অভিভাবকরাও পড়ুন

• আমাদের বাবা-মা’দের জিজ্ঞেস করছি, “আচ্ছা, পৃথিবীর সেরা কিংবা সফল মানুষগুলো কি সবাই ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার? মেডিকেলে কিংবা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে চান্স না পেলেই কি জীবন শেষ হয়ে যায়? জীবনের এতটা সরলীকৃত রায় দিয়ে দেয়ার অধিকার আপনাকে কে দিয়েছে?”

• আপনার সন্তানের কাছে আপনার চাওয়াটা হতে পারে, যাতে সে সুস্থ শরীরে হাসিখুশি মনে বেঁচে থাকে। দয়া করে ওদের সাথে এমনকিছু করবেন না কিংবা ওদেরকে এমন কিছু বলবেন না, যেটা ওদের নিজেদের সম্মান করতেই ভুলিয়ে দেয়। যে নিজেকে সম্মান করে, সে কখনওই চিরদিন নিজেকে ছোট করে রাখবে না। বড় সে হবেই হবে!

• সেরা প্রতিষ্ঠানে পড়া নয়, বরং নিজের অবস্থান থেকে সেরা কাজটা করে দেখানোই কৃতিত্ব। সেরা প্রতিষ্ঠানের কাজ কী? সেরা মানুষটা তৈরি করা, এই তো? বরং ওকে এই বিদ্যেটা শিখিয়ে দিন। ওদের উৎসাহ দিন। এতে ওদের মধ্যে দায়িত্ববোধ বাড়ে। আপনার মুখ যদি কেউ উজ্জ্বল করে সেটা আপনার নিজের সন্তানই করবে, অন্য কারও সন্তান নয়।

• প্রাইভেট ভার্সিটিতে পড়লেই কি জীবন শেষ হয়ে গেল? প্রাইভেটে যারা পড়ে, তাদের সবাই কি জীবনবোধ বর্জিত? আমার অনেক সফল বন্ধু আছে, যারা প্রাইভেট থেকে গ্রাজুয়েশন করা। কই, আমার অভিজ্ঞতা তো সেটা বলে না। পুরনো ধারণা থেকে বেরিয়ে আসুন। ভার্সিটি স্টুডেন্টদেরকে বড় করে না, স্টুডেন্টরাই ভার্সিটিকে বড় করে।

• মেনে নিন, সবাই সবকিছু পারে না। আমি কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়েছি, কিন্তু কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হতে পারিনি। এটা আমার ব্যর্থতা। আমার ব্যর্থতার জন্য আমি ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানাই। জোর করে আমাকে কেউ ইঞ্জিনিয়ার বানালে হয়তো আমার দিকে আঙুল তুলে লোকে বলত, “দেখ দেখ, চুয়েটের প্রোডাক্ট কতটা বাজে!” আমি খুশি। লোকে আমার জন্য আমার ভার্সিটিকে বকবে কেন? আমাকে গালি দিক, আমার মাকে নয়।

• কিছু লোক কখনওই আপনার কোনও ঠিক কাজেরই প্রশংসা করেন না, কিন্তু সবসময়ই আপনার ভুল কাজের নিন্দা করেন৷ ওদের পাত্তা কম দেয়াই ভাল৷ প্রশংসা করতে পারার মতো উদারতা ছোটলোকদের থাকে না৷ নিন্দুকেরে বাসি আমি সবার চেয়ে ভালো৷ ভাল কথা৷ তবে যে নিন্দুক আপনার আত্মবিশ্বাস কমিয়ে দেয়, তাকে ভালোবাসাবাসির কিছু নাই৷ এত কেয়ার করার টাইম আছে নাকি? জীবনটা আপনার৷ আপনি কী নিয়ে থাকবেন, কী নিয়ে থাকবেন না, এটা ঠিক করার সবচে নির্ভরযোগ্য ব্যক্তি আপনি নিজেই৷ সাফল্য কী? আফসোস ছাড়া বেঁচে থাকাই সাফল্য৷ আর কিছু না৷ নিন্দা করা তারেই সাজে, প্রশংসা করে যে৷

• আমি দেখেছি, শুধু বেঁচে থাকলেও অনেক কিছু হয়৷ হারিয়ে গেলে, খুব কাছের মানুষ ছাড়া কারোরই কিছু এসে যায় না৷ তাই, বেঁচে থাকুন। আপনার মৃত্যু কিছু লোককে দারুণ অস্বস্তিতে ফেলে দেবে, যারা আপনার মৃত্যুকামনা করে স্বস্তি পায়। অন্তত তাদের কথা ভেবে হলেও . . . . . . . বাঁচুন! বেঁচে থাকাটাই সবচে বড় প্রতিশোধ। তাই, অন্তত নিজের কথা ভেবে হলেও . . . . . . . বাঁচুন! বাঁচুন, নিজের জন্যে। বাঁচুন, অন্যের জন্য।

• কারও জন্য মরে যাওয়ার কোনও মানেই হয় না। যার জন্য মরে যাবেন ভাবছেন, সে আপনার কথা কতটুকু ভাবে? ভাবলে আপনাকে মরতে দিত? পৃথিবীতে কেউই অপরিহার্য নয়। জীবন কারও জন্যই থেমে থাকে না, শুধু মাঝমাঝে থমকে যায়। ওকে ওর মত করে ভাল থাকতে দিন। আপনি আপনার মত করে ভাল থাকুন। ভাল থাকাটাই সবচেয়ে বড় কথা।

• কখনওই বিশ্বাস করে বসবেন না, আপনিই পৃথিবীর সবচাইতে দুঃখী মানুষ, আপনিই সবচাইতে বেশি কষ্টে আছেন। আপনি ভাবতেই পারবেন না, হয়তো পৃথিবীর সবচাইতে দুঃখী মানুষটি সবচাইতে সুন্দর করে হেসে কথা বলে। আপনি উনার কষ্টের কথা কল্পনাও করতে পারবেন না।

• জীবনে কোনও কিছু না পাওয়ার চাইতে কষ্ট পাওয়াও ভাল। আপনার যে কষ্টটা আপনাকে শেষ করে দেয় না, সেটাকে আপনি চাইলে আপনার সবচেয়ে বড় শক্তিতে পরিণত করতে পারেন।

• ছোট বন্ধুদের বলছি। বাবা-মা’র সাথে অভিমান হবে, খুব কষ্ট পাবে, মনে হতে থাকবে, বাবা-মা আমার ভালো চান না, আমাকে একটুও ভালোবাসেন না, ওরা আমার শত্রু। এরকম আরও অনেক কিছু। আমি এটা নিয়ে শুধু একটা কথাই বলব। জীবন শেষ পর্যন্ত আমাকে এটাই শিখিয়েছে, আসলে আমার বাবাই ঠিক ছিলেন, আমার মায়ের চোখের জল মিথ্যে বলেনি। অনেক সময় নষ্ট করে ওদের দেখিয়ে দেয়া পথেই আবার ফিরে এসেছি। আমি বিশ্বাস করি, ওদের মধ্যে ঈশ্বর আছেন। মাঝেমাঝে ওরা যা বলেন, সেটা ঈশ্বরের ইশারা ছাড়া আর কিছুই নয়।

পাদটীকা। ওপরের লেখাটি আমার অন্য একটি লেখার শেষ অংশ। লেখাটির নাম ‘আত্মহত্যার অনধিকার’। আগ্রহীরা পুরো লেখাটি পড়ে দেখতে পারেন।