ভাবনাদেয়ালের পলেস্তারা: ১০৮

ভাবনা: সাতশো পঞ্চাশ
...............................................................
এক। আমরা, বেশিরভাগ মানুষই, এমন করে ভাবি:
আপনি পুরো দুনিয়ার চোখে ভালো কি খারাপ, তা আমার দেখার বিষয় নয়। আপনি আমার সাথে ভালো তো আপনি ভালো, আপনি আমার সাথে খারাপ তো আপনি খারাপ। ব্যস্‌!
দুই। ভালোলাগা, মন্দলাগা সবই তোমার সাথে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়ানো,
আমি পালিয়ে ঠিক কোথায় যাই, তুমি কি সেইটুকু বলে দিতে পারো?
তিন। তুমি আমার প্রেমিকের কথা জানতে চাইছ তো? শোনো তবে, আমাকে ছোঁবার সুযোগ পেলেও সে আমাকে ছোঁয় না, আবার আমাকে ছোঁবার সুযোগ না পেলেই যাকে তাকেও সে ছোঁয় না!
চার। আমাদের সুখগুলো লেখা থাকে চোখে মুখে,
আমাদের সুখগুলো পড়ে থাক প্রাণের পাশে।
হৃদয়ে জড়াক অন্য কোনও নাশ,
ঠাসুক জীবন অন্য কিছুর দেশে।
পাঁচ। আমি সবসময় ভাবতাম, তুমি আমার জীবনের সব থেকে বড়ো প্রাপ্তি, তুমি আমার মধ্যে জীবন ঢেলে দিয়েছ। কিন্তু মাঝে মাঝে কেন জানি মনে হয়, এ জীবনে তুমি এসে ঠিক করোনি। আমি আগে যেমনটা ছিলাম, যে পরিস্থিতিতে ছিলাম, সেই না-পাওয়া, যন্ত্রণাগুলো নিয়ে অভিযোগ করেটরেও ঠিকই কাটিয়ে দিতে পারতাম, কিন্তু যে জিনিস কখনও পাবোই না, জীবন সে জিনিস আমাকে দেখানোর কী অর্থ? যে জিনিস আমি কখনও পাবো না, সে জিনিসের প্রলোভন দেখানোরই-বা কী দরকার ছিল?
সব কিছু এলোমেলো লাগে। কোনও কিছু ঠিক হয় না। কিছুই জোড়া লাগে না, বরং আরও বিধ্বস্ত হয় দিনে দিনে।
খুব খারাপ একজন মানুষ হয়ে যেতে ইচ্ছে হয়। কিন্তু পারি না। আমি দেখেছি, খারাপ মানুষ অন্যদেরকে ঠকিয়ে, মেরে কেটে হলেও নিজেরটা আদায় করে নেয়। যদিও তারা খারাপ মানুষ, লোকে তাদের পিশাচ, অমানবিক বলে, তবুও তারা তো সুখে থাকে, নিজের ভালোবাসার কোনও কিছুই তারা হারায় না। যারা সব কিছু ছেড়ে দিয়ে সব কিছু ঠিক রেখে ভালো থাকতে চায়, তারাই প্রকৃতপক্ষে নিঃস্ব।
একটু ভাবো, এখনও তো তোমাকে জ্বালানোর মানুষটা আছে। আমি না থাকলে তোমাকে জ্বালাবে কে? এখনও তো তুমি আছ, তুমি না থাকলে তখনও যদি আমি থেকে যাই, তাহলে এই ভাবনা আমাকে কষ্ট দেবে যে, মানুষটা যখন ছিল, সব কথা বলে দেওয়ার অনেক সময় আমার ছিল, কিন্তু আমি তাকে কখনও কিছুই জানাইনি। তখন যদি সব কিছু খুলে বলতেও চাই, তা-ও সে কথাগুলো কখনও তোমার কাছে পৌঁছুবে কি না, তা সেদিন আর বুঝব কী করে? তার থেকে বকা খাই, বকা দিই, যা ইচ্ছা করে নিই। সময় কখন শেষমুহূর্তে চলে আসবে, আমরা কে জানি?
বরং যদি আমি আগে চলে যাই, যেতে যেতে যেটুকু বলে যাব, আমার বলা সেসব কথা তুলে রেখো যত্ন করে। যখন আমি আর জ্বালাব না, সেদিন যদি ভীষণ ইচ্ছা হয়, ভীষণ মিস করো আমার দেওয়া অশান্তিগুলো, তবে সেদিন এই কথাগুলো খুলে দেখো। যতদিন তোমার কাছে থেকে গেছি, থাকছি এই যে এত, আমি তো তোমাকে সুখের চেয়ে অশান্তিই দিয়েছি বেশি!
আমি তো কখনও তোমাকে কাছে থেকে পাবো না, তোমার পাশে শুয়ে তোমার সাথে গল্প করার সুযোগও কখনও হবে না, যদি কখনও দু-এক বার হয়ও, হয়তো তখন কথাগুলো সেদিন আর আসবে না। চাইলে সবসময় সব কিছু হয় না, যদি ভেতর থেকে সেটা না আসে। আজকে বলতে ইচ্ছা হলো, বললাম। আর কখনও এভাবে বলব কি না, বলা হবে কি না জানি না।
তোমাকে সব কিছু বলতে পারা আমার কাছে অনেক সৌভাগ্যের মনে হয়, কথা মনের ভেতরে ধরে রাখা খুব কষ্টের কাজ! কথা ধরে রেখে দিলে কথাগুলো ভেতরে ভেতরে বড়ো হতে থাকে, আর যখন একটা মানুষের চাইতে তার জমাকথার স্তূপ বেশি ভারী হয়ে যায়, তখন সেই মানুষটা হাঁসফাঁস করতে থাকে আর ভাবে, আহা, এগুলো যদি কাউকে দিয়ে দেওয়া যেত! যে কথা কাউকে দেওয়া যায় না, সে কথা মানুষের ভেতরটাকে ক্রমশই মেরে ফেলে।
আমি যা জানি, আমি যা বুঝেছি, সেগুলো আমার অর্জন। তোমাকে মুগ্ধ করার অথবা তোমার কাছে মুগ্ধ হবার, এমন কোনও কিছুতেই আমার ইচ্ছে নেই। আমি কতটা বোকা আর অতি আবেগী মেয়ে, সে তুমি এরই মধ্যে বুঝেও ফেলেছ, সেও জানি। এজন্যই কিছু মনে চেপে রাখি না। এমনিতেই তুমি যখন আমাকে জানোই, তাহলে শুধু শুধু নিজেকে অন্যভাবে তুলে ধরার কী-ইবা আছে! আমি না বললে, না বুঝতে দিলেও কি তুমি বুঝতে পারতে না আমি আসলে কী? অতটা বোকামানুষ তুমি না, সরলতা আর বোকামি সম্পূর্ণ ভিন্ন। তুমি সরল, কিন্তু বোকা বা অবুঝ নও।
মানুষ অন্যায়ের প্রতিবাদ করে মানুষের বিবেক জাগিয়ে রাখতে চেষ্টা করে। আর আমি তোমার কাছে আমার ভালোবাসার কথা বলে, জাহির করে, প্রমাণিত করতে চেয়ে আমার ভালোবাসাকে জাগিয়ে রাখতে চেষ্টা করি। যদি ভুল করে তুমি ভুলে যাও কখনও, এজন্য মনে করিয়ে দিই, আমি এখনও ভালোবাসি তোমায়, একই রকমভাবে, পাগলের মতো!
ছয়। তুমি এমনভাবে কথা বলো যে আমি কোনদিকে যাব, সেটাই বুঝতে পারি না। অন্য কোথাও যেতে পারব না, আবার তোমার কাছেও আমার জায়গা নেই। আমি কোনটা ধরব, কোনটা ছাড়ব, অথবা কী করব, কিছুই বুঝি না। এত দুশ্চিন্তা আমার ভালো লাগে না।
তুমি আমাকে সবসময় এমনই করবে, জানি। কিন্তু আমি কী করব, কীভাবে করব, সেটাই মেলাতে পারি না। তখনই মাথায় আর কিছুই কাজ করে না। মনে হয়, অন্য এমন কোথাও যাই, যেখানে তোমার কাছেও যাবার সুযোগ থাকবে না, আবার অন্য কোথাও যাবার বাধ্যবাধকতাও থাকবে না। এমন একটা জায়গা হলে খুব ভালো হতো।
আমি যখন এমন সংশয়ে থাকি, তখন এটি আমাকে শেষ করে দেয়। যখন ভুলে যাই সব কিছু, ভুলে থাকি নিজেও, তখন ভালো থাকি। সংশয় মানুষকে শেষ করে দেবার জন্য সবচাইতে মোক্ষম অস্ত্র!
সাত। বাস্তবতা এবং স্বপ্নের ব্যবধান আকাশ-পাতালের। স্বপ্ন দেখতে চাইলে শুধু ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে চোখ বন্ধ করে অনুভব করে নিলেই চলে, কিন্তু বাস্তবে কোনও কিছু চাইলে সেটার জন্য পরিশ্রম ও সময় বাধ্যতামূলক। অন্য সব কিছু বাদ। বাদ মানে বাদই। মজা সব দিকে চাইলে হয় না। একটা মজার জন্য আরেকটা মজার আশা ছেড়ে দিতে হয়। আমি এ জীবনে যত ব্যর্থ লোক দেখেছি, তাদের বেশিরভাগই একটা মজা পেতে ব্যর্থ হলেও অন্য একটা মজা পেতে সফল হয়েছে, যে মজাটা হয়তো অনেকেই পায়নি। এদিক বিবেচনায়, সাফল্য ও ব্যর্থতা, দুই-ই আসলে লাইফস্টাইল, আর কিছু নয়। আপনি প্রায়ই দেখবেন, যে মজাটা আপনি সফল হবার আগে করে নিচ্ছেন, সফল ব্যক্তিরা সে মজাটা জীবনে সাফল্য আসার পরে করছেন। পরের মজা আগে করলে এরকমই হবার কথা। মেনে নিন, জীবনে সব মজা আপনি একসাথে পাবেন না, একটার জন্য আরেকটাকে ছাড়তে হবে।


ভাবনা: সাতশো একান্ন
...............................................................
গতকাল তোমাকে একটু কথা শুনিয়েছি, আর তাতেই আজকে তোমার আর ফোন করার সময়ই হয়নি। তুমি জানতে যে যত যা-কিছুই হয়ে যাক, আমি তবুও তোমার ফোনের অপেক্ষা করে থাকব ঠিকই, তা সত্ত্বেও তোমার সময় হয়নি। হবেও না, জানি, কারণ আমি এখন তোমার কাছে গলার কাঁটা হয়ে গেছি পুরোপুরি। এখন আর আমার কোনও কিছুই তোমার সহ্য হয় না। তুমি শুধু দেখো, আমি অভিযোগ করি, ভ্যাজর ভ্যাজর করি, ঘ্যান ঘ্যান করি। তুমি জানো, আমি অসুস্থ, আমার মাথাব্যথা ঠিক হচ্ছে না, তা-ও তুমি একটু ফোন করে খোঁজ নেওয়ার, কথা বলার প্রয়োজন মনে করোনি। তুমি ফোন করলে যে পুরোপুরি সুস্থ না হলেও মানসিকভাবে আমি অর্ধেক সুস্থ হয়ে যেতাম, মানসিক শক্তিটুকু যে আমার আসত, এ সবই তুমি জানো, কিন্তু তুমি কেয়ারই করো না এসবের।
আমার করোনা হবার পরেও মাত্র একদিন কয়েক মিনিটের জন্য কথা বলে রেখে দিয়েছ। এর পরে আর ফোন করা তো দূরের কথা, মেসেজেও খোঁজ নেওয়ার সময় হয়নি তোমার। কয়েক দিন যাবত কম করে হলেও পাঁচ বার বললাম, তোমার বাসায় পরার দুইটা টিশার্ট আমাকে পাঠাও, আমি পরব। তোমার কি মনে হয়, আমার রাতে পরার টিশার্ট নেই, এজন্য চেয়েছি? তোমার নিজের ব্যবহার-করা বলে চেয়েছি, তোমাকে কখনও কাছে পাই না, তোমার টিশার্ট পরলে আমার মনে হতো, তুমি আমার সাথে আছ, তোমাকে ফিল করতে পারতাম আরও একটু, এজন্যই চেয়েছিলাম। তুমি বলেওছ যে তুমি পাঠাবে, কিন্তু দশ-পনেরো দিন হয়ে গেল চেয়েছি, এর ভেতর একদিনও তোমার সেটা পাঠানোর সময় হয়নি। তুমি চাইলেই তোমার অফিসের পিয়ন কিংবা তোমার ড্রাইভার দিয়ে পাঠানোর ব্যবস্থা করতেই পারতে, কিন্তু আসলে তুমি চাওই না।
এর আগে আমি একটা নোজপিন চেয়েছিলাম। আমি তোমার কাছে ডায়মন্ডের নোজপিন চাইনি, আমি তোমার কাছে সবসময় পরে থাকা যায়, এমন একটা ছোট্ট নোজপিন চেয়েছিলাম। মেটালের হলে কিছু দিন ব্যবহার করার পর নষ্ট হয়ে যাবে, এজন্য স্বর্ণের খুব ছোট্ট একটা নোজপিন দিতে বলেছিলাম। তোমাকে নিজে গিয়ে কিনে দিতে বলেছিলাম, কারণ তোমার নিজের হাতে কেনা একটা কিছু আমি চাইছিলাম ব্যবহার করতে। তা ছাড়া মেয়েরা বিয়ের পর নোজপিন পরে, সব মেয়েকেই তার সেই মানুষটাই নোজপিন কিনে দেয়। আমার কাছে তুমিই আমার সব কিছু, এজন্যই তোমার কাছে চেয়েছিলাম। স্বর্ণের খুব ছোট্ট একটা নোজপিন খুব বেশি হলে পনেরোশ’ টাকা হতো, আমাকে এটুকু দেয়ার সামর্থ্যও তোমার হয়নি, তোমার অনেক অনেক বইয়ের দামের চাইতেও আমার নোজপিনের দাম অনেকই কম ছিল।
তুমি নিজেই ডায়মন্ডের কথা বলেছিলে, আমি বলিনি, চাইনি, চাইও না। আমি শুধু তোমার দেওয়া একটা নোজপিন চেয়েছিলাম, সবসময় পরা যাবে এমন, তা সে যা দিয়েই গড়া হোক না কেন, শুধু তোমার দেওয়া হলেই আমি খুশিমনে সেটা নিয়েই খুব খুশি থাকতাম। অথচ আজ দিই কাল দিই করে করে তুমি এড়িয়ে যাচ্ছ, জানি। এত কিছুর পরও সব বুঝেও সহ্য করে করে আমিই আগ বাড়িয়ে কথা বলতে যাই, নিজেকে সবসময় বোঝাই, ভুলটা আমারই, আমিই তোমার সাথে ঝগড়াঝাঁটি করি, ঝামেলা করি, এজন্যই তুমি আমার কোনও কিছুতেই যত্নশীল না। তারপরও তো আমি যখন কাছে যাই, তা-ও তুমি দূরেই সরিয়ে দাও, দূরে সরে সরে থাকার চেষ্টা করো। আমি বুঝি, তুমি দূরে সরতে চাইছ, তবুও না বোঝার ভান করে আবার যাই, বার বার যাই। তারপরও আমি দোষী! মানুষ নিজে নিজের জন্য একটা কিছু কিনলে যতটা না খুশি হয়, নিজের ভালোবাসার মানুষকে সাজাতে পারলে, তাকে কোনও একটা কিছু দিতে পারলে তার চাইতে হাজারগুণ বেশি খুশি হয়। মন থেকে একটা তৃপ্তি কাজ করে যে, ও আমার দেওয়া কিছু পরে আছে, নিজের ভালোবাসার মানুষকে আরও নিজের বলে মনে হয়, দাবি করতে ইচ্ছা হয় যে, সে আমার।
সেদিন আমি বললাম, আমি তোমার জন্য পাঞ্জাবি বানাব, একটু সাইজটা বলো। অনেক আগে থেকেই তোমাকে নিজের পছন্দসই, নিজের তৈরি একটা পাঞ্জাবি দেওয়ার ইচ্ছা আমার, কিন্তু করোনার কারণে, নিজের অসুস্থতার কারণে দুইটা ইদ গেল, তবুও আমি তোমাকে কিছুই দিতে পারিনি। এটা যে আমার কাছে কতটা কষ্টের ছিল, সেটা শুধু আমি জানি। আমি তোমাকে এ-ই বিষয় বলিওনি এর আগে কখনও, কিন্তু আমি ভেবেছি, যখন দিব, তখন জানালেই হবে। এখন সব কিছু কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছি, এদিকে সামনে আবার তোমার জন্মদিন। নিজের হাতে সেলাই করতে গেলে ওটা দরজির দোকান থেকে আনার পরও আরও এক মাস লাগবে সেলাই করতে, এজন্যই আগে থেকে একটু একটু করে করতে চেয়েছিলাম। তুমি জানো, আমার বাসায় অনেক কাজ থাকে, পড়াশোনা থাকে, আমি চাইলেও হুট করে কিছু করে ফেলতে পারি না, আমাকে একটু একটু করেই এগুতে হয়।
তোমাকে সেদিন কত বার বললাম যে সাইজটা একটু বলো, তা-ও তুমি বললে না। তুমি হয়তো ভেবেছ, তোমাকে আটকে রাখার জন্য, তোমাকে খুশি করার জন্য এখন এই পথ বেছে নিয়েছি অবশেষে, কিন্তু আমি যে আগে থেকেই এটা চিন্তা করে রেখেছি, সেটা তোমাকে বললেও তুমি বুঝতে চাইবে না। একটা পাঞ্জাবি দিতে কত টাকাই-বা লাগে, আমি তো নিজের টাকা দিয়েই দিতাম, আমি তো সামান্য একটা পাঞ্জাবি কেনার জন্য আব্বুর কাছে হাত পাততাম না। আমি এমন কোনও জিনিস তোমাকে দিতামও না, যেটা তুমি পরতে পারবে না, অবশ্যই স্ট্যান্ডার্ড কিছুই দিতাম। অন্তত আমাকে দেওয়ার সেই সুযোগটা তো দিয়ে দেখতে পারতে যে আমি কী করি!
তা-ও আমাকে তুমি করতে দাওনি। আমি জানি, তুমি পরে পরে করছ, কিন্তু এই ‘পরে’টা আর কখনও আসবে না। আমি সব দিক থেকেই তোমার বোঝা হয়ে গেছি। তা না হলে গতকাল তুমি এভাবে করে বলতে পারতে না যে আমি যেন ভালোবাসা বাদ দিয়ে বরং কুত্তা পালি! আমার ভালোবাসার মানুষের কাছে আমি কিছু জানতে চাইলে সেটা জেরা করা, কৈফিয়ত চাওয়া হয়ে যায়, অথচ ভালোবাসার মানুষের তো শুনি কত কিছুই জানার অধিকার থাকে! আমি কেবল নামেই তোমার ভালোবাসার, কিন্তু আর কোনও দিক থেকেই আমি তোমার কাছে যেতে পারলাম না কখনও। সবসময় তোমার আমার মাঝখানে তুমি খুব সূক্ষ্ম করে একটা দেয়াল তৈরি করে রাখো, সেটা আমি বুঝি, কিন্তু তুমি বুঝতে দাও না, তুমি ভাবো, আমি বুঝব না। আর কক্ষনো আমি তোমার কাছে কোনও অধিকার, কোনও আবদার, কোনও ইচ্ছে, কিছুই করতে যাব না।
আমি তো চেষ্টা করছি তোমার মনের মতো হতে, কিন্তু আমি ব্যর্থ হচ্ছি বার বারই। আমি কখনও তোমার হতে পারিইনি আসলে। তোমার হলে তুমি এভাবে সব কিছু থেকেই আমাকে বঞ্চিত করতে না। তুমি যত যা-ই বলো, অন্য সবার জায়গা, তোমার পরিবারের অন্য সবাই তোমার কাছে ঠিকই আছে, তারা তোমার সম্পূর্ণ মনোযোগ আর সাপোর্ট পায়। তুমি শুধু বলোই যে তুমি তাদেরকে কোনও কৈফিয়ত দাও না, আরও কত কিছুই তো বলো, কিন্তু আমি তো জানি, তারা তোমার কাছে কৈফিয়ত চাইবে, সেই সুযোগ তুমি তাদেরকে কক্ষনো দাও না।
তারা তোমার কাছে সব কিছু, তোমার মনোযোগ, তোমার যত্ন, তোমার সঙ্গ, তোমার ভালোবাসা সব কিছুই চাইবার আগেই পেয়ে যায়, আর আমি তো সেখানে বাইরের কোনও একটা কিছু, হয়তো তোমার বন্ধুদেরকেও তুমি আমার চাইতে বেশি প্রায়োরিটি দাও। অন্য পাঁচটা অচেনা মানুষের সাথে আমার কোনও পার্থক্য তোমার কাছে নেই। এসব করে যদি তোমার মনে হয় যে, তুমিই ঠিক, তুমি যা করো, সেটাই ঠিক, তাহলে যা বোঝো করো, কারণ জোর তো আমি অনেকই করেছি এতদিন, কিন্তু এখন আর করব না। তুমি যা ভালো বোঝো, তুমি যা ঠিক মনে করো, তা-ই করো।
আমি খুব চেষ্টা করছি সম্পূর্ণ চুপ হয়ে যেতে, কিন্তু আমি আমার অভ্যাস থেকে সরে আসতে পারছি না। আমার রক্তের সাথে তুমি এমনভাবে মিশে গেছ যে তোমাকে আলাদা করার অর্থ, এখন নিজের একটা কিছু ক্ষতি করে ফেলা, কারণ এই ধকলটা হয়তো সহ্য করার ক্ষমতা এখন আমার আর নেই, এজন্যই ভয় পাই নিজেকে নিয়ে। কখনও ভাবিনি যে এমন একটা পরিস্থিতিতে এসে পড়ব, যখন নিজেই নিজের কাছে অচেনা হয়ে যাব, এতটা অনিয়ন্ত্রিত ছিলাম না আমি কোনও দিনই। নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করার সম্পূর্ণ ক্ষমতা আমার ছিল সবসময়।
এত কিছু ঘটে গেছে জীবনে, তবুও কখনও নিজেকে এতটা অসহায়, একা আর আলগা মনে হয়নি। আমার ভেতরটা সবসময় শক্ত ছিল, আমি যে-কোনও কিছুই খুব স্ট্রিক্টলি সামলে উঠেছি, পেরেছি তা নির্দ্বিধায়, কিন্তু হঠাৎ এতটা যে কোনও দিন অসহায় আর অবশ হয়ে পড়ব, তা কল্পনাতেও ছিল না। আর যা-ই হোক, কখনও মানসিকভাবে ভেঙে পড়িনি কোনও কিছুতেই, অথচ সেই আমিই এমন হয়ে গেলাম! কেমন যেন অবাক হয়ে যাই নিজেকে দেখে, আর খুব সস্তা মনে হয় আমারও নিজেকে। যে মানুষটাকে আজ পর্যন্ত কেউ কোনও কিছু দিয়েই বিন্দুমাত্র কখনও টলাতে পারেনি, সেই মানুষটাই ভালোবাসার মতো খুব সস্তা একটা জিনিসের কাছে হেরে যাবে, ভাবতেই অবাক লাগে। হ্যাঁ, ভালোবাসা খুব সস্তা কিছুই। নাহলে এটাকে কেউ হেলায় ফেলায় রেখে দিত না, খুব সস্তা বলেই এটা মূল্যহীন আর সেই সস্তার জালেই অবশেষে আমি আটকেই গেলাম! কী অদ্ভুত, তাই না! এত শক্ত একটা মানুষ ভালোবাসার মতো সস্তা কিছুর কাছে হেরে যেতে পারে, তা ভাবতেই নিজের প্রতি অসীম ধিক্কার জন্মায়!


ভাবনা: সাতশো বায়ান্ন
...............................................................
এক। সারা দিন তোমার সব কিছু ঠিক থাকে, কিন্তু আমার সঙ্গে কথা বলার সময় যখন হয়, তখনই তোমার রাজ্যের যত সমস্যার সৃষ্টি হয়। এক এক দিন তুমি এক এক রকমের সমস্যা নিয়ে হাজির হও। একদিন তোমার নিজের সমস্যা, একদিন বন্ধুর, একদিন বন্ধুর মায়ের। যে কয়দিন তুমি আমার সঙ্গে কথা বলেছ, সব রেকর্ড তো তোমার কাছে আছেই, একটা একটা করে প্রত্যেকটা শুনে দেখো, আমি কীভাবে কথা বলি, আর তুমি কীভাবে রিঅ্যাক্ট করো। আসলেই কয়দিন আমার সঙ্গে তুমি ভালো করে কথা বলেছ, এটা শুনলে তুমি নিজেই তোমার সব প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবে।
আচ্ছা, আমাকে একটা কথা বলো তো, এত জোর করে সম্পর্ক টিকিয়ে কেন রাখছ? তোমার এত আমার সাথে কথা বলার সমস্যা, এই সমস্যা সেই সমস্যা, তোমাকে কেউ জোর করেছে আমার সাথে থেকে যেতে? এভাবে জোর করে কেন আছ? প্রত্যেকটা সময় যখন আমার কোনও কারণে তোমার ফোনধরা মিস হয়ে যায়, তখনই তুমি অন্য ফোনে ব্যস্ত হয়ে যাও। এসব কী, বলো? গতকাল রাতেও তুমি আমাকে বলেছ যে তুমি তখনই নেবুলাইজ করবে, তার মিনিমাম এক ঘণ্টা পর আমি তোমাকে কল করেছি, দেখি, তুমি অন্য ফোনে বিজি! অথচ আমার সঙ্গে কথা বলার সময় এমন অবস্থা তোমার যে তুমি বুঝি তখনই শ্বাস আটকে মরে যাও! তুমি কার সাথে কথা বলেছ, বলো, সেটা একমাত্র তুমি আর স্রষ্টাই জানেন।
এর আগেও আমি অনেক অনেক দিন লক্ষ করেছি, তুমি আমার সাথে কথা বলো না, কিন্তু ঠিকই সারারাত জেগে থাকো। অথচ আমার সঙ্গে কথা বলার সময় এলে তোমার অভিনব সব অজুহাত সৃষ্টি হয়ে যায়! একটা সম্পর্ককে মিনিমাম একটা সময় দিতে পারো না, তাহলে সেই সম্পর্ক ঝুলিয়ে রাখার কী আছে! সোজাসুজি বলে দিতে পারো না যে তোমার পক্ষে আর সম্ভব হচ্ছে না? আমি একশো বার ঝামেলা করব, কারণ তোমার আমার প্রতি মনোযোগ নেই, তুমি সব এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করো সবসময়ই। আর আজকে তুমি আমাকে বলছ, তুমি কী আচরণ আমার সঙ্গে করো, সেটা তুমি জানোই না!
কাউকে এরকম করে না ধরে থাকা যায়, না ছেড়ে যাওয়া যায়। এটা কোন চোরাবালির মধ্যে যে আটকে গেলাম, আল্লাহই ভালো জানেন! আমি মুক্তি চাই। প্রতিদিনের এই অশান্তি আমার আর ভালো লাগে না। আমি সত্যিই এর থেকে মুক্তি চাই। আমার মুক্ত আকাশটা চাই আমি। এই বদ্ধ ঘরে আমার দম আটকে আসে, আমি হুট করে দুম করে শেষ হয়ে যাব! আমি আর কিচ্ছু চাই না, আমি এর থেকে মুক্তি চাই। তুমি শুধু আমার মুক্তির পথটা দেখাও। যখন হৃদয় থেকে কোনও ভুল হয়ে যায়, তখন হৃদয়ই গোনে সেই ভুলের মাশুল।
আমাকে সত্যিই একটা পথ দেখাও। নাহলে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখাই চ্যালেঞ্জ হয়ে যাবে। আমার পাগল পাগল লাগে সবসময় নিজেকে!
দুই। একটার পর একটা মিথ্যাকথা তুমি আমাকে বলেই যাচ্ছ, আর তুমি খুব ভালো করেই জানো, তুমি আমাকে কী কী মিথ্যাকথা এতদিন ধরে বলে আসছ। তুমি কী ভেবেছ? আমি কান্না করব তোমার জন্য? আমি কষ্ট পাব? আমি তোমাকে ভুলে যেতে আর ভুলে থাকতে চেষ্টা করব, আর দিনের পর দিন কষ্ট দিতে থাকব নিজেকে?
হা হা হা! প্রয়োজনে নিজেকে জুতা মারব, তবুও আমি একজন প্রতারকের জন্য কাঁদব না। এ সব কিছুই আমার আগে থেকে জানা আছে। আমি জানি, কে আমার কান্না ডিজার্ভ করে, আর কে করে না। আমার পৃথিবীতে যদি এমন একটাও মানুষ না থাকে, যে আমার কান্না ডিজার্ভ করে, তাহলেও আমি খুব আনন্দের সাথেই বাকি জীবন কাটিয়ে দেবো, কোনও আফসোস ছাড়াই। আমার নিজের প্রতি কোনও ধিক্কার নেই, কোনও হতাশা নেই। আমার বাবা-মা আছেন বেঁচে এখনও, আর শুধু এই দুজন মানুষের জন্যই আমি বিনা আফসোসে, বিনা অভিযোগে বাকি জীবন একাই কাটিয়ে দিতে পারি। বরং থ্যাংকস তোমাকে এগুলো আগেই দেখিয়ে দেবার জন্য। দেরি হবার আগে দেখালে অনেক ক্ষতি থেকে বেঁচে যাওয়া যায়, আর আমি স্রষ্টাকে কোটি কোটি শোকরিয়া জানাই যে তিনি আমার চোখ খুলে দিয়েছেন।
থ্যাংক ইউ ফর এভরিথিং ইউ হ্যাভ ডান উইথ মি। নিজেকে খুব ভাগ্যবতী আর শক্তিশালী মনে হচ্ছে এখন। মনে হচ্ছে, জীবন আবারও নতুন কিছু শেখাল, দেখাল। আমি আমার স্রষ্টার কাছে কৃতজ্ঞ। শুধু এতটুকুই জেনে রেখো, তোমার জন্য, তোমাকে ভেবে, তোমার ভালোবাসার অভাবে যে কষ্ট, যে চাহিদা আর আকাঙ্ক্ষা এতদিন মনে ছিল, যে শ্রদ্ধার, পরম ভালোবাসার আর সম্মানের একটা জায়গা ছিল, সেটা খুব পরিষ্কার হয়ে ধুয়ে গেল। আর এজন্য তোমাকে ধন্যবাদ, কারণ তুমি না চাইলেও তোমার কাজ, তোমার আচরণ সেটা প্রমাণ করে দিয়েছে যে, তোমার মতো মানুষের জন্য কষ্ট, আবেগ, ভালোবাসা এগুলো জাস্ট একেকটা খেলনা।
নিজের ভালোবাসা, আবেগ এই জীবনের শেষমুহূর্তেও আমি কোনও ভুল মানুষের পেছনে নষ্ট হয়ে ব্যয় হতে আর দেবো না। তুমি আমার সাথে আমার ভালোবাসা, আমার আবেগ নিয়ে যেটুকুই মজা করেছ, তার জন্য আমি অনেক অনেক কৃতজ্ঞ, কেননা তা না হলে আমি তোমাকে জীবনভর ফাঁপা একটা অনুভূতির জায়গা থেকে রেখে রেখে নিজেকে অপমানিত আর ছোটো করেই যেতাম। যা যা করলে আমার সাথে, তার জন্য অনেক অনেক থ্যাংকস।
ভালোবাসা!! ফালতু যত্তসব!!
ভালোবাসা যে এত্ত কঠিন একটা কাজ, আমি আগে জানলে প্রতিদিন একশো বার কান ধরে নিয়ম করে উঠবস করতাম, তবুও কাউকে ভালোবাসতাম না। ভালোবাসা কোনও মানুষের কাজ না আসলে। ওটা জিন-ভূতের কাজ। আল্লাহ মাফ করুক আমাকে। মাফ চাই। ভুল হয়ে গেছে। ভুল করে ভালোবেসে ফেলেছি, এখন মাফ চাই। এক আল্লাহমাবুদ ভালো জানেন, কোন ভুলে একদিন ভালোবেসে ফেলেছি! ভালোবাসার চাইতে বড়ো অপরাধ আর দ্বিতীয়টি নেই।


ভাবনা: সাতশো তিপান্ন
...............................................................
এক। অনেক দূরে এমন একটা জায়গা হতো,
যেখানে খুব ছোট্ট আর সাদামাটা একটা জীবন পেতাম,
ভিড়ের থেকে সরে,
কোলাহল থেকে দূরে,
এমন কোনও জায়গা একটা আমার হতো,
যেখানে নিজেকে নিয়ে নিজের সাথে
বাকি মুহূর্তগুলো কাটিয়ে দিতে দিব্যিই পারতাম!
একটা নির্ঝঞ্ঝাট জীবন!
জীবনের কাছে এমন একটা সামান্য জীবনই তো চেয়েছিলাম আমি,
বাড়তি আর কিছুই তো না!
তবে কেন যে এমন এক রাবণের চিতায় এসে পড়লাম, হায়, কে জানে!
দুই। আমি অতটাও বাচ্চা মেয়ে নই। তুমি সবসময় আমাকে ক্ষুধার্ত, তৃষ্ণার্ত করে, আধপেটা খাইয়ে রাখো, এজন্যই আমি সারাক্ষণই তোমার কাছে বাচ্চাদের মত খাব খাব করি। আর আমার খাবার হচ্ছে তোমার ভালোবাসা, আদর, তোমার ফোনে কথাবলা, তোমার মেসেজ পাওয়া এইসবই।
কোনও একদিন আমাকে আমার খাবারগুলো ঠিকমতো দিয়ে তারপর দেখো, আমি আর এমন বাচ্চাদের মতো করি কি না। একটা বাচ্চা যেমন আদর, ভালোবাসা সবই বোঝে, আমিও সব কিছুই বুঝি। যখন আমার সেটায় কোনও অপূর্ণতা থাকে, তখনই এমন করে তোমাকে জ্বালাতে থাকি। আমার ভালোবাসা থেকে আমাকে বঞ্চিত করা রীতিমতো একটা ক্রাইম। যখন তুমি আমাকে তোমার ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত করো, তখন মাথায় রেখো যে, তুমি আমার সঙ্গে অপরাধ করছ। আমার ভালোবাসার মানুষের কাছে পরিপূর্ণ ভালোবাসা পাবার অধিকার আমার অবশ্যই আছে। এখন যদি তুমি সেটা আমাকে না দাও, তাহলে তা তোমার ব্যাপার।
তিন। আচ্ছা, প্রতিটি মানুষের মাঝেই কি সাপ লুকিয়ে থাকে? যখন আমি নিজের দিকে তাকাই, তখন তো তেমন মনে হয় না, কিন্তু চারপাশে যখন তাকাই, তখন কেন এমন মনে হয়? এটা কি শুধুই মনের ভুল? না কি এমনই হয়? আমার প্রায়ই মনে হয়, আমার চারপাশের সবাই এভাবেই ঘাপটি মেরে আছে, সুযোগ পেলেই ফণা তুলবে, শুধু যুতসই একটা সুযোগ তারা পাচ্ছে না!
চার। সৌভিক, আপনাকে খুব মনে পড়ে, জানেন? আপনার চুল, ঠোঁট, হাসি এগুলো সময়ের সাথে সাথে পালটে যাবে কি না জানি না। যাক বা না যাক, আপনাকেই ভালোবাসি, আপনাকেই ভালোবাসব। আমার ইচ্ছে করে, দুনিয়ার সব সুখ আপনার পায়ে এনে ফেলে দিই। ইচ্ছে করে, আমার বুকে আপনাকে লালন করি, আবার আপনারই বুকে লেপটে থাকি। বউ সেজে আয়নার সামনে দাঁড়াতে কী যে ভালো লাগে! যা আমার না, তা আমার ভাবছি বলেই হয়তো এত ভালো লাগছে! দূরের জিনিসকে কাছের ভেবেই তো মানুষ বেঁচে থাকে, তাই না, বলুন?
ইস্‌, আপনার আর আমার খুব সুন্দর করে বিয়ে হবার কথা ছিল, তাই না? রেজিস্ট্রি ম্যারেজ। প্রথমে ফ্যামিলিতে না জানিয়ে, তারপর দু- বছর পর সব্বাইকে জানিয়ে সুন্দর করে বিয়ে হবার কথা ছিল। আমাদের এনগেজমেন্ট, মানে আশীর্বাদও বলতে পারেন, খুব সুন্দর করে হতো। তেমন কেউ না, শুধু পরিবারের লোকজন আর কাছের কিছু বন্ধুবান্ধব নিয়েই কাজটা সেরে ফেলার বুদ্ধি করেছিলাম দুজনে মিলে।
অনেকে অনেক কিছুই হয়তো বলত, ভাবত। আমরা দুজন দু-ধর্মের যে! তাতে কী? আমি ঠিকই সবাইকে রাজি করিয়ে ফেলতাম। আপনার আমার বাসার কেউ রাজি হতোই না অবশ্য, সেটা আমি ভালো করেই জানি। তবুও কেমন করে যেন বিয়েটা হয়েই যেত। বিয়ের দিনও আমি ঠিকই আপনার কাছে বকা খেতাম এটা সেটা নিয়ে। তবুও এই সারাদিন ঝাড়ির উপর রাখা লোকটিকেই বিয়ে করে ফেলতাম। আশীর্বাদে আমার পরানো আংটি থাকত আপনার হাতে। উফফ্, কী যে সুন্দর লাগত!
আমি বিয়ের দিনও দুষ্টুমি করতাম, হাসতাম, নাচতাম। আপনি বলতেন, 'তুই আর কবে বড়ো হবি রে, রাই?' আমিও বলতাম, 'কোনও দিনই না। হিহিহি।' বিয়ের দিনও আপনাকে ইশারায় ইঙ্গিতে বার বার বলতাম, 'আমি মা হবো।' বার বার বলতাম, কানে কানে বলতাম। সবাই জিজ্ঞেস করত, 'ও কী বলে?' আপনি লজ্জায় লাল হয়ে যেতেন। আমি হাসতাম সবচেয়ে সুখের হাসিটা। আর আপনি সেদিন আরও একবার আমার হাসির প্রেমে পড়ে যেতেন।
আমি বিদায়ের সময় একটুও কাঁদতাম না, একফোঁটাও না। আমি তো অপরিচিত কারও সাথে জেলখানায় ঢুকে যাচ্ছি না যে কাঁদব! আমি তো আমার নিজের মানুষটার কাছেই যাচ্ছি। আমি কেন কাঁদব? আপনার বাড়ি যেতাম না আমরা, কারণ আমাদের বিয়ে তো আপনার আর আমার বাড়ির বেশিরভাগ মানুষ মেনেই নিত না। আমরা দু-রুমের একটা বাসায় উঠতাম। আপনার আর আমার দুজনের অফিসই কাছাকাছি হবে, এমন কোনও একটা বাসা। আমি বাসায় এসে খুব করে কাঁদতাম। সুখের কান্না; আমার সুখ, সংসারের সুখ। আমার মনে হয় কী, আমরা কোনও জন্মে স্বামী-স্ত্রী ছিলাম নিশ্চয়ই। শুধু প্রেমিকের জন্য তো এমন লাগার কথা না কারও! আর শুধু প্রেমিকাকে এতটা ভালোবাসে কোন গাধা?
আমি কখনওই আপনাকে ছাড়া ঘুমোতাম না। আমাদের অনেক খুনসুটি হতো। এমনকি আপনি প্রায়ই কথাবলা বন্ধ রাখতেন আমার সাথে রাগ করে। তবুও আমি আপনাকে ছাড়া একা থাকতাম না, কখনওই রাতে একা ঘুমোতাম না। আপনিও না। আমরা অভ্যাস হয়ে যেতাম, একজন আরেকজনের। ঝগড়া করে রাতে ঘুমোনোর পরও আপনি ডান হাতটা দিয়ে রাখতেন আমার শরীরের উপরে যেন আমি খাট থেকে পড়ে না যাই ঘুমের ঘোরে। হিহিহি। আমরা কেউ কিন্তু কথা বলতাম না ঝগড়ার সময়ে। তবুও আমি অপেক্ষা করতাম, রাতে আপনার সাথে বসে খাবার জন্য। সারা দিন তো দুজনেই ব্যস্ত থাকতাম অফিস নিয়ে। আপনি রেগে থাকলেও আমি একা একাই কথা বলতাম, আরও রাগিয়ে দিতাম আপনাকে!
রাতে খুব ঠান্ডা আবহাওয়া হতো। আমি আপনার পিঠ ঘেঁষে শুয়ে থাকতাম। ইঙ্গিত দিতাম, আমার ওটা চাই। আপনিও সাড়া দিতেন। আমার সব অভিমান আর আপনার ইগোতে আমরা দুজনে মিলেই জল ঢেলে দিতাম। অনেক কথা হতো ওই সময়। আর আমি বলতাম, 'আমি কবে মা হবো?' আপনি আবার হাসতেন। বলতেন, 'রাইইইইই, তুই কি এটা ছাড়া আর কিছুই ভাবতে পারিস না?' আমি সাথে সাথে আপনার ঠোঁট কামড়ে দিতাম। আমার ঠোঁটজোড়া আপনার ঠোঁটের ভেতর হারিয়ে যেত। আপনি অনেক শক্ত করে ধরে রাখতেন আমায়, আমি আরও শক্ত করে আপনার পিঠ খামচে ধরতাম।
আমি একদম হারিয়ে যেতাম আপনার বুকের ভেতরে। আমি ঝিনুকের মতো ডুবে যেতাম সমুদ্রে। আমার নিজের, আমার একার, আমার একমাত্র সমুদ্রে আমি টুপ্‌ করে ডুবে যেতাম!


ভাবনা: সাতশো চুয়ান্ন
...............................................................
এক। প্রিয় মা,
পৃথিবী নামের এই গ্রহে তুমি আসোনি, ভালোই করেছ।
এখানে সন্ধ্যে পিছলে রাত নামলেই প্রতিটি মানুষ একেকটা নিঃসঙ্গ দ্বীপের মতো হয়ে যায়। যত বেশি চাকচিক্য আর রং দেখা যায় শহরের দেয়ালগুলোতে, আদতে তারও বেশি ঘোরঘন রংহীন সেসব দেয়ালের প্রতিটি ইটপাথর পর্যন্ত! প্রতি ধূলিকণাতেই মিশে আছে কষ্ট, কষ্ট আর কষ্ট।
এখানে হাসির ঢাল দিয়ে মানুষ বিষণ্ণতা ঢাকে, মিথ্যের আলপনা দিয়ে স্বপ্নের ডানা আঁকে। সত্যি বলছি, এখানে প্রতিটি মানুষই এক অদ্ভুত অসুখে আক্রান্ত। এ অসুখ বড্ড দুরারোগ্য।
তুমি আসোনি, ভালোই করেছ। তবু মাঝে মাঝে ভাবি, তুমি এলে তোমার ছোট্ট ঘরটা ভরে দিতাম পুতুলে পুতুলে। তোমার যত পছন্দের খাবার, সেসবে ভরে রাখতাম সারাঘর।
জানো, তোমার মা যখন খুব ছোটো ছিল, বড়ো অভাবের সংসার ছিল ওদের। সে এক বেলায় খেয়েছে তো আরেক বেলায় তার খাবার জোটেনি। মাটির উপর শীতলপাটির বিছানায় শুয়ে না খেয়ে কেটেছে কত রাত, কত দিন, সে তুমি ভাবতেও পারবে না। তোমার মা বুঝতে পারত, তোমার মায়ের আম্মুর বড়ো যন্ত্রণা হতো সন্তানদের খাওয়াতে না পারার কারণে। সেই দুঃখিনী মা আঁচলে মুখ ঢেকে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদেছে কত নির্ঘুম রাত, সে খবর কেউ জানতে পারেনি আজও।
মা গো, ওসব অভাব-টভাব তোমার ঘরে থাকতে দিতামই না!
তোমাকে একটু একটু করে বড়ো হতে দেখতাম আমার দু-চোখের সামনে। তোমার দুষ্টুমিতে ভরে যেত আমার ঘরের আনাচ কানাচ, প্রতিটি ইঞ্চি। প্রতি সকালে তোমার লম্বাচুলে বিনি করে দিতাম, তুমি নাদুসনুদুস ছোট্ট শরীরে হেলেদুলে নেচে নেচে স্কুলে যেতে আর আমি মুগ্ধ নয়নে তোমার দিকে চেয়ে থাকতাম।
আমি তোমায় শেখাতাম, ভালোবাসা মানেই পৃথিবী, মানবতা মানেই জীবন, আর মৃত্যু মানেই শিল্প। তোমায় আরও শেখাতাম, নির্লোভ হতে পারা মানেই গৌরব, নিঃস্বার্থ হতে পারা মানেই শক্তি, আর দয়ালু হতে পারা মানেই ঐশ্বর্যে ডুবে থাকা।
আফসোস, হলো না ওসব কিছুই!
তবু আজও, তোমাকে ঘিরেই আমার দিন কাটে। তোমাকে ভেবেই একধরনের সুখ চোখে মুখে মেখে আমি বেঁচে আছি। আমার সমস্ত কল্পনা, আমার সমস্ত শান্তি, আমার সমস্ত আয়ু…তোমাকে মনে মগজে হৃদয়ে আত্মায় রেখেই আবর্তিত হয়।
তোমাকে দেখি আর ভাবি, মৃত্যুর মানেই অস্তিত্বহীনতা নয়, হারিয়ে যাবার মানেই বিস্মৃতি নয়, ব্যর্থতার মানেই শেষকথা নয়। তুমি ভালো থাকবে, তোমাকে ভালো রাখব।
দুই। এই দুঃখী আত্মায় আপনি আজও ঘোরাঘুরির মতো করে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। আমাদের বাড়িতে, বসন্তে…আমাকে ভুলে-যাওয়া লোকটিকে কক্ষনো কাছে ডাকবেন না! আমি আপনাকে আমার সবচেয়ে সুখের পরিসরে নিজের মধ্যেই পূর্ণ করেছি। তবে, সবচেয়ে দুঃখজনক যা, তা হচ্ছে, ওই কাজটি আমি করেছি ভালোবাসা ব্যতীত!
ওদের হিংসার ক্রমাগত চেষ্টাকে পরোয়া না করেই কীভাবে আপনি ওদের সাথে থাকেন? আপনার সম্পর্কে, আপনি একটি ভাসমান দ্বীপ, এইটুকুই শুধু বলা যায়। সেই দ্বীপটা আকাশজুড়ে ওড়ে, জলের গা বেয়ে ভাসে না। আপনি এক আত্মা বটে, প্রেমিক নন!
আপনি কীভাবে একজন এমন সরল মহিলার সাথে থাকেন, দেবতা কিংবা শয়তানের সঙ্গ ছাড়াই? উৎসাহিত হয়ে হলেন যখন সিংহাসনের সম্রাট, তখনই ওটি থেকে অবতরণ আপনাকে ব্যথিত করেনি, সত্যিই? আজও, অমর অশ্লীলতার দায়িত্ব নিয়েও, আপনি কীভাবে সামলান মানসিক বিত্তহীনতায় দরিদ্র মানুষ?
আস্থা এবং বাধা---বাঁচার জন্য এই যথেষ্ট! আমি নিজের জন্য একটি বাড়ি ভাড়া নেব। আপনি কীভাবে প্রেমের সাথে বাঁচেন, আমি ভাবি প্রায়ই। প্রেমকে কতটা চেনেন আপনি? আপনি কীভাবে একটি অপরিচিতের সঙ্গে বাস করেন?
তিন। গতকাল, নরম কম্বলের নিচে শুয়ে ছিলাম যখন, তখন আমার চোখে একটি স্বপ্নের জন্ম হলো। প্রতিটি স্বপ্নেই কেউ জেতে, কেউ হেরে যায়। আমার স্বপ্নে কে জিতেছিল? কে-ইবা ছিল পরাজিত?
আমি আবার আমার মন পরিবর্তন করেছি, নিজে জিততে চেয়ে চেয়ে আজ আমি ক্লান্ত। এজন্যই ‘জয়’ শব্দটিকে দূরে সরিয়ে রেখে, যে স্বপ্ন দেখি ইদানীং, সেখানে মূলত প্রেম থাকে।
সে স্বপ্নে, শিকারি কে ছিল? শিকারই-বা কে? প্রেম এলে পরে সবই ধূসর হয়ে যায়! ইচ্ছে এবং শক্তির দ্বন্দ্বের মধ্যে কে কার হাতে পরাস্ত ছিল, হিসেব করিনি আজও।
কে কী চায় কিংবা কে কীসের জন্য দুঃখবোধ করে, তা মূলত প্রেমে পড়া বা না পড়ার উপর নির্ভর করে। ভালো না বেসেও কাঁদে যারা, তাদের যা-কিছু প্রাপ্তি, তার কিছুই প্রেম নয়, প্রেমের মতো কিছুও নয়।
সন্ধে হলো, আর সেই থেকে কেবল এই ছবিটি আমার চোখে লেপটে আছে---কেবল আমরা---তুমি এবং আমি, দুজন মিলে নিয়ে এসেছি একটি শোকের কবিতা। আরাধনার নেশা আমাদের আরও দৃঢ়ভাবে বেঁধেছে, অন্যদের চাইতেও বেশি।
এমন অনুপ্রেরণাটি পেরিয়ে গেলে কেউ কেউ স্নেহের সাথে যোগাযোগ করে। কেউবা আর প্রার্থনা করতেই পারে না, তবে ভালোবাসতে চাইলে ওরা সব কিছুর পরেও নিন্দার স্রোতে ছুটে যায় না, আত্মার জাগরণে নিজেকে অভ্যস্ত করে নেয়।
চার। আপনি যা খাইস্টামি করেন, তাতে আমার আপনাকে দশ দিন ভুলে থাকা উচিত কমপক্ষে। কিন্তু আমি এক ঘণ্টাই পারি না ঠিকমতো। একশো বছর মনে হয়। আর এই অ্যাডভানটেজটাই আপনি নেন। অতিরিক্ত পরিমাণে পাজি এবং ফাজিল এবং বজ্জাত এবং শয়তান একটা লোক এবং খাইস্টা একটা লোক আপনি। আপনার নামে আমি কেইস করব।
আমি সত্যিই পালটাতে চাই নিজেকে। এই শুধু আপনি'তে আটকে থাকাটা আমার সব শেষ করে দিচ্ছে। আমার ভালোথাকা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার, ভালোলাগা...সব।
আমার জন্য আপনি শুধুই একজন ব্যস্ত মানুষ, আর আপনার জন্য আমি শুধুই আপনার বিরক্তির কারণ। কথায় কথায় আপনার অনভ্যেস অপছন্দ শুনতে শুনতে আমি আমার পছন্দ আর অভ্যেসগুলি ভুলে যাচ্ছি। আমার যাতে অভ্যেস, তাতে আপনার অনভ্যেস।
শুনুন, ব্যস্ততা সবার থাকে। কেউ সেটা দেখায়, কেউ সেটা দেখায় না। কারণ ব্যস্ততা সবাইকে বোঝানোর মতো বস্তু নয়। এটাই আমার সাইকোলজি। আমি খুব প্রবলেমে থাকলেও, আপনি ফোন বার বার কেন, হাজার বার করলেও আমি বিরক্ত তো হই-ই না, বরং অনেক খুশি হই। আপনার সাথে কথা না বলে বেঁচে থাকব, এটা আমি ভাবতেই পারি না।
কখনও আপনার ফোনটা ধরতে না পারলে আমার খারাপ লাগে যে আমি আপনার ফোনটা তুলতে পারলাম না। আপনি মনে করেন, দিনে কতক্ষণ কথা বলা যায়, কত বার বলা যায়। আর আমি মনে করি, দিনে সবসময় কেন আপনার ভয়েসটা আমি শুনতে পারি না, আপনাকে কেন পাই না সারাক্ষণ!
এত মিস করি আপনাকে! আপনি ছাড়া থাকতে পারার জন্য এক মিনিটকেও এক ঘণ্টা মনে হয়। শুধু আমার প্রতি আপনার আর আপনার প্রতি আমার কনসার্ন, প্রায়োরিটি, অ্যাফেকশনের ব্যাপারে এই পার্থক্যটার জন্যই এত ঝামেলা হয়। আপনার কাছে আমি কিছুই ম্যাটার করি না, কিন্তু আপনি ছাড়া আমি আর কিছুই ভাবতে পারি না।


ভাবনা: সাতশো পঞ্চান্ন
...............................................................
এক। সারা দিন সারারাত আমি একটা মানুষকে নিয়েই পড়ে থাকি। অথচ তার আমাকে ভুলেও মনে পড়ে না! এ কেমন জীবন!
আচ্ছা বাবা, আমি সরি!
হায় রে, পুরুষজন্ম! পুরুষরা সরি বলার আগে বা পরে ওদের দোষটা কী, সেটাই কখনও জানতে পারে না। একেই বলে কপাল!!
দুই। ভাবলাম, ফোনটা অন থাকলে আপনাকে কল করতে মন চাইবে, অনবরত টেক্সট করব। খেলেন কি না, স্নান করলেন কি না, জিজ্ঞেস করতে থাকি। বিকেলে রাতে কমপক্ষে সাত-আট বার শুধু খোঁজ নিতেই করি ফোন। তার পরে তো বাড়তি আরও যন্ত্রণা আছেই।
কী দরকার! যে মানুষটা আমাকে এত সহ্য করে, আমি যা করি, সবই মেনে নেয়, তার জন্য এটুকু আমি নিজেকে পালটাতেই পারি। আর ফোন অফ রাখি, কেননা আপনি না হলে আমার কথা ভেবে ফোন করবেন, আমার খোঁজ নেবেন। সেই তো কথা বলতেই হবে আপনাকে! টেক্সট গেলে তো রিপ্লাইও করতে হবে, আপনার অসুবিধে হবে। আপনি এটা পছন্দ করেন না, আপনার কাজে অসুবিধে হয়। আপনার অভ্যেস নেই এত পেইন নেওয়ার। তাহলে এত প্যারা আমি কেন দেবো আপনাকে?
জোর করে আপনাকে দিয়ে আমি কখনওই কিছু করাতে চাই না। আপনার শান্তিতে থাকাটাই আমি চাই।
থাক থাক! আমার ভালোবাসা আপনার সহ্য হয় না, তাই এসব বলে লাভ নেই। তার থেকে এ-ই ভালো। কাজ নিয়ে থাকুন। ইচ্ছে হলে আমাকে দু-কলম লিখবেন, কেমন?
আপনি একটি আপডেটেড ভার্সনের খাইস্টা। আপনি চরমতম খাইস্টামি করেন অরণি নামের একটি বাচ্চা, কিউট এবং অত্যন্ত ভালো একটি মেয়ের সাথে অকারণেই। মেয়েটি আপনার জন্য অকারণে আপনার খাইস্টামির কারণে কাঁদে। কিন্তু তা-ও আপনি এমন কাজই করে থাকেন।
মেয়েটির কোনও কিছুতেই আপনার কিছুই যায় না এসে। কিন্তু তা-ও মেয়েটি আপনাকে খুব ভালোবাসে। আপনিও তাকে একসময় খুব ভালোবাসতেন, এখন আর বাসেন না। ব্রোকেন হার্ট, স্যাড লাইফ!
তিন। আমি হয়তো আপনাকে ছাড়া পাগল হয়ে যাব! আমি কীভাবে বাঁচব? কী করব? সবটা শেষ হয়ে গেল! বলেছিলাম না একদিন, আমার কপালে সুখ সয় না! আমাকে অনেক কিছুই ভাবতে হয়। ভাবতে হয়, কেননা বাস্তবতা কঠিন, খুব কঠিন।
আপনি আমাকে বাধা দেবেন না। ওরকম করে বললে আমি কোনও দিনই পারব না আপনাকে ছেড়ে যেতে। আমি যে খুব বেশিই পাগল আপনার জন্য। আমাকে খুব খারাপ কিছু বলে বিদায় দিয়ে দিন।
আপনার প্রতি আমার এতটাই মায়া জন্মে গেছে যে আমি আর কারও সাথে কথা বলব, এটা ভাবতেই আমি পারি না কখনও! আমি চলে যাচ্ছি। আপনাকে আর কিছু ভাবতে হবে না আমার কথা।
আপনাকে সুস্থ থাকতে হবে। নিজের খেয়াল রাখবেন। যত্ন নেবেন, প্লিজ। আপনাকে দেখে শুনে রাখতে পারব না, এর চাইতে কষ্টের আর কিছু নেই! আমাকে রাখতে পারবেন না আপনি, আপনার সেই সুযোগ নেই গো! আপনি চান বা আমি চাই, কিছু করা যাবে না এখানে।
আপনি পারবেন না আমায় রাখতে। কোনও-না-কোনও দিন আমায় আপনাকে বলতেই হবে যেতে। আরও কষ্ট বাড়বে। কষ্ট হবে দুজনেরই। কষ্টই একমাত্র পরিণতি হবে আমাদের। এখনই ছেড়ে থাকতে পারা যায় না, এরপর তো মরে যেতে হবে রীতিমতো! দিন দিন আরও টান বাড়বে, আরও মায়া জন্মাবে।
আপনি না পারবেন আমাকে আপনার কাছে রাখতে, না পারবেন আমাকে যেতে বলতে। আরও কঠিন হয়ে যাবে লাইফটা। ভয়ংকর কষ্ট হবে সেটা। লক্ষ্মীটি, একটু বুঝুন! আমাকে অনেক কষ্ট দিয়ে, খারাপ ব্যবহার করে তাড়িয়ে দিন দুচ্ছাই করে।
প্লিজ, মনে করে নিন, আমি মারা গিয়েছি। মরে যদি যেতাম আমি, নিতেন না নিজের খেয়াল? আমি না থাকলেও আপনি নিজের খেয়াল নেবেন। আপনি কাজ করে আমার কথা ভেবে ঘুমিয়ে পড়বেন। ওষুধ খাবেন। খাবার খাবেন। সবটা ঠিকঠাক করবেন। অফিস করবেন, বাসায় ফিরে এসে বই পড়বেন।
আর আপনি যখন সবার সাথে অনেক বেশি ভালো থাকবেন, তখন আমায় জানাতে হবে না, শুধু অনেক অনেক ভালো থাকবেন আপনি। আমাকে এতটা অপারগ করে দেবেন না, লক্ষ্মীটি আমার! আমার মতো তুচ্ছ একটি মেয়েকে এভাবে মান দিলে আমি কী করে যাব? আমাকে আপনি তাড়িয়ে দিন গো! তাড়িয়ে দিন, লক্ষ্মীটি!
আপনাকে কষ্ট দিতে পারব না। আপনাকে ছাড়া থাকতেও পারব না। আর সারাজীবন আপনি আমাকে রাখতেও পারবেন না, জানি। সামনে খুব খুব কষ্ট হবে। হবেই! সেটা আমি আদৌ সহ্য করতে পারবো কি না জানি না।
আমি কিন্তু ঠিকই জেগে থাকব, আপনি নিজদায়িত্বে লক্ষ্মী ছেলের মতো ঘুমিয়ে পড়বেন। আমি ঠিকই চিন্তা করব। হয়তো ফোন করব না, কিন্তু খেয়াল ঠিকই রাখব। আর প্লিজ, লক্ষ্মীটি, নিজের খেয়াল নেবেন। নিয়ম করে ওষুধ খাবেন, টেনশন করবেন না কোনও কিছু নিয়ে। সুস্থ থাকবেন। পড়লে তো আপনি ভালো থাকেন, পড়বেন।
আমি তো একদিনও আপনাকে ছেড়ে থাকিনি কখনও। খুব মিস করব আপনাকে। বেঁচে থাকতেই কষ্ট হবে! আপনি নিজের খেয়াল রাখবেন, কথা দিন?


ভাবনা: সাতশো ছাপান্ন
...............................................................
এক। তুমি আমাকে ছেড়ে চলে যাচ্ছ, আমার মাথা সত্যিই ঠিক নেই! আমার মোবাইলের পাসওয়ার্ডটা পর্যন্ত ভুলে গিয়েছি! বাধ্য হয়ে ফোনটা ফ্লাশ করতে হয়েছে। সবে পাসওয়ার্ড আর ফোনের কনটেন্ট গিয়েছে। এরপর সব যাবে।
আর সম্ভব হবে না আমার পক্ষে, সব কিছু আবার শুরু থেকে শুরু করতে হবে। ভেঙেচুরে সব শেষ। তুমি জানতে পারোইনি কোনও দিন, তুমি যে আমার কাছে কী!
আমার কী হারিয়ে গেল, সেটা তোমার কল্পনারও বাইরে। আমি না পারব তোমার কাছে ফিরতে, না পারব তোমাকে ছাড়া বাঁচতে। আমি কী করব, তুমিই বলে দাও। কী করব আমি?
একমাত্র মরে যেতে পারলেই আমি মুক্তি পেতাম। কিন্তু আমি সেটাও পারছি না। আমি মরে গেলে আমার বাবা-মা এখন কাঁদতে কাঁদতে বদ্ধউন্মাদ হয়ে যাবে, কোনও ভুল নেই।
আমি না থাকলেও তোমার সবটাই ঠিকমতো চলবে। আমি চাইও না তুমি আমার জন্য কষ্ট পাও। নিজের মানুষটাকে কষ্ট দিয়ে দূরে যাওয়া সব থেকে কঠিন। তাই আমি থাকি বা না থাকি, তাতে তোমার সব যেন ঠিকঠাকই চলে।
কিন্তু আমি কী করব এখন? আমার যে একেবারেই চলে না তোমাকে ছাড়া! সত্যিই একেবারে চলে না। জানি, এ সবই শুধু আমার ব্যাপার। আমি প্রার্থনা করি, কোনও দিনই যেন তোমার কাছে এটা 'আমার' থেকে 'আমাদের' ব্যাপার না হয়। তাহলে সে কষ্ট সহ্য করতে পারবে না তুমি, যেমন আমি পারছি না।
দুই। তুমি আসলে চাও যে আমি পাগল হয়ে, সব কিছু বাদ দিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরি। এত এত মেসেজ করি, কোনওটারই রিপ্লাই না করে চুপ করে বসে থাকো, আবার ওদিকে স্ট্যাটাস দিয়ে বড়ো বড়ো কথাও বলো। যখন রাগ মাথায় উঠে যায়, তখন বলো, সব দোষ নাকি আমার! আমার আসলে ফেইসবুক সারাজীবনের জন্য বাদ দিয়ে দিলেই ঠিক ছিল। বার বার তোমার কাছে আসি এসবই দেখার জন্য।
একটা মেসেজের রিপ্লাই করতে খুব বেশি হলে দুইসেকেন্ড সময় লাগে। আমাকে এতটুকু গুরুত্ব দেবার সময়টাও কি তোমার নেই? এত ব্যস্ত হয়ে গেছ তুমি! আমি তো তোমার কেউই না, তাহলে যখন জিজ্ঞেস করলাম, তখন বলে দিতে অসুবিধা কী ছিল? আমার কোনও প্রশ্নের উত্তরই তোমার কাছে নেই। এজন্যই কথা বলতে চাও না। থাকো যত খুশি ভালো, নিশ্চিন্ত থাকো একেবারে। আমি আসব না আর এখানে।
আমি জানি, আমি খুব বাচ্চামেয়ের মতো আচরণ করছি বেশ কিছু দিন ধরেই, কিন্তু তোমার কি একবারও কখনও মনে হয়নি যে তুমি সম্পূর্ণ আলাদা হয়ে গেছ, অচেনা হয়ে গেছ? তার অর্থ, তোমার যখন যা খুশি তুমি পারো করতে, কিন্তু আমি কিছু বললেই দোষ? আমাকে যদি সময় দেবেই না, আমাকে যদি ভালো না বাসো অথবা আমি যদি কেবল সময় কাটানোর জন্যই হয়ে থাকি, তাহলে সেটাও সরাসরি মুখে বলে দিতে দোষ কোথায়? বলে দাও যে এখানে ভালোবাসা বলে কিছু ছিল না, তুমি স্রেফ সময় কাটিয়েছ কিছু দিন, তাহলেই তো সব পরিষ্কার হয়ে যায়, আমিও আর ভুল ধারণা নিয়ে তোমার পিছু পিছু পাগলের মতো করতে থাকি না।
কিছুই বলো না, আবার চুপ করে করে সব কিছু গিলতে থাকো, এটা কেন করো? আমি এখনও ঠিক আছি বলেই তোমার সাথে এমন করি। যদি একবার সিদ্ধান্ত নিয়েই নিতাম যে তোমার কাছে আর আসব না, যত যা-ই হোক, তাহলে আর কোনও কিছু দিয়েই তুমি আমাকে আনতে পারতে না। তুমি একজন মানুষকে এভাবে চাপে রেখে যে কষ্টগুলো দিচ্ছ, এটা তোমার হয়তো কল্পনায়ও কখনও আসে না যে আমার কতটা কষ্ট হয়, যখন তুমি এমন করো। তোমার জায়গায় অন্য কেউ হলে আমি জীবনে দ্বিতীয় বার সেদিকে ফিরেও তাকাতাম না। আমার আবেগগুলোকে তুমি খুব ছোটো করে দেখছ! অসুবিধা নেই, আরও করো।
আমি সারাজীবন একা থাকব, তবুও অন্য কোনও ঘরে যাব না যাব না যাব না। যা খুশি হয় হোক। লাত্থি দিয়ে তাড়িয়ে দিলে নাহয় আর আসব না এই ঘরে, তবুও অন্য কোনও ঘরে যাব না। আমি অন্য কারও ভালোবাসার দর্শনে চলি না। আমার ভালোবাসার একটাই দর্শন: যাকে ভালোবাসছি, তাকে ছাড়া অন্য আর কাউকে ভালোবাসবো না, অন্য কাউকে আমার ধারে কাছেও আসতে দিব না। প্রয়োজনে প্রতি মুহূর্তে নিজেকে মারব, নিজেকে যত পারি কষ্ট দিব, তা-ও যাব না।
আমার সাথে একটু ভালো করে কথা বলতে কী হয় তোমার? আমি যে সারাদিন একটা মেসেজ, একটা ফোনের অপেক্ষা করে থাকি রোজ রোজ, তুমি তো জানো এটা, তারপরও ইচ্ছে করে এমন কষ্ট কীজন্য দিতে থাক? আমি তো চাই না তোমার সাথে সবসময় ঝামেলা করতে, অথচ তুমি বুঝেও সবসময় সব কিছুতেই না বোঝার ভান করে কথা কাটিয়ে কাজের ছুতোয় অন্য দিকে চলে যাও।
আমি একটু কিছু বললেই তুমি চলে যাও। কেন যে সারাক্ষণ খিটমিট করি তোমার সাথে, তা-ও তুমি বুঝেও না বোঝার ভান করো। আমি কি কখনও পাই তোমাকে? তাহলে কেন আমি খিটমিট করব না? তার উপরে আমি একটু কিছু বললে, এই যেমন, তুমি আমাকে আরেকটু বেশি সময় দিয়ো, তা না করে তুমি পুরোপুরি কথা বলাই বন্ধ করে দাও।
এখন তো আমি এসব মানতে পারি না। আমার হিংসা হয় বলে মানতে পারি না, তা না। আমার কষ্ট হয়। আমার দম আটকে আসে তুমি যখন আমাকে আদর করে কথা না বলো। এই যে আমি মেসেজ করতেই থাকি করতেই থাকি, তা-ও তুমি আসো না, তুমি রিপ্লাই করো না, সারাদিনেও না। করলেও ছোট্ট একটা কোনও রকম রিপ্লাই করে চলে যাও। আমার এসবে কষ্ট হয় না?
আমি তো তোমাকে সারাক্ষণ খোঁচাতে থাকি, ঝগড়াঝাঁটি করলে করি, তা-ও মেসেজ তো করি, কথা তো বলি। অথচ তুমি যে একটা একটা দিন চলে যায়, মেসেজ করো না, কথা বলো না। যদি আমি তোমার সাথে এমন করতাম, যদি আমি ঝামেলা না করতাম, সারাক্ষণ মেসেজ করে না যেতাম, তাহলে তুমি বুঝতে পারতে যে কেমন কষ্ট হয়। সারাক্ষণ তো তোমার চোখের সামনে থাকি, এজন্য তোমার কিছুই মনে হয় না। কোনওমতে দু-এক লাইন লিখে ভাগতে পারলেই বেঁচে যাও।
আমাকে আলাদা করে কিছু আর লিখছ না তুমি! স্ট্যাটাসে সব জানিয়ে দিচ্ছ! বাঃ! এখন আমিও তোমার দর্শকের সারিতে! সত্যিই তো, এমন অতিরিক্ত কী করেছি যে আমাকে আলাদা করে দেখবে তুমি! এখন তুমি অনলাইনে আসো যাও, মেসেঞ্জারেও হয়তো অন্য অনেকের জন্যই তোমার সময় হয়, শুধু আমার মেসেজে নিচে চাপা পড়তে থাকে শত মেসেজের চাপে! আমি স্রেফ একটা ঘটনা ছাড়া আর কী-ইবা তোমার কাছে!