জীবনের সেরা সপ্তাহটির গল্প

(আমি এ লেখায় আমার বেশ কিছু ছেলেমানুষি ভাবনা আর কাজের কথা অকপটভাবে খোলাখুলি বলেছি। কারোর ভাল না লাগলে এড়িয়ে যাবেন।)
খুব সম্ভবত ২০১১ সালের মাঝামাঝি। রোজার মাস। আমি তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এমবিএ’তে পড়ছি। থাকি গ্রিন রোডে আইবিএ হোস্টেলের দোতলায় ২০২ নম্বর রুমে। সামনেই ৩১তম বিসিএস লিখিত পরীক্ষা। ৩০তম বিসিএস পরীক্ষার রেজাল্ট তখনও হয়নি। (আমরা যারা ৩০তম ব্যাচে চাকরি করি, তাদেরকে ৩১তম বিসিএস লিখিত পরীক্ষা দিতে হয়েছিল। ৩১তম বিসিএস ভাইভা পরীক্ষা দেয়ার আগেই ৩০তম বিসিএস পরীক্ষার রেজাল্ট বের হয়ে যাওয়ায় আমি আর ভাইভা পরীক্ষা দিতে যাইনি।) বিসিএস পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি আর এর পাশাপাশি মাস্টার্সের পড়াশোনা। টিউশনি আর ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছি অনেক আগেই। ব্যাংকে জমানো টাকা ভেঙে ভেঙে চলি। টাকা ফুরোলে বাসায় ফোন করি, আমার ছোটভাই পাপ্পু এফডি ভেঙে টাকা পাঠায়। নিজের কাছে শপথ করেছিলাম, মরে গেলেও আর কোনদিন টিউশনি করব না। বিসিএস ক্যাডার হতেই হবে, ওটা না হলে বিকল্প কোন ভাবনাও মাথায় ছিল না। আমার একটা সীমাবদ্ধতা হল, আমি অনেকগুলি অল্টারনেটিভ মাথায় নিয়ে কাজ করতে পারি না। একেবারে স্ট্রেইট ওয়েতে চিন্তাভাবনা করি। একটা ঝোঁককে সামনে রেখেই নিজের সর্বোচ্চটুকু দিয়ে কাজ করি। এর আগে যখন ৩০তম বিসিএস পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম, তখন বন্ধুবান্ধবদের অনেকেই বলাবলি করছিল, “সুশান্ত বিসিএস পরীক্ষা দেবে না তো কী করবে? ওর অনার্সের যে রেজাল্ট (সেকেন্ড ক্লাস, ২.৭৪), তাতে তো আর কর্পোরেটে যেতে পারবে না!” এসব শুনে এই জেদটা চেপে বসেছিল যে, বাংলাদেশে কর্পোরেটে চাকরি করার বেস্ট যে গেইটওয়েটা আছে, সেখানে আমি যাব, কিন্তু সে ডিগ্রিটাকে কাজে লাগাব না। সে জেদ থেকেই আইবিএ’তে পরীক্ষা দেয়া আর পড়া।
অসম্ভব রকমের ধৈর্য নিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে পরিশ্রম করতে পারতাম। নিয়মিত রোজা রাখতাম। আইবিএ হোস্টেলে দুপুরে রান্না হত, কিন্তু খেতাম না। রোজাদারদের অনুভূতি বোঝার চেষ্টা করতাম। যতক্ষণই রুমে থাকতাম, পড়াশোনা করতাম। সন্ধ্যায় খুব সামান্য ইফতার করে আবারও রুমে এসে পড়াশোনা করতাম। ভোররাত পর্যন্ত পড়াশোনা করে সামান্য খাবার খেয়ে সেহেরি করে ঘুমাতে যেতাম। সকালে আইবিএ’তে ক্লাস থাকত, তাই চাইলেই বেশি সময় ধরে ঘুমাতে পারব না; আমি যেসব কারণে রোজা রাখতাম, এটি ছিল সেগুলির অন্যতম। রমজান মাসে আমার রোজা রাখার অভ্যেসের শুরু সেই থেকেই।
আমি যে টেবিলে থাকব, সে টেবিলের পুরো কিংবা আংশিক বিল আমি দেবো না, এটা ছিল একটা অসম্ভব ঘটনা। আমার নীতি, যে বিলটা দেয়ার ক্ষমতা আমার নেই, সে খাবারটি আমার জন্য নয়। সেই সময় নিজেকে সীমিত অর্থের মধ্যে আটকে ফেলে টাকাপয়সার একটা ‘কৃত্রিম সংকট’ তৈরি করে ফেলেছিলাম। As many things as I can live without—-এটা ছিল আমার সেই সময়ের নীতি। বিল দিতে পারতাম না আর প্রচণ্ড মনখারাপ হয়ে থাকার কারণে ভাল কথাও শুনতে ভাল লাগত না বলে বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ অনেকটা বন্ধ করে দিয়েছিলাম। কোন গেটটুগেদারে যেতাম না। আমার বন্ধুরা মোটামুটি সবাই অনেক ভাল ভাল চাকরি করতো বলে প্রচ্ছন্ন উপহাস কিংবা বক্রোক্তি সহ্য করতে হত। নিজেকে পুরোপুরি একা (alienated) করে ফেলেছিলাম। নিজের সাথেই বাঁচতাম। এ জীবনে কখনওই কারোর কাছ থেকে ১ টাকাও ধার নিইনি। প্রয়োজনে না খেয়ে মরে যাব, তবুও কারোর কাছে মাথা নোয়াবো না, এটাকে আপ্তবাক্য মানতাম। আমার জীবনে সবচাইতে সাদামাটাভাবে চলেছি সেসময়ে, একেবারেই কম আইটেম দিয়ে খাওয়াদাওয়া করতাম বলে যে টেবিলে আমার পরিচিত লোকজন কম বসত, আইবিএ হোস্টেলের ক্যান্টিনে সেই টেবিলে বসতাম। শুধু সবজি আর ডাল দিয়ে খেয়েছি অনেকবেলা। ভাতের দাম ছিল ১২ টাকা, সবজি ১০ টাকা, ডাল ফ্রি। কখনও কখনও ভর্তা আর ডাল দিয়েও খেয়েছি; ওতে লাগত ১৭ টাকা। আমি কিন্তু দরিদ্র ছিলাম না, কিন্তু জীবনে প্রথমবারের মতো দারিদ্র্য কী, সেটা নিজেকে অনুভব করিয়েছি। নিজেকে অসীম পরিমাণে কষ্ট দিয়েছি দিনের পর দিন। “I am the master of my fate,/ I am the captain of my soul.” কোথাও ঘুরতে যেতে দিতাম না, ঠিকমতো ঘুমাতে দিতাম না, কারোর প্রশংসা নিতে দিতাম না। যে ছেলের জন্য তার বাবা-মা’র চোখের জল ঝরেছে, ছোটভাইয়ের মাথা বন্ধুদের সামনে লজ্জায় হেঁট হয়ে গেছে, সমাজের চোখে যার অস্তিত্বের মূল্য অতি সামান্য, তার জীবনকে উপভোগ করার বিন্দুমাত্রও অধিকার নেই। সেসময়টা ছিল সুন্দর সময়ের দেখা পাওয়ার প্রস্তুতিপর্ব, আলোর প্রতীক্ষায় অন্ধকারকে স্বেচ্ছাবরণের শপথকাল, আমার ইবাদতের সময়। নিশ্চয়ই প্রচণ্ড কষ্টভোগ ছাড়া পৃথিবীতে কোনকালেই কোন ইবাদত সফল হয়নি। খ্রিস্টান ধর্মে এটাকে বলে Life of Penance and Mortification. মানে, নিজেকে যন্ত্রণা দেয়ার মাধ্যমে, কষ্টভোগের মধ্য দিয়ে পরিশুদ্ধি আর মোক্ষলাভ। এতে অনেক মনোদৈহিক উপকার আছে। নিজেকে মাথা নত করতে শেখানো যায়, সংযম বাড়ে, প্রচণ্ড পরিশ্রম করে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার তাগিদ পাওয়া যায়। জীবনে কিছু না পাওয়ার চাইতে কষ্ট পাওয়াও ভাল। প্রত্যেকটা মানুষই নিজেকে ভালোবাসে, নিজেকে প্রশংসিত দেখতে চায়, সবার চোখে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠার স্বপ্ন দেখে, নিজের যোগ্যতায় পরিবারকে সুখী দেখতে দিনের পর দিন কাজ করে যায়। যখনই নিজেকে অবহেলিত আর পদদলিত অবস্থায় প্রতি মুহূর্তেই আবিষ্কার করে, তখনই সে ভেতর থেকেই এক ধরণের জ্বালা অনুভব করে, এতে করে অসীম মাত্রায় ইতিবাচক জেদের জন্ম হয়; এই inner impulse থেকেই মানুষ ঘুরে দাঁড়ায়। দীর্ঘসময়ের মনস্তাত্ত্বিক অন্তর্দহনের ফলে বিস্ফারিত আবেগে মানুষের ভেতরে অবিশ্বাস্য রকমের ইচ্ছাশক্তি আর প্রণোদনার সৃষ্টি হয়। বাহ্যিক জগতটা তখন তাকে আর ততটা স্পর্শ করে না। এর নিয়মিত অনুশীলনে মানুষ প্রচণ্ড প্রৈতিতে নিজেকে ক্রমাগত উপরের স্তরে উন্নীত করে। এটি একটি ধীর কিন্তু অবিরাম প্রক্রিয়া। মনের শক্তির উন্মেষ ঘটলে বাহ্যিক কোন প্রভাব কিংবা ঘটনা মানুষকে আর আটকাতে পারে না। নিজেকে একটা নির্লিপ্ত নিঃস্পৃহ নির্ভীক স্তরে নিয়ে গিয়ে শুধু স্বপ্নপূরণের পথে একাকী অবিচল এগিয়ে যাওয়ার উদ্যতি মনের মধ্যে অবচেতনভাবেই তৈরি হয়ে যায়। Success is a selfish lonely game.
ঈদের বাকি আর ৪-৫ দিন। হাতে অতো টাকা নেই। বাসায় ফোন করলাম। আমার ছোটভাই জানাল, যে কয়টি এফডি আছে, আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই সেগুলির ম্যাচুরিটি ডেট। সবচাইতে কাছের ডেটটি ১০ দিন পরে। এই মুহূর্তে যদি সেই এফডিটা ভাঙে, তাহলে ব্যাংক কোন বেনিফিট দেবে না, জাস্ট সেভিংস রেটে ইন্টারেস্ট পাওয়া যাবে। কিছু না ভেবেই সিদ্ধান্ত নিলাম, যে টাকা আছে, সে টাকা দিয়ে যেভাবেই হোক চলব। ছোটভাই জিজ্ঞেস করল, “দাদা, ঈদের ছুটিতে বাসায় আসবি না?” জানালাম, “না, কাজ আছে।” আমি আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছিলাম, নিজেকে টর্চার করার আরেকটা কাজ এইবার করব, সেটি হল : ঈদের ছুটি পুরো আইবিএ হোস্টেলে একা একা কাটাব, বাসায় যাব না, আরামআয়েশ করে কাটাব না। ও বলল, “দাদা, দাঁড়া, আমি বাবার কাছ থেকে টাকা নিয়ে পাঠিয়ে দিচ্ছি।” ২০০২ সালে অনার্সে ওঠার পর থেকে উচ্চমধ্যবিত্ত বাবার প্রচণ্ড আপত্তি সত্ত্বেও যে ছেলেটি বাবার কাছ থেকে কোনদিনও একটি পয়সাও নেয়নি, বরং অনেকটা জোর করেই বাসায় এটাওটা কিনে দিয়েছে, তার পক্ষে এতদিন পর এসে বাবার কাছে ‘হাত পাতা’ মৃত্যুর সমান। আমার ভেতরটা আমাকে বলতে লাগল, না, আমি কোনভাবেই সারেন্ডার করব না। দেখি, কী করা যায়। ছোটভাইকে জানালাম, “লাগবে না। আমি ম্যানেজ করে ফেলব। তুই এটা কোনভাবেই বাবা-মা’কে বলবি না।” “তুই কীভাবে ম্যানেজ করবি?” “আমি মাঝে মাঝে এখানে একটা আইবিএ অ্যাডমিশন কোচিংয়ে ক্লাস নিই। ওখান থেকে কিছু টাকা পাব।” ছোটভাইকে মিথ্যা কথা বললাম। আমার জন্য সেই ঈদের ছুটির সময়টা ছিল জীবনটাকে বোঝার সময়, পৃথিবীর পথে কপর্দকহীনভাবে একজন পুরুষমানুষের হাঁটতে কেমন লাগে, এটা অনুভব করার সময়, ১০ টাকার মূল্য যে কতটা বেশি হতে পারে, সেটা একেবারে হাতেকলমে শেখার সময়। আইবিএ হোস্টেলে আমার রুমমেট ছিল উজ্জ্বলদা। উনার কিছু কিছু অদ্ভুত বৈশিষ্ট্যের কারণে উনি আমার দেখা সবচাইতে ভিন্ন রকমের কিছু মানুষদের অন্যতম। একটা মানুষ যে কতটা উদার আর সহজ হতে পারে, সেটা উনাকে না দেখলে কেউ ভাবতেও পারবে না। উনার মতন নিজের মেধা নিয়ে এতটা ছিনিমিনি খেলেছেন, এরকম মানুষ আমি খুব বেশি দেখেছি বলে মনে পড়ে না। যে মানুষটি চাইলে কোন ভাল প্রতিষ্ঠানে মোটা বেতনে চাকরি করতে পারতেন, তিনি ছিলেন একজন দরিদ্র বেকার। ফোনে আমার কনভারসেশন শুনে উনি বললেন, “আপনি আমার কাছ থেকে কিছু টাকা নিতে পারেন।” আমি বললাম, “আরে ধুর্!! আমার লাগবে না। আমার কাছে টাকা আছে। ” “কাম অন ম্যান! আপনি আমার কাছ থেকে ৫০০ টাকা নেন। আমি তো আপনাকে এ টাকাটা দান করছি না। আপনাকে অবশ্যই ফেরত দিতে হবে।” “দাদা, আপনি টাকা পেলেন কোথা থেকে?” “আমি প্রাইজবন্ড জিতে কিছু টাকা পেয়েছি। আজকে আমার প্লান ছিল, ৫০০ টাকা ভাঙিয়ে ৫০জন গরীব মানুষকে ১০ টাকা করে দিব। এই মুহূর্তে আপনিও তো একজন গরীব মানুষ! হাহাহা……. আরে ভাই, নিয়ে নেন। আমি তো আপনাকে সাহায্য করছি না। পরে মনে করে ফেরত দেবেন। ওকে?” সেসময় ৫০০ টাকা আমার কাছে অনেক টাকা। জীবনে প্রথম আর শেষবারের মতো কারোর কাছ থেকে ৫০০ টাকা ধার নিয়েছিলাম। (পরে জানতে পেরেছি, উজ্জ্বলদা নিজেই আরিফ ভাইয়ের কাছ থেকে দুইদিন আগে ১৫০০ টাকা ধার করেছিলেন, সেখান থেকে আমাকে ৫০০ দিয়েছেন। এমন কাজ উনার পক্ষেই করা সম্ভব। একবার প্রচণ্ড শীতের সময় উনাকে নিয়ে বান্দরবানে ঘুরতে গিয়েছিলাম। সেসময় এক গরীব মানুষকে উনার নিজের গায়ের সোয়েটারটি খুলে দিয়েছিলেন। উনার সাথে আর কোন গরম কাপড় ছিল না।) ওই মুহূর্তে আমার হাতে কয়েকটা একশো টাকার নোট আর সামনে গুনেগুনে ১০টা দিন।
সেই ১টা সপ্তাহ ছিল আমার জীবনের সেরা সপ্তাহ। ঈদ উপলক্ষ্যে ক্যান্টিন বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। আইবিএ হোস্টেলের পাশে সবচাইতে সস্তা খাবারের দোকানটির নাম ছিল, (সম্ভবত) ভাই ভাই হোটেল। কিন্তু সেখানেও ২০ টাকার মধ্যে ভাত খাওয়া যেত না, কমপক্ষে ৩৮ টাকা লাগত। নিজেকে বোঝালাম, না খেয়ে কিংবা কম খেয়ে তো আর কেউ মরে না। ওরকম হলে মুক্তিযুদ্ধের সময় লক্ষ লক্ষ লোক মারা যেত। ওরা না খেয়ে, কম খেয়ে যে পরিশ্রমটা করেছে, সেটার তুলনায় আমারটা তো শিশুতোষ! দোকান থেকে সস্তা দামের পাউরুটি কিনে আনলাম। ওটা খেতাম আর পেট ভরে পানি খেয়ে নিতাম। এ ঘটনা শুধু আমি এবং আমার ঈশ্বর ছাড়া আর কেউই জানত না। উজ্জ্বলদা সেদিনের পরেই চট্টগ্রামে উনার বাসায় ছুটি কাটাতে চলে গিয়েছিলেন। নিজেকে বলতাম, “তুমি এখন এ পৃথিবীর কাছে কিছুই না। তোমার পরিবারের প্রতি তোমার যে দায়িত্ব, তার কিছুই তুমি পালন করতে পারনি। তোমার ব্যাচের মধ্যে তুমিই সবার চাইতে পিছিয়ে। তোমার জন্য তোমার বাবা-মা সবার কাছে অপমানিত হচ্ছে। তুমি তোমার নিজের ভুলের জন্য জীবনটাকে এখনও সাজাতে পারনি, তাই জীবনটাকে উপভোগ করার কোন অধিকার তোমার নেই নেই নেই……!!!” আমি সেসময় উপলব্ধি করতে পেরেছিলাম, আর কিছু না, শুধু এক বাটি ডাল আর এক প্লেট ভাতের জন্যও অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে বেঁচে থাকা যায়। এভাবে করে ১ সপ্তাহ খেলাম; বিস্কিট আর পাউরুটি, দুএকদিন চিপস্। প্রতিদিন ঘুমাতাম ৪-৫ ঘণ্টার মতো। বাকিটা সময় নিবিষ্ট ধ্যানে প্রার্থনা, মানে স্বপ্নছোঁয়ার প্রস্তুতি। ১ সপ্তাহ পর যখন হিসেব করে দেখলাম, বাকি ৩ দিন একবেলা ভাত আর অন্যবেলা পাউরুটি খাওয়ার মতো টাকা হাতে আছে, তখন সেদিন দুপুরে সেই সস্তা ভাই ভাই হোটেলে ‘দীর্ঘ’ ১ সপ্তাহ পরে ভাত খেলাম। ডিমের তরকারি আর পাতলা মসুরের ডাল দিয়ে ফুলের মতো থোকায় থোকায় ফুটেথাকা শাদা শাদা গরম ভাত। এখনও স্পষ্ট মনে আছে, মনে হচ্ছিল, যেন অমৃত খাচ্ছি! অতো ভাল খাবার জীবনে আর কখনও কোথাও খেয়েছি বলে মনে পড়ে না। (ছোটবেলায় একবার দুর্ঘটনার কারণে আমাকে এক সপ্তাহ ভাত না খেয়ে থাকতে হয়েছিল। তখন আমি অনেক ছোট, ক্লাস টুতে পড়ি।) এর পরদিনই ক্যান্টিন খুলে গিয়েছিল। বাকি দুইদিন ওখানেই খেয়েছিলাম। ক্যান্টিনে বাকিতে খাওয়া যায়। আমিও চাইলেই ক্যান্টিনে বাকিতে খেতে পারতাম। এ জীবনে আমি কখনওই বাকিতে কিছু কিনিনি। সেই দুইদিনও কিনলাম না। ১১শ দিনে ছোটভাই আমার অ্যাকাউন্টে ৫০ হাজার টাকা পাঠাল। অর্থকষ্ট কতটা নিদারুণ হতে পারে, সেটি আগে কোনদিনও বুঝিনি।
আমি আমার ৩১ বছর বয়সে আজকের দিন পর্যন্ত সেই ১ সপ্তাহের ইবাদতে যা শিখেছিলাম, তা ১ শত বই পড়েও শিখতে পারতাম কিনা সন্দেহ! ইবাদত জীবনটাকে দেখতে শেখায়।