন মনে সমসময়ই কাজ করতে থাকে। সে আকর্ষণের মোহে মানুষ অন্য সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। বিয়ের পর যেসব মেয়ের স্বামী বিদেশে থাকে, তাদের ক্ষেত্রে অবিশ্বস্ততার হার অনেক বেশি।
89) ড্রাগ, অ্যালকোহল, জুয়া, কলগার্ল, পরকীয়া এসব বিষয়ের প্রতি আসক্তি সম্পর্ককে ধ্বংস করে দিতে রীতিমতো অব্যর্থ! মিথ্যে বলা, প্রতারণা করা, বানিয়ে-বানিয়ে বিশ্বাসযোগ্য কথা বলার চেষ্টা করা, ইত্যাদি কারণে অনেক দম্পতিই আলাদা হয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
90) জীবনটা কেমন? জীবনে কী কী পেলে জীবনটা আরও সুন্দর হতো? কোন স্বপ্নটা ছুঁতে পারলে জীবনের রঙগুলি দিয়ে নিজেকে আরও বেশি করে রাঙিয়ে নেয়া যেত? এসব ব্যাপার নিয়ে অনেক দম্পতিই গল্প করে না। অনেকেই বছরের পর বছর একসাথে কাটিয়েও পরস্পরের পছন্দের রঙটাই জানতে পারেন না। বিয়ের পর যদি কেউ ‘নিজেদের’ জীবন না কাটিয়ে বিয়ের আগের মতোই ‘নিজের’ জীবন কাটাতে থাকে, তাহলে একটাসময়ের পরে দূরত্ব তৈরি হবেই!
91) ছোটোখাটো ব্যাপারে শ্বশুর-শাশুড়ির অহেতুক হস্তক্ষেপের কারণেও সংসারে অশান্তির সৃষ্টি হয়। এটি প্রতিনিয়তই চলতে থাকলে পারিবারিক বন্ধন আর আগের মতো মজবুত থাকে না।
92) কারওর ছোট-ছোট ভাললাগার অনুভূতিকে যদি তার প্রিয় মানুষটিরও ভাল না লাগে, তবে সে অনেকসময়ই এমন কারওর সাথে সময় কাটায় যে তার মতো করেই ভাবতে পছন্দ করে, জীবনটাকে উপভোগ করতে ভালোবাসে।
93) ছেলেরা সাধারণত মনের সৌন্দর্যের চাইতে শারীরিক সৌন্দর্যের প্রতি বেশি আকৃষ্ট হয়। প্রিয় মানুষটির শারীরিক সৌন্দর্য কমতে থাকলে অনেক ছেলেই অন্য মেয়ের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ে।
94) ছেলেরা বেশিরভাগ সময়ই চিট করে জৈবিক তাড়নায় আর মেয়েরা চিট করে আবেগের তাড়নায়। যখন অন্য একটি মেয়ে কোনও ছেলের প্রতি প্রচণ্ড আবেগের বশবর্তী হয়ে আকর্ষণ অনুভব করে, তখন সে নিজেই সেই ছেলেটিকে তার প্রিয়তমার সাথে প্রতারণা করতে বাধ্য করে।
95) ছেলেরা বেশিরভাগ সময়ই এক রাত্রির প্রেমে বিশ্বাসী, আর মেয়েরা সহস্র রাত্রির ভালোবাসায় বিশ্বাসী। ছেলেদের জৈবিক প্রয়োজন যেখানে ফুরিয়ে যায়, মেয়েদের আবেগের আধিপত্য সেখান থেকেই শুরু হয়। যেখানে ভালোবাসা নেই, সেখানে শরীরটাই মুখ্য হয়ে ওঠে। অন্য রাত্রির রূপ অন্য মেয়ের চোখে দেখতে অনেক ছেলেই নতুনের আকর্ষণে ছুটে বেড়ায়।
96) অনেক ছেলেই বিয়ের সম্পর্কে জড়াতে চায় না। মেয়েটি যখনই বিয়ের জন্য পীড়াপীড়ি শুরু করে, তখন সে অন্য মেয়ে খুঁজতে শুরু করে।
97) ছেলেরা প্রকৃতিগতভাবেই কোনও সমস্যা নিজে-নিজে সমাধান করতে চায় না। যখনই সম্পর্কে কোনও ঝামেলা শুরু হয়, তখন অনেক ছেলেই পালায়। কোনও-কোনও ক্ষেত্রে ধনী ঘরের বাস্তবজ্ঞানশূন্য মেয়েরাও এরকম হয়।
98) ছেলেরা অন্য যে মেয়েটির সাথে সম্পর্ক রেখে চলে দিনের পর দিন, সে মেয়েটি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এমন একটি মেয়ে, যে মেয়েটিকে ছেলেটির প্রেমিকা চেনে, এবং খুবই বিশ্বস্ত বলে মনে করে। সন্দেহের হাত থেকে বাঁচতে অনেক ছেলেই এই কাজটি করে।
99) ছেলেদের সম্পর্কে জড়ানোর উদ্দেশ্য মেয়েদের মতন না। বেশিরভাগ ছেলেই মেয়েদের শরীরের সৌন্দর্যের প্রতি আকৃষ্ট হয় আর মেয়েরা ছেলেদের মনের সৌন্দর্যের প্রতি আকৃষ্ট হয়। ছেলেরা মেয়েদের কাছ থেকে যা চায়, তা পেয়ে গেলেই আস্তে-আস্তে আকর্ষণ ফুরোতে থাকে।
100) ছেলেটির কোনও সুখদুঃখের কিংবা সুবিধা-অসুবিধার কথা মেয়েটি শুনতে না চেয়ে যদি সারাক্ষণই নিজের কথাই বলে যায়, তবে ছেলেটি অন্য একজন মনোযোগী নারীশ্রোতা খুঁজে নিতে পারে। বেশিরভাগ মেয়েরই প্রিয় কাজ, সারাক্ষণই নানান বিষয় নিয়ে কমপ্লেইন করা, যা কোনও ছেলেই আসলে পছন্দ করে না, কিন্তু ঝামেলা এড়াতে পছন্দ করার অভিনয় করে। একটা মেয়ের ভাবখানা এমন যেন ও পৃথিবীর সবচাইতে দুঃখী মানুষ, আর ছেলেটির কোনও দুঃখ নেই, কোনও কষ্ট নেই। নিজের কষ্ট মার্কেটিং-করা মেয়েদের সাথে সম্পর্ক রাখা সুখের কিছু নয়।
101) ছেলেটি হয়তো এটা বিশ্বাস করতে শুরু করেছে, সে সম্পর্ক থেকে যা চাইছে, তা পাচ্ছে না। মেয়েটি যা চায় না, ছেলেটি তা-ই চায়। এটা হতে পারে সেক্স কিংবা অন্যকিছু। মেয়েটি ভাবছে, সে যা পাচ্ছে তার চাইতে বেশি দিচ্ছে, আর ছেলেটি ভাবছে, সে যা চাচ্ছে তা পাচ্ছে না। ফলাফল, ব্রেকআপ!
102) ছেলেটি সারাক্ষণ বন্ধুদের সময় দিলে এবং মেয়েটির সাথে কম সময় কাটালে, ব্যাপারটিতে মেয়েটি বিরক্ত হয়ে পড়তে পারে।
103) ছেলেটি ভাবে, সে মেয়েটির চাইতে অনেকদিক দিয়েই অনেকবেশি যোগ্য। সে চাইলেই আরও যোগ্য মেয়ে পাবে। তখন সে সরে যাওয়ার কথা ভাবে। মেয়েটির বেলায়ও তা হতে পারে।
104) ছেলেটি বাসায় ফিরে স্ত্রীকে সময় না দিয়ে টিভি দেখতে থাকে, ভিডিও গেমস খেলতে শুরু করে, কিংবা সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং। কোনও-কোনও ক্ষেত্রে, মেয়েটিও তা-ই করে। এসবক্ষেত্রে একটাসময়ে পারস্পরিক আবেগজনিত বোঝাপড়া কমে যায়, বিয়ের পরের জীবনযাপনটা একটা অদৃশ্য চুক্তিবদ্ধ সামাজিক অভ্যস্ততা হয়ে দাঁড়ায়, এবং ভার্চুয়াল জগতের মোহে পারিবারিক বন্ধন ক্রমশ শিথিল হতে থাকে।
105) ছেলেটি নিজের খেয়ালখুশিমতোই চলে। কাপড়চোপড় এলোমেলো করে রাখে, খাবার চিবিয়ে খাওয়ার সময়ে বিশ্রীভাবে দাঁতগুলি বের করে রাখে, মেহমানদের সামনে রুমাল ব্যবহার না করেই নাক পরিষ্কার করে, সারাক্ষণ টিভি দেখতেই থাকে, এরকম আরও কিছু বিরক্তিকর অভ্যেসকে আঁকড়ে ধরে রাখে দিনের পর দিন। ওসব অভ্যেস থেকে দূরে সরে আসার অনুরোধ করতে-করতে একটাসময়ে বিরক্ত হয়ে মেয়েটি মানসিক দূরত্ব তৈরি করে ফেলতে পারে।
106) ছেলেটি সারাদিন ঘরের বাইরে থেকে পরিশ্রম করে যাতে একটু ভাল থাকা যায়। বাসায় ফিরলে বউ যদি পৃথিবীর সকল সমস্যার ঝুলি খুলে বসে, তবে এই ব্যাপারটা খুবই বিরক্তিকর মনে হয়। যে ছেলেটিকে অফিস থেকে বাসায় ফেরার পর ‘তোমাকে অনেক ক্লান্ত দেখাচ্ছে’ বলার মতো কাউকেই পায় না, সে ছেলেটির মতো অসহায় আর কেউই নেই। এসবক্ষেত্রে অনেক ছেলেই নিরাশ হয়ে বিকল্প শান্তির আশ্রয় খুঁজতে শুরু করে। আমি এমন মেয়ে দেখেছি, যে কিনা হাজব্যান্ড বাসায় ফেরা মাত্রই ফোনে কিংবা সামনাসামনি নিজের রাগ ঝাড়তে শুরু করে, যেকোনও মূল্যে তখনই ঝগড়ায় জিততে চায়, সে ছেলেটি ক্লান্ত অবসন্ন, তাকে একটু বিশ্রাম নেয়ার সুযোগ দেয়া উচিত---এটা মেয়েটির মাথায়ই আসে না, এবং ঝগড়ায় জিতে গেলে যেন নোবেল পুরস্কার পেয়ে যাওয়ার সমান আনন্দ অনুভব করে। ওরকম মেয়ের সাথে সুখে দিন কাটানো সত্যিই ভীষণ কঠিন। একজন মানুষের সবচাইতে বড় গুণ মানবিকতা। যার মধ্যে মানবিকতা নেই, তার সাথে কোনও ধরনের সম্পর্কই শেষ পর্যন্ত টেকে না।
107) ছেলেটি ঘুরে বেড়াতে ভালোবাসে আর মেয়েটি ঘরে থাকতে ভালোবাসে। মেয়েটি যা খেতে ভালোবাসে, ছেলেটি তা খায়ই না। এতে কখনও-কখনও ছেলেটি ঘুরে বেড়ানোর জন্য সঙ্গী খুঁজে নেয় গোপনে। নিজের পছন্দের খাবারটি অন্য কোনও মেয়ের সাথে একসাথে বসে খায়।
108) খুব অল্প বয়সে আবেগের বশবর্তীতে যেসব বিয়ে হয়, সেসব বিয়েতে ডিভোর্সের হার অনেক-অনেক বেশি। এই ব্যাপারটা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই গোপন থাকে বিধায় অতোটা জানাজানি হয় না। এসব বিয়ের মূল কারণই হল সেক্স, রিভেঞ্জ, জীবন নিয়ে উদ্ভট সব স্বপ্ন। মোহ কেটে গেলেই ভালোবাসা পালিয়ে যায়। কত ছেলেমেয়ে স্টুডেন্ট লাইফে গোপনে বিয়ে করে, তার খোঁজ আমরা কোনওদিনই পাবো না।
109) ক্রমাগত অন্য মেয়েদের সাথে ফ্লার্ট করে গেলে, নিজের স্ত্রীর সাথে দুর্ব্যবহার করলে, স্ত্রীর সম্পর্কে প্রশংসাসূচক কিছু না বললে, স্ত্রীর মেধা ও বুদ্ধি সম্পর্কে নিম্ন ধারণা পোষণ করলে, স্ত্রীর পছন্দ ও বিশ্বাসগুলিকে নিজের মতো করে জোর করে প্রভাবিত করার চেষ্টা করলে, একটা সময়ে স্ত্রী বিরক্ত হয়ে উঠতে পারে। একটা ছেলে যেরকম করে ভাবে, একটা মেয়ে কখনওই একইরকম করে ভাবে না। এই ভাবনার বৈপরীত্য বুঝতে যত দেরি হবে, ততই দূরত্ব বাড়তে থাকবে।
110) কোনও মেয়ে যদি রিলেশনের পর কোনও ছেলেকে তার পুরনো অভ্যেসগুলি থেকে দূরে সরিয়ে আনতে চায়, এবং সেটার জন্য সারাক্ষণ বিভিন্নভাবে পীড়াপীড়ি করে, তবে অনেক ছেলেই সেটা পছন্দ করে না এবং দূরত্ব তৈরি করার কথা ভাবতে থাকে।
111) কোনও মেয়ে ওর প্রেমিকের ফেসবুক পাসওয়ার্ড, ইমেলবক্স, ফেসবুক ইনবক্স, ভাইবার, হোয়াটস্অ্যাপ, ইমো এসব নিয়ে বেশি ঘ্যানরঘ্যান করলে ছেলেটি প্রায়ই বিরক্ত হয়ে স্বাধীনভাবে বাঁচার কথা ভাবে।
112) কিছু-কিছু সাইকোপ্যাথ ছেলে আছে, যারা কোনও দৃশ্যমান কারণ ছাড়াই একটাসময় পর মেয়েটির প্রতি সকল আকর্ষণ হারিয়ে ফেলে। ওদের মনের ভেতরে-ভেতরে এরকম একটা বোধ তৈরি হয়ে যায় যে, এই সম্পর্কে থাকতে আমার আর ভাল লাগছে না। সে সেটা ধরেই বসে থাকে এবং একটা সময়ে মেয়েটিকে কষ্ট দিয়ে সরে পড়ে। কিছু-কিছু মেয়েও এমনটা করে।
113) কিছু মানুষ আছেন, যাদের মানসিক গঠনটা ঠিক সম্পর্কে থাকার মতন না। মানে, ওরা অ্যাফেয়ার/ ম্যারেজ ম্যাটেরিয়াল না। ওরা একটা সম্পর্কে দীর্ঘদিন জড়িয়ে থাকতে পারে না। একটাসময়ে বিরক্তি থেকে ওরা নতুনের প্রতি ঝুঁকে পড়ে।
114) অনেক ছেলেই সম্পর্কের আগেই মাথায় রাখে, কিছুদিন ‘এটাওটা চালিয়ে নিয়ে’ এরপর সরে যাবো। ওরা সম্পর্ক থাকার সময়েই চিট করতে থাকে যতক্ষণ ধরা না পড়ে, কিংবা ধরা পড়ে গেলেও মেয়েটিকে কোনওভাবে ‘ম্যানেজ’ করে ফেলতে পারে।
115) কিছু কিছু ছেলে ভাবে, যত বেশি মেয়ে তার প্রতি আকৃষ্ট হবে, সে তত বেশি মাত্রায় পৌরুষসম্পন্ন। অন্য মেয়েদের মনোযোগ পেতে যাকিছু করা দরকার, সে করতে থাকে, এবং যাদেরকে ভাল লাগে, তাদের সবাইকেই কাছে টেনে নেয়।
116) কখনও-কখনও নিজের সবচাইতে ভাল বন্ধুটিকেই বিয়ে করা ভাল। কারণ, চেহারা এবং যৌনতা বয়সের সাথে সাথে ফিকে হয়ে ওঠে, কিন্তু বন্ধুতা থেকেই যায়। তবে যদি একটাসময়ে এসে এমন হয় যে, ছেলেটি তার জীবনে এমন কারওর দেখা পেয়েছে যার ভালোবাসা তার স্ত্রীর বন্ধুতার চাইতে বড় হয়ে ওঠে তার কাছে, তবে ছেলেটি নতুন সঙ্গিনীর সাথে আড়ালে সময় কাটাতে অভ্যস্ত হয়ে পড়তে পারে। ঘটনাটি মেয়েটির ক্ষেত্রেও ঘটতে পারে। ভালোবাসা আর বন্ধুতা সম্পূর্ণ দুটো ভিন্ন জিনিস।
117) ওজন বৃদ্ধির কারণে শারীরিক সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে গেলে, অনেকসময়ই অনেকে গোপনে অন্য সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। তবে এটার হার অতো বেশি নয়।
118) এমনও দেখা যায়, একটা ছেলে শারীরিক এবং মানসিকভাবে যেমনটা চায়, তার সবটুকুই তার প্রেমিকার মধ্যে আছে, বরং কিছু-কিছু গুণ বেশিই আছে। সে পুরোপুরি বিশ্বস্ত একটি মেয়ের প্রেমিক। তা সত্ত্বেও সে অন্য একটি কুৎসিত মেয়ের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ে। কিন্তু কেন? একটি ছেলে দীর্ঘদিন ধরে পুরোপুরি ‘ইয়েস স্যার’ টাইপের মেয়ে সহ্য করতে পারে না। সে কখনও-কখনও চায়, মেয়েটি একটু নিজের মতামত দিক, নিজস্বতা থাকুক ওর মধ্যে, কিছু দুষ্টুমি করুক মাঝেমাঝে। এসবের ঘাটতি দেখলে সে এমন মেয়ের দিকে আকৃষ্ট হয়, যে মেয়েটি একটু হলেও কম বিরক্তিকর। হ্যাঁ, মেয়েদের বেলায়ও এটা হয়।
119) এমন ছেলেও আছে, যে তার স্ত্রীকে সত্যি সত্যিই ভালোবাসে, কিন্তু অন্য কোনও একটি মেয়ের সাথে শারীরিক সম্পর্ক রাখতে চায়। এক্ষেত্রে সে দিনের পর দিন নিজের স্ত্রীকে বিভিন্নভাবে দ্বিতীয় সম্পর্কটির কথা গোপন করে চলে।
120) কিছু সম্পর্ক থাকে, যেগুলি নামহীন সম্পর্ক। ওরা পরস্পরের সাথে সম্পর্ক রাখতে চায়, সম্পর্কের দোহাইয়ে সব ধরনের আনন্দ পেতে চায়, কিন্তু সে সম্পর্কের কোনও নাম দিতে চায় না। সে সম্পর্কে কোনও ধরনের কমিটমেন্ট নেই, কোনও এক্সপেকটেশন নেই। চাইলেই সে সম্পর্কের পাঠ সাময়িকভাবে কিংবা চিরতরে চুকিয়ে দেয়া যায়।
121) একটা সমীক্ষায় দেখা গেছে, বিয়ের পর স্বামী-স্ত্রী ৪ বছর কিংবা তার চাইতে বেশি সময় আলাদা বসবাস করলে, তাদের মধ্যে প্রকাশ্যে কিংবা গোপনে দূরত্ব বাড়তেই থাকে।
122) একটা মেয়ের মধ্যে যেসব গুণ ছেলেটি সবসময়ই কল্পনা করে এসেছে, সেসবের কোনও কোনওটির ঘাটতি দেখলে তখন সে ওই নির্দিষ্ট গুণসম্পন্ন অন্যকোনও মেয়ের প্রতি আকর্ষণ অনুভব করতে পারে।
123) একটা ভাল চাকরি থাকার পরও অনেক লোকই নতুন চাকরি খোঁজে। ঠিক একইভাবে একটা চমৎকার সম্পর্কে থাকার পরও অনেকেই নতুন সম্পর্কে যেতে চায়। এই ব্যাপারটা প্রায়ই যতটা অবচেতনভাবে ঘটে, তার চাইতে অনেকবেশি সচেতনভাবে ঘটতে থাকে। দ্বিতীয়টি যতদিন আড়ালে রাখা যায়, ততদিন পর্যন্ত খুব ভালভাবেই আগের সম্পর্ককে ঠিক রেখে অনেকেই নতুন সম্পর্কটি সে রক্ষা করে রেখে চলে। সাধারণত ছেলেদের ক্ষেত্রে এই ব্যাপারটি দৈহিক কারণে এবং মেয়েদের ক্ষেত্রে আবেগজনিত কারণে হয়ে থাকে।
124) একটা ছেলে নিজের প্রেয়সীর প্রতি যত উদাসীন হবে, ততই অন্য ছেলের মনোযোগ মেয়েটিকে আকৃষ্ট করতে থাকবে। যদি এভাবে করে একটাসময়ে ওর মনে হয়, ওই ছেলেটিই ওর জন্য বেটার, তখন সে ব্রেকআপ করে সেই ছেলেটির কাছে চলে যেতে পারে।
125) একটা ছেলে তার নিজের জীবন নিয়ে যতটা ভাবে, যদি সম্পর্ক নিয়েও ততটা ভাবে, তবে কিছুতেই এমনকিছু করবে না, যাতে করে সম্পর্কটা ব্রেকআপের দিকে চলে যায়। সম্পর্কটাকে ঠিকমতো সম্মান না করলে ছেলেরা সম্পর্ক ভাঙার কথা ভাবে।
126) ইদানিংকালের ডিভোর্সগুলি যতটা যৌন সম্পর্কের অবিশ্বস্ততার জন্য ঘটে, তার চাইতে অনেকবেশি ঘটে পারস্পরিক ভুল বোঝাবুঝির কারণে। মনের মধ্যে যা আছে, তা যদি ভয়, সংকোচ কিংবা ইগোর কারণে কেউ দীর্ঘদিন ধরে চেপে রাখে, তবে একটাসময় পরে সেটা চরম অসন্তোষে রূপ নেয়, এবং এর বিস্ফোরণ ঘটে ডিভোর্সে।
127) আর্থিক অনটন থেকেও ডিভোর্স হতে পারে। বিয়ে করার পর স্বাভাবিকভাবেই খরচ অনেক বেড়ে যায়। সে ব্যয় নির্বাহ করার মতো যথেষ্ট সামর্থ্য হওয়ার আগেই স্রেফ ইমোশন থেকে বিয়ে করে ফেললে, প্রায়ই বাস্তবতার কাছে ইমোশন হেরে গিয়ে পালিয়ে যায়। বেঁচে থাকার জন্য মানুষকে খাবার খেতে হয়, ইমোশন খেয়ে কেউ বাঁচে না। আর কে না জানে, খাবার কিনতে পয়সা লাগে, ভালোবাসা নয়!
128) অর্থনৈতিক ব্যাপারগুলিতে সিদ্ধান্তগ্রহণের ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন ধরে পরস্পরের সমঝোতার অভাবে অনেকসময়ই দূরত্ব তৈরি হয়। আয় এবং ব্যয় করার সিদ্ধান্তগ্রহণের ক্ষেত্রে যদি মতের অমিল হতেই থাকে, হতেই থাকে, তবে একটাসময় পর মানসিক অসন্তোষ থেকে দূরত্ব তৈরি হয়ে যেতে পারে।
129) অন্য ছেলের কিংবা মেয়ের উপর ক্রাশ খাওয়ার পর যদি সে অন্য মানুষটির সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়, এবং সেই অন্য মানুষটিও পজিটিভলি সাড়া দেয়, তবে অনেকেই পুরনো সম্পর্কের প্রতি অবিশ্বস্ত হয়ে পড়তে পারে।
130) অনেকেই পরিবারের চাপে পুরনো প্রেমকে ছেড়ে অন্যকাউকে বিয়ে করতে বাধ্য হয়।
131) অনেকসময়ই মেয়েরা, এবং কখনও-কখনও ছেলেরা ভাল ক্যারিয়ারের অন্যকারওর সাথে সম্পর্ক গড়তে পারে। ভবিষ্যৎ জীবনের নিরাপত্তার আশায় এবং সামাজিকভাবে মর্যাদাসম্পন্ন একটা জীবন কাটাতে অনেকেই বুঝেশুনে আগের সম্পর্কের ইতি টেনে দেয়। তাই একটি সফল প্রেমের ভিত্তি হওয়া উচিত ক্যারিয়ার গঠনের জন্য প্রস্তুতি, স্রেফ ভালোবাসা নয়।
132) অনেকেরই কিছু-কিছু লুকানো ব্যক্তিগত, শারীরিক এবং মানসিক সমস্যা থাকে, যা বিয়ের পর আর গোপন থাকে না। ‘বিয়ের আগে কেন সবকিছু বলে বিয়েটা করল না’ এই রাগ থেকে অনেকেই ডিভোর্স কিংবা পরকীয়াকে বেছে নেয়।
133) ও কেন আমাকে ফোন করে না? সারাদিনে ও কয়টা ফোন করল? আমি কেন ওকে ফোন করবো, ফোনটা ও-ই করুক! আমার খোঁজ নেয়ার কি কারও দরকার আছে? ও আমাকে বেশি ফোন করে না, অতএব ও আমাকে ভালোবাসে না।----অনেক মেয়েই মনে করে, বেশি-বেশি ফোন করা মানেই বেশি-বেশি ভালোবাসা। এবং ফোন না করা কিংবা কম করা নিয়ে সম্পর্কে চরম ঝামেলা আর যন্ত্রণার জন্ম দেয় প্রতিদিনই। কেন ছেলেটার কল ওয়েটিং, ও কার সাথে কথা বলে, নিশ্চয়ই কোনও মেয়ের সাথে প্রেমালাপ করছে, আমি যখনই ফোন করি তখনই কল ওয়েটিং (হয়তো সে একবারই ছেলেটাকে কল ওয়েটিং-এ পেয়েছে)---এসব নিয়ে অশান্তির চরম সীমায় পৌঁছে যেতে প্রায় সব মেয়েই জন্মগত প্রতিভাসম্পন্ন। ছেলেটা হয়তো কোনও অফিসিয়াল কাজে ফোনে ব্যস্ত, কিংবা ব্যক্তিগত কাজে কারও সাথে কথা বলছে, কিংবা কোনও বন্ধুর সাথে গল্প করছে, কিংবা নাহয় একটা মেয়ে বন্ধুর সাথেই ফোনে সময় দিচ্ছে---মেয়েরা এসব মানতে নারাজ। এসব ক্ষেত্রে সম্পর্ক খুব একটা উষ্ণ থেকে যাবে না, এটাই স্বাভাবিক। সারাক্ষণই অশান্তি আর ঝামেলা কার ভাল লাগে? সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভালোবাসার চাইতেও শান্তি আর স্বস্তির প্রয়োজন প্রায়ই বেশি হয়ে দাঁড়ায়।
134) অনেক ছেলেরই প্রত্যাশার মাত্রাটা সত্যিই অবাস্তব। সে চায়, তার স্ত্রী সারাক্ষণই তার খোঁজখবর রেখেই যাবে। কিন্তু তার মাথায় এটা কাজ করে না যে, স্ত্রীকে বাসা সামলাতে হয়, বাচ্চাদের স্কুল থেকে শুরু করে সবকিছুই সামলাতে হয়, ঘরের নানান ঝামেলা মেটাতে হয়, চাকরি করতে হয়, ইত্যাদি, ইত্যাদি। যদি সে এই প্রত্যাশার বিন্দুমাত্রও অন্যকোথাও থেকে অপ্রত্যাশিতভাবে পেয়ে যায়, তখন সে আস্তে-আস্তে অবিশ্বস্ত হতে শুরু করে।
135) অনেক ছেলেই হাতে ‘ব্যাকআপ গার্লফ্রেন্ড’ রেখে দেয়, যাকে সে তার প্রেমিকার সাথে ‘ফ্রেন্ড’ বলে পরিচয় করিয়ে দেয়। যদি দেখে সম্পর্কে কোনও ঝামেলা হচ্ছে, তবে সেই ফ্রেন্ড হয়ে ওঠে গার্লফ্রেন্ড। এভাবেই, একটাসময়ে ‘ব্যাকআপ গার্লফ্রেন্ড’ হয়ে যায় ‘গার্লফ্রেন্ড’।
136) অনেক ছেলেই বিশ্বের বিভিন্ন সফল, সৃষ্টিশীল মহৎ মানুষের বহুগামিতায় উদ্বুদ্ধ হয়ে প্রিয় মানুষটির প্রতি সকল দায়িত্ব পালন করার পাশাপাশি অন্য মেয়ের প্রতি ঝুঁকে পড়ে। কোনও গ্রেটম্যান পলিগ্যামাস, এর মানে এ নয় যে, পলিগ্যামাস হলেই গ্রেটম্যান হওয়া যাবে!
137) অনেক ছেলেই বিয়ের পর স্ত্রীর কাছ থেকে মুক্তি চায়। ওরা বিভিন্ন মেয়ের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে এবং সেটা স্ত্রীকে প্রমাণসহ জানায়। যদি স্ত্রী তাতেও কোনও প্রতিবাদ না করে কিংবা ডিভোর্স না দেয়, তবে ছেলেটি আর সেই রাস্তা থেকে সরে আসে না।
138) অনেক ছেলেই নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করতে পারে না। সম্পর্ক একবার হয়ে গেলে মেয়েটিই সম্পর্কটাকে ধরে রাখে বেশিরভাগ সময়ে। যদি ধরে রাখতে না পারে, তবে ছেলেটি অন্যদিকে আকৃষ্ট হয়ে যেতে পারে।
139) ছেলেরা কমিটমেন্ট ভয় পায়। যখন সে দেখে, সে সত্যিই ভালোবাসায় জড়িয়ে পড়ছে, কিংবা তার ব্যক্তিগত সুখ-অসুখের দায়িত্ব একটি মেয়ের কাছে বাঁধা পড়ে যাচ্ছে, তখন সে সবসময়ই অবচেতন মনে পালিয়ে যাওয়ার কথা ভাবে।
140) Heart proposes, religion disposes! ভিন্ন ধর্মীয়, পারিবারিক, আর্থিক, কিংবা সামাজিক অবস্থানের কারণে অনেক সম্পর্কের পরিণতি সুখের হয় না। আমাদের সমাজব্যবস্থায় হৃদয়ের চাইতে ধর্মের দাবি অনেকবেশি। এছাড়াও দুটো পরিবারের মধ্যে অবস্থানগত বৈপরীত্যের ফলে অনেক প্রেমই স্রেফ প্রেম পর্যন্তই থেকে যায়।
141) ২২ বছর বয়সের মধ্যে যেসব ছেলে বিয়ে করে, তাদের অনেকের ক্ষেত্রেই বিবাহিত জীবনের প্রথম ১৫ বছরের মধ্যেই ডিভোর্স হয়ে যায়। প্রেম, ভালোবাসা আর বিয়ে, এই তিনটি সম্পূর্ণ ভিন্ন তিনটি ব্যাপার। এই তিনটিকে ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার ও বোঝার মতো মানসিক পরিপক্বতা হওয়ার আগেই বিয়ে করলে সে বিয়ে খুব একটা টিকে না।
142) “তুমি আমার সাথে ওটা করতে রাজি হচ্ছো না কেন? তুমি আসলে আমাকে ভালোবাসো না, আমি জানি।” ছেলেরা যখন একটা মেয়েকে এই ধরনের কথাবার্তা বলেও ইমোশনালি ব্ল্যাকমেইল করতে ব্যর্থ হয়, তখন সে প্রতিশোধ নিতে কিংবা তার চাহিদা পূরণ করতে অন্য মেয়ের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে যেতে পারে। ছেলেটির যা দরকার, তা পায় না বলে অন্যদিকে সরে গেছে, এমন ঘটনা অসংখ্য। অবশ্য এটাও ঠিক, অনেকক্ষেত্রেই ওরকম ব্ল্যাকমেইল করতে পারার পরেই ব্রেকআপটা হয়েছে বলে দেখা গেছে। প্রেমে শরীর আসতেই পারে, তবে প্রেমের শর্ত শরীর হলে সে প্রেম টেকে না।
143) “আমরা জাস্ট ফ্রেন্ড, আর কিছুই না!” এরকম আশ্বাসে নতুন কারও প্রতি আস্থাস্থাপন অনেকসময়ই জীবনকে একেবারে ধ্বংস করে দেয়। প্রেমের ব্যাপারগুলি খুব চটজলদি হয়ে যায়। কেউ যদি বিপরীত লিঙ্গের কারওর সাথে নিয়মিত মিশতে থাকে, তবে একটা সময়ে নিজের অজান্তেই ওর প্রতি একটা মায়া কিংবা আকর্ষণ তৈরি হয়ে যেতে পারে। তখন সেই ফ্রেন্ড আর স্রেফ ফ্রেন্ড থাকে না। বরং পুরনো মানুষটিই ফ্রেন্ড হয়ে যায়।
144) পছন্দের মানুষটির বাবা, মা কিংবা অন্যকোনও স্বজনের কথায় কিংবা আচরণের কারণে মানসিকভাবে আহত হয়ে অনেকেই দূরে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এই ধরনের মানুষের আত্মসম্মানবোধ খুবই তীব্র হয়ে থাকে।
145) ভাল একটা চাকরি পাওয়ার পর কিংবা ভাল একটা সামাজিক অবস্থান তৈরি হয়ে যাওয়ার পরও অনেকেই পুরনো মানুষটিকে দূরে ঠেলে দেয়। এদের ভালোবাসা হৃদয়ে নয়, বরং অবস্থানে। বড়ই ঠুনকো সে ভালোবাসা!
146) কেউ প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে সব ব্যাপারেই ক্রমাগত মিথ্যা বলতে থাকলে একটা সময়ে এসে ওর ভালোবাসার মানুষটির ওর প্রতি সকল আস্থা ও শ্রদ্ধাবোধ একেবারেই হারিয়ে যায়। ওকে আর বিশ্বাস করা যায় না। আস্তে-আস্তে ভালোবাসাও ফিকে হয়ে ওঠে।
147) অনেকে ছেলেই নিজের ক্যারিয়ারের প্রতি খুব উদাসীন থাকে। একটা ভাল চাকরি পাওয়ার জন্য চেষ্টাই করে না। ভবিষ্যৎ জীবনের কথা ভেবে অনেক সচেতন মেয়েই এরকম ছেলেদের কাছ থেকে নিজেকে সরিয়ে নেয়।
148) অনেকেই আছে যারা দোষ স্বীকার করতে পারে না, কিংবা দায়িত্ব নিতে পারে না। সবসময়ই অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে দিয়ে একধরনের আত্মতুষ্টিতে ভোগে। অন্যের ঘাড়ে দোষ-চাপানো মানুষ লাইফপার্টনার হিসেবে খুব একটা ভাল হয় না। এদের অনেকেরই প্রিয় মানুষটি একটা সময়ে বিরক্ত হয়ে চলে যায়। নিখুঁত মানুষের সাথে সম্পর্ক রাখা পুরোপুরিই অসম্ভব। আসলে কেউই নিখুঁত নয়, যারা নিজেকে নিখুঁত ভাবে, তাদের সাথে সম্পর্ক রক্ষা করা দূরে থাক, গল্প করাও খুবই যন্ত্রণার।
149) কণ্ঠস্বরের অন্যরকমের একটা শক্তি আছে। দিনে ৫ মিনিট কথা বলা ৫০টা টেক্সট পাঠানোর চাইতে বেশি কাজে দেয়। অনেকেই স্রেফ টেক্সট পাঠানোকেই যোগাযোগ রক্ষার জন্য যথেষ্ট মনে করে। এ ধরনের সম্পর্ক খুব শক্ত হয় না।
150) -------- এই পয়েন্টটি আপনি লিখুন।--------
জীবনে চলতে গেলে কাউকে লাগবেই কেন? একজন ভুল মানুষের সাথে থাকার চাইতে একাএকা থাকা অনেক ভাল। ছেলেরা প্রকৃতিগতভাবেই বহুগামী হয় বিধায়, অনেকেই একটা মেয়ের সঙ্গে সময় কাটানোর সময়ই প্ল্যান করে ফেলে, “এরপর কে?” আর মেয়েরা যখন একটা রিলেশনে থাকে, তখন সে দেখে, তার আবেগের জায়গাগুলি যতটা গুরুত্ব পাওয়ার কথা, ততটা পাচ্ছে কিনা। যদি না পায়, তবে সে অন্য সম্পর্কের দিকে ঝুঁকে পড়ে। একটা সমীক্ষায় দেখা গেছে, শতকরা ৭০ ভাগ ছেলে এবং শতকরা ৫৪ ভাগ মেয়ে এটা কোনওদিনও জানতেই পারে না যে, তার প্রিয় মানুষটি অন্যকারওর সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে আছে। তাই এই সমস্যাটি সমাধান করার কথা কেউই ভাবেও না। কারণ একটি সমস্যা সমাধান করার আগে তো জানতে হবে, সমস্যাটি আছে। মাত্র শতকরা ৩০ ভাগ ক্ষেত্রে অন্যসম্পর্কের কথা মূল সম্পর্কের মানুষটির কাছে ধরা পড়ে। পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ আর বিশ্বাস যদি খুব মজবুত হয়, তবে এই ব্যাপারগুলি অনেকটাই এড়ানো যায়। জীবনে অনেক ছোটোখাটো ভুলত্রুটি ঘটে। পৃথিবীতে কেউই তো পারফেক্ট নয়। নিজের ভুলগুলি স্বীকার করে ক্ষমা চাইলে অনেক জটিল পরিস্থিতিই সহজ করে নেয়া যায়। একটি সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার আগেই যদি নিজের ইগোটাকে পুরোপুরি বিসর্জন দিয়ে সম্পর্কের শুরুর সময়ের মতো করে সবকিছু আবার গুছিয়ে শুরু করা যায়, তবে অনেক সম্পর্কই বেঁচে যেতে পারে। সম্পর্কশুরুর মধুরতা যতোদিন টিকে, সম্পর্ক ততোদিন সুন্দর থাকে।
তবে যদি এতকিছুর পরেও সম্পর্ক জোড়া না লাগে, তবে ধরে নিতে হবে, আপনি এতদিন একজন ভুল মানুষের সাথে ভুল সম্পর্কের মধ্যে ছিলেন। ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিন এইজন্য যে, উনি আপনাকে আপনার নিজেকে ভালোবাসার সুযোগ করে দিয়েছেন। আপনি এখন আরও সুন্দরভাবে আপনার কাজগুলিকে গুছিয়ে করতে পারবেন। আপনার যে ছোটছোট সুখ আর শখগুলিকে আপনি এতদিন ধরে ভুলে ছিলেন, সেগুলি এখন নিজের মতো করে উপভোগ করতে পারবেন। আপনার আশেপাশের মানুষগুলিকে আগের চাইতে অনেক-অনেক ভালভাবে বুঝতে পারবেন, ভালোবাসতে পারবেন। আপনি হঠাৎ করেই আবিষ্কার করবেন, এতদিন ধরে আপনি খুব তুচ্ছ-তুচ্ছ ব্যাপার নিয়েও অনর্থক উদ্বিগ্ন হয়ে উঠতেন, যেটা আপনার মানসিক শান্তিকে নষ্ট করে এসেছে। এতদিন আপনার সকল ভয় আর উৎকণ্ঠা ছিল একজন ভুল মানুষকেন্দ্রিক। আপনার মাথার ভেতরের পৃথিবীটা ছাড়াও বাইরে একটা পৃথিবী আছে, যেটা অনেক সুন্দর। আপনার সহনশীলতা সম্পর্কে আপনার আত্মবিশ্বাস অনেকটাই বেড়ে যাবে। আপনি শিখে যাবেন, কীভাবে নিজের জীবনের ক্ষতগুলিকে সারিয়ে তুলতে হয়। নিজের ভেতরের শক্তিটাকে খুব ভালভাবে অনুভব করতে পারবেন। আপনি উপলব্ধি করতে পারবেন, আপনার পরিবার আর কাছের মানুষেরা আপনাকে কতটা ভালোবাসে, যাদেরকে এতদিন ধরে আপনি বঞ্চিত করে এসেছেন। সবচাইতে বাজে সময়টাকে খুব দারুণভাবে পার করে আপনি টিকে থাকতে পেরেছেন, এর মানে হলো, আপনার সারাজীবনেও এমন কোনও বাধা আসবে না, যেটার মুখোমুখি আপনি দাঁড়াতে পারবেন না। জীবনের কোনও বাধাই আর আপনার জন্য বাধা নয়। মনে-মনে প্রার্থনা করুন: হে ঈশ্বর! একজন ভুল মানুষের হাত থেকে ঠিক সময়ে আমাকে মুক্ত করার জন্য তোমাকে ধন্যবাদ। প্রকৃতপক্ষে আজকে থেকেই আমার জীবনের শুরু। আমি আর কখনওই একই ভুলটি দ্বিতীয়বার করবো না। শুধু তুমি আমার পাশে থেকো!